সিলেটে মাওলানা গিয়াস উদ্দিন তাহেরির মামলার তদন্তে পিবিআই

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

মার্চ ৩১ ২০২২, ১৮:১৩

সিলেটের বালাগঞ্জে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজনের নামে মিথ্যা প্রচারণা ও সম্মানহানির অভিযোগে সিলেটের সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন আলোচিত ইসলামি বক্তা মুফতি গিয়াস উদ্দিন আত তাহেরি।

আজ বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) দুপুরে সেই মামলা পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার সিলেট বিভাগীয় সাইবার ট্রাইব্যুনালের (জেলা ও দায়রা জজ) বিচারক মো. আবুল কাশেম এ নির্দেশ দেন। মামলার শুনানির সময় উপস্থিত ছিলেন তাহেরি।

এর আগে গত ২৪ মার্চ বালাগঞ্জের কয়েকজনসহ সিলেট, হবিগঞ্জ ও বি-বাড়িয়ার ১৫ জনের বিরুদ্ধে সিলেটের সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়েরের আবেদন করেন তিনি।

মামলার আসামিরা হলেন- সিলেটের বালাগঞ্জ পৈলনপুরের মইনুল ইসলাম, হাফিজ মুজিবুর রহমান, মসজিদের ইমাম ও খতিব ক্বারি জয়নাল আবেদীন,সিলেট অনলাইন টিভি নবীগঞ্জের রাজু আহমদ, ফেসবুকে লাইভ ও শেয়ারকারী নবীগঞ্জ সদরঘাটের শেখ শাহজাহান, ফেসবুকে লাইভ ও শেয়ারকারী হবিগঞ্জ লাখাই মুড়াকুড়ির আব্দুল কুদ্দুছ নুরী, ফেসবুকে লাইভ ও শেয়ারকারী তপু তরফদার, ফেসবুকে লাইভ ও শেয়ারকারী নিজাম আহমেদ আকরাম, ফেসবুকে লাইভ ও শেয়ারকারী নিজাম উদ্দিন সিদ্দীকি, একে মিডিয়া সিলেট, ফেসবুকে লাইভ ও শেয়ারকারী নবীগঞ্জের দেওপাড়া সাতাইল গ্রামের আব্দুল আলিমের ছেলে হাফিজ কামরুল ইসলাম জালালি, ফেসবুকে লাইভ ও শেয়ারকারি বি-বাড়িয়া জেলার আখাউড়া তুলাই শিমুল গ্রামের শেখ রাসেল, ফেসবুকে লাইভ ও শেয়ারকারী বি-বাড়িয়া চারগাছ গ্রামের আবদুল ফরহার ছেলে মোরশেদ শাহ, হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ থানার গুমগুমিয়া গ্রামের খালেদ আহমদের ছেলে এস.এ শামিম ও টিটিভি।

তাহেরি তার মামলায় উল্লেখ করেন, তিনি বাংলাদেশের নাগরিক এবং আইন-আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তিনি আর্ন্তজাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামী চিন্তাবিদ ও বক্তা। কিন্তু তার বিরুদ্ধে অভিযুক্তরা কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য বিভিন্ন ফেইসবুক, ইউটিউব ও ওয়েব সাইটে প্রচার করায় দেশসহ বিশ্বব্যাপী তার সম্মান নষ্ট হচ্ছে। যার জন্য সমাজে চলাফেরা ও মুখ দেখানো লজ্জাকর হয়ে পড়েছে।

মামলায় আরো উল্লেখ করা হয়েছে, আসামি মইনুল ইসলামের সহযোগিতায় হাফিজ মুজিবুর রহমান, ক্বারি জয়নাল আবেদীন মিলে পূর্বপরিকল্পিতভাবে সুন্নী সম্মেলনে মাওলানা তাহেরিকে দাওয়াত না করে, মানসম্মান ও খ্যাতি নষ্টের জন্য অনুমতি ব্যতিত পোস্টার প্রকাশ করে এবং ইসলামী সম্মেলনে ভিডিও করে জুতা মিছিল করে বিভিন্ন ফেইসবুক, ইউটিউব ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ভাইরাল করা হয়। তখন হাফিজ মুজিবুর রহমান মানুষের সামনে তাহেরিকে জুতাপেটার কথা বলে আলেম সমাজের খ্যাতি নষ্ট করার কথা বলেন এবং এসব দ্রুত বিভিন্ন মাধ্যমে ভাইরাল করা হয়।

মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, তাহেরিকে ইসলামি সম্মেলনে উপস্থিত করানোর কথা বলে গ্রামবাসীকে বিশ্বাস করানোর জন্য পৈলনপুর মসজিদের ইমাম ও নুরী মিলে দুইটি বিকাশ নাম্বারে ত্রিশ হাজার ছয়শত টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে সেন্ড করেন। যা তাদের পূর্বপরিকল্পিত ছিল এবং একজন বক্তার মান-সম্মান নষ্ট করে তাকে দেশ, জাতি ও সম্প্রদায়ের কাছে লজ্জিত করে।

এছাড়াও “জুতা মিছিল তাহেরির বিরুদ্ধে ‘৩৩ হাজার টাকা অগ্রিম নিয়ে বালাগঞ্জ এক মাহফিলে মূর্খ বাউল বক্তা, তাহেরি না আসায় সিলেটে অবাঞ্চিত ঘোষণা’-সহ নানা ধরণের শিরোনাম দিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করা হয়। এতে তাহেরি ও তার পরিবারের সম্মান নষ্ট হয়েছে । যা কোনো অর্থমূল্য দিয়ে মূল্যায়ন বা পূরণ করা অসম্ভব।

আদালতের কাছে ন্যায় বিচারের স্বার্থে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করেন তাহেরি।

উল্লেখ্য, মুফতি গিয়াস উদ্দিন আত তাহেরি অগ্রিম ৩৩ হাজার টাকা নিয়ে সিলেটের বালাগঞ্জে একটি ওয়াজ মাহফিলে আসেননি- এমন অভিযোগ ওঠে গত মঙ্গলবার (২২ মার্চ)। এদিন বালাগঞ্জের পূর্ব পৈলনপুর ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন মাঠে এ মাহফিলের আয়োজন করেছিলেন স্থানীয়রা।

আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়- ওয়াজ মাহফিলটিতে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিলো গিয়াস উদ্দিন আত তাহেরিকে। বিকেলের দিকে প্রধান অতিথি হিসেবে তাঁর ওয়াজ করার কথা ছিলো। মাহফিলে আসা বাবদ তার পিএএস-এর কাছে দুই ধাপে অগ্রিম ৩৩ হাজার টাকাও দিয়েছিলেন আয়োজকরা। কিন্তু মঙ্গলবার সকাল থেকেই তাহেরির পিএসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা মোবাইল ফোনে বার বার কল দিলে কেউ রিসিভ করেননি। ওয়াজের নির্ধারিত সময় পর্যন্তও কেউ কল রিসিভ করেননি, এমনকি কল ব্যাকও করেননি।

এক পর্যায়ে টাকা নিয়ে তাহেরির না আসার অভিযোগটি আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে মাহফিলের মাইকে জানিয়ে ওয়াজ শুনতে আসা মুসল্লিদের কাছে ক্ষমা চাওয়া হয়। এসময় লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং তাহেরির বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন এবং জুতা হাতে নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এছাড়াও এসময় আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে তাহেরিকে পুরো সিলেটে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। এমন কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে।

পরবর্তীতে বিষয়টি তাহেরির নজরে আসলে তিনি এ অভিযোগের বিষয়টি সস্পূর্ণ মিথ্যা দাবি করেন। ওইদিনই তিনি তার ভেরিফাইড ফেসবুকে এ বিষয়ে একটি পোস্ট দেন।