মুফতি রেজওয়ান রফিকী : আমাদের দায়িত্ব

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

অক্টোবর ১৩ ২০১৯, ০৯:৪৯

সৈয়দ শামসুল হুদা

আমাদের সাংগঠনিক দুর্বলতাগুলো কোথায় তা আবারও প্রমাণ করে দিলো মুফতি রিজওয়ান রফিকী। তাঁর সাথে আমার ব্যক্তিগত কোন পরিচয় নেই। ফেবু’র কল্যাণেই যতটুকু জানি। তারপরও ডিবি পরিচয়ে কেউ তাকে তুলে নিয়ে গেছে শুনে খুবই কষ্ট লাগছে। একজন তরুন আলেম, ওয়ায়েজ, খতীব এবং মাদ্রাসার দায়িত্বশীল। তার নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে তাকে এভাবে তুলে নেওয়া, কোন প্রকার গ্রেফতারি পরোয়ানা না থাকা, তার ব্যাপারে কোন প্রকাশ্য আইনি ব্যবস্থা না নিয়ে নিরবে তুলে নেওয়ার মধ্যে বড় ধরণের আতঙ্ক কাজ করছে।

বেশ কয়েকদিন হয়ে গেলো, তার পক্ষে কোন ওয়েযীন সংগঠন কোন সাংবাদিক সম্মেলন না করা, কোন উচ্চবাচ্য না করা, বড় কোন মুরুব্বিদের থেকে তার ব্যাপারে কোন প্রকার পদক্ষেপ না দেখার মধ্যে আমাদের অসহায়ত্ব আবারও ফুঠে উঠলো। বিশেষ করে যে সংগঠনে মুফতি রিজওয়ান রফিকী অন্যতম সদস্য, তারাও কি রিজওয়ানকে চিনেন না? তারাও কি কোন প্রকার সাহস করে কথা বলতে পারেন না? না কি সংগঠনগুলো শুধু নিজেদের পরিচয়-সুখ্যাতি প্রচারের জন্যই? কোন সদস্যের বিপদে কথা বলার জন্য নয়? তাহলে এমন সংগঠন জনগণের আস্থাতো দূরের কথা, সদস্যদের আস্থাইতো অর্জন করতে পারবে না।

আমাদের সংগঠনগুলোর দুর্বলতা কতটুকু এটা বুঝার জন্য এগুলোই যথেষ্ট। এখন পর্যন্ত এ ধরণের কোন খবর দেখি নাই যে, কোন ওয়েজীন সংগঠন তার মুক্তির জন্য বিবৃতি দিয়েছেন। কোন সংগঠনের নেতা তার পরিবারের কাছে গিয়ে শান্তনা দিয়েছেন। তার মাদ্রাসায় গিয়ে বিষয়টি ভালোভাবে জানতে আগ্রহী হয়েছেন। তারা মনে মনে হয়তো কষ্ট অনুভব করেছেন, কিন্তু বাহ্যিক কোন পদক্ষেপ নেন নাই এটা পরিস্কার। এটা সাংগঠনিক প্রচন্ড দুর্বলতা।

আমরা সাংগঠনিক চর্চা করি না। আমি বারবার বলি যে, ছোট ছোট সংগঠনগুলো গড়ে উঠুক এবং নিজেরা নিজেদেরকে চিনুক। আমাদের সংগঠনগুলো নিজেদের কর্মীদের প্রতিই ভালোবাসা লালন করে না। নিজেদের লোকদেরকেই আস্থায় নিতে পারে না। মনে করে, তার পক্ষে কথা বললে যদি নিজেদের কোন বিপদ হয়, তাহলে কেন তারা ঝুকি নিবেন?

সংগঠন করলে ঝুকি নিতে হবে। উহ, একটি কথা বলে রাখি, সেটা হলো- আমরা যখনই কোন সংগঠন করি, মনে করি আমরাই সব, আমরা বাংলাদেশের সবকিছুই ছিড়ে ফেলবো। আমাদের সাংগঠনিক দুর্বলতাগুলো নিয়ে একবারও ভাবি না। কিন্তু বারবার এটা প্রমাণিত হচ্ছে যে, আমরা সংগঠন বুঝি না। সংগঠনিক মেজাজ বুঝি না। এটা বুঝতে চেষ্টা করি না।হেফাজতের ঘটনার পরও আমাদের শিক্ষা হলো না। ৬মে ’১৩সালে যেমন কবরের নিরবতা নেমে এসেছিল, তেমনি এখনও এমনই নিরবতা।

মুফতি রিজওয়ান, মাওলানা আতিকুল্লাহ, মাওলানা নাজমুল প্রমুখতো একেবারে অপরিচিত কেউ না। তারা কেমন তা অনেকের কাছেই স্পষ্ট। কোন কোন ক্ষেত্রে তাদের সাথে কারো মতের ভিন্নতা হতেই পারে। সবার সাথে সবার মতের হুবুহু মিল থাকবে, এমনটাতো নয়। তাহলে আমরা কি বুয়েটের সেই সব ছাত্রদের মতোই হয়ে গেলাম যে, ভিন্নমতের হলে পিটিয়ে মেরে ফেলতে হবে। নিদেনপক্ষে ভিন্নমতের কাউকে কেউ হয়রানি করলে আমার নিরব থাকতে হবে?

আজকে যারা বিভিন্ন সংগঠনের বড় বড় দায়িত্বে আছেন, বিশেষকরে ওয়েজীন সংগঠনগুলোর দায়ি্ত্বে, তাদের এক্ষেত্রে দায়িত্ব অনেক বেশি। আপনারা উদ্যোগ নিন। উদ্যোগ নেওয়ার অর্থ এটা নয়, সবসময়ই বড় বড় হুঙ্কার দিবেন। কেউ হারিয়ে গেলে, ডিবি পরিচয়ে কাউকে তুলে নিয়ে গেলে, কিছু প্রশাসনিক প্রক্রিয়া আছে, সেগুলো অনুসরণ করুন। নিদেনপক্ষে একটা সাংবাদিক সম্মেলন করতে পারেন। স্থানীয় প্রশাসনের সাথে তার ব্যাপারে কথা বলতে পারেন। শীর্ষ আলেমদের সাথে বিষয়টি নিয়ে মতবিনিময় করতে পারেন। পুলিশ বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করতে পারেন।

বাংলাদেশের আলেমদের নিরাপত্তা আজ চরমভাবে বিঘ্নিত মনে হচ্ছে। আসুন, আমরা সবাইকে নিজেদের ভাই মনে করি। যে কেউ বিপদে পড়লে তার জন্য কিছু একটা করার চেষ্টা করি। জোরালোভাবে আওয়াজটা তুলি।