হাটহাজারী মাদরাসার নতুন অভিভাবক কে এই মাওলানা ইয়াহিয়া?

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

সেপ্টেম্বর ০৮ ২০২১, ২০:৩৫

মুহাম্মাদ হাবীব আনওয়ার

উপমহাদেশের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ দ্বীনি শিক্ষা নিকেতন দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার নবনিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আল্লামা ইয়াহিয়া ১৯৪৭ সালের ১৫ জুন সুবহে-সাদিকের পূর্ব মূহুর্তে চট্টগ্রাম জেলার স্বর্ণপ্রসবীনি থানা হাটহাজারীর অন্তর্গত আলমপুর গ্রামে কাজি সালেহ আহমদ এর বাড়ির এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বংশানুক্রম নিম্নরূপ:
আল্লামা ইয়াহিয়া বিন কাজি আব্দুল আজিজ বিন চাঁদ মিয়া বিন আসমত আলি জমিদার বিন কাজি মুহাম্মদ সালেহ।

শিক্ষা-দীক্ষা
তিনি ১০ বছর বয়সে হাটহাজারী মাদরাসার নূরানী বিভাগের শিক্ষক কারী নুরুল হক রহ. এর কাছে পড়ালেখা শুরু করেন এবং হাটহাজারী মাদরাসাতেই ১৯৭৩ সালে দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স) সমাপ্ত করেন।

তাঁর উল্লেখযোগ্য উস্তাদগণ হলেন, মুফতী আজম ফয়জুল্লাহ রহ., শায়খুল হাদীস আল্লামা আব্দুল আজীজ রহ., আল্লামা আব্দুল কাইয়ুম রহ., মুফতী আহমদুল্লাহ রহ. মাওলানা হামেদ সাহেব রহ. আল্লামা নাদেরুজ্জাম রহ., মাওলানা ইব্রাহীম আলমপুরী রহ., শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ. প্রমুখ।

কর্মজীবন
১৯৭৩ সালে শিক্ষা জীবন সমাপ্ত করে হাটহাজারীর অন্তর্গত গড়দুয়ারা মাদরাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। গড়দুয়ারা মাদরাসায় ১০ বছর শিক্ষকতার পরে ৩ বছর মাদার্শা মাদরাসা ও হাজী ইউনুস সাহেব রহ. প্রতিষ্ঠিত ইছাপুর ফয়জিয়া তাজবিদুল কুরআন মাদরাসায় ৬ বছর শিক্ষকতা করেন। অতঃপর হাটহাজারী মাদরাসার মজলিসে শূরার ডাকে ১৯৯১ সালে উম্মুল মাদারিস খ্যাত হাটহাজারী মাদরাসায় যোগদান করেন। সাবলীল উপস্থাপনা, মধুময় বাক্যশৈলী ও সর্ববোধগম্য দরসের(পাঠদানের) মাধ্যমে স্বল্প সময়ে ছাত্রদের মন জয় করে সকলের নিকট তিনি হয়ে উঠেন একজন আদর্শ উস্তাদ।

শিক্ষকতার শুরু থেকে আজ অবধি তাঁর মেধা, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা দিয়ে দক্ষতার সাথে উর্দুখানা থেকে তাফসির জামাত পর্যন্ত সকল বিভাগের বিভিন্ন কিতাবের পাঠদান করে আসছেন। সর্বশেষ গত ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে হাটহাজারী মাদরাসায় অনুষ্ঠিত মজলিসে শূরার (কার্যকরী পরিষদ) বৈঠক আল্লামা ইয়াহিয়া হাফি. -কে মসলিসে এদারি (মাদরাসা পরিচালনা বোর্ড) এর সদস্য নির্বাচিত করা হয়।

খেলাফত লাভ

মাওলানা ইয়াহিয়া হাফি. ছোট বেলা থেকেই ছিলেন নম্র, ভদ্র ও উত্তম আখলাকের অধিকারী। ছুটির অধিকাংশ সময় মাদ্রাসায় অবস্থান করে বিভিন্ন কিতাবাদি অধ্যায়নের পাশাপাশি আসাতিযাদের খোঁজ খবর রাখতেন ও দোয়া নিতেন। তাঁর উত্তম আখলাকের কারণে অল্প দিনেই শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ. এর আস্থাভাজন ও স্নেহের পাত্রে পরিণত হন। হাটহাজারী মাদ্রাসায় অধ্যয়নকালে শুধু জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমেই তৃপ্ত হয়নি তার অন্তরাত্মা, বরং আধ্যাত্মিক সাধনার জন্যেও অস্থির ছিল মরুর বুকে তৃষ্ণার্ত মুসাফিরের ন‍্যায়। লেখাপড়ার পাশাপাশি তাসবীহ তাহলীল আদায়ে সুষ্ঠু নিয়ম, আকাবিরদের প্রতি সীমাহীন ভালোবাসা-শ্রদ্ধা এবং উন্নত চরিত্রের অধিকারী ও হযরতের খোদাভীরুতা, ইখলাস ও আমল-আখলাক দেখে শায়খুল ইসলাম, হযরত হুসাইন আহমদ মাদানী রাহ. এর সুযোগ্য খলিফা আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ. তাঁকে চার তরিকার খেলাফত দান করে বাইয়াত ও মুরিদ করার অনুমতি প্রদান করেন।

একজন দরদী উস্তাদ

মাওলানা ইয়াহিয়া সাহেব হাফি. একজন ছাত্রবান্ধব আদর্শ উস্তাদ। একজন পিতার ন্যায় ছাত্রদের সুখ-দুঃখ, সুবিধা-অসুবিধা, অর্থিক সাহায্য-সহযোগিতা করাসহ সবসময় ছাত্রদের পাশে দাঁড়ান তিনি। এছাড়াও সামাজিক সেবামূলক কাজে রয়েছে তাঁর বিশেষ অবদান। হজরতের বিচক্ষণতা ও ইনসাফপূর্ণ আচরণ মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক, এলাকাবাসী ও দলমত নির্বিশেষে সবার হৃদয়ে রেখাপাত করেছে। একজন দক্ষ আলেম পরিচয়ের পাশাপাশি গ্রাম সরদার হিসেবেও তাঁর বেশ খ্যাতি রয়েছে।

আজ ৮ সেপ্টেম্বর বুধবার সকাল ১০টায় আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হাটহাজারী মাদরাসার সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কমিটি মজলিসে শুরার বৈঠকে মুফতী আজম আব্দুস সালাম চাটগামী রহ. কে পরিচালক ও মাওলানা ইয়াহিয়া সাহেবকে সহকারী পরিচালক ঘোষণা করা হয়। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই সদ্য নিযুক্ত মুফতি আব্দুস সালাম সাহেব ইন্তেকাল করায় মজলিসে শুরা মাওলানা ইয়াহিয়া সাহেবকে ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ঘোষণা করেন।

আল্লাহ তাআলা হযরতের ছায়া আমাদের উপর দীর্ঘায়িত করুন! আমীন!