১৪ ডিসেম্বর: বুদ্ধিজীবি দিবসে শহীদদের স্মরণ

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

ডিসেম্বর ১৪ ২০২০, ০০:০০

মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম সরকার

আজ ১৪ ডিসেম্বর। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বাঙ্গালী জাতির জন্য খুবই মর্মান্তিক ঘটনার দিন। আজকের এই দিনে আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের, যাঁদের আমরা হারিয়েছি স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনা থেকে শুরু করে চূড়ান্ত বিজয়ের ঠিক আগমুহূর্ত পর্যন্ত। মুক্তিযুদ্ধের শেষ মুহূর্তে ১০ থেকে ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যার মধ্য দিয়ে পুরো জাতিকে মেধাশূন্য করতে চেয়েছিল হানাদার বাহিনী। ঘাতকদের হাতে শহীদ দেশের সেইসব সূর্যসন্তানদের স্মরণে ১৪ ডিসেম্বর পালিত হয় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বুদ্ধিজীবীদের হত্যার ঠিক দু’দিন পর ১৬ ডিসেম্বর জেনারেল নিয়াজির নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের।

প্রফেসর জি সি দেব, মুনীর চৌধুরী, জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, ড. মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, রাশেদুল হাসান, ড. আনোয়ার পাশা, সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন, শহীদুল্লা কায়সার, নিজামউদ্দীন আহমেদ, গিয়াসউদ্দিন আহমদ, ডা. ফজলে রাব্বী, ডা. আলীম চৌধুরী, সাহিত্যিক সেলিনা পারভীনসহ নাম না জানা অনেক বুদ্ধিজীবিকে। সেই সঙ্গে সহমর্মিতা প্রকাশ করছি প্রত্যেক শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের স্বজনদের প্রতি, যাঁরা দীর্ঘ ৪৯ বছর ধরে বয়ে চলেছেন আপনজনকে হারানোর বেদনা ও কষ্ট।

বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড বলতে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়টুকুতেই পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী কর্তৃক পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের জ্ঞানী-গুণী ও মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদের হত্যা করাকে বুঝায়। ১৯৭১ এর ডিসেম্বর মাসে স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে এসে পাকিস্তান বাহিনী যখন বুঝতে শুরু করে যে তাদের পক্ষে যুদ্ধে জেতা সম্ভব না, তখন তারা নবগঠিত দেশকে সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও শিক্ষাগত দিক থেকে দুর্বল এবং পঙ্গু করে দেয়ার জন্য পরিকল্পনা করতে থাকে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৪ ডিসেম্বর রাতে পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের এ দেশীয় দোসরদের সহায়তায় দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান, জাতির বিবেক শিক্ষক, লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও চিকিৎসকদের নিজ নিজ বাসা তুলে নিয়ে নির্মম নির্যাতনের পর হত্যা করে। অনেকেই গুম হয়ে যান। এই পরিকল্পিত গণহত্যাটি বাংলাদেশের ইতিহাসে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড নামে পরিচিত। বন্দী অবস্থায় বুদ্ধিজীবীদের বিভিন্ন বধ্যভূমিতে হত্যা করা হয়।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের ক্ষত-বিক্ষত ও বিকৃত লাশ রায়েরবাজার এবং মিরপুর বধ্যভূমিতে পাওয়া যায়। অনেকের লাশ শনাক্তও করা যায়নি, পাওয়াও যায়নি বহু লাশ। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বরের নির্মম হত্যাকাণ্ডের কথা স্মরণ করে প্রতিবছর ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশে পালিত হয় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বুদ্ধিজীবী হত্যার স্মরণে ঢাকায় বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ স্থাপন করা হয়েছে।

বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকাণ্ড একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে মানবতার বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধগুলোর মধ্যে ঘৃণ্যতম অপরাধ। এসব হত্যাযজ্ঞে যাঁরা নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন, তাঁদের শাস্তি নিশ্চিত করার মধ্য দিয়েই আমরা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারি। সব ঘাতকের বিচারের মাধ্যমেই জাতি দায়মুক্ত হতে পারে।

লেখক: প্রভাষক, ভূকশিমইল কলেজ, মৌলভীবাজার।
সম্পাদক, সিলেট বিডি নিউজ।