স্পেনে কেমন আছেন প্রবাসীরা

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

এপ্রিল ২৭ ২০১৮, ০০:৪৩

আব্দুল কাদির মাহদি স্পেন থেকে:
স্পেন এক সময় মুসলমানদের দখলে ছিল। প্রায় আটশ বছরেরও বেশী মুসলমানরা স্পেন শাসন করছিলো। বীর সিপাহী তারেক বিন জিয়াদের ঈমানী শক্তির বিনিময়ে এখানে মুসলমানদের বসবাসের সুযোগ হয়ে ছিলো। যার নাম নিশানা আজও শহর বন্দরে পরিলক্ষিত হচ্ছে।

স্পেন হচ্ছে সতেরটি প্রদেশ ও পঞ্চাশটি বিভাগ নিয়ে মনোরম একটি ইউরোপিয়ান দেশ। কমবেশি প্রায় সব জায়গায়ই বাংলাদেশী বসবাস করেন। তবে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদ ও কাতালুনিয়া প্রদেশের রাজধানী বার্সেলোনাতে বাংলাদেশী মানুষের বসবাস বেশি। দুই সিটিতে মুটামুটি হাজার খানেক বাংলাদেশী পরিবার বসবাস করেন। এছাড়া সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রায় অনুমানিক বিশ হাজার বাংলাদেশী আছেন।

অপরূপ স্পেন

কেমন আছেন বাংলাদেশীরা!

ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে ইংল্যান্ডের পর, স্পেনেই বাংলাদেশীরা ভালো অবস্থানে আছে বলা যায়। আনন্দের বিষয় হচ্ছে, অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোর তুলনায় স্পেন সরকার বা স্পেনিশ জাতির নিকট বিভিন্ন কারনে, বাংলাদেশীরা অনেক সম্মানের অবস্থানে আছেন।
এ কারনেই বাংলাদেশীরা এখানে তাদের সামাজিক,সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বিভিন্ন সংঘটন,উপ-সংঘটন গড়ে তুলছেন। স্পেন সরকারের সহায়তায় স্বাধীন ভাবে সামাজিক,রাজনৈতিক,ধর্মীয় কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।আছে বচ্চাদের বংলা ভাষা শেখার জন্য বাংলা স্কুল।এছাড়া আছে অনেক অঞ্চলিক সামাজিক সংগঠন।যেগুলো এদেশীয় অঞ্চল ভিত্তিক বিভিন্ন সামাজিক কাজে অংশ গ্রহন করে থাকে।
দেশের বিভিন্ন শহরে রয়েছে আট দশটির মত বাংলাদেশী কমিউনিটি মসজিদ বা ইসলামিক সেন্টার।

স্পেনে ধীরেধীরে বাড়ছে মুসলামানদের সংখ্যা।
ছবি: স্পেনের বেরেল্লা শহরে একটি মনরোম মসজিদ

আলেমদের অভাব।
সবচেয়ে দঃখের বিষয় হলো,এখানে বাংলাদেশী আলেম উলামার খুবই অভাব। ২০১০ সালের আগ পর্যন্ত কোন আলেম,অথবা হাফেজ ছিলেন না বললেই চলে। এ দিক দিয়ে এখানকার লোকজন ধর্মীয় দিক দিয়ে পিছিয়ে আছে বললেও কম হবে না। তবে বর্তমানে আলেম হাফেজদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে ইংল্যান্ড হয়ে ইতিমধ্যে অনেক আলেম, হাফেজগণ স্পেনে এসে বসবাস শুরু করেছেন। যার কারনে ধর্মীয় কাজের পরিধিও বাড়ছে। এখানে আছে তাবলীগ জামাতের নিয়মিত মেহনত। আছে ‘ইসলামিক ফোরাম’ ও ‘সিরাতে মুস্তাকিম’সহ বেশ কয়েকটি বাংলাদেশী উলামা সংগঠন।

এখানে বাংলাদেশীদের অর্থনৈতিক অবস্থান।

অর্থনৈতিক দিকে দিয়ে অনেক বাংলাদেশীরা মোটামুটি ভালো অবস্থানেই আছেন। অনেকেই এখানে নিজস্ব ব্যবসা বানিজ্যো গড়ে তুলছেন। কেউ কেউ ভালো স্পেনিশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করছেন। কেউ কাজ করছেন রেস্টুরেন্টে বা কফি বারে। অনেকে আবার ভিসা জটিলতার কারনে স্থায়ী কাজ পাচ্ছে না, তারা রাস্থায়, ফুটপাতে হকারি করছে, টুরিস্টদের কাছে নানান রকম জিনিসপ্ত্র বিক্রি করে জীবনযুদ্ধ করে যাচ্ছেন।

কেউ কেউ ভিসা জটিলতার কারনে পর্যটন এলাকাগুলোতে হকারি করে জীবন চালাচ্ছেন

বাংলাদেশীদের সামাজিক অবস্থান।

এখানে আসার পর যে সমস্যাটি আমার দৃষ্টিগোচরে হয়েছে তা হলো, এখানে আমাদের কমিউনিটির মানুষ স্থায়ী থাকতে চান না। যে কারনে অনেক একটিভিটি থাকার পরও বাংলাদেশী কমিউনিটি শক্তিশালী হয়ে উঠে না। অনেকেই স্পেন বা ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোকে শুধু যেন ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করেন। নির্দিষ্ট একটা সময় পার হলেই ইংল্যান্ডে,আমেরিকা,কানাডা ইত্যাদি দেশ সমুহে পাড়ি জমান। যখনি স্পেনের নাগরিত্ব লাভ হয়, তখনি স্পেন ছেড়ে চলে যান ইংল্যন্ড অথবা অন্য কোথাও। যার কারনে যেরকম বাংলাদেশী কমিউনিটি গড়ে উঠার কথা,সেরকম গড়ে উঠছে না।

তবে স্পেন থেকে স্থানান্তররের কয়েকটি কারনও আছে। এখানে ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাব। অন্যদিকে, যেকারনেই হোক জন্মগতভাবেই আমাদের ইংলিশ ভাষার প্রতি এক দুর্ভলতা। তাই ছেলেমেয়েদের ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ালেখার জন্য ইংলিশ দেশে বসবাসের আগ্রহ থাকে অনেকেরই। কখনো আত্মীয়-স্বজনের পাশাপাশি থাকার ইচ্ছায় পাড়ি দেন সেই দেশে। কেউ কেউ আবার কাজের অভাবে,উন্নত জীবনের আশায় ইংল্যান্ড,আমেরিকা অথবা কানাডায় পাড়ি জমান চলে যান।

স্পেনে একটি ঈদের জামাত


বাঙালীরা স্পেনীশ ভাষায় চালু।
আমার এক পাকিস্তানী বন্ধু বলে- ‘তোমাদের বাঙালীরা অনেক মেধাবী’
আমি বললাম কেনো?
সে বললো, ‘তোমরা খুবই দ্রুত স্পেনিশ ভাষা শিখে নিতে পারো’।

আসলেই তার কথা সত্যি। আমাদের অনেক বাঙ্গালী এমনও আছে বাংলা ভাল করে গুছিয়ে বলতে পারে না।কিন্তু ভিন্নদেশী ভাষা অনেক দ্রুত আয়ত্ব করতে পারে।

-আব্দুল কাদির মাহদি
ইমাম ও খতিব
দারুল কোরআন ইসলামিক সেন্টার বার্সেলোনা, স্পেন।