স্বাধীনতার মানে

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

মার্চ ২৬ ২০১৮, ০৪:৪৬

আবুল কাসেম আদিল স্বাধীনতা মানে স্বেচ্ছাচারিতা নয়, যাচ্ছেতাই করার স্বাধীনতা নয়। স্বাধীনতা মানে স্ব-অধীনতা, আত্ম-অধীনতা; নিজের বিবেকের অধীনতা। নিজের বিবেকের কাছে জবাবদেহিতা না থাকলে মূলত মানুষের স্বাধীনতা মোটেই অক্ষুণ্ন থাকে না। তখন বাধ্য হয়েই মানুষকে অপরের কাছে জবাবদেহিতা করতে হয়। এটাই দুনিয়ার নিয়ম, প্রকৃতির বিধান। স্বেচ্ছাচারিতা বা যাচ্ছেতাই করার স্বাধীনতাই যদি স্বাধীনতার মানে হয়, তবে মানুষের যার যা ইচ্ছে তা-ই করতে চাইবে বা করবে। ফলে মানুষের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বেড়ে যাবে, রাষ্টের স্থিতিশীলতা ক্ষুণ্ন হবে, সামাজিক ভারসাম্য বিনষ্ট হবে। ফলে দেখা দেবে অনাচার ও অরাজকতা। তখন বাধ্য হয়েই রাষ্ট্র ও সমাজ এসব স্বেচ্ছাচারী নাগরিকদের নিয়ন্ত্রণ করবে, ক্ষেত্রবিশেষ দমন করবে। করতে বাধ্য হবে। ফলে এসব অতি স্বাধীনতাবাদীদের মোটেই স্বাধীনতা থাকবে না।

কোনো মানুষই পূর্ণ স্বাধীন নয়; চাইলেই হতে পারে না। মহান আল্লাহ রাব্বুল-আলামীন নিয়ম-বিধি দিয়ে মানুষকে এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। নিয়ম মানে শৃঙ্খল, শৃঙ্খল মানে শৃঙ্খলা। দুনিয়ার শৃঙ্খলা রক্ষার্থে একটুখানি শৃঙ্খলের দরকার আছে, কিছু নিয়ম-কানুনের জরুরত আছে। আল্লাহ তায়ালা তা-ই করেছেন। এসব বিধি পালন করলে আল্লাহর আদেশ পালিত হবে, পাশাপাশি দুনিয়ার স্থিতিশীলতাও বিরাজমান থাকবে।

জগতে নিয়ম ছাড়া কিছু নেই। মানুষ নিয়মের বাইরে যেতে পারে না, এটাই নিয়ম। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিয়ম ভঙ্গ করার নিয়ম আছে। নিয়ম ভেঙে যা গঠিত হয়, তাও কিন্তু নিয়ম।

দুঃখজনক সত্য হলো, আমাদের দেশে কিছু মানুষ নিয়ম মানে না। তাদের কাছে স্বেচ্ছাচারিতা ও লাগামহীন যাচ্ছেতাই করাই স্বাধীনতার মানে হয়ে উঠেছে। বেহায়াপনা, বেলেল্লাপনাকে স্বাধীনতার নামে জায়েজ করার অপচেষ্টা চলছে। কতিপয় বুদ্ধিবেপারী এসব অনাচারকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতাদানের জন্য জোর অপতৎপরতা চালাচ্ছে। স্বাধীনতার নামে মহান আল্লাহ, রাসূল সা. ও ইসলামী বিধিবিধানের বিরুদ্ধে অযৌক্তিক কুৎসা রটনাকে বৈধ মনে করা হচ্ছে। এসব দুষ্কর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করাকে স্বাধীনতাবিরোধিতা আখ্যায়িত করা হচ্ছে। এই যদি হয় স্বাধীনতার মানে— তাহলে আমি স্বাধীনতাবিরোধী। আমি নির্দ্বিধ ও নিঃসঙ্কচিত্তে নিজেকে স্বাধীনতাবিরোধী ঘোষণা করছি। স্বেচ্ছাচারিতা আর স্বাধীনতা যখন সমার্থক হয়ে ওঠে, তখন নিজেকে স্বাধীনতাবিরোধী ঘোষণায় অগৌরবের কিছু নেই।

এত স্বাধীনতা আমি চাই না। আমি একটুখানি অধীনতা চাই। রাষ্ট্র ও সমাজের স্থিতিশীলতা, মানবিক সভ্যতা-ভব্যতা ও পারিবারিক শান্তিময় ঐতিহ্যের বিরাজমানতার জন্য একটুখানি অধীনতা চাই। আর এতে এদেশের রক্তেকেনা স্বাধীনতার চেতনা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে হয় না।

যা-ইচ্ছে সব কিছু করার স্বাধীনতাকে যাঁরা স্বাধীনতা মনে করেন, এর পক্ষে লেখালেখি করেন, বক্তৃতা-বিবৃতিবাজী করেন— তাঁরা কি অাদৌ এটা সবক্ষেত্রে মানতে পারেন? আমার মনে হয়, না। আচ্ছা, তাঁরা ‘স্বাধীনতা’ শব্দটাকে চাইলেই কি হ্রস্ব ই-কার দিয়ে ‘স্বাধিনতা’ লিখতে পারেন? পারেন বটে, নিয়ম লঙ্ঘন করে। যাঁরা সামান্য শাব্দিক ব্যাকরণের অধীনতা উপেক্ষা করতে পারেন না, তাঁরা জগতসংসারের অন্য সব নিয়ম-কানুন উপেক্ষা করেন কীভাবে!

স্বাধীনতার মানে হয়ে উঠুক স্ব-অধীনতা, নিজের বিবেকের কাছে দায়বদ্ধতা। বন্ধ হোক স্বাধীনতার নামে সব অনাচার, স্বেচ্ছাচার ও সার্বিক অসামাজিকতা। স্বাধীনতার প্রকৃত মর্ম হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করুক সবাই— এই কামনা।