রজব মাসের আগমনী একটি পরিচিত দোয়া, কিছু বিদআত কাজ ও চারটি টার্গেট

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

ফেব্রুয়ারি ১৪ ২০২১, ২৩:৫৩

রামাদ্বানের আগমনী বার্তা নিয়ে রজব মাস আমাদের মধ্যে ইতিমধ্যে উপস্থিত হয়েছে। চাঁদ দেখার পর থেকে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষকে একটা দুআ পড়তে শোনা বা ফেইসবুকে লিখতে দেখা যায়। বাংলাদেশ ছাড়াও আরো বিভিন্ন দেশে এ দুআটি পড়া হয়। দুআটি হচ্ছে –

اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رَجَب وَ شَعْبَانَ، وَبَلِّغْنَا رَمَضَانَ

🛑রজব মাস আসলে এ দুআটি পড়ার হুকুম কী? এর জবাবে দুটি মত আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। কিছু স্কলার বলেছেন এ দুআটি পড়া বেদআত। তাদের দলীল হচ্ছে- রজব মাস আসলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দুআ পড়তেন এমন কোনো সহীহ হাদীস নেই।

তবে আরো কিছু স্কলারের বক্তব্য হচ্ছে উপরোক্ত দুআটি পড়া জায়েয। তাদের দলীল হচ্ছে –

عن ابْن أَبِي الرُّقَادِ قَالَ: نا زِيَادٌ النُّمَيْرِيُّ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ رَجَبٌ قَالَ: ( اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رَجَبٍ، وَشَعْبَانَ، وَبَلِّغْنَا رَمَضَانَ)

ইবনে আবি রুক্বাদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমাদেরকে যিয়াদ নুমাইরী হযরত আনাস ইবনে মালিক রাঃ এর সূত্রে বলেছেন- যখন রজব মাস প্রবেশ করত তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন- “হে আল্লাহ আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসে বরকত দান করুন, এবং আমাদেরকে রমজান মাসে পৌঁছে দিন”।

🛑এবার কথা হচ্ছে একদল বললেন বেদআত। আরেকদল বললেন জায়েয। আমরা যাবো কোন পথে? এটার উত্তর জানতে হলে যারা জায়েয বলেছেন তারা কেন জায়েয বলেছেন সেটা বুঝতে হবে।

যারা জায়েয বলেছেন তাদের বক্তব্য হল- যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে একটি বর্ণনা পাওয়া গেছে যে, তিনি রজব মাস আসলে উক্ত দুআটি পড়তেন তাই এটা পড়া জায়েয।

🛑আরেকটি প্রশ্ন : রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু দুআটি পড়তেন তাহলে এটা সুন্নাহ না হয়ে জায়েয হল কেন? এটার উত্তর হচ্ছে হাদীসটি বর্ণনা সূত্রে দুর্বল। হাদীসটির বর্ণনা সূত্রে যিয়াদ নুমাইরী নামক একজন বর্ণনাকারী রয়েছেন, যিনি হাদীস বিশারদগণের নিকট প্রশ্নবিদ্ধ ছিলেন। কারণ একজন হাদীস বর্ণনাকারীর মধ্যে যে সকল গুণ থাকা প্রয়োজন, যিয়াদের মধ্যে সে গুণ গুলো যথাযথ ভাবে উপস্থিত ছিল না। তাই এ হাদীসটিকে দুর্বল বলা হয়েছে।

আর দুর্বল হাদীস দিয়ে সুন্নাহ আমল সাব্যস্ত হয় না। তবে এ সকল হাদীস দ্বারা فضائل الأعمال (আমলের উপকারিতা) সাব্যস্ত হয়। الترغيب (উৎসাহ) প্রদানের ক্ষেত্রে এরকম হাদীস ব্যবহার করা যায়। ইমাম নববী রহঃ বলেছেন সকল মুহাদ্দীসদের মত হচ্ছে দুর্বল হাদীস দিয়ে আমলের ফযীলত বর্ণনা এবং উৎসাহ প্রদান করা যায়। তাই রজব মাস কেন্দ্রীক দুআটি পড়া বেদআত বলা যাবে না।

তবে হ্যাঁ! এ দুআটিকে সুন্নাহ আমল মনে করে পাঠ করা যাবে না। সুন্নাহ মনে করলে বেদআত হবে। কিছু স্কলার উক্ত দুআটি বেদআত বলার কারণ এটাই যে, মানুষ উক্ত দুআকে সুন্নাহ মনে করে পাঠ করবে আর বেদআত করবে। আর তারা যে বলেছেন, সহীহ হাদীসে নেই এই সহীহ দ্বারা সঠিক উদ্দেশ্য নয় বরং শক্তিশালী উদ্দেশ্য। অর্থাৎ সহীহ হাদীস (শক্তিশালী হাদীস) নেই তবে যয়ীফ হাদীস (দুর্বল হাদীস) রয়েছে।

🛑রজব মাস কেন্দ্রীক অনেক ভাইবোনকে দেখা যায় পহেলা রজব রোজা রাখেন। ২৭ তম রাতকে স্পেশাল ইবাদাতের রজনী মনে করে ইবাদাত করেন। শবে মেরাজের রোজা রাখেন। সালাতুর রাগায়েব নামক বিশেষ পদ্ধতির সালাত আদায় করেন। আসলে এগুলো সঠিক আমল নয়, বরং সবগুলো বেদআত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা সাহাবায়ে কেরাম রজব মাস কেন্দ্রীক এমন কোনো আমল করেননি। এ সমস্ত ব্যাপারে শক্তিশালী কিংবা দুর্বল কোনো হাদীস নেই।

আরেকটা কথা বলি- রজবের ২৭তম রজনীতে রোজা রাখার কারণ হচ্ছে অনেকে মনে করেন ঐদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেরাজে গমন করেছিলেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবে মেরাজে গিয়েছিলেন এ ব্যাপারে মতের বৈপরিত্য রয়েছে। কেউ বলেছেন রবিউল আউয়াল মাসে, কারো মতে রমজান মাসে, কারো মতে যিলক্বা’দাহ মাসে আবার কেউ বলেছেন রজব মাসে।

🛑 তাহলে রজব মাস কেন্দ্রীক কি কোনো স্পেশাল সুন্নাহ আমল নেই? এর সহজ উত্তর হচ্ছে ‘না’। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম থেকে এমন কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না। ইবাদাতের ক্ষেত্রে তারা যা করেননি আমরা তা করবো না। তারপরও নিজের মন মত কোনো বেদআত আমল করলে সাওয়াব হবে তো দূরের কথা উল্টো কবীরা গুনাহ হবে। বেদআতের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকলে কেয়ামতের কঠিন ময়দানে হাউযে কাউসারের বরকতময় পানি পান থেকে বঞ্চিত হতে হবে। জাহান্নামের কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।

🛑 আমি একটি পরামর্শ দিচ্ছি! সেটা হচ্ছে- রজব মাস আশহুরুল হুরুম চারটি মাসের মধ্যে একটি। এরকম মাসে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকলে অন্যান্য মাসে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা সহজ হয়।

তাই আমাদের প্রথম টার্গেট থাকবে আমরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকবো।

দ্বিতীয় টার্গেট থাকবে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাপ্তাহিক সুন্নাহ হচ্ছে সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখা এবং মাসিক সুন্নাহ হচ্ছে আরবী মাসের ১৩,১৪,১৫ তারিখ রোজা রাখা, তাই আমরা এ সুন্নাহগুলো এ মাসেও পালন করব।

তৃতীয় টার্গেট থাকবে রজব মাস কেন্দ্রীক কোনো বেদআতে জড়াবো না।

চতুর্থ টার্গেট থাকবে আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কাজ গুলো রজব ও শাবান মাসে গুছিয়ে রাখব। যাতে রমজান মাসকে আমরা ইবাদাতের জন্য ফ্রি রাখতে পারি। পাশাপাশি আমরা আল্লাহর নিকট দুআ করব আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদের রমজান মাসে পৌঁছে দেন।

——–

লেখক: মুহাম্মাদ ওয়ালিদ আল হামিদী

মদীনামুনাওয়ারা