শ্বশুর-শাশুড়ির খেদমতের বাধ্যবাধকতা ইসলামের কোথায় আছে!

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জানুয়ারি ৩০ ২০২১, ০১:৪৩

ফাহিম বদরুল হাসান:

‘শ্বশুর-শাশুড়ির খেদমত, শ্বশুরবাড়িতে রান্নাবান্নাসহ সাংসারিক কাজ ইত্যাদি করার কথা কোর’আন-হাদিসের কোথায় আছে’- প্রশ্নগুলোর চর্চা হচ্ছে বছর কয়েক থেকে। অনেকটা যুক্তিযুক্ত মনে হলেও, এসব প্রশ্নের উৎস এবং গতিপথ সাংসারিক জীবনে খুবই স্পর্শকাতর- সেটা হয়তো অনেকেই অনুধাবন করতে না পেরেই অনেক প্র্যাক্টিসিং মুসলিম নারীও কোরাস ধরছেন।

কথা হচ্ছে, কোর’আন-সুন্নাহ থেকে জীবন-জিজ্ঞাসার সলিউশন খোঁজা অতি জরুরি। কিন্তু একথা ভুলে গেলে চলবে না যে, সামাজিক জীবনে এমন কিছু বিষয়, রীতি-রেওয়াজ আছে, যেগুলো পারিবারিক জীবন থেকে শুরু করে সামাজিক কাঠামো পর্যন্ত অটুট এবং সজীব রাখতে সহায়তা করে। এইসব রেওয়াজ যদিও ইসলামে ফরয/ওয়াজিব করা হয়নি, তবে আমূলে হারামও করেনি।

তাই হাজার বছরে নির্মিত একটি ঐতিহ্য যতক্ষণ না ইসলামের সাথে কন্ট্রাডিক্ট হবে, ততক্ষণ এর বিপরীতে অবস্থান না নেয়াই শ্রেয়। কারণ সামাজিক, পারিবারিক রীতিনীতি হুট করে তৈরি হয়নি বলে সমাজ গবেষণায় দেখা যায়। দীর্ঘ পথ পরিক্রমায়, ধর্মীয় নীতির সূক্ষ্ম বিশ্লেষণে একেকটি রীতি সভ্যতায় যোগ হয়ে থাকে।

কেন শ্বশুর-শাশুড়ির খেদমত করা উচিত, এর বেশ কিছু কারণ রয়েছে:

১. মানবতার খাতিরে:
আমাদের সমাজের মা-বাবাদের প্রায় সবাই নিজেদের জীবন-যৌবন শেষ করে দেন সন্তানদের জীবন গঠনে। বড় হলে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে স্বামীর ঘরে পাঠিয়ে দেন, পড়ন্ত বেলায় তারা কাদের কাঁধে পরিবারের ভার দেবেন। তাদের পরিচর্যা, দেখভাল কে করবে, যদি ছেলের বউয়েরা না করেন? আমাদের কালচারে ক’দিন পরে ছেলের বউও শাশুড়ি।

পাশ্চাত্য সমাজ হলে হয়তো অনায়াসে বৃদ্ধাশ্রমের কথা বলা যেতো। কারণ, এদের সংস্কৃতিতে শ্বশুর-শাশুড়িসহ শ্বশুরবাড়ির খেদমত নেই বলে বুড়ো বয়সে কুকুরের বা এসিস্টেন্ট সোস্যালের আশ্রয়ে যায়, নতুবা আশ্রমে যায়।

২. আপন সুখের জন্য:
নারী তার শ্বশুর-শাশুড়ির খেদমত করা উচিত নিজের সুখের কথা চিন্তা করে। ধরুন, একজন শাশুড়ি তার ছেলের বউয়ের আচরণে অখুশি হয়ে ছেলের প্রতি অখুশি হলেন। ছেলে তখন মায়ের অসন্তুষ্টির ভয়াবহতা বিষয়ক আয়াত এবং হাদিসসমূহ সামনে রেখে বললেন, ‘ঠিক আছে। ইসলামে যেহেতু ফরয নয় শ্বশুর-শাশুড়ির দেখভাল করা, সাংসারিক কাজ করা, সেহেতু আমি করবো না। সাথে সাথে আপনার স্বামী বললেন- ইসলামে যেহেতু ফরয নয় যে, দ্বিতীয়/তৃতীয়/চতুর্থ বিয়েতে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি নেয়া, সেহেতু আমি আমার মায়ের খেদমতের জন্য আরো বিয়ে করবো।
চিন্তা করুন, ফলাফল কী হতে পারে? দাম্পত্য-কলহ থেকে ডিভোর্স পর্যন্ত গড়াবে। ডিভোর্স যদি নাও হয়; ঝগড়া, হিংসা, ক্রোধ ইত্যাদি হয়ে উঠবে নারীর দৈনন্দিন সমস্যা।

৩. প্রতিফল:
‘শ্বশুর-শাশুড়ির খেদমত ইসলামে নেই’ বলে তাদেরকে শেষ বয়সে একাকী এবং ‘লা-চার’ করে দেয়া দেখে যদি সন্তানেরা এই শিক্ষা পায় এবং সন্তানেরা পরবর্তী জীবনে যদি বলে, ইসলামের কোথায় আছে যে, মা-বাবাকে আমার সংসারেই রাখতে হবে? হ্যাঁ; যেহেতু প্রতিপালন ফরয, তাই আমি প্রতিপালন করবো, তবে তাদেরকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে দিয়ে। কেমন হবে?

● অতএব সমাজে প্রচলিত কোনো কাজ ‘ফরয নয়’ তাই ছেড়ে দিতেই হবে কিংবা একটা অপ্রচলিত কাজ ‘জায়েয আছে’ তাই করতেই হবে, এরকম চিন্তা-চেতনা সর্বক্ষণ ধরে রাখলে অনেক প্রতিকূলতা, প্রতিবন্ধকতা, পারস্পরিক বিচ্ছিন্নতার সৃষ্টি হতে পারে। ইসলামে হারাম না হলে অবশ্যই ঐতিহ্যকে শ্রদ্ধা করা উচিত। এগুলো মেনে চলাতেই সফলতা।

‘কোর’আন-হাদিসের কোথাও নেই’ বলেই সামাজিক কাঠামোতে লাথি দিলে একটি সুগঠিত সমাজ কাঠামো বিপর্যস্ত হতে পারে।

লেখক: খতিব, মেট্রো হোশ মসজিদ
প্যারিস, ফ্রান্স