রমজানের মধ্যেই কারাবন্দী সকল আলেমের মুক্তি চেয়ে শীর্ষস্থানীয় আলেমদের বিবৃতি

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

মার্চ ৩১ ২০২২, ২৩:৩৬

আসন্ন মাহে রমজানে মধ্যেই কারাবন্দী সকল আলেমের মুক্তি দাবী জানিয়েছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম নেতৃবৃন্দ।

৩১ মার্চ গণমাধ্যমে পাঠানো এক যুক্ত বিবৃতিতে দেশের শীর্ষ উলামায়ে কেরামগণ বলেন, দীর্ঘসময় ধরে বহুসংখ্যক শীর্ষস্থানীয় আলেম বর্তমানে একসাথে কারাগারে বন্দী আছেন। ইতিপুর্বে এত আলেমকে একসাথে কখনোই জেলে বন্দি করা হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই।

দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে আমরা উপলব্ধি করছি, বিপুল সংখ্যক উলামায়ে কেরামের কারাবন্দী করার কারণে বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসা ও দ্বীনি প্রতিষ্ঠানে সংকট তৈরি হয়েছে এবং ইলমে দ্বীনের ছাত্রদের লেখাপড়ায় বড় ধরনের ক্ষতি হচ্ছে। প্রিয় শিক্ষকদের এহেন কষ্টকর জীবন দেখে ছাত্র-শিক্ষকদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা ছড়িয়ে পড়ছে।

একইসঙ্গে দুর্ভাগ্যজনক একটি বিষয় হলো, বিশেষ একজন কারাবন্দী শীর্ষ আলেমকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে, যে কোন মূল্যে মামলার রায় ঘোষণা করে কারাবন্দী করে রাখার এবং নানা রকম মামলা দিয়ে রায় ঘোষণার পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। একদিকে পরিবারের সাথে কোনো প্রকার যোগাযোগ করতে দেওয়া হচ্ছে না, অপরদিকে দ্রুত রায় ঘোষণা করে তাকে সামাজিক ও ধর্মীয়ভাবে কোণঠাসা করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা মনে করি, এতদিনে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল অনুভব করেছেন যে, এদেশের তৌহিদি জনতা আলেমদের প্রতি অযাচিত কোনো অপবাদ ও চরিত্রহনণের অপপ্রয়াস বরাবর প্রত্যাখ্যান করে এসেছে।

বেদনা ও আক্ষেপের সঙ্গে আমরা বলতে চাই, কারাবন্দী আলেমদের অনেকে আছেন, যারা কোনোভাবে কোনো প্রকার রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন না।

অনেকে আছেন বয়োজ্যেষ্ঠ। দীর্ঘ কারাবাসের কারণে তারা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এছাড়া কারাবন্দী আলেমদের প্রতিটি পরিবার চরম মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাঁদের সন্তানদের মুখের দিকে তাকালে আমরা স্থির থাকতে পারি না। কারা-আইন মোতাবেক একজন বন্দী পরিবারের সাথে যোগাযোগের বিধান থাকলেও আলেমদের ক্ষেত্রে সে সুযোগটি যথাযথভাবে দেওয়া হচ্ছে না। এটাকে আইনের সুস্পষ্ট লংঘন ছাড়া কি বলা যেতে পারে? এতে কি মানবাধিকারের লংঘন হচ্ছে না? তাহলে অতি উৎসাহি হয়ে কারা এসব করছে, তা সরকাররের সংশ্লিষ্ট মহলকে খতিয়ে দেখতে আমরা অনুরোধ জানাচ্ছি।

আমরা লক্ষ্য করছি যে, কারাবন্দী আলেমদের মধ্যে যারা একদিন সম্পুর্ণ সুস্থ অবস্থায় জেলে গিয়েছিলেন, তাদের কেউ কেউ আজ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

মাওলান ইকবাল হুসাইন নামে একজন প্রথিতযশা আলেম কারা-হেফাজতে মৃত্যুবরণ করেছেন। কেউ কেউ সোজা হয়ে হাঁটা-চলা পর্যন্ত করতে পারছেন না।

এসব পরিস্থিতি ও দৃশ্য মেনে নেওয়া গোটা আলেমসমাজের জন্য কষ্টদায়ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতিমধ্যেই দেশের শীর্ষ আলেমদের একটি প্রতিনিধি দল এবিষয়ে স্বরাষ্টমন্ত্রী মহোদয়কে সাক্ষাতে বিস্তারিত অবহিত করেছেন। এ অবস্থায় আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে কারাবন্দী আলেমদের মুক্তির দাবী করছি।

আমরা দেখেছি, অনেক বড় বড় অপরাধীদেরকেও সরকারি আনুকূল্যে নানা ছুঁতোয় মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কারাবন্দী আলেমদের ব্যাপারে নূন্যতম মানবিকতার নমুনা দেখা যাচ্ছে না। এরচেয়ে বড় কষ্টের কথা কী হতে পারে? অথচ এদেশের আলেমসমাজ চলমান ঘটনা প্রবাহে সরাসরি সরকারের বিরুদ্ধে কোন অবস্থান নেননি। তারা মসজিদ-মাদ্রাসা, দ্বীনি শিক্ষা এবং দাওয়াত ও তাবলীগের মেহনতের সাথে সম্পৃক্ত থেকেই দ্বীনি কাজ আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন। নির্দিষ্ট ইস্যু ও ঘটনায় শুধুমাত্র ইসলাম বিরোধী অপতৎপরতার বিরুদ্ধে আলেমসমাজ তওহীদি জনতাকে সাথে নিয়ে প্রতিবাদ জানানোর চেষ্টা

করেছেন। তারপরও কেন নিরীহ আলেমদের ওপর দীর্ঘ সময় কারাবন্দীত্বের এই দুর্ভোগ; তা আমাদের বোধগম্য নয়।

স্পষ্টতা আনার প্রয়োজনে আমরা একটি বিষয় আবারো তুলে ধরতে চাই, উলামায়ে কেরামদের পক্ষ থেকে সরকারকে এ মর্মে বারবার আশ্বস্ত করা হয়েছে যে, আলেমদের আন্দোলন সরকারের বিরুদ্ধে নয়; ইসলামবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে। আমরা কারো ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হতে চাই না। কাউকে ক্ষমতায় নেওয়ার প্রতিবাদ-সংগ্রাম করছি না। তারপরও এদেশের একটি চিহ্নিত-মহল আলেমসমাজকে বারবার সরকারের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করাতে চেয়েছে। এক্ষেত্রে আমরা সরকারের দিক থেকে সুবিবেচনা ও শুভ-বুদ্ধির অপেক্ষা করছি। এবং আমরা সরকারের প্রতি জোর দাবী জানাচ্ছি,

আসন্ন রমজানের মধ্যেই মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব, মাওলানা মামুনুল হক, মুফতী সাখাওয়াত হোসাইন রাজী, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা আতাউল্লাহ আমীনসহ গ্রেফতারকৃত সকল আলেমদেরকে নিঃশর্ত মুক্তি দিন। এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিম নাগরিকদের ধর্মীয় এই প্রতিনিধিদের প্রতি আপনারা সুবিচার করুন, সদয় হোন। দ্বীনি ও নাগরিক দায়িত্ব পালনসহ এই মানুষগুলোকে তাদের পরিবার-পরিজন,সন্তান-সন্ততী এবং ছাত্র-শিক্ষকদের সাথে ̄স্বাধীন নাগরিক হিসেবে সিয়াম সাধনা ও ঈদুল ফিতর উদযাপনের সুযোগ দিন।

সবাই জানেন, যারা কারাবন্দী হন, বন্দীত্বের দুর্ভোগ শুধু তাদেরই পোহাতে হয় না। বরং তাদের সন্তান,পরিবার,জীবিকা-জীবন, তাদের প্রতিষ্ঠান ও কাজের জগত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বছরকাল ধরে বন্দী আলেমদের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। তাদের শিশু সন্তানরা বাবার জন্য প্রায় প্রতিদিন চোখ মুছছে। অনেকের কর্মক্ষেত্র বিপন্ন হয়েছে। ছোটখাটো ব্যবসা ধ্বসে পড়েছে। এঅবস্থায় সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে আমরা বন্দী আলেমদের অতি শিগগির মুক্তির জোর দাবী জানাচ্ছি।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী উলামায়ে কেরামগণ হচ্ছেন- আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, মহাপরিচালক,আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া বাবুনগর মাদ্রাসা। আল্লামা মাহমুদুল হাসান, মহাপরিচালক জামিয়া ইসলামীয়া মাদানিয়া যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসা। আল্লামা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, মহাপরিচালক জামিয়া নূরিয়া ইসলামিয়া, কামরাঙ্গীরচর, ঢাকা। আল্লামা আব্দুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুর, প্রতিষ্ঠাতা ও মহাপরিচালক আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া আল হালিমিয়া( মধুপুর মাদ্রাসা) সিরাজদিখান মুন্সিগঞ্জ । মাওলানা আহমাদ দিদার কাসেমী, মুহাদ্দিস হাটহাজারী মাদ্রাসা। আল্লামা জিয়াউদ্দীন, মহাপরিচালক, জামিয়া মাদানিয়া আঙ্গুরা মুহাম্মদপুর,বিয়ানীবাজার । আল্লামা আব্দুর রহমান হাফেজ্জী, মোহতামীম, জামিয়া আরাবিয়া মাখযানুল উলুম মোমেনশাহী। মাওলানা মুহিব্বুল হক, মোহতামীম, জামিয়া কাসিমুল উলুম দরগাহ, সিলেট। মাওলানা ওবাইদুর রহমান মাহবুব, মোহতামীম, জামিয়া ইসলামিয়া মাহমুদিয়া বরিশাল। মাওলানা আব্দুল হক, মহাপরিচালক, জামিয়া ফয়জুর রহমান বড় মসজিদ মোমেনশাহী। ড. এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী, পীর সাহেব আব্বাসী মঞ্জিল নারায়ণগঞ্জ, মাওলানা আনোয়ারুল করিম, মোহতামীম, জামিয়া এজাজিয়া দারুল উলুম যশোর। মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ, মহাপরিচালক শায়খ জাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, ঢাকা।

মাওলানা আরশাদ রাহমানী– , প্রিন্সিপাল, বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার । মাওলানা শাব্বির আহমাদ রশীদ, মহাপরিচালক, আল-জামিয়াতুল ইমদাদিয়া কিশোরগঞ্জ। মাওলানা মীর ইদ্রিস চিটাগং। মাওলানা মুশতাক আহমদ, মোহতামীম, জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া দারুল উলুম খুলনা। মুফতি সাঈদ নূর,পীর সাহেব মানিকগঞ্জ। মাওলানা আব্দুল বছীর, মোহতামীম, জামেয়া ইসলামিয়া দারুল উলূম মাদানিয়া সুনামগঞ্জ। মাওলানা ইউনুস সাহেব রংপুর। আব্দুল মাবুদ, মোহতামীম, আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া হাকিমপুর বাগেরহাট। মাওলানা আবু দাউদ, মোহতামীম, জামিয়া আরাবিয়া আশরাফুল উলুম কুষ্টিয়া। মাওলানা উসমান গণি, প্রিন্সিপাল, কাসেমুল উলুম কওমী মাদ্রাসা ঝিনাইদহ। মাওলানা নুরুল ইসলাম খান, প্রিন্সিপাল, দারুল উলুম দরগাহপুর, সুনামগঞ্জ। মাওলানা জিয়াউদ্দিন, প্রিন্সিপাল, জামিয়া শাহিদিয়া ইমদাদিয়া, নেত্রকোনা। মাওলানা ঈসমাইল নূরপুরী, প্রিন্সিপাল, জামিয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া বৌয়াকুর নরসিংদী। মাওলানা ছামিউর রহমান মু সা, প্রিন্সিপাল, কাজীরবাজার মাদ্রাসা সিলেট।

মাওলানা তাফহীমুল হক, প্রিন্সিপাল, জামিয়া ইসলামিয়া উমেদনগর মাদ্রাসা হবিগঞ্জ। মাওলানা মাহফুজুল হক, মহাপরিচালক, জামিয়া রাহমানিয়া আজিজিয়া ঢাকা। মাওলানা শহিদুল্লাহ কাওসার, দারুল মাআরিফ চট্টগ্রাম । মাওলানা রেজাউল করিম জালালী, সিলেট। মাওলানা এনামুল হক, বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার । মাওলানা মুজিবুর রহমান, প্রিন্সিপাল, আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া দড়াটানা মাদ্রাসা যশোর। মাওলানা রফিকুর রহমান, খুলনা। মাওলানা মুজিবুর রহমান, সাবেক মোহতামীম, দারুল উলুম খুলনা। মাওলানা তানভীরুল হক সিরাজী, প্রিন্সিপাল, জামিয়া সিরাজীয়া ভাদুঘর, বি-বাড়িয়া। মাওলানা মনিরুল হক, প্রিন্সিপাল, জামিয়া আরাবিয়া সিদ্দিকিয়া কওমিয়া সাতক্ষীরা। মাওলানা আতাউল হক, দরগা মাদ্রাসা সিলেট প্রমুখ।

 

বার্তা প্রেরক

মুহাম্মাদ যিমামুল হক

ইবনে মাওলানা মামুনুল হক