মুফতি আব্দুস সালাম চাটগামী রহ.এর প্রশান্তিময় মৃত্যু যেভাবে হয়েছিল…..

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

সেপ্টেম্বর ১৩ ২০২১, ১৮:৪৪

ইসমাইল বিন আব্দুস সালাম চাটগামী:

৭ই সেপ্টেম্বর ২০২১ইং রোজ মঙ্গলবার আব্বু অন্যান্য দিনের মতোই সুস্থ স্বাভাবিক ছিলেন। নাজিরহাট মাদরাসায় সেদিন শূরার বৈঠক ছিলো । আব্বু ঐ শুরায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। সাথে আমি সহ আরো দু’জন খাদেমও ছিলো। সেখান থেকে যোহরের পর যখন হাটহাজারিতে ফিরে আসি তখনও আব্বু সুস্থ। মাদরাসায় পৌঁছে আব্বু আছর পর্যন্ত বিশ্রাম নিলেন। বাদ আছর যথারীতি রুমে বসলেন এবং সাক্ষাৎপ্রার্থী ওলামা, তলাবা, ফুযালাদের সাথে কথা বললেন । মাগরিবের পর একটু ক্লান্তি বোধ হলে আধা ঘন্টা শুয়ে থাকলেন ৷ এরপর কয়েক জন উস্তায এসে আব্বুর সাথে দেখা করে গেলেন। তারপর প্রতিদিনের নিয়ম অনুযায়ী খানাপিনা করলেন। রাত ১১ টার দিকে আমাকে ডেকে স্বাভাবিকভাবে কথা বার্তা বললেন। তখনও আমি আব্বুর মাঝে মৃত্যুর কোন আলামত দেখতে পাইনি। অতপর আমাকে বসিয়ে ইস্তেফানামা লিখালেন। সে ইস্তেফানামাতে আব্বুকে সকল যিম্মাদারি থেকে ফারেগ করে শুধুমাত্র ফতোয়া বিভাগের দায়িত্ব দেয়ার জোর দাবি জানালেন এবং আগামিতে যেন তা ব্যতিত অন্য কোন এদারি বা ইহতেমামি(মাদ্রাসার পরিচালনার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পত্র) দায়িত্ব দেয়া না হয় তাও লিখলেন। এবং সেটার ১২ টি ফটোকপি করিয়ে খামে ভরলেন। এ ইস্তেফানামার ব্যাপারে আব্বু হয়তো ইস্তেখারা করেছিলেন, কারণ আমরা দেখেছি আব্বু ছোট থেকে ছোট-বড় থেকে বড় যেকোন বিষয়ের জন্য ইস্তেখারা করতেন।

ঐ রাতে নিয়মানুসারে তাহাজ্জুদও পডলেন। আমার আব্বুর কখনো তাহাজ্জুদ মিস হত না।প্রতিদিনই নিজে অযু করে তাহাজ্জুদের সালাত এবং যিকির-আযকার আদায় করতেন, এদিনও তার ব্যতিক্রম হল না বরং অন্যদিনের তুলনায় এদিনের যিকির একটু উচ্চ আওয়াজে হয়েছিল। আমরা মনে করেছিলাম ,আব্বু আমাদের ফজরের সালাতের জন্য ডাকতেছেন, পরে ভালো করে খেয়াল করলে দেখি ,তিনি উচ্চস্বরে যিকির করতেছেন! যিকির করতে করতে ফজরের সময় হয়ে গেলে তিনি নামায পড়ে মুনাজাত করলেন।প্রায় সময় ফজর ও আসরের পর মুনাজাত ছিল আব্বুর নিয়মিত আমল। সেদিনের মুনাজাত ছিল অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি লম্বা। এরপর তাসবিহ তাহলিল ও معمولات يومية(দৈনন্দিন আদায়কৃত দোয়া দরুদ এর আমল) আদায় করলেন। আটটার দিকে সকালের নাস্তা করলেন। নাস্তাও খুব ভালো করে খেয়েছিলেন।এবং খুব হাসিখুশি ছিলেন। তখনও আমরা তাঁর মাঝে কোনো ব্যথা বা মৃত্যুর কোনো আলামত দেখিনি। নাস্তা শেষে আব্বুর খাদেমের মাধ্যমে হযরত মাওলানা ইয়াহয়া সাহেবের কাছে ইস্তেফানামা পৌঁছালেন৷ কিছুক্ষণ পর সে পৌঁছিয়েছে কিনা তা জিজ্ঞেস করেন, তিনি বলেন আমি পৌঁছেয়েছি।

আব্বু সবসময়ই নাস্তার পর ১/২ ঘন্টা ঘুমান। তাই সেদিনও আমরা তাঁকে শুইয়ে দিলাম।

এর মাঝে সূরা কর্তৃপক্ষ সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নিলেন, মাদ্রাসার মহাপরিচালক মাওলানা মুফতি আব্দুস সালাম চাটগামী। রেজুলেশন শোনানোর জন্য শোয়া দশটার দিকে একজন এসে আমাকে বললো, আব্বুকে সেখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য ৷ আমি আব্বুর রুমে প্রবেশ করি, বিছানায় শুয়া অবস্থায় ছিলো। অবস্থা বেগতিক দেখে আমার পেছনে দুতিন জন খাদেমকে বললাম, কয়েকজন উস্তাযদেরকে খবর দেন, হাস্পাতালে নিতে গাড়ির ব্যবস্থা করতে। অতঃপর আব্বুকে সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো৷ সেখানকার চিকিৎসকরা জানালেন, আব্বু আর নেই। ইন্তেকাল করেছেন। انا لله وانا اليه راجعون

আল্লাহ আব্বুকে জান্নাত এর উচ্চ মাকাম দান করুন, আমীন।

আল্লাহ আমার আব্বুকে জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করুন ,আমিন।