শেরপুরে ২শ বছরের ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা হচ্ছে না

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জানুয়ারি ১৩ ২০২১, ১৭:২৯

আহমদ মালিক, ওসমানীনগর প্রতিনিধি: সিলেট বিভাগের মিলনস্থল শেরপুরে করোনা ভাইরাসের কারণে এবছর জমে উঠছেনা ২শ বছরের ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা। পৌষ সংক্রান্তিকে ঘিরে প্রতিবছর সিলেট, হবিগঞ্জ,সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার মিলনস্থল ওসমানীনগরের সীমান্তবর্তী মৌলভী বাজার সদর উপজেলার শেরপুরে কুশিয়ারা নদীর তীর ঘেষে প্রতি বছর তিনদিন ব্যাপী মাছের মেলার আয়োজন করা হলেও এবছর নেই মেলার জৌলুস। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় শেরপুরে কোনো মেলার আয়োজন না করার জন্য মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। প্রতিবছর জেলা প্রশাসন কর্তৃক দরপত্রের মাধ্যমে মেলার ইজারা প্রদান করা হলেও এ বছর জেলা প্রশাসন কাউকে ইজারাও প্রদান করেনি বলে জানা গেছে।

জানা যায়, সিলেট বিভাগের বৃহত্তর ঐতিহ্যবাহী এ মাছের মেলা প্রায় দুইশত বছর যাবৎ চলে আসছে। ‘মাঘের শীতে বাঘে কাঁপে’, সেই হাড় কাঁপানো শীতকে উপেক্ষা করে মেলাকে ঘিরে প্রতি বছর লক্ষাধিক ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগমে উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজ করত শেরপুরে। মেলায় মৎস্য ব্যবসায়ীরা ডালায় ডালায় সাজিয়ে রাখতেন বিশাল আকারের মাছ। বোয়াল, রুই, কাতলাসহ বিভিন্ন প্রজাতির উল্লেখযোগ্য মাছের পসড়া সাজিয়ে বিক্রি করা হতো মাছ। নামে মাছের মেলা হলেও এই মেলাতে সব ধরণের জিনিসপত্র স্বল্প মূল্যে পাওয়া যেত।

তাছাড়া, কালের বিবর্তনে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া অনেক প্রজাতির মাছও এই মেলায় প্রদর্শন ও বিক্রি করা হতো। মেলাটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে হলেও রুপ নিয়েছিল সার্বজনীন উৎসবে। এই মেলায় ছোট মাছ থেকে শুরু করে আড়াই’শ কেজি ওজনের মাছেরও দেখা মিলত। মাছগুলো মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন নদ-নদী, খাল, বিল এবং হাওড়ের থেকে শিকার করে এনে মেলায় বিক্রি করা হতো বলে জানান সংশ্লিষ্ট অনেকে

মেলাকে ঘিরে মৎস্য ব্যবসায়ীরা ১৫ দিন আগে থেকে মাছ মজুদ রেখে মেলায় আসার প্রস্তুতি নিতেন। পৌষ সংক্রান্তিকে সামনে রেখে হিন্দু ধর্মের সবাইকে মাছ কিনতে হবে এমন নিয়ম থাকলেও সেতু বন্ধনে আবদ্ধ থাকায় ভিন্ন ধর্মীরাও বড় বড় মাছ কিনতে পিছিয়ে থাকতো না। মেলাকে কেন্দ্র করে সবাই বড় মাছ কিনে আত্মীয়ের বাড়িতে উপহার পাঠাতেন। ফলে লোকদৃশ্যের বন্ধনে পরিণত হয়েছিল শেরপুরের ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা। মেলায় মাছ ছাড়াও গৃহস্থালী সামগ্রী, হস্ত শিল্প, গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী পণ্য, খেলনা সামগ্রী, নানা জাতের দেশীয় খাবারের দোকান, কাঠের তৈরী ফার্নিচার এবং সব ধরণের পণ্য পাওয়া যেত। মেলায় সস্তা দরে জিনিষপত্র ক্রয় করতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্রেতা-বিক্রেতারা ছুটে আসতেন এখানে।

সব মিলিয়ে মেলাকে ঘিরে এলাকায় মাসব্যাপী সাজ সাজ রব শুরু হতো। এবার করোনার কারণে এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যে বাঁধা পড়ছে। ফলে ব্যবসায়ীদের মধ্যেও নেই কোনো প্রতিযোগিতা। নিরব রয়েছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা জানান, সরাদেশে সব কিছু সচল এবং নানা ধরণের বড় বড় অনুষ্ঠান পালন করা হলেও করোনার অজুহাতে এবছর মেলার আয়োজন না হওয়ায় স্থানীয়রা হতাশ হয়েছেন।

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, করোনাকালীন সময়ে বাড়তি সর্তকতার কারণে এ বছর ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলাটি হচ্ছে না। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তা সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী কোনো এক সময় যদি সম্ভব হয় তাহলে হয়তো মেলা করা যেতে পারে। ঐতিহ্যের কারণে এমনটি বিবেচনায় রাখছেন বলে জানান তিনি।