হলোকাস্ট: যে মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত হয় ইহুদীবাদী রাষ্ট্র

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

মে ২০ ২০২১, ১৫:৪৮

মুসা আল হাফিজ: আধুনিক বিশ্বের ইতিহাসে হলোকাস্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক প্রসঙ্গ। এ এমন বিষয়, যার উপর পা রেখে অস্তিত্বে এসেছে একটি রাষ্ট্র। ঐতিহাসিক রবার্ট বি গোল্ডম্যান লিখেছেন- ‘হলোকাস্ট ছাড়া ইজরাইল নামক রাষ্ট্র গঠন সম্ভবই ছিলো না।’ গোল্ডম্যানের কথাটি যেভাবে ঐতিহাসিক, তেমনি ধর্মতাত্ত্বিক। ইহুদীদের ধর্মগ্রন্থে আছে হলোকাস্টের ধারণা। তালমুদের ভাষ্য হচ্ছে, ইহুদীরা যখন রাজ্যহারা হয়ে যাবে, তখন ৬০ লাখ ইহুদীকে আত্মবিসর্জন দিতে হবে। তারপর প্রতিষ্ঠিত হবে ইহুদীদের নিজস্ব রাষ্ট্র!

নিজেদের একটা রাষ্ট্রের জন্য ৬০ লক্ষ প্রাণ দান ইহুদীদের পক্ষে কখনো সম্ভব হয়নি, যদিও তাদের প্রয়োজন ছিলো রাষ্ট্র অর্জন। কেননা শতাব্দীর পর শতাব্দী যাবত দেশে দেশে তারা উদ্ধাস্তুরূপে উৎপীড়নের শিকার হয়ে জীবন যাপন করছিলো। হিটলারের নাজিজম যখন জার্মানিতে উস্কে উঠলো, তখন সেখানকার ইহুদীদের পিঠটা একেবারে দেয়ালে ঠেকে যায়। পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেলে যে কোন জাতির জন্যেই একটা না একটা প্রতিবিধান হয়ে যায়। এটা অনেকটা প্রাকৃতিক নিয়মেই। ইহুদীদের জন্যেও হলো।

উপলক্ষ সৃষ্টি করে দিলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। তারা তখন চাইলো হলোকাস্টের কর্তব্যটার একটা রাহা করা যায় কী-না? হলোকাস্ট কথাটার সরল তরজমা হলো আত্মবিসর্জন বা কোরবানী। আগেকার রোমান ও গ্রীকদের ধর্মীয় রীতিতে দেবতাদের খুশি রাখতে অন্ধকার রাতে কালো রঙের পশুকে পুরোটা ঝলসিয়ে উপঢৌকন হিসাবে পাহাড়ে রেখে আসা হতো। এটাকে তারা বলতো holokaustos। শব্দটি গঠিত গ্রীক শব্দ holos (whole) এবং kaustos(burnt) একসাথে মিলে। এর মানে হলে পুরোপুরি ঝলসানো উপঢৌকন। পরে ইংরেজিতে সেটা Holokaust হয়েছে। ইহুদীদের কাছে এ ছিলো খুবই গুরুতর এক কাজ, যেখানে পশু নয়, হলোকাস্ট করতে হবে নিজেদের ৬০ লক্ষ প্রাণ! যে প্রাণদানে তাদের অনীহা ইতিহাস স্বীকৃত।

কিন্তু বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ইহুদী মিডিয়া প্রচার করলো, হলোকাস্ট সংগঠিত হয়ে গেছে। ৬০ লক্ষ ইহুদী হত্যা করেছে হিটলার। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট স্টালিন, যিনি নিজে একজন ইহুদী ছিলেন, ঘোষণা দিলেন নাৎসীরা বিভিন্ন শ্রমশিবিরে ৬০ লক্ষ ইহুদী হত্যা করেছে। হিটলারের বিরুদ্ধে বিশ্বকে ক্ষেপিয়ে তোলার মোক্ষম একটি হাতিয়ার হিসেবে এটাকে লুফে নিলো মিত্রজোট। ফ্রান্স, আমেরিকা, বৃটেন প্রচারে যোগ দিলো। ব্যাপারটা চাউর হয়ে গেলো গোটা বিশ্বে। তারপর বিশ্বযুদ্ধ একসময় শেষ হবে।

হলোকাস্টের জন্য জার্মানিকে দায়ী করে ইহুদীদের জন্যে ৬ হাজার ৮ শো কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ আদায় করা হবে। যার উপর ভর করে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইহুদীরা রাষ্ট্র গঠন করবে। হলোকাস্ট রোধে ব্যর্থতার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেতে আমেরিকা, বৃটেন, ফ্রান্স ইহুদীরাষ্ট্রের অভিবাবক হয়ে যাবে। এক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই যুদ্ধপরবর্তী কয়েকদশকে ইহুদীদেরকে ৩ লাখ কোটি ডলার অর্থসাহায্য প্রদান করবে। হলোকাস্ট হয়ে উঠবে বিশ্বরাজনীতির বাঁক বদলে বিশেষ প্রভাবক।

এর ফলে বিশ্বপরিস্থিতিতে কর্তৃত্বের লাগামটা ধীরে ধীরে ইহুদীবাদের অনুকূলে চলে যাবে। কেউ যদি এই ঘটনাকে সন্দেহ করে, তাহলে তাকে হিটলারের দালাল আখ্যায়িত করা হবে। সন্দেহকারী কারো কারো উপর ইহুদী জঙ্গীবাদীরা হামলা করবে। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদকে সন্দেহ পোষণের কারণে হাভার্ড ভার্সিটিতে সামনাসামনি মূর্খ বলে আখ্যায়িত করা হবে। অনুসন্ধিৎসু গবেষকদের মাথার উপর ঝুলতে থাকবে অপবাদ, একঘরে হবার ভীতি এমনকি মৃত্যু-আশংকার খড়গ।

কিন্তু সত্যি সত্যিই কী হলোকাস্ট ঘটেছিলো? ৬০ লাখ ইহুদী নিহত হয়েছিলো? হলোকাস্টের প্রবক্তারা শুধু ইহুদীদের মৃত্যুর কথা বলেই ক্ষান্ত নন, বরং তারা বলেন যে জার্মানরা ইহুদীদের হত্যা করে মৃতদেহ দিয়ে স্যুপ তৈরি করেছিলো। পোল্যাণ্ডের অসউইচ শ্রমশিবিরে ৪০ লাখ ইহুদীকে গ্যাসচেম্বারে হত্যা করা হয়েছিলো। বুচেনওয়াল্ড, বারজেন বেলসেন, মাউথাউসেন, ডাকাউ এবং জার্মানির মূল ভূখণ্ডের অন্যান্য বন্দিশিবিরে হত্যা করা হয়েছিলো ২০ লক্ষ ইহুদী। ব্যাপারটা খুবই সাংঘাতিক।

এটা যদি আংশিকও সত্য হয়, তাহলে তা অবশ্যই মর্মান্তিক। কিন্তু ইহুদীদের দেহ দিয়ে স্যুপ তৈরির বিষয়টিকে ইহুদী ঐতিহাসিকরাই মিথ্যা ও গুজব সাব্যস্থ করেছেন। আর যে অসউইচে ৪০ লক্ষ ইহুদী হত্যার কথা জোর দিয়ে বলা হয়, এ সম্পর্কে অসউইচ বারকেনিউ জাদুঘরের সিনিয়র কিউরেটর ও রাষ্ট্রীয় মুহাফিজখানার পরিচালক ড. ফ্রান্সিসজেক পাইপারের মন্তব্য হলো-‘এটা একটা ডাহা প্রতারণা।’

২০০৫ সালের ২১ শে জানুয়ারি ভিডিওতে ধারণকৃত এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন- ‘প্রতি বছর হাজার হাজার লোককে অসউইচ শ্রমশিবিরে ‘ক্রেমাওয়ান’ নামে নরহত্যার যে গ্যাসচেম্বার দেখানো হয়, সেটি নকল এবং জোসেফ স্টালিনের সরাসরি নির্দেশে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়।’ ইহুদী সাংবাদিক ডেভিড কোল মি. পাইপারের এ সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। তিনি জন্মের পর থেকে শুনে আসছিলেন ৪০ লাখ ইহুদী হত্যার কথা। এরপর একটি সরকারি রিপোর্টে পড়লেন ১১ লাখ ইহুদী হত্যার কথা। আবার লিউচটার রিপোর্টে দেখেন, গ্যাস চেম্বারে ইহুদী হত্যার কাহিনি পুরোপুরি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।

আসলে যুদ্ধকালে অসউইচ নিয়ে একটি রহস্যজনক আচরণ করা হয়েছিলো। সেই রহস্যটা স্পষ্ট হয়ে উঠে অসউইচে মিত্রবাহিনি তথা রুশ-মার্কিন অক্ষের কোনো হামলা না করার মধ্য দিয়ে। সেখানকার শ্রমশিবিরে বন্দি ছিলো ইহুদীসহ মিত্রবাহিনীর বহু সৈন্য। উচিত ছিলো তাদেরকে যে কোন উপায়ে মুক্ত করা। অসউইচে ছিলো হিটলার বাহিনীর যুদ্ধসরঞ্জাম উৎপাদনের কারখানা। মিত্রবাহিনীর উচিত ছিলো হামলা করে তা ধ্বংস করা। অসউইচে ছিলো নাৎসী বাহিনির ৪০টি বৃহৎ ও অত্যাধুনিক শিল্পকারখানা। অসউইচের আশপাশে ছিলো উন্নতমানের সিনথেটিক রাবার ও ঔষধ নির্মাণের কারখানা। ছিলো নাৎসী বাহিনীর শক্ত ঘাটি ও বিপুল অস্ত্র-শস্ত্র। তার মানে জায়গাটি হিটলারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মিত্রবাহিনীর সেখানে তো হামলা করারই কথা।

কিন্তু দেখা গেলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পুরো সময়ে মিত্রবাহিনী সেখানে ১টি বারও বোমা হামলা করলো না। ব্রিটিশ যুদ্ধবিমান একবার সেখানে কয়েকটা বোমা ফেলেছিলো। এর ফলে তারা আমেরিকা-রাশিয়া তথা মিত্রবর্গের কাছে দুঃখপ্রকাশ করলো। এটাকে একটা দুর্ঘটনা হিসেবে আখ্যায়িত করলো। অথচ জার্মানির প্রতিটি শহর ও লোকালয়ে শত শত মার্কিন ও ব্রিটিশ যুদ্ধবিমান বৃষ্টির মতো বোমা নিক্ষেপ করেছে। বেসামরিক লোকালয়ে শত শত টন বোমা নিক্ষেপ করেছে। একটি ছোট্ট শহরও বাদ পড়েনি, অসউইচের উপর দিয়ে উড়ে গিয়ে জঙ্গীবিমানগুলো সেই সব গুরুত্বহীন জায়গাকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে ফেলতো। অসউইচকে কেন অক্ষত রাখা হলো? সে কী বিশেষ কোনো সুফল প্রসব করবে বলে আগ থেকেই কথা ছিলো? কথা থাক বা নাই থাক, অসউইচে গ্যাস চেম্বারের নাম করে ঠিকই বের করে আনা হলো একটি সুফল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার কয়েক দিন পূর্বে ১৮ এপ্রিল নিউইয়র্ক টাইমস কোনো সূত্র বা উৎসের উল্লেখ ছাড়াই শিরোনাম ছাপালো যে অসউইচ শ্রমশিবিরে ৪০ লাখ ইহুদী হত্যা করা হয়েছে। ব্যাস। যুদ্ধশেষেই বিজয়ী মিত্রশক্তি নুরেমবার্গ আদালতে দাবি তুললো, অসউইচে ৪০ লক্ষ ইহুদী হত্যার বিচার চাই। ক্ষতিপূরণ চাই। সোভিয়েত সরকারও এ সময়ে একটা রিপোর্ট ছাপালো যে অসউইচে ইহুদী গণহত্যা হয়েছে এবং নিহতের সংখ্যা ৪০ লক্ষই। এরপর অনেকের কাছে এটা বেদবাক্য হয়ে গেলো। সর্বত্র ধ্বনিত হতে লাগলো অসউইচেই ৪০ লাখ! সব মিলিয়ে ৬০ লাখ!

কিন্তু প্রকৃত তথ্যের জন্য অনেকেই গবেষণা করেছেন, অনুসন্ধান করেছেন এবং শেষ পর্যন্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে যে ৬০ লাখ নয়, বরং অসউইচসহ বিভিন্ন বন্দিশিবিরে ১ লাখ ৩৫ হাজার থেকে নিয়ে ১ লাখ ৪০ হাজার লোক মারা গেছে। যাদের মধ্যে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীসহ ইহুদীরাও ছিলো। গ্যাস চেম্বার নয়, নয় গণহত্যা বা পরিকল্পিত নিধনও, বরং এরা মারা যায় অনাহারে, রোগ-ব্যাধিতে।

যুদ্ধের শেষ দিনগুলোতে খাদ্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অসউইচসহ অন্যান্য জার্মান বন্দিশিবিরে এ ধরণের মৃত্যু অস্বাভাবিক কিছু ছিলো না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ঐতিহাসিক আর্য মেয়ার হলোকাস্ট নিয়ে একটি বই লিখেছেন। নাম দিয়েছেন- হু ভিড হেভেন্স নট ডার্কেন? মানে হলো স্বর্গ কেন অন্ধকার হয়নি? এ বইয়ে তিনি খোলাখুলিই উল্লেখ করেছেন যে, গ্যাস চেম্বারে ইহুদী হত্যার কাহিনি সঠিক নয়। অসউইচ ও অন্যান্য শ্রমশিবিরে মৃতদের অধিকাংশই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। একই কথা দেখা যায় গ্যাস চেম্বার বিশেষজ্ঞ ফ্রেড. এ লিউচটার প্রণীত রিপোর্টে। ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত তার রিপোর্টে বলা হয় যে, অসউইচে এ যাবত গ্যাস চেম্বার হিসেবে যা প্রদর্শন করা হয়েছে, এ ধরণের গ্যাস চেম্বার কখনো সেখানে ছিলো না। এবং এ ধরণের গ্যাস চেম্বার ব্যবহারের কোনো আলামতও সেখানে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে সবচে তাৎপর্যপূর্ণ কাজ করেছেন মার্কিন ঐতিহাসিক ও গবেষক রিচার্ড হার্ডটন। তিনি সমকালীন বই-পুস্তক, ঐতিহাসিক প্রমাণ, পত্র-পত্রিকার রিপোর্ট, ও নুরেমবার্গ আদালতে প্রদত্ত সাক্ষ্য প্রভৃতির ভিত্তিতে একটি বই লিখেছেন। নাম দিয়েছেন- ’ সত্যিই কী ৬০ লাখ নিহত হয়েছিলো?’ ১৯৯১ সালে একটি ওয়েব সাইটে (জুন্ডেলসাইট জাগ্রাম) তার বইটির খোলাসা প্রকাশিত হলে দেখা যায় শেষ পর্যন্ত তিনি এই উপসংহারে উপনীত হয়েছেন যে, ‘হিটলার কোনো ইহুদী হত্যার নির্দেশ দেননি কখনো। এবং গ্যাস চেম্বারে ইহুদী হত্যার কাহিনিটা একটা আজগুবি গল্প মাত্র।’ মা যেভাবে বাচ্চাকে গল্প শুনায়- এক ছিলো দৈত্য। কুলার মতো কান। মুলার মতো দাঁত। সকাল বিকাল হাজার লোকের কল্লা দিয়ে সে নাস্তা করতো ….

বলাবাহুল্য এই সত্যকে আবিষ্কারের জন্যে রিচার্ড হার্ডটনসহ প্রত্যেককেই ঝামেলায় পড়তে হয়েছে। ইহুদী নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া তাদের চরিত্রহনন করেছে। হলোকাষ্টওয়ালারা দাবী করেন যে, শাওয়ার বা গোসলখানায় পানি ছাড়ার কলের ছদ্মাবরণে গ্যাস চেম্বারে ইহুদী গণহত্যা চালানো হয়। অথচ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে জার্মান বন্দিশিবিরে নাৎসীরা বন্দিদের সাথে কীরূপ আচরণ করেছে, এর প্রত্যক্ষ সাক্ষী হিসেবে আন্তর্জাতিক রেডক্রস তিন ভলিউমের যে রিপোর্ট প্রকাশ করে, তাতে তৃতীয় ভলিউমের ৫৯৪ পৃষ্টায় বলা হয়েছে ‘রেডক্রস প্রতিনিধিরা শুধু কাপড়-চোপড় ধোয়ার জায়গা নয়, সকল গোসলখানা ও শাওয়ার পরিদর্শন করেছে।

কোথাও নোংরা কিংবা অপরিচ্ছন্নতা দেখতে পেলে প্রতিনিধিরা সঙ্গে সঙ্গে এর ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন। তারা কর্তৃপক্ষকে এগুলো সম্প্রসারণ ও মেরামতের নির্দেশ দিতেন।’ রেডক্রসের পরিদর্শক টিম প্রায়ই সেখান পরিদর্শন করতেন। বন্দিদের আত্মীয়-স্বজনের সাথে একান্তে কথা বলতেন। বন্দীদের খাদ্যে ক্যালরির পরিমাণ পরীক্ষা করতেন। রেডক্রসের রিপোর্টে দেখা যায় বন্দিরা যুদ্ধকালে আত্মীয়-স্বজনের কাছে চিঠি-পত্র দিতো। বাইরে থেকেও চিঠি-পত্র আসতো। রেডক্রস তাদের মধ্যে বিভিন্ন সময় খাদ্যবিতরণ কর্মসূচী পালন করে।

সেখানে বন্দীদের শিশুজন্মের নিবন্ধনের ব্যবস্থা ছিলো। মৃত্যুনিবন্ধনের ব্যবস্থাও ছিলো। কেউ অসুস্থ হলে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিলো। রেডক্রসের রিপোর্টে জানা যায়, যুদ্ধের এক পর্যায়ে বন্দিশিবিরের ইহুদী ডাক্তারদের পূর্বরণাঙ্গনে জ্বরের চিকিৎসায় পাঠানো হয়। সেখানে মহামারির মতো জ্বর ছড়িয়ে পড়েছিলো। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই অসউইচ ও অন্যান্য বন্দিশিবিরেও জ্বর ছড়িয়ে পড়লো। ভূগর্ভস্থ পানি দুষিত হয়ে গেলো। মিত্রবাহিনির অবিরাম গোলাবর্ষণে জার্মানির রেল ও পরিবহন ব্যবস্থা ভেঙে পড়লো। এ সময় বন্দিশিবিরে অসুখে বহু লোক মারা যায়। রেডক্রসের বক্তব্য অনুযায়ী এই হচ্ছে অসউইচ, মাউথাউসেন ও অন্যান্য শ্রমশিবিরে বন্দিমৃত্যুর প্রকৃত ঘটনা।

হলোকাস্টওয়ালারা যাকে গণহত্যা বলে প্রচার করেছে। এই প্রচারটা এতই গুছানো যে, তারা ৬০ লক্ষ সংখ্যাটাকে ঠিক রাখবার জন্যে প্রচার করেছে যে, যাকলোন বি নামক কীটনাশক ঔষধ খাদ্যের সাথে মিশিয়ে বিভিন্ন শ্রমশিবিরে কয়েক হাজার ইহুদী হত্যা করা হয়। যুদ্ধ শেষ হলে নুরেমবার্গ আদালতে যাকলোন বি’ নাৎসীদের হাতে সরবরাহের অভিযোগে ড. ব্রনোটেসকে ফাসিতে ঝুলানো হয়। অথচ সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে, যাকলোন বি আসলে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর নয়, বরং উপকারী। বন্দিশিবিরে বন্দি ও কর্মচারিদের উকুনমুক্ত রাখতে, তাদের কাপড়-চোপড় ও শয্যাস্থান ধোওয়া-মোছা করতে এর ব্যবহার করা হতো। অথচ ড. ব্রনোটেসকে হত্যা করা হলো নিষ্ঠুরভাবে। এভাবে মিথ্যাকে পুঁজি করে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল, প্রতিপক্ষ হত্যা জায়নবাদ ও তার দোসরদের জন্যে নতুন নয়।

কিন্তু হলোকাস্ট বিষয়ক মিথ্যাচার এতোই স্থূল যে, ৬০ লক্ষ ইহুদীকে হত্যা করা হয়েছে বলে তারা প্রচার করলেও সেই সময় জার্মান অধিকৃত পোল্যাণ্ডে মোট বসবাসকারী ইহুদীদের সংখ্যা ৬০ লাখের অর্ধেকও ছিলো না। যাদের অনেকেই আবার যুদ্ধকালে বিভিন্ন দেশে সরে গিয়েছিলো। হলোকাস্টওয়ালারা বলে যে, অসউইচে ৪০ লাখ এবং অন্যান্য বন্দিশিবিরে হত্যা করা হয়েছিলো ২০ লাখ ইহুদী। অথচ ১৯৮৯ সালে অসউইচ ও অন্যান্য শ্রমশিবির সম্পর্কে ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং সার্ভিসের যে গোপন দলিলটি রেডক্রসের হাতে আসে, তাতে দেখা যায় অসউইচে মারা যায় ১ লাখ ৩৫ হাজার বন্দি। এদের মধ্যে মৃত্যুর সার্টিফিকেট আছে ৬৯ হাজার জনের। যাদের মধ্যে ইহুদীদের সংখ্যা মাত্র ৩০ হাজার। আর জার্মানির মূল ভূখণ্ডসহ অন্যান্য শ্রমশিবিরে মারা যায় সর্বসাকূল্যে ৪ লাখ থেকে ৫ লাখ লোক। কিন্তু এই মৃত্যুগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে সংগঠিত হয় মিত্রবাহিনীর হামলায়।

যুদ্ধের শেষ মাসগুলোতে ব্রিটিশ ও আমেরিকান বাহিনীর বোমা হামলায় সারা জার্মানি এক মৃত্যুপূরীতে পরিণত হয়। জার্মানির পরিবহন, চিকিৎসা, খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ইত্যাদি ভেঙে পড়ে। পূর্বদিক থেকে সোভিয়েত বাহিনী ঘূর্ণিঝড়ের মতো ধেয়ে আসতে থাকে। তাদের অগ্রাভিযানে লাখ লাখ শরণার্থী জার্মানির দিকে পালিয়ে আসতে থাকে। এই পালিয়ে আসা বন্দিতেই জার্মানি নিয়ন্ত্রিত বন্দিশিবিরেও শ্রমশিবিরগুলো বোঝাই হয়ে যায়। ১৯৪৫ সালের গোড়ার দিকে এসব শিবিরে বন্দিদের পুষ্টিহীনতা দেখা দেয়। মহামারি আকারে জ্বর, টাইফয়েড, আমাশয় ও ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ে। এই মানবিক দূর্যোগে যারা মারা গেলো, জায়নবাদী ক্যামেরাওয়ালারা তাদের লোমহর্ষক ছবিসমূহ তুলে নিচে লেখলেন যে, এরা ইহুদী। এদেরকে গ্যাস চেম্বারে হত্যা করা হয়েছে। তারপর সেই ছবি সারা বিশ্ব দেখেছে। এ থেকে চিত্রনাট্য হয়েছে। উপন্যাস হয়েছে। কবিতা হয়েছে। মানুষ হিটলারকে গাল পেড়েছে। ইহুদীদের পক্ষে সহানুভূতি প্রকাশ করেছে। হলোকাস্ট নিয়ে প্রশ্ন তোলাকেই করা হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ।

কেননা এটি এমন এক মিথ, যাকে ধাক্কা দিলে ধাক্কা খায় ইহুদী রাষ্ট্রের অস্তিত্ব। ধাক্কা খায় পশ্চিমা রাজনীতির চরিত্র ও নৈতিকতা। এই মিথের ভেতর লুকিয়ে আছে সেই প্রকল্পের স্বরূপ, যাতে ক্যামেরা, পত্রিকা, রাজনীতি, কবিতা, উপন্যাস, নাটক,কূটনীতি ইত্যাদি অদৃশ্য স্বার্থের নির্দেশে চরিত্র তৈরী করে কাউকে দানব বানায়, দেয় ভয়াবহ শাস্তি আর কাউকে মহান বানায়, উপহার দেয় রাষ্ট্র!

লেখক: আলেম, কবি, গবেষক।