লুটনে বাতিঘর আয়োজিত ‘চৈতি হাওয়ায় কবিতা সন্ধ্যা’

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

এপ্রিল ০৮ ২০১৮, ১৫:০৭

কাইয়ূম আবদুল্লাহ লন্ডন, ৫ মার্চ : চৈত্র মাস বা চৈতি হাওয়া। বাঙালি জীবনাচারে উন্মাতাল ও উদ্দাম প্রাকৃতিক আবহের কাল। বীজ উদগীরণের সময়। কাঠফাটা রৌদ্রের চৌচির জীবনে প্রতীক্ষিত বৃষ্টির প্রত্যাশিত পরশে অঙ্কুরায়নের মূহুর্ত। ঠিক এই সময়টাতে বিলেতে প্রচণ্ড শীতের পর বাসন্তি আবহে চারিদিকে চেরি ফুলের পরিস্ফুটনে শুরু হয় মরা প্রকৃতিতে প্রাণের সঞ্চারণ। এসব দিক থেকে বাংলাদেশ ও বৃটেনের প্রকৃতিতে খানিকটা মিল পাওয়া যায়। তাছাড়া উৎসবপ্রিয় বাঙালি জীবনে বারো মাসে তেরো পার্বনেরও সংস্কৃতি চালু আছে। বছরের কোনো না কোনো সময় বৈশাখী মেলাসহ নানা উ্সব-আয়োজন নিয়ে মেতে থাকে বিলেতের বাঙালি কমিউনিটি। চিরায়ত প্রাকৃতিক এই ত্পার্যপূর্ণ সময়টিকে লুটনের সাহিত্য ও সংস্কৃতিবোদ্ধা বাঙালিরা বরণ করেন কবিতা, গান, নৃত্যসহ সমন্নিত সাংস্কৃতিক আয়োজন ‘চৈতি হাওয়ায় কবিতা সন্ধ্যা’ শিরোনামে। এটাই তাদের প্রথম কোনো উদ্যোগ নয়, অনেকদিন থেকেই বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন তারা। এসবের সাথে যুক্ত হচ্ছে নতুন প্রজন্মও। সবকিছু মিলিয়ে বলা যায় বিলেতে বাঙালি সংস্কৃতিক তোলে ধরার অনন্য প্রয়াস। আগামীতেও তা অব্যাহত থাকবে বলে জানালেন আয়োজক সংস্থা বাতিঘরের কর্তাব্যক্তিরা। তাই প্রতিবছরের ন্যায় এবারও তারা ১৪ এপ্রিল শনিবার সাড়“রে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের ঘোষণা দিয়েছেন।
গত ১ এপ্রিল, রোববার লুটনের বারিপার্কস্থ পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে মনস্থ হয় ‘চৈতি হাওয়ায় কবিতা সন্ধ্যা’। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট কমিউনিটি এক্টিভিস্ট ড. নাজিয়া খানম এমবিই। আর পুরো অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন বাতিঘরের ট্রাস্টি সংস্কৃতিসেবী হাসান আখন্দ। সংস্কৃতিকর্মী উর্মিলা আফরোজ ও মোয়াজ্জেম হোসেনের অনবদ্য উপস্থাপনায় এতে কবিতা পাঠের পাশাপাশি গানের সাথে নৃত্যে অংশ নেয় শিশু-কিশোররা। আয়োজকদের আমন্ত্রণে লণ্ডন থেকে অংশ নেয় অধ্যায়। অনুষ্ঠানে অধ্যায়-এর জন্যে বরাদ্দকৃত পর্বে সাপ্তাকি সুরমার সম্পাদক কবি আহমদ ময়েজের সঞ্চালনায় এতে স্বরচিত কবিতা পাঠ, গান ও আবৃত্তিসহ নানা পরিবেশনায় অংশ নন চ্যানেল-এর সিনিয়র সংবাদ পাঠক ও আবৃত্তিকার কবি তৌহিদ শাকীল, বাচক ও সঙ্গীতশিল্পী সোমা দাস, সুরমার বার্তা সম্পাদক কবি কাইয়ূম আবদুল্লাহ, কবি উদয় শংকর দুর্জয় ও কবি শরীফুজ্জামান। অধ্যায়ের সংক্ষিপ্ত সময়ের পরিবেশনায় নানাভাবে মুগ্ধতা প্রকাশ করেন উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাবৃন্দ।
শুরু থেকে পুরো অনুষ্ঠানকে মাতিয়ে রাখেন স্থানীয় কবি, সঙ্গীতশিল্পীরা ও সংস্কৃতিকর্মীরা। তারা স্বরচিত কবিতা পাঠ, আবৃত্তি, সঙ্গীত ও নৃত্যসহ বিভিন্ন পরিবেশনায় অনুষ্ঠানকে মাতিয়ে রাখেন। কবিতা আবৃত্তিতে অংশ নেন যথাক্রমে ড. আনোয়ারুল হক, লুলু পারভিন, মাহজুবা তাহমিন খান, নেসমিনা পারভীন নওরীন ও আব্দুল বাসিত চৌধুরী। স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন মেহেদি কবির রূপা, মো. খয়ের ও শাহনাজ চৌধুরী মেরী এবং সম্মিলিত গানের সাথে নৃত্যে অংশ নেয় কিশোরী কিম্বালি খান। সভাপতির সমাপনী বক্তব্যের মাধ্যমে শেষ হয় মূল পর্ব।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লাইব্রেরি মিলনায়তনের মূল অনুষ্ঠান শেষ হলেও ভোজন পর্বে স্থানীয় পানসি রেষ্টুরেণ্টে চলে দীর্ঘ আড্ডা। এখানেও গানে কবিতায় নিজেদের উজাড় করে দেন কেউ কেউ। এই আড্ডাপর্ব মূলতচ্ঞ আহমদ ময়েজের মরমী গান, সোমা দাসের সাঁওতালি গান এবং তৌহিদ শাকীল ও ড. আনোয়ারুল হকের কবিতা আবৃত্তি পরিবেশনায় উপভোগ্য হয়ে ওঠে। এছাড়াও চলে সমবেত কণ্ঠে জনপ্রিয় বিভিন্ন বাংলা গানের পরিবেশনা।
বিলেতে বাঙালি সংস্কৃতিক তোলে ধরতে আগামীতে আরো নান্দনিক আয়োজনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন বাতিঘরের সাথে সংশ্লিষ্টরা। সবকিছু মিলিয়ে এক অনন্য আবহে সমাপ্ত হয় লুটনের ষ্ক্রচৈতি হাওয়ার কবিতা সন্ধ্যাম্ব মনোমুগ্ধকার পরিবেশনা।