সৌদি আরবের ইউরোপযাত্রা

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

নভেম্বর ০১ ২০২২, ০৫:৫১

আবুল কাসেম আদিল: সৌদি আরব ক্রমশ পতনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। হয়ত ইউরোপ হওয়ার আগ পর্যন্ত থামবে না।

সৌদি আরবের অধঃপতনে আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। কিন্তু এটাও সত্য, সৌদি আরবের বাংলাদেশের সমান অধঃপতিত হতে আরো অন্তত কুড়ি বছর লাগবে। সৌদি আরব নারীদের গাড়ি-চালনার অনুমোদন দিয়েছে, সেদেশে হিজাব ব্যবহারে শৈথিল্য এসেছে, গানের কনসার্ট হচ্ছে, সিনেমা অনুমোদিত— এরকম আরো নানা বিষয়ে সমালোচনা হচ্ছে।

কিন্তু খেয়াল করে দেখুন— এই প্রত্যেকটি বিষয় বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে, বরং তারও আগে থেকে অনুমোদিত এবং চর্চিত। আমরা শৈশবে বিদ্যুতের পিলারে সিনেমার পোস্টার লাগানো দেখতাম। পোস্টারে থাকত প্রায় উন্মুক্তবক্ষা নারীদের ছবি। মাঝখানে কিছুদিন বন্ধ থাকলেও আবারো সেই সংস্কৃতিটা ফিরে আসছে। যেটা বাংলাদেশে কুড়ি বছর আগে থেকে উপস্থিত, সেটা সৌদি আরবে সবে শুরু হলো মাত্র। বাংলাদেশে র‍্যাগ ডে, হাগ ডে-সহ নানা দিবসে এবং দিবস ছাড়াও, বিভিন্ন উপলক্ষে এবং উপলক্ষ ছাড়াই উদ্দাম নৃত্যানুষ্ঠান হয়। ঢাকা শহরে কতগুলো অনুমোদিত-অননুমোদিত মদের বার আছে, কে জানে! এসব নিয়ে কে মাথা ঘামায়? এসবের প্রতি ঘৃণায় কে ভাত খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে?

এসব নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। কারণ বাংলাদেশ থেকে আমাদের এর চেয়ে বেশি আশা-ই নেই। বাংলাদেশ যে অবস্থায় আছে, আমাদের মনে হয় এটাই এ দেশের নিয়তি। পক্ষান্তরে সৌদি আরব আমাদের ধর্মীয় আবেগের জায়গা। ইসলাম ভূখণ্ডভিত্তিক ধর্ম নয়, তবু এই দেশটার সঙ্গে আমাদের মানবিক আবেগ রয়েছে। আমাদের প্রিয়নবী (সা.) এই ভূমিতে জন্ম নিয়েছেন, এখানে বেড়ে উঠেছেন, এখানে দীনের প্রচার করেছেন, এখানেই সমাহিত হয়েছেন। হারামাইন শারীফাইন এই দেশেই অবস্থিত। এ কারণে দেশটির রাতারাতি অধার্মিক পরিবর্তন আমাদের ক্ষুব্ধ করে।

পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশ ইউরোপ হতে পারে নি, শিগগিরই হতে পারবেও না। তবে সৌদি আরব ত্রিশ বছর চেষ্টা করলেই ইউরোপ হয়ে যেতে পারবে। কারণ ইউরোপীয় জীবনাচার ব্যয়বহুল। বাংলাদেশের মানুষের জন্য ইউরোপীয় জীবন যাপন করা সম্ভব নয়। সৌদি আরবের মানুষের জন্য তা সম্ভব। তাছাড়া বিত্তবানদের মস্তিষ্ক-বিকৃতি ঘটলে ভালো করেই ঘটে। বিকৃত আচার পালন করতে যে টাকা লাগে তার যোগান দেওয়ার সামর্থ বাংলাদেশের মানুষের নেই, সৌদি আরবের মানুষের আছে।

মুসলিম দেশগুলো ধনী হোক, মুসলিমরা বিত্তবান হোক— এটা আমরা মনে-প্রাণে কামনা করি। কিন্তু যখন দেখি— সৌদি আরবের ইউরোপযাত্রা সহজ ও নির্বিঘ্ন হওয়ার পেছনে অর্থেরও খানিকটা ভূমিকা আছে, তখন মনে হয় অর্থবিত্ত কম থাকলেই তাদের জন্য ভালো হতো।