যুগেযুগে নারীর ফাঁদ-১

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

আগস্ট ১৭ ২০২১, ১৫:৪২

মাওলানা হাসান মুরাদ: বালআম বিন বাউরা। বায়তুল মুকাদ্দাসের পাশে কেনান গোত্রে বসবাস করতেন। ছিলেন সময়ের আস্থাভাজন গুরু।অদ্বিতীয় ইবাদতকারী,বিজ্ঞ আলিম। জানতেন ইসমে আজম। ইসমে আজম আল্লাহ প্রদত্ত মহাশক্তি। ইসমে আজম জানা মানুষ দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়। বালআম বিন বাউরা যেকোন দোয়া করলে কবুল হতো। তাই তিনি ছিলেন সব শ্রেণি পেশার মানুষের লক্ষ্যবিন্দু। সকলেই বিপদে-মুসিবতে দৌঁড়ে আসত দোয়ার আরজু নিয়ে।

এবার দোয়া নিতে এলো জাব্বার সম্প্রদায়। বলল; হুজুর হে! আমরা যে বড়ই বিপদে। মুসা আসছে বিশাল বাহিনি নিয়ে আমাদের বিতাড়িত করতে।আপনি মুসা ও তার সিপাহীদের বিরুদ্ধে বদ দোয়া করুন। ওদিকে ফিরআউন ডুবে মরল নদে। মুসা নবি উম্মতসহ নিরাপদে নদী পাড়ি দিয়ে তখন তীরে। দীর্ঘ দিনের বন্দি জীবন থেকে উম্মত আজ মুক্ত। উম্মত শান্ত-প্রশান্ত হয়ে দিনাতিপাত শুরু করল। এমন সময় আল্লাহ মুসা কালিমুল্লাহকে নির্দেশ করলেন; যাও! উম্মতসহ জাব্বারীনদের সাথে যুদ্ধ করো। তাদের অত্যাচারের লাগাম টেনে ধরো। তাই মুসা আ. যুদ্ধের জন্য বহরসহ অত্যাসন্য। বালআম বিন বাউর জাব্বারীনদের ফিরিয়ে দিলেন। বললেন: নবীর বিরুদ্ধে বদ দোয়া করলে ধ্বংস অনিবার্য। তোমরা ফিরে যাও।তারা যেতে চাইছে না। তাই বালআম বিন বাউরা মুরাকাবা করল। মুরাকাবার ফলাফলও বদদোয়া না করার বার্তা দিল। জাব্বার প্রতিনিধিরা হতাশ হয়ে ফিরে গলে। তবে নিরাশ হলো না। চেষ্টা অব্যাবহ রাখল।

এবার নতুন ফাঁদ- ফন্দি আটল! বালআম এর স্ত্রীকে হাত করতে হবে। স্ত্রীকে দিয়ে তদবির করতে হবে। স্ত্রীর কাছে সকলেই দূর্বল। বালআমও স্ত্রীর প্রতি খুবই দূর্বল ছিল। সুতরাং প্রতিনিধিদল বালয়ামের স্ত্রীকে প্রচুর সম্পদ উৎকোচ দিল। সম্পদ যা দিল, তার থেকে বেশি দিল আরো পাওয়ার আশা,প্রাচুর্যের নেশা। স্ত্রী, বালআম বিন বাউরাকে প্ররোচিত করল। ছল-ছলনায়,কপটতা আর শঠতায় স্বামীকে প্রতারিত করল। মুসা নবীর বিরুদ্ধে দোয়া করতে প্রস্তুত করে তুলল। আহ! কি করুন চিত্র। আল্লাহর ঘনিষ্ট ভক্ত,পেয়ারা বান্দা সত্য থেকে পদস্খলিত হলো। সারা জীবনের অর্জন আজ বিসর্জন দিয়ে দিলেন। জান্নাতের কিনারা থেকে ফিরে জাহান্নমে পতিত হলো নারীর ফাঁদে পড়ে।

বালআম কি ভেবেছিল সে মারহুম থেকে মালয়ুন হবে। এজন্য সফল সে, যে মৃত্যু পর্যন্ত ঈমানের উপর দৃঢ়পদ থাকে।(আমাদের ঈমানসহ মৃত্যু দিয়েন হে মালিক) স্ত্রী এবং জাব্বারীনদের পুনঃ পুনঃ অনুরোধে সে তার একটি গাধার উপর আরোহণ করল।এরপর বনী ইসরাঈলের শিবিরের দিকে অগ্রসর হল। যখন সে তাদের নিকটবর্তী হল, তখন গাধাটি তাকে নিয়ে বসে পড়ল। সে গাধাটিকে প্রহার করতে লাগল। গাধাটি দাড়িয়ে কিছু দুর চলার পর আবার বসে পড়ল। সে গাধাটিকে আগের চাইতে অধিক প্রহার করল।পুন:পুন এমন কর্মে গাধাটির মুখে ভাষা ফুটল। সে বালআমকে বলতে লাগল, হে বালআম ! তুমি কোথায় যাচ্ছ? তুমি কি ফেরেশতাদের দেখছ না?-তারা আমার সামনে দাড়িয়ে আমাকে তীব্রতাবে বাঁধাদিচ্ছেন? তুমি কি আল্লাহর নবী ও মুমিনদের অভিশাপ দেওয়ার জন্য যাচ্ছ?

তবু সে বিরত রইল না। অগত্যা গাধাটি অগ্রসর হল এবং পাহাড়ের চুড়ার নিকটবর্তী হল। বালআম মুসা আ.এর শিবির ও বনী ইসরাঈলের দিকে তাকিায়ে তাদেরকে অভিশাপ দিতে লাগল। তখন তার জিহ্বা তার এখতিয়ায়ে ছিল না। সে মুসা আ. ও তার সম্প্রদায়ের জন্যে দোয়া করতে লাগল এবং তার নিজের সম্প্রদায়ের উপর অভিশাপ দিতে লাগল। জাব্বরীনরা তাকে এ জন্য তিরস্কার করতে লাগল। বালআম এবার বলল, সে তার জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। তার জিহ্বা ক্রমেই ঝুলে পড়ছিল এবং তা শেষ পর্যন্ত বুকের উপর গিয়ে পড়ল। বালআম তখন বলতে লাগল, আমার দুনিয়া ও আখিরাত বরবাদ হয়ে গেল। প্রতারণা ও ধোকাবাজি ব্যতীত আমার জন্যে আর কোন পথই বাকি রইলোনা। তারপর সে জাব্বরীনদের নির্দেশ দিল, তারা যেন তাদের নারীদেরকে বিশেষ সাজে সজ্জিত করে মুসা আ.এর সৈন্যদের কাছে পাঠায়। নারীরা নিজেদেরকে তাদের কাছে সমর্পণ করবে, যাতে তারা তাদের সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়। কেননা, তাদের মধ্য হতে যদি একজনও ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তাহলে এটা তাদের সকলের ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট।

কথামত তারা তাদের নারীদের বিশেষভাবে সজ্জিত করল এবং বনী ইসরাঈল শিবিরে পাঠাল। তাদের মধ্যকার সুন্দরী,কুমারী নারী বনী ইসরাঈলের একজন সরদারের কাছে গেল। সে তখনই নারীটিকে নিয়ে তাবুতে প্রবেশ করল। তার সাথে ব্যাভিচারে লিপ্ত হল। আল্লাহ তাআলা এ অপরাধে বনী ইসরাইলের প্রতি প্লেগ রোগ পাঠালেন।এ রোগ তাদের মধ্যে ছড়াতে লাগল। প্রায় সত্তুর হাজার বনি ইসরাঈল মারা গেল। তারপর ব্যভিচারি নারী পুরুষকে হত্যা করে বাইরে আকাশের দিকে উচু করে রাখা হল। যেন অন্যরা এ থেকে সাবধান হয়। এর পর রোগ সংক্রমনের হারও কমে গেল (তাফসিরে মায়ারেফুল কোরআন,সুরা আরাফ-১৭৫, ইবনে কাসির,আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া ১খন্ড)

এখানেও সেই নারী ফাঁদ। নারী ফাঁদে আটকে দুনিয়া আখেরাত নষ্ট হলো। ব্যাভিচার যেখানে হয় সেখানে মহামারি দেখা দেয়। তবুও কী আমাদের বোধের উদয় হবে? কেউবা আবার ব্যাভিচার কে ১০০ টাকার অপরাধ বলতে চাইছেন। সাবধান! আল্লাহর আযাবকে ভয় করুন।নারী আল্লাহর সৃষ্টি। প্রিয় নবী স. নারীদের উচ্চ মর্যাদায় সমাসীন করেছেন। নারীদের সহজে জান্নাতে যাওয়ার পথ বাতলেছেন। রাসুল স. নারীদের ভালোবাসতেন।তবে নারীদের চক্রান্ত বড়ই কঠিন। এটাও কোরআনেরই বক্তব্য। তাই নারীদের সম্মাম যথাস্থানে বলবৎ।নারীদের ফিতনাও ভয়ানক। আল্লাহ উম্মতের পুরুষদের নারী ফিতনা থেকে হিফাজত করেন। নারীদেরও পুরুষেদের ফিতনা থেকে হিফাজত করেন।

লেখক: শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক