পৃথিবীর বাস্তবতায় বাংলাদেশ এখনো ভালো অবস্থানে আছে

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

নভেম্বর ১০ ২০২২, ১৮:১১

ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও কঠিন এক সময় পার করছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

তিনি বলেন, ‘রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধের কারণে আমরা কঠিন সময় পার করছি। জ্বালানি মূল্য কয়েকগুণ বেড়েছে। এটা সারা পৃথিবীর বাস্তবতা।’

শিল্পখাতে উৎপাদন অব্যাহত রাখতে গ্যাস আমদানি করতে হয় উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘তবে পৃথিবীর বাস্তবতায় বাংলাদেশ এখনো ভালো অবস্থানে আছে। যদিও অনেক সময় অনেক কারখানায় গ্যাস সরবরাহ দেওয়া যাচ্ছে না।’

ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের যুগপূর্তি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘একটা সময় ইন্ডাস্ট্রির পর ইন্ডাস্ট্রি আগুনে জ্বালিয়ে দেয়ার দৃশ্য আমরা দেখেছি। মালিকদের কেউ কেউ যখন শ্রমিকদের বেতন দিতে পারতেন না তখন বিক্ষোভ, ভাংচুর, জ্বালাও পোড়াও হতো। সে অবস্থা এখন বদলেছে।’

‘ব্যবসায়ী নেতাদের পরামর্শে প্রধানমন্ত্রী শিল্প পুলিশ গঠন করেন। ১৫ বছর আগের পুলিশ ও বর্তমান পুলিশ একদম আলাদা। বর্তমান পুলিশ দক্ষ বিচক্ষণ। তাদের হাতেই শিল্প পুলিশের নিয়ন্ত্রণ।’

একসময় কারখানা থেকে বের হলে গার্মেন্টসকর্মীর বেতনের টাকা ছিনতাই হতো জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন শিল্প পুলিশ সেখানে সেতুবন্ধনের ন্যায় কাজ করছে। তারা শ্রমিকদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা, দেনাপাওনা নিশ্চিত করছেন। শিল্পখাতে শ্রমিকদের দ্বারা কি হতে পারে, মালিকরা কি করেন পুলিশ সেটা জানে। পুলিশ শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া ও অধিকার আদায়ে মালিকপক্ষে সঙ্গে যোগাযোগ রাখে।’

শ্রমিক-মালিকদের সমস্যা শুনে কাজ করতে শিল্প পুলিশকে তাগিদ দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সবার সমস্যা শুনুন। শ্রমিকদের, মালিকদেরও। বেসরকারি শিল্পখাতে অগ্রগতি উন্নতি ঘটছে। শিল্প পুলিশ কাজ করছে বলেই শিল্প খাতে স্থিতিশীলতা বজায় রয়েছে।’

ঢাকায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ গঠন করার ইচ্ছে নেই উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকায় আর লোক সংখ্যা বাড়ানো যাবে না। আমরা নিরুৎসাহিত করছি ঢাকায় শিল্প গড়া। বরং ঢাকা থেকে শিল্পপ্রতিষ্ঠান সরানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে আমি চেষ্টা করবো ঢাকায় ডিএমপির কয়েকজন কর্মকর্তা রেখে শিল্পকারখানার শৃঙ্খলায় নজরদারি রাখা যায় কি না।’

শিল্প পুলিশ সব সময় শিল্পখাতের নিরাপত্তায় সজাগ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘তারা শিল্প মালিকদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করছে। ১২ বছরে শিল্প পুলিশ যে সুনাম অর্জন করেছে তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করে আরও এগিয়ে যেতে হবে।’

ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ প্রধান (অতিরিক্ত আইজিপি) মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে শিল্পখাত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর তিনি যেভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়েছেন তা অভাবনীয়। আমিও ১০ বছর আগে বিশ্বাস করতাম না শিল্পখাত তথা অর্থনীতি এতোটা শক্তিশালী হতে পারে। শিল্পখাতে অনুকূল পরিবেশ তৈরির জন তিনি অনেক কিছু সহজ করেছেন।’

সালমান এফ রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর একটাই উদ্দেশ্য নিয়ে বলতেন শিল্পখাতকে এগিয়ে নিতে হবে। শিল্পখাতের নিরাপত্তার জন্যই শিল্প পুলিশ গঠন করা। শ্রমিকের চেয়ে বেশি কাজ করছে শিল্প পুলিশ। কখন কোথায়, কি ঘটতে পারে সেটা বিবেচনায় নিয়ে প্রোঅ্যাকটিভলি কাজ করছে তারা। তাই হয়তো শ্রমিকরাও এখন শিল্প পুলিশের প্রশংসা করেন।’

মালিক হিসেবে নিজের সঙ্গে শ্রমিকদের সম্পর্ক খুব ভাল দাবি করে এই শিল্প উদ্যোক্তা বলেন, ‘আসলে শ্রমিক ও মালিকদের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে দরকার দক্ষ ম্যানেজমেন্ট। যেখানে মালিকপক্ষ দক্ষ ম্যানেজমেন্ট রেখেছে সেখানে শ্রমিক অসন্তোষ নেই। শ্রমিক অসন্তোষের কারণই সঠিক সময়ে অসন্তোষ হ্যান্ডেল করতে না পারা।’

তবে এক জায়গায় এখনো সমস্যা মন্তব্য করে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘সমস্যা আছে, আগেও ছিল, এখনো আছে। সেটি হলো বাইরে থেকে যখন কেউ শ্রমিকদের প্রভাবিত করে তখন সমস্যা তৈরি হয়। শ্রমিকদের সঙ্গে তাই নিজস্ব যোগাযোগ রক্ষা করা সম্পর্কোন্নয়ন করা দরকার।’

‘মালিকরা যতোই বলুন, উন্নয়নের রোল মডেল হয়েছি, শিল্প এগিয়েছে কিন্তু এসবই সম্ভব হয়েছে শ্রমিকদের কারণে। তারা আছেন বলেই সম্ভব। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে শিল্প পুলিশ।’