মুমিন জীবনে নামাজ প্রতিষ্ঠা করার গুরুত্ব ও তাৎপর্য

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

অক্টোবর ১২ ২০২০, ১১:০৫

মুফতি আহমদ যাকারিয়া
মুসলিম সমাজে নামাজ আদায় করা অপরিহার্য কর্তব্য। প্রত্যেক মুসলমানের উপর দিবা রাত্রিতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা ফরজ। যে মুসলমান ইচ্ছায় বা অনিচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ছেড়ে দিবে তাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। তাই ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে নামাজের শিক্ষা, গুরুত্ব, তাৎপর্য অপরিসীম। নামাজ আদায়ের ব্যাপারে আল-কুরআনে ৮২ বার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশ্ব নবী সা. অসংখ্যবার নামাজের গুরুত্ব ও তাৎপর্যের কথা বর্ণনা করেছেন।
নামাজের আরবি শব্দ সালাত। সালাত শব্দের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে দুরূদ বা শুভ কামনা করা, তাসবিহ বা পবিত্রতা বর্ণনা করা, রহমত, দয়া বা করুণা কামনা করা, ইস্তেগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করা। তাছাড়া কথা ও স্থান, কাল পাত্রভেদে সালাত বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার হয়ে থাকে।
সালাতের পারিভাষিক অর্থ হচ্ছে- ‘নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে, নির্দিষ্ট ইবাদত আদায় করার নাম সালাত’। মোট কথা, যে যেভাবেই বর্ণনা করি না কেন, নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে ইবাদত করার নামই হলো সালাত।
এখন কিভাবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হলো সেই বিষয়টি উল্লেখ্য না করলেই নয়। নবী সা. যখন মি’রাজে গমন করেন, তখন আল্লাহ তায়ালা তার উপর নামাজ আদায়ের নির্দেশ প্রদান করেন। প্রথমে ৫০ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের নির্দেশ প্রদান করেন। তারপর, কমাতে কমাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নিয়ে মি’রাজ থেকে  নবী সা. দুনিয়ায় ফিরে আসেন।
নামাজ মুসলিম জীবনে একটি অপরিহার্য ইবাদত। এটি ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, ইহকালীন ও পরকালীন জীবনে মুক্তির একমাত্র সোপান। নামাজ আদায়ের মাধ্যমে মহান স্রষ্টা আল্লাহ তায়ালার সাথে বান্দার গভীর সর্ম্পক সৃষ্টি হয়।
নামাজ আদায়ের মাধ্যমে একজন মুমিন বান্দা সময়ানুবর্তিতা ও দায়ীত্ব পরায়নতার শিক্ষা লাভ করে থাকেন। কেননা মোমিন বান্দা নিজের দায়িত্ব পালনের সাথে সাথে যথা সময়ে নামাজ আদায় করতে পারে। নামাজ পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যমে, শৃঙ্খলার সাথে আদায় করতে হয়। এই ইবাদতটি শুধু মানুষকে শৃঙ্খলিত করে না, বরং সৃষ্টিকর্তার সাথে দাসত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে তুলে। তাই নামাজ প্রতিষ্ঠা মানে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা। নামাজকে অস্বীকার করা মানে নিজের অস্থিতকেই অস্বীকার করা।  নবী সা. এ ব্যাপারে বলেছেন- ‘যে নামাজকে প্রতিষ্ঠা করল, সে দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করল। আর যে নামাজকে বিনষ্ট করল, সে দ্বীনকেই বিনষ্ট করল’।
নামাজ এমন একটি ইবাদত, যে ইবাদতের মাধ্যমে মানসিক, মৌখিক ও দৈহিকভাবে সব কাজ সম্বনয় সাধন করা যায়। যার সাথে আর্থিক, আর্থ সামাজিক, মানসিক ও অন্যান্য বিষয়সমূহের উপস্থিতি বিদ্যমান। আর্থিক বিষয়টি হলো রিজিকের সাথে অন্তর্ভুক্ত। নামাজি ব্যক্তি হালাল ও পবিত্র রিজিক নিশ্চিত না করে ভক্ষণ করেন না। শুধুমাত্র নামাজের মাধ্যমে দৈহিক-জৈবিক পবিত্রতা অর্জন করা সম্ভব।
নামাজ সম্পর্কিত কুরআনের বয়ান:
১. তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। আর নিঃসন্দেহে তা বড়ই কঠিন- বিনীতদের জন্যে ব্যতীত।
(বাকারাহ ২: ৪৫)
২. বল, নিশ্চয় আমার নামাজ, আমার কুরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎ সমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যে। (আনয়াম ৫:১৬২)
৩. তোমরা নামাজ সমূহের প্রতি এবং (বিশেষ করে) মধ্যবর্তী নামাজের প্রতি যত্নবান হও, এবং আল্লাহর (সন্তুষ্টির) জন্যে একান্ত অনুগত অবস্থায় দাঁড়াও। (বাকারাহ ২:২৩৮)
৪. আমি যদি তাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করি (ক্ষমতা ও সম্পদ দ্বারা) তাহলে তারা নামাজ কায়েম করবে, সৎ কাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎ কাজ  হতে নিষেধ করবে, আর সব কাজের পরিণাম আল্লাহর নিকট বিদ্যমাণ। (হাজ্ব: ২২:৪১)
৫. (হে নবী!) তুমি পাঠ করো তোমার প্রতি যে কিতাব ওহী করা হয়েছে তা থেকে এবং নামাজ প্রতিষ্ঠা করো। নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করে। এবং আল্লাহর স্মরণই সর্বশ্রেষ্ঠ। আর তোমরা যা করো আল্লাহ তা জানেন। (‘আনকাবুত: ২৯: ৪৫)
 ৬. এবং তুমি নামাজ কায়েম কর  দিনের দুই প্রান্তে ও রাতের প্রথমাংশে। নিশ্চয় ভালো কাজ মন্দ কাজকে মিটিয়ে দেয়। উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্যে এটি এক উপদেশ। (হুদ: ১১: ১১৪)
৭. অতঃপর যখন তোমরা নামাজ সমাপ্ত করবে; তখন দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করো, অতঃপর যখন তোমরা নিরাপদ বোধ করবে তখন পুর্নাঙ্গ) নামাজ কায়েম কর, নিশ্চয় নামাজ মু’মিনদের উপর একটি সময় নির্ধারণ ফরয।
(নিসা ৪:১০৩)
৮. সূর্য হেলে পড়ার পর থেকে রাতের ঘন অন্ধকার পর্যন্ত নামাজ কায়েম করো এবং কায়েম কর ফজরের কুরআন পাঠও (অর্থাৎ সালাতুল ফরজ)। নিশ্চয় ফজরের পাঠ (সালাতুল ফরজ) প্রত্যক্ষ করা হয়। (বানী ইসরাইল: ১৭:৭৮)
৯. ওহে যারা ঈমান এনেছ! জুমু‘আর দিনে যখন তোমাদেরকে নামাজের জন্যে ডাকা হয় তখন তোমরা  আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও এবং ক্রয় বিক্রয় পরিত্যাগ কর। এটি তোমাদের জন্যে উত্তম; যদি তোমরা তা জানতে। (জুমু‘আ: ৬২: ৯)
নামাজ সম্পর্কে রাসূল সা. এর হাদীস:
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بُنِىَ الْاِسْلَامُ عَلٰى خَمْسٍ شَهَادَةُ اَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللّٰهُ وَاَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ اللّٰهِ وَاِقَامُ الصَّلٰوْةَ وَاِيْتَاءُ الزَّكٰوْةَ وَحَجُّ الْبَيْتِ وَصَوْمُ رَمَضَانَ- مُتَّفَقٌ عَلَيْةِ-
অর্থাৎ- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ইসলামের ভিত্তি ৫টি জিনিসের ওপর স্থাপিত-
১. এ সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল।
২. নামাজ কায়েম করা।
৩. জাকাত আদায় করা।
৪. বাইতুল্লাহর হজ করা।
৫. রমজানের রোজা রাখা।
(বোখারী ও মুসলিম)
আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন-
وَنَهَانِيْ عَنْ نَقْرَةٍ  كَنَقْرَةِ  الدَّيْكِ  وَإِقْعَاءٍ كَإِقْعَاءِ الْكَلْبِ وَالْتِفَاتٍ كَالْتِفَاتِ الثَّعْلَبِ-
অর্থাৎ- নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজে তিনটি বিষয় থেকে নিষেধ করেছেন।
১. মোরগের মত ঠোকর মারতে।
২. কুকুরের মত বসতে।
৩. শৃগালের মত এদিক সেদিক তাকাতে। (আহমদ-২৯৯)
রাসূল সা. বলেন;
أَن رَسُوْلَ اللّٰهِ صَلَّى اللّٰهِ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَى رَجُلًا لَا يُتِمَّ رُكُوْعَهُ يَنْقُرُ فِيْ سُجُوْدِهِ وَهُوَ يُصَلِّيْ- فَقَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَوْ مَاتَ هَذَا عَلَى حَالِهِ هَذِهِ مَاتَ عَلَى غَيْرِ مِلَّةِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَثَلُ الَّذِيْ  لَا يُتِمُّ رُكُوْعَهُ وَيَنْقُرُ فِيْ سُجُوْدِهِ مَثَلُ الْجَائِعِ يَأكُلُ التَّمْرَةَ وَالتَّمْرَتَانِ لَا يُغْنِيَانِ عَنْهُ شَيْئًا-
অর্থাৎ- একদিন হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে নামাজ আদায় করতে দেখলেন যে, রুকূ পুরোপুরিভাবে করছে না এবং সিজদায় ঠোকর মারছে। হুজুর নির্দেশ দিলেন, পরিপূর্ণভাবে রুকূ কর এবং এ-ও ইরশাদ করলেন, এ ব্যক্তি যদি এ অবস্থাতে মৃত্যুবরণ করে তবে মিল্লাতে মোহাম্মাদী ছাড়া অন্য মিল্লাতে মৃত্যুবরণ করবে। তারপর ইরশাদ করলেন, যে ব্যক্তি পরিপূর্ণভাবে রুকূ করে না এবং সিজদায় ঠোকর মারে ওই ভুখার মত, যে এক দু’টি খেজুর খেয়ে নেয়, যা কোনো কাজ দেয় না।
(মু’জামুল কাবীর, ১৫৮)
আবু কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, হুজুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
أَسْرَقُ النَّاسِ مَنْ يَسْرِقُ صَلَاتَهُ، قِيْلَ: يَارَسُوْلَ اللّٰهِ، وَكَيْفَ يَسْرِ قُ صَلَاتَهُ؟ قَالَ: لَا يُتِمُّ رُكُوْعَهَا، وَلَا سُجُوْدَهَا-
অর্থাৎ- সবচেয়ে বড় চোর সেই, যে নিজ নামাজ চুরি করে। কেউ আরজ করল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! নামাজ কীভাবে চুরি করে? ইরশাদ করলেন যে, ব্যক্তি রুকূ ও সিজদা পুরোপুরিভাবে আদায় করে না। (মুজামুল কাবীর-২০৮)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুদূদ বা শরয়ী শাস্তির বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে সাহাবায়ে কেরামগণকে বললেন-
مَا تَقُوْلُوْنَ فِىْ السَّارِقِ، وَالزَّانِيْ، وَشَارِبِ الْخَمْرِ؟ قَالُوْا: اللّٰهُ وَرَسُوْلُهُ أَعْلَمُ قَالَ: هُنَّ فَوَاحِشُ، وَفِيْهُنَّ عُقُوْبَاتٌ، وَشَرُّ السَّرِقَةِ سَرِقَةُ الرَّجُلِ صَلَاتَهُ- قَالُوْا: يَا رَسُوْلَ اللّٰهِ، وَكَيْفَ يَسْرِقُ صَلَاتَهُ؟ قَالَ: لَا يُتِمُّ رُكُوْعَهَا وَلَا سُجُوْدَهَا-
অর্থাৎ- মদ্যপায়ী ব্যভিচারী ও চোর সম্পর্কে তোমাদের কী ধারণা? সকলে আরজ করলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুব ভালো জানেন। ইরশাদ করলেন, এসব অত্যন্ত মন্দ এবং এতে শাস্তি রয়েছে। আর সবচেয়ে বড় চুরি হচ্ছে, লোকে নিজের নামাজ চুরি করা। আরজ করা হলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! নিজের নামাজ কীভাবে চুরি করে? ইরশাদ করলেন, এভাবে যে, রুকূ ও সিজদা পুরোপুরিভাবে আদায় না করা। (আল মুসান্নাফ ৩৭০)
হজরত হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন-
رَأَى رَجُلًا لَا يُتِمُّ رُكُوْعَهُ وَلَا سُجُوْدَهُ، فَلَمَّا قَضَىْ صَلَاتَهُ قَالَ لَه حُذَيْفَةُ: مَا صَلَّيْتَ؟ قَالَ: وَأَحْسِبُهُ قَالَ: لَوْمُتَّ عَلَى غَيْرِ سُنَّةِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ-
অর্থাৎ- তিনি এক ব্যক্তিকে দেখলেন, রুকূ ও সিজদা পুরোপুরিভাবে আদায় করছে না। যখন সে নামাজ শেষ করল তিনি তাকে কাছে ডেকে বললেন, তোমার নামাজ হয়নি। বর্ণনাকারী বলেন, আমার ধারণা হচ্ছে, তিনি এ-ও বলেছেন যে, যদি তুমি এভাবে নামাজ পড়তে পড়তে মৃত্যুবরণ কর তবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দ্বীনের ওপর তোমার মৃত্যু হবে না। (বোখারী)
হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
لَا يَنْظُرُ اللّٰهُ إِلَى صَلَاةِ عَبْدٍ لَا يُقِيْمُ صُلْبَهُ بَيْنَ رُكُوْعِهِ وَسُجُوْدِهِ-
অর্থাৎ- আল্লাহ তায়ালা বান্দার ওই নামাজের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন না, যাতে রুকূ ও সিজদার মাঝখানে পিঠ সোজা করা হয় না।
হুজুর সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম  হজরত আনাস বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন,
يَا بُنَىَّ، إِيَّاكَ وَالْاِلْتِفَاتَ فِيْ الصَّلَاةِ، فَإِنَّ الْاِلْتِفَاتَ فِيْ الصَّلَاةِ هَلَكَةٌ-
অর্থাৎ- হে বৎস! নামাজে এদিক সেদিক তাঁকানো থেকে বিরত থাক। কারণ নামাজে এদিক সেদিক তাঁকানোই ধ্বংস। (তিরমিযী)
হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
مَا بَالُ أَقْوَامٍ يَرْفَعُوْنَ أَبْصَارَهُمْ إِلَى السَّمَاءِ فِيْ صَلَاتِهِمْ، فَاشْتَدَّ قَوْلُهُ فِيْ ذَلِكَ، حَتَّى قَالَ: لَيَنْتَهُنَّ عَنْ ذَلِكَ أَوْ لَتُخْطَفَنَّ أَبْصَارُهُمْ-
অর্থাৎ- কী হলো ওই সব লোকের, যারা নামাজের মধ্যে আসমানের দিকে চোখ তুলে তাকায়। তা থেকে বিরত থাক, অন্যথায় তাদের চোখ ছিনিয়ে নেয়া হবে। (বোখারী)
হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহ তায়ালা বলেন,
مَنْ صَلَّى الصَّلَاةَ لِوَقْتِهَا فَأَقَامَ حَدَّهَا كَانَ لَهُ بِهِ عَلَىَّ عَهْدٌ أُدْخِلُهُ الْجَنَّةَ، وَمَنْ لَمْ يُصَلِّ الصَّلَاةَ لِوَقْتِهَا وَلَمْ يُقِمْ حَدَّهَا لَمْ يَكُنْ لَهُ عِنْدِى عَهْدٌ إِنْ شِئْتُ أَدْخَلْتُهُ النَّارَ، وَإِنْ شِئْتُ أَدْخَلْتُهُ الْجَنَّةَ-
অর্থাৎ- যে ব্যক্তি যথাসময়ে নামাজ সম্পন্ন করবে, তার জন্য আমার প্রতিশ্রুতি হলো, তাকে আমি জান্নাতে প্রবেশ করাব। আর যে ব্যক্তি যথাসময়ে পড়বে না এবং সঠিকভাবে সম্পন্ন করবে না তার জন্য আমার কোনো প্রতিশ্রুতি নেই। চাইলে দোযখে প্রবেশ করাব আর চাইলে জান্নাতে প্রবেশ করাব। (দারেমী,)
হজরত হাসান রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন,
مَنْ لَمْ تَنْهَهُ صَلَاتُهُ عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ، لَمْ يَزْدَدْ مِنَ اللّٰهِ إِلَّا بُعْدًا-
অর্থাৎ- যার নামাজ তাকে অশ্লীল ও নিষিদ্ধ কাজসমূহ থেকে বিরত রাখে না, তা নামাজই নয়। (তাবরানী)
হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
مَنْ تَرَكَ الصَّلَاةَ مُتَعَمِّدًا فَقَدْ بَرِئَتْ مِنْهُ ذِمَّةُ اللّٰهِ وَرَسُوْلِهِ-
অর্থাৎ- ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ছেড়ে দিও না, কারণ যে ব্যক্তি স্ব-ইচ্ছায় নামায ছেড়ে দেয় আল্লাহ ও তার রাসূল এই নামাজ ত্যাগকারী থেকে দায়মুক্ত। (আহমদ)
হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَثَلُ الصَّلَوَاتِ الخَمْسِ كَمَثَلِ نَهْرٍ جَارٍ غَمْرٍ عَلَى بَابِ أَحَدِكُمْ يَغْتَسِلُ مِنْهُ كُلِّ يَوْمٍ خَمْسَ مَرَّاتٍ-
 رواه مسلم
অর্থাৎ- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের উদাহরণ হলো, যেমন তোমাদের কারো ঘরের দরজার পাশেই একটি পানিপূর্ণ প্রবাহমান নদী, আর ওই লোক তাতে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে। (মুসলিম)
হজরত ইমরান বিন হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
قَالَ رَسُوْلَ اللّٰهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلِّ قَائِمًا فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَقَاعِدًا فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَعَلَى جَنْبٍ- رواه البخاري
অর্থাৎ- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, নামাজ দাঁড়িয়ে আদায় করবে, যদি অসমর্থ হও তখন বসে আদায় করবে আর যদি তাও না পার তখন শুয়ে আদায় করবে। (বোখারী)
হজরত আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,
عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ الصَّلَوَاتُ الْخَمْسُ وَالْجُمُعَةُ اِلَى الْجُمُعَةِ وَرَمَضَانُ اِلٰى رَمَضَانَ مُكَفَّرَاتٌ لِّمَا بَيْنَهُنَّ اِذَا اجْتُنِبَتِ الْكَبَائِرُ- رَوَاهُ مُسْلِمٌ
অর্থাৎ- নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুম্মাহ হতে অপর জুম্মাহ এবং এক রমজান হতে অপর রমজান, এসবের মধ্যবর্তী সময়ে যেসব সগীরা গুনাহ হয় তার জন্য কাফফারা স্বরূপ, যখন কবীরা গুনাহ থেকে বান্দাহ দূরে থাকে। (মুসলিম)
কুরআনে নামাজ প্রতিষ্ঠার নির্দেশ:
সূরা ত্বোয়া-হা: (২০:১৪) অর্থ- আমিই আল্লাহ, আমি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই। অতএব আমার ইবাদত কর এবং আমার স্মরণার্থে নামায প্রতিষ্ঠা কর।
সূরা নিসা: (০৪:১০৩) অর্থ- অতঃপর যখন তোমরা নামায সম্পন্ন কর, তখন দন্ডায়মান, উপবিষ্ট ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ কর। অতঃপর যখন বিপদমুক্ত হয়ে যাও, তখন নামায প্রতিষ্ঠা কর। প্রকৃতপক্ষে নামায বিশ্বাসীদের উপর সুনির্দিষ্ট সময়েই ফরয করা হয়েছে।
সূরা বাক্বারাহ: (০২:৪৩) অর্থ- আর নামায প্রতিষ্ঠা কর, যাকাত দান কর এবং রুকু কর রুকুকারীদের সাথে।
(০২:১১০)
অর্থ- তোমরা নামায প্রতিষ্ঠা কর এবং যাকাত দাও। তোমরা নিজের জন্যে পূর্বে যে সৎকর্ম প্রেরণ করবে, তা আল্লাহর কাছে পাবে। তোমরা যা কিছু কর, নিশ্চয় আল্লাহ তা প্রত্যক্ষ করেন।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কি কুরআন দ্বারা প্রমাণিত?
অনেকেই বলেন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজকে কুরআন দ্বারা প্রমাণিত নয়। অথচ আল্লাহ তায়ালা মেরাজের রাতে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ৫০ ওয়াক্ত থেকে ৫ ওয়াক্ত নামাজ নির্ধারিত করে উম্মতের জন্য উপহারস্বরূপ পেশ করেন। আর মানুষের জন্য প্রতিদিন এ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা ফরজ।
নামাজের এ ওয়াক্তগুলো পবিত্র কুরআনের আয়াত দ্বারা প্রমাণিত। কোন কোন সময় এ নামাজ আদায় করতে হবে তারও নির্দেশ এসেছে কুরআনে। অনেকেই বলে থাকেন কুরআনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নির্দেশনা কোথায়? কুরআনে তো এ কথা উল্লেখ নেই।
আসলেই পবিত্র কুরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ নির্ধারিত। আল্লাহ তায়ালা সময়গুলো সুস্পষ্ট করে দিয়ে বলেন-
“সুতরাং তোমরা আল্লাহর তাসবিহ আদায় কর, যখন সন্ধ্যায় (মাগরিব ও ইশার নামাজ দ্বারা) উপনীত হবে এবং সকালে (ফজর নামাজ দ্বারা) উঠবে। আর অপরাহ্নে (আসর নামাজ দ্বারা) ও জোহরের সময়ে। আর আসমান ও জমিনে সব প্রশংসা একমাত্র তাঁরই।”
(রূম : আয়াত ১৭-১৮)
আল্লাহ তায়ালা সুরা রূমের উল্লেখিত দু’টি আয়াতে তাসবিহ বলতে নামাজ পড়াকে বুঝিয়েছেন। এ আয়াতদ্বয়ে যে সময়ের কথা বলা হয়েছে তাহলো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময়ের কথা।
আল-কুরআনে সরাসরি ‘পাঁচ’ শব্দটি না থাকলেও যে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে তা থেকে দৈনিক ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ’ যে মুসলিমদের জন্য ফরজ করা হয়েছে তা স্পষ্ট। রাসূল সা. নিজে মসজিদে উপস্থিত থেকে পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ আদায় করেছেন এবং নামাজের প্রতিটি ধাপ কিভাবে সম্পন্ন করতে হবে অন্যদেরকেও তা হাতে-কলমে শিখিয়ে দিয়েছেন। সেই বাস্তব শিক্ষাটি সব কালে এবং বর্তমানেও সেভাবেই পালন করা হচ্ছে। তাই ফরজ নামাজের ওয়াক্ত নিয়ে কারো মধ্যেই তেমন কোন দ্বিমত নেই। আর ফরজ নামাজের রাকাতের বিষয়টি এতটাই প্র্যাকটিকাল যে, সবকালেই পৃথিবীর সর্বত্র সব মুসলিমই
ফজরের ২ রাকাত,
জুহুরের ৪ রাকাত,
আছরের ৪ রাকাত,
মাগরীবের ৩ রাকাত,
ইশার ৪ রাকাত ফরজ নামাজ নির্দ্বিধায় আদায় করেছেন, এখনও করছেন এবং ভবিষ্যতেও করবেন।
আল-কুরআনে (০৪:১০৩) সুনির্দিষ্ট সময়েই নামাজ কায়েম করতে বলা হয়েছে। সেই দিকনির্দেশনা অনুসারে দিনের বিশেষ বিশেষ সময়ের যে হিসেব পাওয়া যায়, তাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময়সূচী স্পষ্টভাবেই বুঝে নেওয়া যায়।
কোন কোন সময়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কায়েম করতে হবে সে সম্পর্কে কুরআনের দিকনির্দেশনা:
১- ফজর- আয়াত নং (১৭:৭৮), (১১:১১৪), (৭:২০৫), (৩০:১৭), (৩৮:১৮) ও (৫০:৩৯)
২- জুহর- আয়াত নং (১৭:৭৮), (৩০:১৮) ও (৫০:৩৯)
৩- আছর- আয়াত নং (১১:১১৪), (০২:২৩৮), (৩০:১৭) ও (৩৮:১৮)
৪- মাগরিব- আয়াত নং (১৭:৭৮), (১১:১১৪) ও (০৭:২০৫)
৫- ইশা- আয়াত নং (১৭:৭৮), (১১:১১৪), (৩০:১৮) ও (৫০:৪০)
কুরআনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের বয়ান:
“ফরজ নামাজের” নির্দেশ-
সূরা আল আ’রাফ: (০৭:২০৫)
অর্থ- আর স্মরণ করতে থাক স্বীয় পালনকর্তাকে আপন মনে ক্রন্দনরত ও ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় এবং এমন স্বরে যা চিৎকার করে বলা অপেক্ষা কম; সকালে (ফজর) ও সন্ধ্যায়। আর বে-খবর থেকো না।
সূরা আর-রূম: (৩০:১৭)
অর্থ- সুতরাং আল্লাহর মহিমা স্মরণ কর সূর্যাস্তের পূর্বে (যখন তোমরা সন্ধ্যায় পৌঁছাও) এবং সূর্যোদয়ের পূর্বে (ফজর) (যখন তোমরা সকালে পৌঁছাও)।
সূরা ছোয়াদ: (৩৮:১৮)
অর্থ- আমি পর্বতমালাকে তার অনুগামী করে দিয়েছিলাম, তারা সকালে (ফজর) ও বিকালে তার সাথে পবিত্রতা ঘোষণা করত;
সূরা ক্বাফ: (৫০:৩৯)
অর্থ- অতএব, তারা যা কিছু বলে, তজ্জন্যে আপনি সবর করুন এবং, সূর্যোদয়ের পূর্বে (ফজর) ও সূর্যাস্তের পূর্বে আপনার পালনকর্তার প্রশংসা ও পবিত্রতা ঘোষণা করুন।
“জুহর নামাজেরর” নির্দেশ-
সূরা আর-রূম: (৩০:১৮)
অর্থ- এবং আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যাবতীয় প্রশংসা তাঁরই জন্য, নিশাকালে এবং যখন তোমরা মধ্যাহ্নে (জুহর) থাক।
“আছর নামাজের” নির্দেশ-
বাক্বারাহ: (০২:২৩৮)
অর্থ- সমস্ত নামাযের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষকরে মধ্যবর্তী নামাযের (আসর) ব্যাপারে। আর আল্লাহর সামনে একান্ত আদবের সাথে দাঁড়াও।
“মাগরিবের নামাজের” নির্দেশ-
সূরা আ’রাফ: (০৭:২০৫)
অর্থ- আর স্মরণ করতে থাক স্বীয় পালনকর্তাকে আপন মনে ক্রন্দনরত ও ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় এবং এমন স্বরে যা চিৎকার করে বলা অপেক্ষা কম; সকালে (ফজর) ও সন্ধ্যায় (মাগরিব)। আর বে-খবর থেকো না।
সূরা হুদ: (১১:১১৪)
অর্থ- আর নামায প্রতিষ্টা কর দিনের দুই প্রান্তেই (ফজর ও আসর) এবং রাতের নিকটবর্তী অংশে (মাগরিব ও ইশা); প্রকৃতপক্ষে সৎকর্ম অবশ্যই পাপ দূর করে দেয়।
“ইশার নামাজের” নির্দেশ-
সূরা আর-রূম: (৩০:১৮)
অর্থ- এবং আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যাবতীয় প্রশংসা তাঁরই জন্য, নিশাকালে (ইশা) এবং যখন তোমরা মধ্যাহ্নে (জুহর) থাক।
সূরা ক্বাফ: (৫০:৪০)
অর্থ- রাত্রির কিছু অংশে তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করুন এবং নামাযের পশ্চাতেও।
সূরা হুদ: (১১:১১৪)
অর্থ- আর নামায প্রতিষ্টা কর দিনের দুই প্রান্তেই (ফজর ও আসর) এবং রাতের নিকটবর্তী অংশে (মাগরিব ও ইশা); প্রকৃতপক্ষে সৎকর্ম অবশ্যই পাপ দূর করে দেয়, যারা স্মরণ রাখে তাদের জন্য এটি এক মহা স্মারক।
ব্যক্তি জীবনে নামাজের শিক্ষা:
নামাজ এক দিন, এক বছর বা এক যুগেরও নয়। নামাজ প্রতিদিন শিখতে হয় এবং মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত সে শিক্ষা জারি থাকা উচিত। নামাজ প্রতিক্ষণের সুস্থির অনুভব-উপলব্ধি, তিলাওয়াত-তাসবিহ, রুকু-সিজদার জন্য যে তৃষ্ণা তৈরি করে, মৃত্যুর পরও তা বাকি থেকে যায়। নামাজের ব্যবহারিক ও বাহ্যিক দিকগুলো স্বল্প সময়ে আয়ত্তে আনা যেতে পারে, তবে আভ্যন্তরীণ উন্নতির ক্রমধারা যা উপলব্ধি ও সূক্ষ্ম অনুভূতির জন্ম দেয়, তা আমৃত্যু শাণিত করতে হয়। তাই নামাজ প্রতিষ্ঠা এবং অব্যাহত শিক্ষার ও অনুশীলনের বিষয়টিও অন্তহীন।
শাণিত ও শাশ্বত নামাজ কেবল নামাজই নয়, তা মুমিনের বেঁচে থাকার হৃৎস্পন্দনও বটে। যখন একজন মুসল্লি বা নামাজি আন্তরিকভাবে নামাজে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে, তখন এ নাজ আনুষ্ঠানিক ও লোক দেখানোর বিষয় থাকে না। বরং বেঁচে থাকার অবলম্বনে পরিণত হয়। আত্মার সঙ্গে আত্মজিজ্ঞাসা থাকে এবং প্রকৃত আত্মজিজ্ঞাসার সদুত্তর হলো আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস করা। সেই মহান অস্তিত্বের সঙ্গে আধ্যাত্মিক সম্পর্ক বজায় রাখা ও ধারাবাহিকতা রক্ষার একমাত্র অবলম্বন হলো নিয়মিত নামাজ আদায় করা এবং স্বীয় নামাজের পবিত্র প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে পবিত্র জীবন যাপন করা। এটাই মূলত জীবনের সর্বক্ষেত্রে নামাজ কায়েমের নামান্তর।
ইনশাআল্লাহ নামাজ একজন মুসল্লির জীবনকে পরিশীলিত ও পরিমার্জিত করে এবং নামাজবিহীন জীবনের হাহাকার দূর করতে নামাজের বিকল্প আর কিছু নেই।
নামাজেরর সমন্বিত রূপ হচ্ছে অঙ্গসঞ্চালন। (যেমন রুকু, সিজদা ইত্যাদি) কোরআন ও তাসবিহ পঠন, অন্তরকে শক্তির প্রতি সমর্পণ। উপরিউক্ত তিনটি বিষয়ের সমন্বয়কে পূর্ণ নামাজ বলে।
ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ হলো নামাজ।  কুরআন ও হাদিসে নামাজ পড়া নয়, প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নামাজ হিসাব করেই সময়ানুবর্তিতার সঙ্গে পড়া আবশ্যক। কেননা, কেয়ামতের দিন সবার আগে নামাজেরই হিসাব নেওয়া হবে। (বুখারি ও মুসলিম)।
নামাজ পবিত্রতার প্রতীক ও জান্নাতের চাবিকাঠি।
(বুখারি, তিরমিজি)।
রাসুল সা. বলেন, ‘যে ব্যক্তি নামাজ আদায় করে না, ইসলামে তার কোনো অংশ নেই। যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত নামাজ ত্যাগ করে, সে জাহান্নামি।’
রাসুল সা. বলেন, ইমান ও কুফরের মধ্যবর্তী দেয়াল হলো নামাজ। নামাজ মানবজীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে বা নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের শিক্ষা দেয়। মানুষ যা দেখে তা শেখে, তা ভাবে। তাই দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ মনোনিয়ন্ত্রণের জন্য অপরিহার্য; এর দ্বারা কর্মও নিয়ন্ত্রিত হয়। এ জন্যই নামাজে দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ অতিগুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাকবিরে তাহরিমার সময় দৃষ্টি সিজদার জায়গায়। দাঁড়ানো অবস্থায়ও দৃষ্টি সিজদার জায়গায়। রুকু অবস্থায় দৃষ্টি পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলির দিকে। পুনরায় দাঁড়ানো অবস্থায় দৃষ্টি সিজদার জায়গায়। সিজদা অবস্থায় দৃষ্টি নাকের আগায়। বসা অবস্থায় দৃষ্টি নাভিতে। সালাম দেওয়ার সময় দৃষ্টি কাঁধে নিবদ্ধ থাকবে। এভাবে নামাজ আদায় করলে মনোনিয়ন্ত্রণ ও আত্মনিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে; নামাজের প্রকৃত উদ্দেশ্যও সফল হবে। নামাজ সত্যিকারার্থে তার আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থ প্রকাশে সার্থক হবে। জীবন ও সমাজ সুন্দর হবে, আল্লাহ তায়ালাও খুশি হবেন।
নামাজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য:
নামাজের গুরুত্ব বর্নণা করতে গিয়ে মোয়াজ বিন জাবাল রা. বলেন, নবী সা. আমাকে দশটি বিষয়ে অসিয়ত করেছেন, ‘কোন অবস্থাতেই ফরজ নামাজ ত্যাগ করা যাবে না। কেননা, যে ইচ্ছা করে ফরজ নামাজ ত্যাগ করে, আল্লাহ তার দায়িত্ব গ্রহণ করেন না’।
নবী সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির এক ওয়াক্ত নামাজ ছুটে গেল তার সন্তান-সন্ততি এবং সমস্ত ধন দৌলত যেন লুণ্ঠিত হয়ে গেল’।
রাসূল সা. আরো এরশাদ করেন- ‘বেনামাজীর ইসলামে কোন অংশ নেই’।
এমনিভাবে নবী সা. অনেক হাদীস বর্ণনা করেছেন। যা এই ছোট পরিসরে তুলে ধরা সম্ভব না। তবুও একটু চেষ্টা করলাম।
নবী সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি যথারীতি নামাজ পড়ে, আল্লাহ তার নামাজের বদলে, পাঁচটি বিশেষ সম্মান দান করেন।
১.নামাজির অভাব দূর করেন,
২. কবরের আজাব দূর করেন,
৩. কেয়ামতের দিন ডান হাতে আমল নামা দিবেন,
৪. বিদ্যুতের ন্যায় পুলসিরাত পার করবেন,
৫. যথারীতি নামাজ আদায়কারী বিনা হিসাবে বেহেস্তে প্রবেশ করবেন।
নামাজের অন্যতম দিক হলো বিনয় ও নম্রতা। নামাজের মনস্তাত্বিক ব্যবহার হচ্ছে বিনয় ও নম্রতা অর্জন করা। বিনয় ও নম্রতার মাধ্যমে একাগ্রতা সৃষ্টি হয়। একাগ্রতাই নামাজকে প্রাণবন্ত করে তুলে। শুধুমাত্র অনুভূতিহীন ঠোঁট নাড়াচাড়া, উঠা বসার কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই। কেননা, আল্লাহ তায়ালা পাগল ও শিশুর উপর নামাজ আদায় করা অপরিহার্য করেননি। তবে যারা সুস্থ্য, বিবেকবান, বুদ্ধিসম্পন্ন, শারীরিক দিক দিয়ে যোগ্যতাসম্পন্ন তাদের উপর নামাজ আদায় করা অপরিহার্য বটে। যারা পবিত্র আমেজ ও আবেগ, অনুভূতিতে জগতের সীমানা ভেদ করে আরশে আজিমে সিজদাহ পৌঁছাতে পারে, তারাই নামাজকে প্রাণবন্ত বা জীবন্ত করে তুলতে পারে। এমন নামাজেই মানুষের চিন্তা-চেতনা ও ঈমানী জীবনকে পূর্ণতা দান করে। যখন কোন নামাজি বান্দার জীবন থেকে এক ওয়াক্ত নামাজহীন সময় পার হয়, তখন তার জীবনে শূন্যতা বোধ হয়। এই শূন্যতা সহজেই পূরণ হয় না।  তার মাঝে সৃষ্টি করে চরম মানসিক দুশ্চিন্তা। পরকালে জাহান্নামের শাস্তি সে তো দূরতম বিষয়। প্রত্যেক মোমিন বান্দার আত্মার সাথে আত্মজিজ্ঞাসা থাকে। প্রকৃত আত্মজিজ্ঞাসার সদুত্তর হলো আল্লাহর আস্তিত্বকে বিশ্বাস করা। এই বিশ্বাস একমাত্র নামাজের মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব। নামাজ মানব জীবনে সময় নিয়ন্ত্রণ করে। নিয়ন্ত্রিত জীবনের শিক্ষা প্রদান করে।
নামাজ না পড়ার শাস্তি:
কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার নামাজের হিসাব হবে। যদি নামাজ ঠিক হয় তবে তার সকল আমল সঠিক বিবেচিত হবে। আর যদি নামাজ বিনষ্ট হয় তবে তার সকল আমলই বিনষ্ট বিবেচিত হবে। (তিরমিযি:২৭৮)
“আর যারা তাদের সালাতে যত্নবান, তারাই জান্নাতের ওয়ারিশ-যারা ফিরদাউসের ওয়ারিশ হবে এবং তথায় তারা চিরকাল থাকবে।
(আল-মোমিন: ৯, ১০, ১১)
“মোমিনগণ সফলকাম, যারা তাদের সালাতে নম্রতা ও ভীতির সাথে দাঁড়ায়। (আল-মোমিন: ১, ২)
আমরা অনেক সময় নিজেদের ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাতটিকে আদায় করি না, বা ছেড়ে দেই। ইচ্ছাকৃত নামাজ ছেড়ে দেয়া শিরকের পর সবচেয়ে বড় গোনাহ।
রাসূল সা. ইরশাদ করেন, ‘যে কেউ ইচ্ছাকৃত নামাজ ছেড়ে দেয় আল্লাহ পাক তার হতে তাঁর জিম্মাদায়িত্ব উঠিয়ে নেন’। (বুখারি-১৮, ইবনে মাজাহ-৪০৩৪, মুসনাদে আহমদ-২৭৩৬৪) অর্থাৎ যে নামাজ ছেড়ে দিলো সে যেন আল্লাহর সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করল।
এক হাদিসে আছে, রাসুল সা. বলেছেন, নামাজ ছেড়ে দেওয়া মানুষকে কুফরির সঙ্গে মিলিয়ে দেয়।
ইবনে হযর মক্কী রহ. “ফাজায়েলে আ’মাল মিনাল জাওয়াযের” নামক গ্রন্থে একটি হাদিস উল্লেখ করেন। হাদিসটিতে নবী সা. বলেন; যে ব্যক্তি নামাজের ব্যাপারে অলসতা করে তাকে ১৫ ধরনের শাস্তি দেওয়া হবে। তার মধ্য থেকে পাঁচ ধরনের শাস্তি দুনিয়াতে দেওয়া হবে। তিন ধরনের শাস্তি মৃত্যুর সময় দেওয়া হবে। তিন ধরনের শাস্তি কবরে দেওয়া হবে। তিন ধরনের শাস্তি কবর থেকে উঠানোর পর দেওয়া হবে।
দুনিয়াতে যে পাঁচ ধরনের শাস্তি হবে তা হলো,
এক. তার জীবনের বরকত ছিনিয়ে নেওয়া হবে।
দুই. তার চেহারা থেকে নেককারদের নূর দূর করে দেওয়া হবে।
তিন. তার নেক কাজের কোন বদলা দেওয়া হবে না।
চার. তার কোন দোয়া কবুল হবে না। পাঁচ. নেক বান্দাদের দোয়ার মধ্যে তার কোন হক থাকবে না।
মৃত্যুর সময় যে তিন ধরনের শাস্তি দেওয়া হবে :
এক. জিল্লতি ও অপমানের সঙ্গে সে মৃত্যুবরণ করবে।
দুই. ক্ষুধার্ত অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করবে।
তিন. এমন পিপাসার্ত অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করবে যে, সমুদ্র পরিমাণ পানি পান করালেও তার পিপাসা মিটবে না।
কবরে যে চার ধরনের শাস্তি হবে: এক. কবর তার জন্য এমন সংকীর্ণ হবে যে, এক পাশের বুকের হাড় আরেক পাশে ঢুকে যাবে।
দুই. তার কবরে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হবে।
তিন. তার কবরে এমন একটি সাপ নিযুক্ত করে দেওয়া হবে, যার চক্ষু আগুনের আর নখগুলো হবে লোহার, তার প্রত্যেকটি নখ লম্বা হবে একদিনের দূরত্বের পথ। তার আওয়াজ হবে বজ্রের আওয়াজের মতো বিকট। সাপ ওই বেনামাজিকে বলতে থাকবে, আমাকে আমার রব তোমার উপর নিযুক্ত করেছেন, যাতে ফজরের নামাজ নষ্ট করার কারণে সূর্যোদয় পর্যন্ত তোকে দংশন করতে থাকি। জোহরের নামাজ নষ্ট করার কারণে আসর পর্যন্ত দংশন করতে থাকি। আসরের নামাজ নষ্ট করার কারণে মাগরীব পর্যন্ত দংশন করতে থাকি, মাগরিবের নামাজ নষ্ট করার কারণে এশা পর্যন্ত দংশন করতে থাকি, আর এশার নামাজ নষ্ট করার কারণে ফজর পর্যন্ত তোকে দংশন করতে থাকি। এই সাপ যখনই তাকে দংশন করবে তখনই সে ৭০ হাত মাটির নিচে ঢুকে যাবে (উঠিয়ে আবার দংশন করবে) এভাবে কেয়ামত পর্যন্ত এই সাপ তাকে আজাব দিতে থাকবে।
কবর থেকে উঠানোর পর যে চার ধরনের আজাব দেওয়া হবে:
এক. তার হিসাব খুব কঠিনভাবে নেওয়া হবে।
দুই. আল্লাহ তায়ালা তার উপর রাগান্বিত হয়ে থাকবেন।
তিন. তাকে জাহান্নামে ঢুকানো হবে। চার. তার চেহারায় তিনটি লাইন লেখা থাকবে-
১. হে আল্লাহর হক নষ্টকারী!
২. হে আল্লাহর গোস্বায় পতিত ব্যক্তি! ৩. তুই দুনিয়াতে যেমন আল্লাহর হক নষ্ট করেছিস তেমনি আজ আল্লাহর রহমত থেকে তুই নিরাশ হয়ে যাবি। বেনামাজি এই মোট ১৫ ধরনের শাস্তি আস্বাদন করবে।
নবী সা. বলেছেন, যে ব্যক্তির এক ওয়াক্ত নামাজ ছুটে গেল, তার থেকে যেন তার পরিবার-পরিজন ও ধনসম্পদ সবকিছুই কেড়ে নেওয়া হলো। (ইবনে হিব্বান)
সাধারণত পরিবার-পরিজন ও ধনসম্পদের পেছনে ব্যস্ত থাকার কারণে নামাজ ছুটে যায়। তাই নবী সা. এভাবে বলেন। অর্থাৎ একজন ব্যক্তির কাছে তার পরিবার-পরিজন, ধনসম্পদ যেমন মূল্যবান ঠিক তেমনিভাবে নামাজ তার থেকেও অধিক মূল্যবান।
একবার নবী করিম সা. একটি স্বপ্নের কথা শুনালেন, তিনি বলেন আমাকে দুই ব্যক্তি সঙ্গে করে এক জায়গায় নিয়ে গেল। জাহান্নামে এক ব্যক্তিকে দেখলাম যে, তার মাথা পাথর দ্বারা আঘাত করে চূর্ণবিচূর্ণ করা হচ্ছে। এত জোরে পাথর মারা হচ্ছে যে, সে পাথর ছুটে গিয়ে দূরে পড়ছে, পুনরায় পাথর কুড়িয়ে আনতে আনতে মাথা আগের মতোই ঠিক হয়ে যাচ্ছে। পাথর এনে আবার আঘাত করা হচ্ছে। নবী সা. সাথী দু’জনকে জিজ্ঞাসা করলেন এই লোকটি কে? তখন তারা বলল এই ব্যক্তি কুরআন শরিফ শিক্ষা করে ছেড়ে দিয়েছিল এবং নামাজ না পড়ে ঘুমিয়ে যেত। অন্য হাদিসে আছে নবী সা. একদল মানুষকে এ ধরনের শাস্তিতে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, আর জিবরাইল আ. উত্তরে বললেন এরা নামাজে অবহেলা করত।
(আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব)
অপর এক হাদীসে আলী রাযি. বলেন, নবী সা. বলেছেন, তোমরা তিন কাজে বিলম্ব করো না।
এক. নামাজ, যখন সময় হয়।
দুই. জানাজা, যখন তা তৈরি হয়। তিন. অবিবাহিত নারী, যখন তার উপযুক্ত স্বামী পাওয়া যায়। অর্থাৎ এ তিনটি কাজ করার সময় হলে সঙ্গে সঙ্গে করে নেওয়া উচিত। অপর একটি হাদিসে এসেছে, একদিন নবী সা. নামাজের বিষয় আলোচনা করতে গিয়ে বললেন, যে ব্যক্তি নামাজের গুরুত্ব দেয় না, কেয়ামতের দিন তার জন্য নামাজ নূর হবে না। তার কাছে কোনো দলিল থাকবে না। নাজাতের জন্য তার কোনো উপায়ও থাকবে না। এরূপ ব্যক্তির হাশর হবে ফেরাউন, হামান ও উবাই ইবনে খলফের সঙ্গে।
(মুসনাদে আহমদ, ইবনে হিব্বান)
নামাজ ছেড়ে দেওয়া মারাত্মক গুনাহ। হাদীসে নামাজ বর্জনকারীর প্রতি কঠিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। রাসুল সা. বলেছেন, ‘বান্দা ও কুফরির মধ্যে পার্থক্য হলো নামাজ বর্জন করা।’
(তিরমিজি, মিশকাত, পৃষ্ঠা ৩৩২)
তিনি আরো বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নামাজ আদায় করে না, দ্বিন ইসলামে তার কোনো অংশ নেই।’
(তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, মিশকাত, পৃষ্ঠা ৪৫২)
বেনামাজি কিয়ামতের দিন চরমভাবে লাঞ্ছিত ও অপদস্থ হবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘স্মরণ করো সেই চরম সংকটের দিনের কথা, যেদিন তাদেরকে আহ্বান করা হবে সিজদা করার জন্য, কিন্তু তারা করতে সক্ষম হবে না। তাদের দৃষ্টি অবনত, হীনতা তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে। অথচ যখন তারা নিরাপদ ছিল তখন তো তাদেরকে আহ্বান করা হয়েছিল। (কালাম: ৪২, ৪৩) নামাজ বর্জনকারী জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে। যেমন—কুরআনে এসেছে, অপরাধীদের সম্পর্কে (আল্লাহ) বলবেন, ‘তোমাদেরকে কিসে জাহান্নামে নীত করেছে? তারা বলবে, আমরা নামাজ পড়তাম না, অভাবগ্রস্তকে আহার্য দিতাম না, আমরা সমালোচকদের সঙ্গে সমালোচনা করতাম এবং প্রতিফল দিবসকে অস্বীকার করতাম। (মুদ্দাসসির: ৪১-৪৬)
তাই অভিভাবকদের জন্য উচিত হলো যে, শিশুদের ১০ বছর বয়স থেকেই নামাজের গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এই বয়সে নামাজ ছেড়ে দিলে মা-বাবাকে তাকে শাস্তি দিতে হবে। রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, তোমাদের সন্তানদের বয়স সাত বছর হলে নামাজের আদেশ করো। আর ১০ হলে নামাজ ছাড়ার জন্য শাস্তি প্রদান করো। শরয়ী আইন অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা এবং ইসলামী সরকারপ্রধান নামাজ বর্জনের জন্য শাস্তি প্রয়োগ করতে পারেন। ইমাম আবু হানিফা রহ. এর মতে, কোনো ব্যক্তি অলসতাবশত ইচ্ছাকৃত নামাজ ছেড়ে দিলে তাকে আটক করা হবে। ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহ. ও কোন কোন শাফেয়ি আইনবিদের মতে, নামাজ বর্জনকারীকে হত্যা করা হবে। কেননা রাসুল সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত নামাজ বর্জন করল, সে কুফরি করল (মুসলিম : ১/১২৪)
হানাফি ইমামরা বলেন, আল্লাহ তায়ালা তাওহিদে বিশ্বাসী পাপীকেও মুমিন বলে সম্বোধন করেছেন। আর নামাজ নেক আমলের অন্যতম। যে ব্যক্তি তা বর্জন করল সে পাপী-ফাসেক হলো। ফলে নামাজ বর্জনকারীকে জেলখানায় আটক রাখা হবে, যতক্ষণ না নামাজ পড়ার স্বীকৃতি দান করে।
(বাহরুর রায়েক: ৫/৪৯; আল-বাদায়ে ওয়াস সানায়ে: ৭/৬৪; নাইলুল আওতার : ১/৩৪৮০)
আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে প্রতিদিন পূর্ণ শর্ত ও রুকনসহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার তাওফীক দান করুন। আমীন।