রাসূল সা. এর খাদ্যাভ্যাস ও মানুষের শারীরিক সুস্থতা

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জানুয়ারি ১৬ ২০২১, ২৩:৩৪

মুফতি আহমদ যাকারিয়া

সুস্থ দেহ, প্রশান্ত মন আমাদের এই দুনিয়ার জীবনে এনে দেয় জান্নাতি সুখ। তাই আমাদের উচিত দেহ-মনে সুস্থ থাকার চেষ্টা করা। সুস্থ থাকার জন্য অনেক চেষ্টা-তদবিরই আমরা করি থাকি। অনেক ছোটাছুটির পরেও সুস্থতা নামক সেই সোনার হরিণটি অধরাই থেকে যায় আমাদের কাছে। তবে যারা রাসূল সা. এর স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ মেনে চলেন, সুস্থতা তাদের কাছে ধরা দেয়। সুখ তাদের জীবনের সঙ্গী হয়।

একটি সুন্দর ও সুস্থ জীবন গড়ে তুলতে আমরা প্রতিনিয়ত প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছি। জীবনের কষাঘাতে লক্ষ্যের দিকে চালনার সময় আমরা আমাদের শারীরিক সত্তাকে প্রায়শই অবহেলা করি, ভারসাম্যহীন খাবার গ্রহণ করি এবং শারীরিক অনুশীলনের প্রয়োজনীয়তাকে উপেক্ষা করি।

অথচ আমাদের শরীর ও মন উভয়ই আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে আমাদের উপর আমানত। এই আমানত রক্ষার্থে আমরা কিভাবে জীবন যাপন করছি সেটিও অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে কেউ পারিবারিক সুরক্ষা এবং সুস্বাস্থ্যের অনুভূতি নিয়ে দিন শুরু করে এবং সেদিনের জন্য তার নিকট পর্যাপ্ত রিযিক থাকে, সে যেন পুরো দুনিয়ার সব নিয়ামত পেয়ে গেছে।” (তিরমিযী)

দ্বীনের স্বার্থেই আমদেরকে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য উৎসাহিত করা হয়। কারণ আমরা দেখি যার ওজন বেশি, তার শারীরিক সমস্যাও বেশি এবং নামাজ আদায়ের সময় তারাই বেশি চেয়ার দখল করে থাকেন।

এটি একটি দুঃখজনক পরিস্থিতি যে, যখন একজন ব্যক্তি সিজদা করতে এবং রুকুতে যেতে ব্যথা অনুভব করে। এ কারণে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল চান আমরা যেন সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হই।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহর নিকট দুর্বল মুমিন অপেক্ষা সবল মুমিন বেশি পছন্দনীয়।” (বুলুগুল মারাম)

আমরা কীভাবে সক্রিয় জীবনযাপন বজায় রাখব সে সম্পর্কে কুরআন ও সুন্নাহতে অনেক দিকনির্দেশনা রয়েছে।

সুস্থ থাকার জন্য নিয়মিত দু’আ করুন। যখনই কোন কিছুর দিকে যাত্রা করার সময় হবে, তখনই আমাদের উচিত আল্লাহর কাছে দু’আ করা। আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত আমরা কোন কিছু বাস্তবায়ন করতে পারব না।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “দু’আ একটি স্বতন্ত্র ইবাদত।” (তিরমিযী)

আর এই দোয়ার পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাসেও সচেতন হতে হবে।পরিমিতভাবে খাবার খেতে হবে। এ বিষয়ে আল্লাহ্ পাক বলেন;
“হে বনী আদম! তোমরা প্রতিটি নামাজে তোমাদের বেশ-ভূষা গ্রহণ কর এবং খাও ও পান কর; কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না। (আল কুরআন-৭:৩১)

সুতরাং, পরিমিত পরিমাণে খাবার খেতে হবে সুস্থ থাকার জন্য। পাশাপাশি এই খাবারগুলো অপচয়ও না করা।

রাসূলের সুন্নাত থেকে এটাও জানা যায় যে, খাওয়ার সময় তাড়াহুড়া না করা। তাড়াহুড়ার কারণে আমাদের খাওয়া বেশি হয়ে যায়। আর ঠান্ডা খাবার খেলে খাবারের গন্ধে খাবারের প্রতি আগ্রহ কিছুটা হলেও কমে যায়, যার দরুন বেশি খাওয়া যায় না, তাই বেশি খাওয়া যেমন ক্ষতিকর তেমনিভাবে কম খাওয়াও বিপদজনক।

রাসুল (সাঃ) এর খাবার খাওয়া ও আধুনিক বিজ্ঞান:

১- হেলান দিয়ে না খাওয়া। কোনো কিছুর উপর হেলান দিয়ে খাবার খেতে তিনি নিষেধ করেছেন। হেলান দিয়ে খাবারের ফলে পেট বড় হয়ে যায়। দ্বিতীয়ত, এটা দাম্ভিকতার আলামত। আবু হুজাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.)-এর দরবারে ছিলাম। তিনি এক ব্যক্তিকে বলেন, আমি টেক লাগানো অবস্থায় কোনো কিছু ভক্ষণ করি না। (বুখারি, হাদিস ৫১৯০, তিরমিজি, হাদিস ১৯৮৬)

পাশাপাশি হেলান দিয়ে খেলে খাবার গলায় আটকে যেতে পারে, শ্বাসনালিতে ঢুকে যেতে পারে। নবী করিম (সা.) বালিশে বিশ্রাম নেওয়া অবস্থায়ও খাবার খেতেন না। (বোখারি)।

২- দাঁড়িয়ে পানি পান না করা। কারণ এরকম পান করলে পাকস্থলীর দেয়ালে অতিরিক্ত চাপ পড়ে। কারণ পানি অন্যান্য খাবারের মতো হজম প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায় না, খাদ্যনালী দিয়ে সরাসরি পাকস্থলিতে গিয়ে পৌঁছায়। ফলে দাঁড়িয়ে পানি পান করলে পাকস্থলীর দেয়ালের ক্ষতি হয়। দাঁড়িয়ে পানি পান করলে পানির কোন পুষ্টিগুণ শরীরে শোষণ হয় না। এতে পাকস্থলিত্র ক্ষত, গ্যাস্ট্রিক সমস্যা বাড়ে , কিডনি পানি শোষণ প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

“রাসূল সা. দাঁড়িয়ে পান করতে নিষেধ করেছেন।” (মুসলিম, ৫০১৭)
“নবী (সঃ) কোনো ব্যক্তিকে দাঁড়িয়ে পান করতে নিষেধ করেছেন।” (মুসলিম )
“নবী করীম (সঃ) দাঁড়িয়ে পান করার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন।” (মুসলিম, ৫০২০)

৩- অপবিত্র শরিরে খাদ্য গ্রহন না করা। যদি জানাবাত তথা সহবাসের পর বা অপবিত্র হলে খাবার খেতে হয় তবে ওজু করে নিবে।
(মুসনদে আহমদ, তিরমিজি )

কারন অপবিত্র শরির বা সহবাসের পর দেহে সকল অরগ্যান কাজে নিয়জিত থাকে। এতে শরিরের তাপমাত্রা পরিবর্তন হয় এবং উষ্ণতা বাড়তে থাকে। আধুনিক বিজ্ঞানে স্বীকৃত যে, ওজু করলে এতে হাত, পা, মুখে যে পানি প্রবাহ হয় এতে শরীরের রক্ত চাপ, তাপমাত্রা স্বাভাবিক হয়ে যায়, ফলে বিভিন্ন রোগের কারন হয় না। অর্থাৎ শরীরের রক্ত চাপ, তাপমাত্রা স্বাভাবিক না করে খাবার খাওয়া ঠিক না এতে শরীরের ঝুঁকি বাড়তে থাকে। এতে শরীরের রক্ত চাপ, তাপমাত্রা বাড়ন্ত অবস্থায় খাবার খেলে পাকস্থলি খাবার পাকস্থলিতে গরম বাড়িয়ে দেয় , এতে হৃদরোগের প্রবল সম্ভবনা বেড়ে যায়।

৪- খাবারের মধ্যে তাড়াহুড়া না করা।
ধীরে-সুস্থে খাওয়া সুন্নত এবং এটাই স্বাস্থ্যসম্মত। তাতে খাবার ভালো করে চিবানো হয়। মুখের লালা খাদ্যের সঙ্গে ভালোভাবে মিশতে পারে। হজমও সহজতর হয়। খাবার বিচূর্ণ করতে পাকস্থলীর ওপর বাড়তি চাপ পড়ে না। বুকজ্বলা কম হয়। আস্তে-ধীরে খেলে খাওয়ার সময়ই কিছু খাবার হজম হয়ে রক্তে চলে যেতে পারে। এতে ক্ষুধাও কিছুটা নিবৃত হয়। ফলে কম খাবার খেলেও ক্ষুধা মিটে যায়। হাদীসে এসেছে যে,
“রাসুল সা. তিন আঙুলে খেতেন এবং খাওয়ার পর জিহ্বা দিয়ে আঙুল চেটে খেতেন।” (বোখারি ও মুসলিম) অর্থাৎ তিনি খুব ধীরে-সুস্থে খেতেন। একসঙ্গে বেশি খাবার মুখে দিতেন না।

৫- খাবার খাওয়া শেষে দোয়া পড়া।
খাবার শেষে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে এই দোয়া পড়া; ‘আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি আতআমানা ওয়াসাকানা ওয়াজাআলানা মিনাল মুসলিমিন।’ অর্থাৎ ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের খাবার খাইয়েছেন, পানি পান করিয়েছেন এবং মুসলমান বানিয়ে জন্ম দিয়েছেন।’ (আবু দাউদ : ৩৮৫১)।

রাসূল সা. এর খাবার পদ্ধতি:

খাওয়ার সময় রাসূল সা. কখনোই মুখ ভরে খাবার নিয়ে তা গিলে ফেলতেন না এবং খাবার চিবানোর সময়ও তিনি কোনো প্রকার শব্দ করতেন না। রাসূল (সা.) যখন খেতেন, তখন পরিমিত ও ভালোভাবে চিবিয়ে খেতেন।

রাসূল (সা.) থেকেই আমরা শিক্ষা পাই, পাকস্থলিকে তিন ভাগ করে এক ভাগ খাবার, এক ভাগ পানীয় দিয়ে পূর্ণ করে শেষ এক ভাগ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খালি রাখতে হবে।

তিনি আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, আমাদের অসুস্থতার অন্যতম কারণটি হলো আমাদের নির্ধারিত পরিমাণের অধিক খাওয়া বা ভুল উপায়ে খাওয়া।

রাসূল (সা.) প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত খাবারই বেশি গ্রহণ করতেন। গাছ থেকে পাড়া খেজুর তিনি খেতেন এবং উটনী বা ছাগীর সদ্য দোহন করা দুধ তিনি পান করতেন। তিনি ছিলেন এমন এক মানুষ, যিনি সবসময় আল্লাহর নেয়ামতকে উপভোগ করতেন।

তার পছন্দের একটি খাবার ছিল সারিদ। এটি ছিল তৎকালীন আরবের বিশেষ এক প্রকার খাবার, যাতে গোশত বা সবজীর ঝোলে রুটি ছোট ছোট করে ডুবিয়ে রাখা হতো।

এছাড়া তরকারীতে অধিক পরিমাণে ঝোল দেওয়ার জন্য তিনি উপদেশ দিতেন, যেনো একসাথে অনেকেই খাবার খেতে পারে এবং প্রতিবেশীদেরও সেখান থেকে দেওয়া কিছু খাবার দেওয়া যায়।

খাবার সময় রাসূল (সা.) কখনোই একা খেতে বসতেন না। বরং অনেক লোককে নিয়ে একত্রে খেতেন তিনি। এমন কোনো হাদীস পাওয়া যায় না, যেখানে জানা যায় যে, তিনি একা একা খাবার খেয়েছেন। কোনো প্রকার চামচ-ছুরির ব্যবহার ছাড়া তিনি হাত দিয়েই খাবার খেতেন।

খাবার ফুঁ দিয়ে ঠান্ডা করতে রাসূল (সা.) নিষেধ করেছেন। আবার খাবার কিছুটা ঠান্ডা হওয়ার আগেই রাসূল (সা.) লোভী ব্যক্তির মতো খাবারে হাত চালাতে নিষেধ করেছেন।

রাসূল (সা.) এর শিক্ষানুযায়ী যে ব্যক্তি খাবার পরিবেশন করবে লোকের সামনে, সে যেন সকলের শেষে খাবার গ্রহণ করে। কেননা এতে করে সে সকলের খাবার পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারবে।

রাসূল সা. যেসব খাবার পছন্দ করতেন:

মুহাম্মদ (সা.) যেসব খাবার গ্রহণ করেছেন, তা ছিল সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। আজকের বিজ্ঞানের গবেষণায় বিমূর্ত হচ্ছে যে, রাসুল (সা.)-এর খাবারগুলোর গুণাগুণ ও মানবদেহের জন্য সেগুলোর প্রয়োজনীয়তা। নিম্নে সংক্ষেপে রাসুল (সা.)-এর কিছু খাবারের আলোচনা বিধৃত হলো।

১- পনির : হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তাবুকের যুদ্ধে রাসুল (সা.)-এর কাছে কিছু পনির উপস্থাপন করা হয়। রাসুল (সা.) বিসমিল্লাহ পড়ে একটি চাকু দিয়ে সেগুলো কাটেন এবং কিছু আহার করেন। (আবু দাউদ : ৩৮১৯)

২- মাখন : হজরত ইবনাই বিসর আল মুসলিমাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, তাঁরা উভয়ে বলেন, ‘একবার আমাদের ঘরে রাসুল (সা.) আগমন করেন। আমরা তাঁর সম্মুখে মাখন ও খেজুর পরিবেশন করি। তিনি মাখন ও খেজুর পছন্দ করতেন।’
(তিরমিজি : ১৮৪৩)

৩- মিঠাই ও মধু : হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) মিষ্টান্ন বস্তু ও মধু পছন্দ করতেন।’
(বুখারি, ৫১১৫; মুসলিম, ২৬৯৫)

বুখারি শরিফের আরেকটি হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মধু হলো উত্তম ওষুধ।’ (৫৩৫৯)

৪- ঘি মাখা রুটি: হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) একদিন বলেন, ‘যদি আমাদের কাছে বাদামি গমে তৈরি ও ঘিয়ে সিক্ত সাদা রুটি থাকত, তাহলে সেগুলো আহার করতাম।’ আনসারি এক সাহাবি এই কথা শুনে এ ধরনের রুটি নিয়ে আসেন…।
(ইবনে মাজাহ : ৩৩৪০)

৫- দুধ : হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘মি’রাজের রাতে বায়তুল মাকদিসে আমি দুই রাকাত নামাজ পড়ে বের হলে জিবরাইল (আ.) আমার সম্মুখে শরাব ও দুধের আলাদা দুটি পাত্র রাখেন। আমি দুধের পাত্রটি নির্বাচন করি। জিবরাইল (আ.) বললেন, ‘আপনি প্রকৃত ও স্বভাবজাত জিনিস নির্বাচন করেছেন।’
(বুখারি : ৩১৬৪, তিরমিজি, ২১৩)

৬- খেজুর : হজরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি রাসুল (সা.)-কে বার্লির এক টুকরো রুটির ওপর একটি খেজুর রাখতে দেখেছি। তারপর বলেছেন, ‘এটিই সালন-মসলা।’ (আবু দাউদ : ৩৮৩০)

অন্য হাদিসে আছে, প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে বাড়িতে খেজুর নেই, সে বাড়িতে কোনো খাবার নেই।’ এমনকি প্রিয় নবী (সা.) সন্তান প্রসবের পর প্রসূতি মাকেও খেজুর খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

৭- কিশমিশ : ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.)-এর জন্য কিশমিশ ভিজিয়ে রাখা হতো এবং তিনি সেগুলো পান করতেন।’ (মুসলিম)

৮- সারিদ : ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল (সা.)-এর কাছে রুটির সারিদ ও হায়সের সারিদ অত্যন্ত প্রিয় ছিল।’ (আবু দাউদ : ৩৭৮৩)

সারিদ হলো গোশতের ঝোলে ভেজানো টুকরো টুকরো রুটি দিয়ে তৈরি বিশেষ খাদ্য। আর হায়স হলো মাখন, ঘি ও খেজুর দিয়ে যৌথভাবে বানানো খাবার।

৯- সিরকা : হজরত জাবের (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) তাঁর পরিবারের কাছে সালন কামনা করেন। তাঁরা বলেন, আমাদের কাছে তো সিরকা ছাড়া আর কিছু নেই। মহানবী (সা.)-এর কাছে সেগুলো নিয়ে আসা হলে তিনি তা থেকে খেতে শুরু করেন। তারপর বলেন, ‘সিরকা কতই না উত্তম সালন! সিরকা কতই না উত্তম সালন!’ হজরত জাবের (রা.) বলেন, ‘সেদিন থেকে আমি সিরকা পছন্দ করতে শুরু করি।’ (মুসলিম : ২০৫১)

১০- তরমুজ ও শসা : হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) তরমুজের সঙ্গে ‘রাতাব’ বা (পাকা-তাজা) খেজুর খেতেন। (বুখারি : ৫১৩৪, তিরমিজি : ১৮৪৪)

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে জাফর (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি রাসুল (সা.)-কে শসার সঙ্গে ‘রাতাব’ খেতে দেখেছি। (মুসলিম : ৩৮০৬)

১১- খরগোশের গোশত: হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, মাররুজ জাহরান নামক স্থানে আমাদের পাশ দিয়ে একটি খরগোশ লাফিয়ে পড়ে। দৃশ্য দেখে আমাদের সঙ্গীরা খরগোশটিকে ধাওয়া করে, কিন্তু তারা সেটিকে পাকড়াও করতে না পেরে ক্লান্ত ও ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে। তবে আমি ধাওয়া করে এর নাগাল পাই এবং ধরে হজরত আবু তালহার কাছে নিয়ে আসি। তিনি মারওয়া নামক স্থানে সেটি জবাই করেন। এরপর খরগোশটির ঊরু ও নিতম্ব আমাকে দিয়ে রাসুল (সা.)-এর কাছে পাঠান। রাসুল (সা.) সেগুলো ভক্ষণ করেন।’ তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, রাসুল কি তা খেয়েছিলেন? তিনি বলেন, গ্রহণ করেছিলেন। (বুখারি : ২৪৩৩)

১২- খাসির পায়া : হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমরা ছোট খাসির পায়া রান্না করতাম। রাসুল (সা.) কোরবানির ১৫ দিন পরও সেগুলো খেতেন।’ (বুখারি : ৫১২২)

১৩- মোরগ : হজরত জাহদাম (রা.) থেকে বর্ণিত, একদিন আবু মুসা একটি মোরগ নিয়ে আসেন। ফলে উপস্থিত একজন গলার স্বর ভিন্ন করে আওয়াজ করল। হজরত আবু মুসা জিজ্ঞেস করলেন, কী হলো তোমার? লোকটি বলল, মোরগকে আমি বিভিন্ন খাবার খেতে দেখে আমার অপছন্দ হওয়ায় শপথ করেছি, কোনো দিন মোরগ খাব না। হজরত আবু মুসা তাকে বললেন, ‘কাছে আসো। খাওয়ায় অংশগ্রহণ করো। কারণ আমি রাসুল (সা.)-কে মোরগ খেতে দেখেছি। আর তুমি তোমার শপথ ভঙ্গের কাফফারা আদায় করে দেবে। (বুখারি : ৫১৯৮, ৪৬৬২; মুসলিম : ১৬৪৯)

১৪- লাউ : হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার একজন দর্জি রসুল (সা.)-কে খাবারের দাওয়াত করে। আমিও মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে সেই খাবারে অংশগ্রহণ করি। রাসুল (সা.)-এর সামনে বার্লির রুটি এবং গোশতের টুকরা ও কদু মেশানো ঝোল পরিবেশন করে। আমি দেখেছি, রাসুল (সা.) প্লেট থেকে খুঁজে খুঁজে কদু নিয়ে খাচ্ছেন। আর আমিও সেদিন থেকে কদুর প্রতি আসক্ত হয়ে উঠি। (মুসলিম, ২০৬১; বুখারি, ৫০৬৪)

১৫- জলপাই : রাসুল (সা.) বলেন, তোমরা জয়তুন খাও এবং জয়তুনের তেল গায়ে মাখো। কেননা এটি একটি মোবারক বৃক্ষ থেকে তৈরি। (সুনানে ইবনে মাজাহ : ১০০৩, তিরমিজি : ১৮৫১)

১৬- সামুদ্রিক মাছ : মহানবী (সা.) সাগরের মাছ পছন্দ করতেন। এ বিষয়ে আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ (রা.)-এর একটি দীর্ঘ হাদিস আছে। হাদিসটি বুখারি (৪৩৬১) ও মুসলিমে (১৯৩৫) বর্ণিত হয়েছে।

বিভিন্ন বর্ণনায় রয়েছে, রাসুল (সা.) মরুভূমির এক প্রকার পাখির গোশত, মাশরুম, বার্লি, গাজর-ডুমুর, আঙুর, ভিনেগার, ডালিম ইত্যাদি পছন্দ করতেন।

সুন্নাহ অনুযায়ী খানা খাওয়ার আদব:

১. প্রয়োজনের অতিরিক্ত না খাওয়া
রাসূল (সা.) খাবার গ্রহণের জন্য পেটকে তিনভাগে ভাগ করার উপদেশ দিয়েছেন। প্রথম একভাগ খাবার, দ্বিতীয় একভাগ পানি ও তৃতীয় একভাগ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য তিনি খালি রাখতে বলেছেন।

প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ শরীরের হজম প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করে এবং বিভিন্ন প্রকার রোগের সৃষ্টি করে।

২. সকল প্রকার খাদ্যগ্রহণ
রাসূল (সা.) আমিষ ও উদ্ভিদজাত উভয় প্রকার খাবারই গ্রহণ করতেন। তিনি কখনোই শুধু আমিষ বা শুধু উদ্ভিদজাত খাদ্য খেতেন না। শরীরের সুস্থতার জন্য আমাদের উভয় প্রকার খাদ্যেরই প্রয়োজন আছে। কোন এক প্রকার খাবার অধিক গ্রহণ করে অন্যটি সম্পূর্ণ বর্জন শরীরের জন্য কোনক্রমেই উপকারী নয়।

৩. প্লেট পরিষ্কার করে খাওয়া
প্লেটে পরিবেশিত খাদ্যের শেষ কণাটি পর্যন্ত মুছে খেয়ে নেওয়া রাসূল (সা.) এর সুন্নাহ। রাসূল (সা.) তার সামনে পরিবেশিত আহারের শেষ কণাটি পর্যন্ত মুছে আহার করতেন।

বর্তমানে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, খাবারের মূল পুষ্টিগত নির্যাস পাত্রের তলায় এসে জমা হয়।

পাশাপাশি খাবার পর আঙ্গুল চেটে নেওয়াও সুন্নাহর অংশ। খাবার শেষে আঙ্গুল চেটে নেওয়ার মাধ্যমে হজম ক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পাচক রসের অধিক নিঃসরণ ঘটে।

৪. হাত দিয়ে খাওয়া
কোন প্রকার চামচ ব্যবহার না করে সরাসরি হাত ব্যবহার করে খাওয়া রাসূল (সা.) এর সুন্নাহ। এভাবে মাধ্যমে খাবারের সাথে সংযোগ স্থাপিত হয়। ফলে যত্নের সাথে পরিষ্কার করে খাবার খাওয়া সম্ভব হয় এবং তা সহজেই হজম হয়। অন্যদিকে, চামচ দিয়ে খেলে খাবারের সাথে কোন প্রকার সংযোগ ঘটে না। ফলে অনেকাংশে অবহেলায় অপরিচ্ছন্নভাবে খাবার গ্রহণ করা হয়। মনোসংযোগ ছাড়া অবহেলায় খাবার গ্রহণের কারণে এই খাবার হজমের জন্য বেশি সময়ের প্রয়োজন হয়।

৫. আল্লাহর নাম নিয়ে খাবার গ্রহণ করা
খাবার গ্রহণের পূর্বে রাসূল (সা.) আমাদের আল্লাহর নাম নিতে তথা ‘বিসমিল্লাহ’ বলে খাওয়া শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন। এই পৃথিবীতে আমাদের খাবারের জন্য যা কিছু রয়েছে, তার সকল কিছুই আল্লাহর নেয়ামত। সুতরাং, ‘বিসমিল্লাহ’ বলার মাধ্যমে আমরা যেমন আমাদের সামনে পরিবেশিত খাবারের জন্য আল্লাহর শোকর আদায় করি, যার মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের উপর সন্তুষ্ট হন, ঠিক তেমনি আমাদের খাবারে আল্লাহ বরকত দেন, যা আমাদের জন্য কল্যাণকর হয়।

নবী সা. যেভাবে খাবার খেতেন:

১- খাওয়ার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা: রাসুল (সা.) খাওয়ার প্রারম্ভে সব সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলে খাওয়া শুরু করতেন। এবং তাঁর সঙ্গীদের ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে উৎসাহিত করতেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর নাম নিয়ে ও ডান হাত দ্বারা খানা খাও। এবং তোমার দিক হতে খাও।’
(বুখারি, হাদিস : ৫১৬৭, তিরমিজি, হাদিস : ১৯১৩)

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যখন তোমরা খানা খেতে শুরু করো, তখন আল্লাহর নাম স্মরণ করো। আর যদি আল্লাহর নাম স্মরণ করতে ভুলে যাও, তাহলে বলো, ‘বিসমিল্লাহি আওওয়ালাহু ওয়া আখিরাহ।’
(রিয়াজুস সলেহিন : ৭২৯)

২- ডান হাত দ্বারা খাবার খাওয়া: রাসুল (সা.) আজীবন ডান হাত দ্বারা খাবার খেয়েছেন এবং বাঁ হাত দ্বারা খাবার খেতে মানুষকে নিষেধ করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা বাঁ হাত দ্বারা খাবার খেয়ো না এবং বাম হাত দ্বারা পানও করো না। কেননা শয়তান বাম হাতে খায় ও পান করে।’
(তিরমিজি, হাদিস : ১৯১২)।

৩- আঙুল চেটে খাওয়া:
আঙুল চেটে খাওয়ার ফলে বরকত লাভের বেশি সম্ভাবনা থাকে। কারণ খাবারের বরকত কোথায় রয়েছে মানুষ তা জানে না। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা যখন খাবার গ্রহণ করো তখন আঙুল চেটে খাও। কেননা বরকত কোথায় রয়েছে তা তোমরা জানো না।’
(ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৯১৪)

৪- হেলান দিয়ে না খাওয়া:
কোন কিছুর উপর হেলান দিয়ে খাওয়া নিষিদ্ধ। হেলান দিয়ে খাওয়ার ফলে পেট বড় হয়ে যায়। দ্বিতীয়ত, এটি দাম্ভিকতার আলামত। আবু হুজাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.)-এর দরবারে ছিলাম। তিনি এক ব্যক্তিকে বলেন, আমি টেক লাগানো অবস্থায় কোনো কিছু ভক্ষণ করি না।’
(বুখারি, হাদিস : ৫১৯০, তিরমিজি, হাদিস : ১৯৮৬)

৫- খাবারের দোষ-ত্রুটি না ধরা: রাসুল (সা.) কখনো খাবারের দোষ ধরতেন না। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) কখনো খাবারের দোষ-ত্রুটি ধরতেন না। তাঁর পছন্দ হলে খেতেন আর অপছন্দ হলে পরিত্যাগ করতেন।
(বুখারি, হাদিস : ৫১৯৮, ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৩৮২)

৬- খাবারে ফুঁ না দেওয়া:
খাবারের মধ্যে ফুঁ দেওয়া অনেক রোগ সৃষ্টির কারণ। রাসুল (সা.) খাবারে ফুঁ দিতে নিষেধ করেন। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) কখনো খাবারে ফুঁ দিতেন না। এবং ফুঁ দিতেন না তিনি কোন কিছু পানকালেও।
(ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৪১৩)

৭- খাবারের শেষে দোয়া পড়া:
খাবার খাওয়া শেষ হলে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করা অপরিহার্য। রাসুল (সা.) খাবার শেষে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানাতেন। দোয়া পড়তেন। আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) খাবার শেষ করে বলতেন, ‘আলহামদু লিল্লাহি হামদান কাসিরান ত্বয়্যিবান মুবারাকান গাইরা মাকফিয়্যিন ওয়ালা মুয়াদ্দায়িন ওয়ালা মুসতাগনান আনহু রাব্বানা।’
(ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩২৮৪)

৮- দস্তরখানা বিছিয়ে খাওয়া:
হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) কখনো টেবিলে আহার করেননি এবং ছোট পেয়ালা বিশিষ্ট খাঞ্চায়ও খানা খাননি। আর তার জন্য কখনো চাপাতি রুটিও (চিকন পাতলা রুটি) তৈরি করা হয়নি। ইউনুস বলেন, আমি কাতাদাহকে জিজ্ঞাসা করলাম, তাহলে কোন জিনিসের উপর তাঁরা খানা খেতেন? (অর্থাৎ খাওয়ার সময় কী বিছিয়ে খানা খেতেন?) তিনি বললেন এ (চামড়ার) দস্তরখানার ওপর। এ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, দস্তরখানা বিছিয়ে খাবার খাওয়া সুন্নত।

বর্তমানে যেকোন কাপড় বা রেক্সিন বিছিয়ে তার উপর খাবারের প্লেট রেখে খেলে দস্তরখানা বিছানোর সুন্নাত আদায় হবে। দস্তরখানা বিছানো সুন্নাত এ কারণে যে, কোন খাবার পড়ে গেলে তা যেন আবার তুলে খাওয়া যায়। এতে খাবারের অপচয় থেকে বাঁচা যায়। উপরের হাদিস থেকে আরো একটি বিষয় জানা গেল যে, নবী করিম (সা.) টেবিলে বসে খাবার খেতেন না। অপর হাদিসে এসেছে, রাসূল (সা.) ফ্লোরে বা বিছানায় বসে খাবার খাওয়ার কারণ বর্ণনা করে বলেছেন, ‘আল্লাহ আমাকে বিনয়ী বান্দা বানিয়েছেন। তিনি আমাকে অহংকারী নাফরমান বানাননি।’ (আবু দাউদ)।

৯- খাবার সময় কাওকে সাথে নিয়ে খাওয়া:
রাসূল সা. কখনো একা একা খাবার খেতেন না। বরং সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে খেতেন। এ বিষয়ে হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : তোমরা একত্রে খানা খাও, পৃথক পৃথকভাবে খেও না। কেননা জামাতের সঙ্গে (খাওয়ার মধ্যে) বরকত হয়ে থাকে। (ইবনে মাজাহ : ২৪৪, মেশকাত : ৩৭০)।

মেহমানের যারা আপ্যায়ন করে তাদের মর্যাদা সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেন, উটের চোটের দিকে ছুরি যত দ্রুত অগ্রসর হয় তার চেয়ও দ্রুত অগ্রসর হয় কল্যাণ (বরকত) ওই গৃহের দিকে যাতে (মেহমানদের অনর্গল) খানা খাওয়ানো হয়। অর্থাৎ বেশি মেহমানদারি করা হয়। (ইবনে মাজাহ : ২৪৮-৪৯, মেশকাত : ৩৭০)।

১০- গোশত দাঁত দিয়ে চেটে খাওয়া:
প্রিয় নবী (সা.) কখনো রান্না করা মাংস ছুরি বা কাঁটাচামচ দিয়ে কেটে খেতেন না। তিনি বলেছেন, তোমরা ছুরি দ্বারা গোশত কেটো না। কেননা তা আজমী (অনারব)-দের আচরণ-অভ্যাস। বরং তোমরা তা দাঁত দিয়ে ছিঁড়ে খাও। কারণ এটা অতি সুস্বাদু এবং বেশি হজমদার।
(আবু দাউদ ২ : ১৭৪, মেশকাত পৃ. ৩৬৬)।

১১- খাদ্যপাত্রের তলদিক চেটে খাওয়া:
খাদ্যপাত্রের তলদিক চেটে খাওয়া (নিচে লেগে থাকা অংশ) রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে মোহিত করত। অর্থাৎ রাসূল (সা.) পাত্রের অবশিষ্ট খাদ্য যা তার গায়ে লেগে থাকত তা খেতে খুব পছন্দ করতেন।
(তিরমিজি, মেশকাত : ৩৬৬)।

হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত। নবী করিম (সা.) আঙ্গুলগুলো এবং খাদ্যপাত্র চেটে খেতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন; তোমরা জান না যে, কোন আঙ্গুল বা কোন লোকমায় বরকত নিহিত রয়েছে। (মুসলিম ২ : ১৭৫, মেশকাত পৃ. ৩৬৩)।

হজরত নুবায়শা (রা.) রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন : যে ব্যক্তি কোনো পেয়ালাতে খাবার খায় এবং খাবারের শেষে তা চেটে খায়, পাত্রটি তার জন্য আল্লাহর কাছে মাগফেরাত কামনা করে।
(আহমাদ, তিরমিজি, মেশকাত : ৩৬৬)

এখানে রাসূল সা. কীভাবে খাবার গ্রহণ করতেন, এর কিছু পদ্ধতি সংক্ষেপে আলোচনা করা হল; আল্লাহ্ পাক এসবের উপর আমাদেরকে আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।