লন্ডনে প্রথমবার ইউকে জমিয়তের উদ্যোগে শায়খুল ইসলাম কনফারেন্স অনুষ্ঠিত।

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

সেপ্টেম্বর ১৮ ২০১৮, ১৩:৫১

শায়খুল ইসলাম মাদানীর (রাহ:) অসাধারণ চারিত্রিক গুণাবলী আমাদের জন্য সর্বদা অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকের উদ্যোগে লন্ডনে প্রথমবার স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রসেনা, জমিয়তে উলামার সাবেক সভাপতি, শায়খুল আরবে ওয়াল আজম, শায়খুল ইসলাম সায়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানী (রাহ:) এর স্বরণে “শায়খুল ইসলাম কনফারেন্স” গত ১৬ সেপ্টেম্বর রবিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পূর্ব লন্ডনের ফোর্ডস্কয়ার মসজিদের বিশাল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ জনকীর্ণ স্বরণ সভায় লন্ডন সহ ইউকের বিভিন্ন শহর থেকে প্রচুর সংখ্যক উলামায়ে কেরাম ও সুধীজন স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণ করেন। শায়খুল ইসলাম কনফারেন্সে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন মাদানী পরিবারের গৌরবোজ্জল ব্যক্তিত্ব, ভারতের স্বনামধন্য নেতৃপুরুষ, জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের জেনারেল সেক্রেটারী মাওলানা সায়্যিদ মাহমুদ মাদানী । ইউকে জমিয়তের সভাপতি ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহকারী মহাসচিব মাওলানা শুয়াইব আহমদের সভাপতিত্বে এ সভায় সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকের জেনারেল সেক্রেটারী মাওলানা সৈয়দ তামীম আহমদ ও জয়েন্ট সেক্রেটারী মাওলানা শামছুল আলম কিয়ামপুরী।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকের প্রধান উপদেষ্টা মাওলানা শায়খ আসগর হোসাইন, উপদেষ্টা মাওলানা শায়খ তহুর উদ্দীন, ব্রাডফোর্ড থেকে আগত স্বনামধন্য আলেম মুফতি শায়খ সাইফুল ইসলাম, মুফতি আব্দুর রহমান মানগেরা, লুটন থেকে আগত জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম আজকের সহ সভাপতি মুফতি মুহাম্মদ সাদিক। কনফারেন্সে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউকে জমিয়তের সিনিয়র সহ সভাপতি মুফতি আব্দুল মুনতাকিম। অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ গ্রহন করেন কাউনসিল অফ মস্ক এর চেয়ারম্যান হাফিজ মাওলানা সামছুল হক, সাবেক রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা মুখলেছুর রহমান চৌধরী, বিশিষ্ট আলেম মাওলানা শায়খ তরিক উল্লাহ, মাওলানা আব্দুর রহিম, মাওলানা জমসেদ আলী, মাওলানা হেলাল উদ্দিন, মাওলানা ইমদাদুর রহমান মাদানী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকের সহ সভাপতি মাওলানা ফখরুদ্দীন সাদিক, মাওলানা নাজির উদ্দিন, মাওলানা সৈয়দ হাসনুল ইসলাম, ইউকে জমিয়তের উপদেষ্টা আলহাজ্ব শামসুজ্জামান চৌধুরী, মাওলানা আব্দাল হোসেন চৌধুরী, আলহাজ্ব খালিছ মিয়া, আল্লাহাজ্ব সৈয়দ জিয়াউল হক, আলহাজ্ব মোহাম্মদ আলী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকে‘র ট্রেজারার হাফিজ হুসাইন আহমদ বিশ্বনাথী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা সৈয়দ নাঈম আহমদ, তাফসিরুল কোরআন বিষয়ক সম্পাদক হাফিজ মাওলানা মুশতাক আহমদ, সহকারী ট্রেজারার মুফতি মুতাহির সিদ্বিক, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হাফীজ মাওলানা ইলিয়াস, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক হাফিজ জিয়াউদ্দীন, মাওলানা শেখ আব্দুস সামাদ, মাওলানা মঈন উদ্দিন, জমিয়ত নেতা মুফতি নোমান সিদ্দিক, বিশিষ্ট আলেম মাওলানা আবুল হাসনাত চৌধুরী, যুব বিষয়ক সম্পাদক মুফতি সৈয়দ রিয়াজ আহমদ, প্রশিক্ষন সম্পাদক হাফিজ মাওলানা সৈয়দ হোসাইন আহমদ, প্রচার সম্পাদক মাওলানা নাজমুল হাসান, সহ প্রচার সম্পাদক হাফিজ মাওলানা রশিদ আহমদ, মিডিয়া সেক্রেটারি হাফিজ মাওলানা খালেদ, বার্মিংহাম জমিয়তের সেক্রেটারি মাওলানা শুয়াইব চৌধরী, মাওলানা আবুল মনসুর, সৈয়দ আব্দুর রউফ, হাফিজ মাওলানা নুমান, মাওলানা আব্দুল আউয়াল, হাফিজ মাওলানা লুতফর রহমান, হাফিজ গিয়াসউদ্দিন, সৈয়দ শুয়াইব আহমদ প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভারত থেকে আগত মাওলানা সায়্যিদ মাহমুদ মাদানী বলেন, কেবল বংশগত সূত্রে কোন মহান ব্যক্তিত্বের সন্তান হওয়াই বিশেষত্বের কারন বিবেচিত হতে পারে না। আমল, আদর্শ অনুস্মরণ ও মিশন বাস্তবয়ন ই আসল বিষয়। এ দিক বিচারে যারা রুহানী সন্তান হিসেবে নিজেদের জীবন যে গড়ে তুলতে পারে, সফলতা এবং বিশেষত্ব কেবল তারাই অর্জন করতে পারে। হযরত মাদানী (রাহ্:) এর বেলায় আমাদের কে একই নীতি অবলম্বন করে জীবন পথে অগ্রসর হওয়া উচিত। হযরত মাদানী (রাহ্:) কে বুঝতে হলে আমাদের কে আগে হযরত শায়খুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদ হাসান (রাহ্:) কে অনুধাবন করতে হবে। শায়খুল হিন্দের “জানেশীন” ও উত্তরাধিকার বহনকারী প্রধান স্হলাভিষিক্ত হিসেবে শায়খুল ইসলাম সায়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানী (রাহ্:) কে ই সবার উপরে স্থান দেওয়া হয়েছে। এই গ্রহণযোগ্যতা ও দায়ীত্ব লাভ তার শ্রেষ্ঠত্ব কে সু প্রমাণিত করে। মাওলানা মাহমুদ মাদানী তার পূর্ব পুরুষ শাইখুল ইসলাম মাওলানা সায়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানী (রাহ্:) সম্পর্কে বলেন যে তার অসংখ্য কারামত বিদ্যমান রয়েছে, কিন্তু এ গুলোর অনুস্মরণ আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়, তবে তার অসাধারণ চারিত্রিক গুণাবলী আমাদের জন্য সর্বদা অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তাঁর মহান ব্যক্তিত্ব থেকে আমরা বিনয়ের শিক্ষাটাও যদি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাস্তবায়িত করতে পারি, তা হলে সফলতার দরজা উন্মুক্ত হতে পারে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাওলানা শায়খ আসগর হোসেন বলেন হযরত মাদানীর (রহ.) জীবনে রাজনীতি ও তাহাজ্জুদের মধ্যে কোনো পার্থক্য ছিল না। তিনি আমাদের জন্য উত্তম আখলাকের দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। কনফারেন্সে মূল প্রবন্ধে মুফতি আব্দুল মুনতাকিম বলেন, হযরত মাদানীর ব্যক্তিগত, পারিবারীক, সামাজিক, রাজনৈতিক, চারিত্রিক এবং ইলমি ও আমলী ‘‘মাকাম‘‘ এতো উপরে ছিল যে ভাষা দিয়ে ব্যক্ত করা অনেক কঠিন বিষয়। তাঁর অল্পদিনের সান্যিধ্যে যারা ছিলেন, তাদের দ্বারাও লক্ষ লক্ষ মানুষ হেদায়েত প্রাপ্ত হয়েছে। এবং তাঁদের একেক জনের মাধ্যমে শত শত মসজিদ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা লাভ হয়েছে, এর দ্বারা শায়খুল ইসলাম মাদানীর সুউচ্চ মাকাম সম্পর্কে সহজেই অনুমান করা যায়। মুফতি সাইফুল ইসলাম বলেন শায়খুল হিন্দ (রহ.) অসংখ্য ইলমি ও আমলী যোগ্যতার এক সমাহার ছিলেন। শায়খুল হিন্দ-এর বিভিন্ন যোগ্যতা ও গুণ বিভিন্ন ছাত্রদের মাধ্যমে পরিস্ফূটিত হয়েছে। শায়খুল হিন্দ-এর মোজাহাদা- ধৈর্য্য ধারণ ও দীর্ঘ সংগ্রামের চিত্র দুনিয়া হুসাইন আহমদ মাদানীর মাধ্যমে দেখতে পেয়েছে।
মুফতি আব্দুর রহমান মাঙ্গেরা বলেন, হযরত মাদানীর মিশন হযরত মাওলানা সৈয়দ আসআদ মাদানীর সূত্র ধরে মাওলানা মাহমুদ মাদানীর মাধ্যমে বাস্তবায়নের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আল্লাহ্ তায়ালা এ মিশন বাস্তবায়নের চেষ্টায় আমাদেরকেও অংশগ্রহণের তাওফিক দান করুন।
সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা শুয়াইব আহমদ সকল উলামায়ে কেরাম ও উপস্থিতির শুক্রিয়া জ্ঞাপন করেন। পরিশেষে বিশিষ্ট আলেম শায়খ নূরুল ইসলাম বিশ্বনাথীর বিশেষ মোনাজাতের মাধ্যমে শায়খুল ইসলাম কনফারেন্সের পরিসমাপ্তি হয়।