সংসদে শাবি ভিসির অপসারণ দাবি

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জানুয়ারি ২৩ ২০২২, ১৩:৫৯

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদের অপসারনের দাবি উঠেছে জাতীয় সংসদে। জাতীয় পার্টির সাংসদ কাজী ফিরোজ রশিদ ও পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ এই দাবি তুলেন।

আজ রোববার সকালে স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরু হয়।

গত ১৩ জানুয়ারি রাতে শাবিতে আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী। এ আন্দোলনে শনিবার ছাত্রলীগ হামলা চালায়। পরদিন রোববার উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। পুলিশ তাকে উদ্ধার করতে যায়। আন্দোলনকারীরা পুলিশকে বাধা দেন। এতে সংঘর্ষ বাঁধলে আহত হন অর্ধশতাধিক। সেদিন রাতে জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যবিরোধী আন্দোলন শুরু করেন। গত বুধবার থেকে ২৪ জন শিক্ষার্থী শুরু করেন অনশন। পরে একজন বাড়ি ফিরে যান তার বাবা অসুস্থ হওয়ায়। আজ থেকে নতুন করে আরও ৩ শিক্ষার্থী অনশনে যোগ দিয়েছেন।

আজ জাতীয় সংসদের অধিবেশনে জাতীয় পার্টির সাংসদ কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, ‘আজ ১১ দিন যাবত একটি খবর পত্রিকার পাতায় এবং টেলিভিশনে আসছে। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভিসির বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন পদত্যাগের দাবিতে। ১১ দিন ধরে তারা অনশনে আছেন। ১৬ জন এরই মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। শুনলাম শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, তোমরা তোমাদের দাবি দাওয়া রেখে ঢাকায় আসো। আমরা সবাই ছাত্র আন্দোলন করেছি। আন্দোলনের মাঠ ছেড়ে কোনো ছাত্ররা কারও সাথে দেখা করতে ঢাকায় আসবে না।’

তিনি বলেন, ‘মন্ত্রীর উচিত ছিল ওখানে যাওয়া। মোনায়েম খান বহুবার আমাদের বঙ্গভবনে ডেকেছেন, আমরা যখন ছাত্র ছিলাম বঙ্গভবনের দাওয়াত আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি। আমরা কখনো কোনো আন্দোলন করতে গিয়ে বঙ্গভবনে দাওয়াত খেতে যাইনি। ছাত্ররা কেন আসবে আপনার কাছে? প্রত্যেকটা ছাত্র আন্দোলন এ দেশে হয়েছে যৌক্তিকভাবে। যখনই যারা সরকারে থাকে, তারা আন্দোলনকে অযৌক্তিক মনে করে।’

ফিরোজ রশিদ আরও বলেন, ‘ভিসি কোনো স্থায়ী পদ না যে একজন ভিসি চলে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাবে। ভিসিকে অপসারনের দাবিতে ছাত্ররা যদি অনশন করে এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছু নেই। তাহলে বুঝতে হবে, এই ভিসির উপর তাদের কোনো বিশ্বাস নেই, আস্থা নেই, ভালোবাসা নেই, শ্রদ্ধাবোধ নেই। এটা থাকাও উচিত না। ওনার যদি বিন্দুমাত্র আত্মসম্মানবোধ থাকতো, তাহলে উনি এভাবে বসে থাকতেন না।’

তিনি বলেন, ‘দাবি নিয়ে ছাত্ররা ভিসির কাছে গিয়েছিল, তিনি তাদের কথা শোনেননি। শিক্ষার্থীরা তখন আন্দোলনে আসলো। এই আন্দোলনে পুলিশ ডেকে আনলো। এটা কি আইয়ুব খান, মোনায়েম খানের যুগ নাকি যে কথায় কথায় পুলিশ আনবেন। ভিসি ছাত্র-ছাত্রীদের মারলো, আমরা দেখলাম। লাঠিপেটা করলো। কেন এটা করলো? কোনো ছাত্র আন্দোলনকেই ছোট করে দেখা উচিত না। আমি মনে করি অবিলম্বে আর কোনো তদন্ত রিপোর্ট নয়, আলাপ-আলোচনা নয়, শিক্ষামন্ত্রী আছেন, প্রধানমন্ত্রী আছেন। ভিসিকে আজকের মধ্যে ওখান থেকে উইথড্র করে নিয়ে আসেন। ছাত্রদের ক্লাসে ফিরে যেতে সাহায্য করেন।’

জাতীয় পার্টির আরেক সাংসদ সুনামগঞ্জের পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ সংসদে বলেন, ‘সিলেটের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে লাগাতার আন্দোলন চলছে। ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু হওয়ার পরেও তিনি অভিভাবক হিসেবে ছাত্রদের সাথে কোনো আলাপ-আলোচনা না করার কারণে এক পর্যায়ে আমরণ অনশন কর্মসূচিতে যায়। শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আছেন। কিন্তু এই ভিসি নির্লজ্জের মতো, সব আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে বসে আছেন। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা তাকে চায় না, কিন্তু তিনি একটি লক্ষ্মীন্দরের বাসার মতো তার বাসাকে বানিয়ে সেখানে আছেন। তিনি পদত্যাগ করবেন না।’

তিনি বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রীও আলোচনার চেষ্টা করেছেন। শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হচ্ছে। ভিসি কীভাবে বাসায় থাকেন? তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে সরকারের উচিত তাকে আজকের মধ্যে অপসারণ করে শিক্ষার্থীদের হলে ফিরে যেতে সাহায্য করা।’