মোবাইল কলরেট বাড়ানো ও কলড্রপে চার্জ কাটায় নিষেধাজ্ঞা

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

ডিসেম্বর ১৪ ২০১৮, ১৪:৫৩

 

আবির আবরার: ভবিষ্যতে গ্রাহকের মতামত না নিয়ে মোবাইল ফোনের কলরেট বাড়ানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে হাই কোর্ট। সেই সঙ্গে কলড্রপের ক্ষেত্রে মোবাইল অপারেটরগুলোর চার্জ কাটার ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। জনস্বার্থে করা এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদীর হাই কোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার রুলসহ এ আদেশ দেয়।

আইন সাংবাদিকদের সংগঠন ল’ রিপোটার্স ফোরামের সদস্য এম. বদিউজ্জামান, মেহেদী হাসান ডালিম, মোবাইল ফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমদ ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রাশিদুল হাসান বুধবার ‘জনস্বার্থে’ এই রিট আবেদন করেন। আদালতে তাদের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমাতুল করিম।

মোবাইল ফোন গ্রাহকদের অধিকার সুরক্ষায় বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন ‘অবৈধ’ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। সেই সঙ্গে মোবাইল গ্রাহকদের অধিকার সুরক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, কলড্রপ- অনাকাঙ্ক্ষিত এসএমএস বাড়ানো, বর্ধিত হারে কলরেট আদায়, ট্যারিফ চার্জ না বাড়ানো এবং ঘোষিত ফোরজি সেবা নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।

বিদ্যমান কলরেট পর্যালোচনা করতে একটি কমিটি গঠনের ব্যপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব, বিটিআরসির চেয়ারম্যান ও সচিবকে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তাও জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট। টেলিযোগাযোগ সচিব, বিটিআরসি চেয়ারম্যান, সচিব, মোবাইল অপারেটর গ্রামীণ ফোন, এয়ারটেল, রবি, বাংলা লিংক ও টেলিটক কর্তৃপক্ষকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আদেশের পর ইশরাত হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আদালত রুলসহ মোবাইল কলচার্জ বৃদ্ধি ও কলড্রপে চার্জ কাটায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। প্রত্যেক বিবাদীকে নিয়মিতভাবে এসব বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলেছে।”

রিটকারীদের অন্যতম মেহেদী হাসান ডালিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় শুরু থেকেই আমরা মোবাইল কলরেট বেশি দিয়ে আসছি। এর মধ্যেই গ্রাহকদের মতামত না নিয়ে শুধুমাত্র মুনাফা করতে গত অগাস্টে কলরেট আরেক দফা বাড়িয়েছে। এটা ভোক্তা অধিকারের লঙ্ঘন। এছাড়া কলড্রপ বিড়ম্বনা, অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষুদে বার্তার যন্ত্রণা তো আছেই। সব মিলিয়ে দেশের মোবাইল গ্রাহকরা অপারেটরগুলোর কাছ থেকে সেবা পাওয়ার পরিবর্তে নানাভাবে ঠকছেন কিংবা যন্ত্রণা-হয়রানি এবং আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। এই বিবেচনা থেকেই জনস্বার্থে রিট আবেদনটি করেছি।”

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) একটি প্রতিবেদন থেকে উদ্ধৃত করে তাদের রিট আবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৩ মাসে ২২২ কোটি বার কলড্রপ করেছে মোবাইল অপারেটরগুলো। এর মধ্যে গ্রাহক সংখ্যায় শীর্ষে থাকা গ্রামীণফোন কলড্রপের ক্ষেত্রেও শীর্ষে অবস্থান করছে। ১৩ মাসে এ অপারেটরের কল ড্রপ হয়েছে ১০৩ কোটি ৪৩ লাখ বার। গ্রাহক সংখ্যায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা রবির কলড্রপ হয়েছে ৭৬ কোটি ১৮ লাখ বার।ওই প্রতিবেদনে দেখা যায়, গ্রামীণফোন ও রবির পর বেশি কলড্রপ হয়েছে বাংলালিংকের; ৩৬ কোটি ৫৪ লাখ আর টেলিটকের আনুমানিক ৬ কোটি বার।

২০১৪ সালে কয়েকটি অপারেটর কলড্রপের বিপরীতে গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া শুরু করে। এ নিয়ে তারা প্রচারও চালায়। কিন্তু কিছুদিন পর কোনো ঘোষণা ছাড়াই ক্ষতিপূরণ বন্ধ করে দেয় অপারেটরগুলো। এ নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। এমনকি সরকারের একাধিক মন্ত্রীও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করতে অপারেটরগুলোর কাছ থেকে কলড্রপের বিপরীতে ক্ষতিপূরণ আদায়ের সিদ্ধান্ত নেয় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ।

গত বছরের জানুয়ারি থেকে কলড্রপের জন্য গ্রাহককে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা অপারেটরগুলোর। কিন্তু অপারেটরদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি।’ এ বিষয়ে গত ১০ ডিসেম্বর উকিল নোটিস পাঠিয়ে সাড়া না পেয়ে এই রিট আবেদন করা হয়েছে বলে জানান রিটকারীদের আইনজীবী ইসরাত।