দয়ালু জালিম ও হ্যান্ডকাপের জীবন

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

আগস্ট ১৩ ২০২১, ১৪:০১

আবদুল্লাহ মায়মূন


গত পর্বের পর থেকে…

নতুন জায়গায় আসার দশ হতে লাগলো। মার্চ মাস শেষ হয়ে এপ্রিল শুরু হতে যাচ্ছে, আরবি মাস জুমাদাল উখরা শেষ হয়ে রজব এখন শেষের পথে। জুমআবিহীন ধারাবাহিক চার শুক্রবার অতিক্রম হলো। শীতকাল শেষ হয়ে ঋতুরাজ বসন্ত নিজস্ব সৌন্দর্য প্রকাশে ব্যস্ত। আর আমরা আছি বন্দি হয়ে একটি ঘরে আবদ্ধ। ১০×১৫ হাত রুমে চব্বিশ ঘন্টা পার করতে হচ্ছে, চব্বিশ ঘন্টা লাইট জ্বালানো আলোকিত রুমে, নামায, খাবার, বাথরুম এবং গোসল ছাড়া পুরোটা সময় একটি হাতে হ্যান্ডক্যাপ লাগানো। এই অবস্থায় আমাদের শুতে হয়। বসা এবং শোয়া ছাড়া দাঁড়ানো যায় না। নামায-বাথরুমের সময় যতটুকু দাঁড়ানো হয় এটিই আমাদের দাঁড়ানো, এবং এটিই আমাদের হাটাহাটি। হ্যান্ডক্যাপের দুটি কাপের একটিতে আমার ডান হাত আর অন্যটি লোহার খাটে আবদ্ধ। দু’টি হ্যান্ডক্যাপ হওয়ায় হাত একটু নড়াচড়া করা যায়। তারা বলে, তারা আমাদেরকে রাজার হালতে রেখেছে। পূর্বে যারা ছিলো তাদেরকে হ্যান্ডক্যাপ একটি দেওয়া হত, জানালারগ্রীলের সাথে হাত বাধা থাকতো, নামাযের জন্যে হাত খুলে দেওয়া হত না, শোয়ার জন্যে খাট দেওয়া হত না। এভাবেই তারা কষ্টকরে নামায-খাবার সম্পাদন করতো। তাই সে তুলনায় আমরা রাজার হালতে আছি। এটাই ছিলো তাদের পক্ষ থেকে আমাদের প্রতি অনুগ্রহ।

অতীতকালে মানুষ বাজ পাখি শিকার করার পর তাকে বশে আনার জন্যে প্রথমে দু/তিন ক্ষুধার্ত অবস্থায় রাখতো, এভাবে যখন বাজ পাখি দুর্বল হয়ে যেতো, ক্ষিপ্রতা হারিয়ে ফেলতো, ছটফটানি কমে যেতো তখন তাকে শিকারী লোক এক-দু দানা গম দিত। সে উপায়ান্তর না দেখে এগুলো খেয়ে জীবন বাঁচাতো। আস্তে আস্তে সে বশ মেনে দিত। পরে যখন এই শিকারী এক-দুই দানার পরিবর্তে এক সাথে এক মুষ্ঠি দানা দিত তখন সেই বাজ পাখি মনে করতো যে, আরে শিকারী লোকটি দেখি অনেক দয়ালু! এভাবে সে শিকারীর পুষ মেনে নিত। সে ভূলে যেতো যে, এক সময় সে স্বাধীন ছিলো, ছিলো তার ক্ষিপ্রতা। এখন সবকিছু অতীত, এখন সে শিকারীর একনিষ্ঠ পোষা শিকারী পাখি। যার দ্বারা অন্য প্রাণীকে শিকার করা হয়।

এমনিভাবে জালিমরা আমাদের উপর যখন শাপলাচত্বরের গণহত্যা চালায়, বিভিন্ন মামলা দিয়ে গ্রেফতার হয়রানি করে, এরপর যখন আমাদেরকে একটু ছাড় দেয়, তখন আমরা বলি, এই জালিম কত দয়ালু, কত অনুগ্রহশীল। আমরা সামান্য দয়া নামক ছলচাতুরী আর ভন্ডামি দেখে তাকে দিয়ে ‘কওমী জননী’ উপাধি। ভূলে যাই শহীদদের রক্তের দাগ, নির্যাতিত মজলুম পরিবারের আর্তনাদ।

ঠিক সেই রকম দয়া তারা আমাদের গুম জীবনে করেছিলো, আর বলেছিলো, ‘আমরা রাজার হালতে আছি’।

.

রুমটির পাঁচটি জানালার সব জানালা প্রথমে প্রথমে বন্ধ থাকতো। থাই গ্লাসের উপর পর্দা টানানো থাকতো, তাই বাহিরের কিছুই দেখা যেতো না। কিন্তু ধীরে ধীরে শীতকাল পেরিয়ে বসন্তকাল আসতেই গরম লাগা শুরু হলো। তখন পাহারাদাররা তাদের স্বার্থেই মাঝেমধ্যে জানালা খোলা শুরু করে। আমরা বসে বসে জানালা দিয়ে বাহির দেখতে শুরু করি। উত্তরের জানালা দিয়ে দেখি বিশাল মাঠ, দক্ষিণ দিয়ে দেখি আম-কাঠাল গাছসহ বিভিন্ন ফলের গাছ। পুবদিকেও এরকম। বাথরুমে গিয়ে পশ্চিমের জানালা দিয়ে বাহির দেখি, জানালার পাশেই দেখি একটি কাঠাল গাছ। কাঠালের মুকুল এসেছে। ছোট-বড় অনেক মুকুল দেখা যাচ্ছে। তো উত্তরের যে জানালা দিয়ে বাহিরের মাঠ দেখতাম, ওই জানালাই বেশি খোলা থাকতো, ওইটা দিয়ে আমরা বাহিরে দেখতাম, মাঠে বাদ আছর অনেক লোক খেলাধুলা করে, অনেকে আবার হাটাহাটি করে। মাঠের এক মাথায় আছে রাস্তা৷ রাস্তা দিয়ে বিভিন্ন গাড়ী চলাচল করে। মাঝেমধ্যে দেখা যায় টুপি-পাঞ্জাবী পরা অনেক ছেলে দু’জন দু’জন বা তিনজন তিনজন করে হাটাহাটি করতেছে। তাদের দেখেই মনে হচ্ছে তারা মাদরাসার ছাত্র, বাদ আছর হাটাহাটি করতে বের হয়েছে। এগুলো দেখে নিজের ছাত্রজীবনের কথা স্মরণ হতো। ছাত্রজীবনে আমরা এভাবে বাদ আছর হাটাহাটি করতাম।

নতুন জায়গায় আসার পর বাহিরের আলো-বাতাস দেখতে পাই, গাড়ীর শব্দ ও পাখির কোলাহল শুনতে পাই। আযানের সুমধুর ধ্বনি আমাদের অন্তরে প্রশান্তি এনে দেয়। এভাবেই আমাদের দিন পার হচ্ছিলো। এখন মাঝেমধ্যে আব্দুর রহীম আমার সাথে কথা বলা শুরু করেছে। সে এখনো বিশ্বাস করে আর চার পাঁচ-দিন পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। কারণ নতুন জায়গায় আসার পর তারা বলেছিলো, সর্বোচ্চ দু-সপ্তাহের পর তারা আমাদেরকে ছেড়ে দিবে। তাই সে আশায় এখনো তার বুক বাঁধা, এই মরীচিকাই তার অন্তরের প্রশান্তি।

আমাদের সাথে আসা পুরাতন পাতি নেতা চলে যাওয়ার পর নতুন পাতি নেতা আসলো। সে পূর্বের মতন চৌকস নয়, পূর্বেরটার অভ্যাস ছিলো সে শুধু আমাকেই কথা বলাতো, বিভিন্ন প্রশ্ন ও গল্পের ছলে আমার কাছ থেকে কথা বের করার চেষ্টা করতো। কিন্তু নতুন পাতি নেতা এরকম নয়, সে কথা শোনা থেকে বলার মধ্যে সাচ্ছন্দ্য বোধ করে। এই গুণটা আমার মধ্যে বিদ্যমান, আমিও শোনার চাইতে বলতে বেশি পছন্দ করি। কিন্তু এই মুহূর্তে আমার জন্যে কম কথা বলা কল্যাণকর। বেশি কথা বললে অসতর্কতাবশতঃ মুখ ফসকে কী বের হয়ে যায় কে জানে?

তো নতুন পাতি নেতা বিভিন্ন দেশ সফর ভ্রমণ করেছে, তার হিসেব অনুযায়ী প্রায় চল্লিশের উপর দেশ সফর করেছে। তাই তার ঝুলিতে আছে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের গল্পসমগ্র। উগান্ডা, মিশর, চীন, মালি, সুদান, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ইত্যাদি দেশ সে ভ্রমণ করেছে। তাই যখুনি সে আসতো তখন একেক দিন একেক দেশের গল্প তুলে দিতাম। একদিন বলতাম, আজ উগান্ডার গল্প শোনান। তখন সে বলা শুরু করতো, ‘উগান্ডা আফ্রিকার এক দেশ, নীলনদের উৎস হচ্ছে এই দেশ, সেখানে একটি সুস্বাদু মাছ পাওয়া যায়, এটি মসলা দিয়ে পাক করলে অনেক টেস্টি হয়। আমি জীবনে এ রকম টেস্টি মাছ খাই নি। এই দেশের প্রধান আয়ের উৎস হচ্ছে পতিতাবৃত্তি। সন্ধ্যার পর কোনো পুরুষ বের হলে পতিতারা জোর করে তার সাথে যৌন উন্মাদনা শুরু করে।’ এভাবে উগান্ডার আলাপে চলে যেতো ৪৫-৫০ মিনিট। এরপরে সে সম্বিৎ পেয়ে বলতো, আজকে তো আপনাকে কিছুই জিজ্ঞেস করা হয় নি। ঠিক আছে আগামীকাল আপনার কাছ থেকে শুনবো। এরপর উঠে চলে যেতো। পরের দিন আবার আসলে আমি আরো আরেকটা গল্প তুলে দিতাম। আর আমি অত্যন্ত ভদ্র বিনয়ী শ্রোতার মতো তার কথা শুনতাম। তার সাথে আর দিনগুলো এভাবেই কাটতো।

তখন ছিলো আরবি রজব মাস। একদিন চলে যাওয়া ওই পুরাতন পাতি নেতা আমার সাথে ওয়াটসাপে কথা বলে, অত্যন্ত মধুর প্রেমমাখা শব্দে ‘ভাই’ বলে সম্বোধন করে জানতে চায়, শবে মেরাজের রোজা কীভাবে রাখতে হয়? জবাবে আমি বললাম, শবে মেরাজের রোজা বলতে কিছু নেই, এটি একটি বেদআত।

তারপর সে বিভিন্ন সুবিধা-অসুবিধার খবর নিয়ে রেখে দেয়।

দেখছেন কত পাক্কা দ্বীনদার! আমাদেরকে অন্যায়ভাবে বন্দী করে সে নফল রোজা রাখায় ব্যস্ত।

এভাবেই মার্চ শেষ হয়ে এপ্রিল শুরু হলো। এপ্রিল শুরু হতেই আমার মনে এক ধরনের অশান্তি অস্থিরতা শুরু হলো। কারণ মাত্র এক বছর আগে এই এপ্রিল মাসের দুই তারিখই আমার বিয়ে হয়, বিয়ের এগার মাসের মাথায় ঘটে যায় এই দুর্ঘটনা।

তাই এপ্রিল প্রবেশ করতেই বিয়ের পুরাতন স্মৃতিগুলো স্মরণ হচ্ছিলো। প্রথমে তাদের দেওয়া মিথ্যা আশ্বাস যদিও বিশ্বাস করি নি, কিন্তু এরপরেও মনে ক্ষীণ আশা ছিলো, যে, যদি ছেড়ে দেয় তাহলে হয়তো বিয়ের প্রথম বর্ষটা স্বামী-স্ত্রী একটু স্মরণ করলাম। যদিও দিবস-টিবস পালন করার আদৌ অনুমতি শরীয়তে নেই। কিন্তু স্মরণ করতে তো আপত্তি নেই। আমার স্মরণ হলো বিয়ের প্রথম রাতের কথা, ওই রাতে আমি নুসরাতকে একটি হীরার আংটি উপহার দেই। অনেকে বিয়ের রাতে স্ত্রীকে উপহার দেয়, আমি কী উপহার দিবো চিন্তা করছিলাম। প্রথমে ভাবছিলাম, মোবাইল দিবো, পরে ভাবলাম লন্ডনী বধুকে মোবাইল কীভাবে দেই? কারণ তার কাছে হয়তো আমার প্রত্যাশার চাইতেও দামী স্মার্ট ফোন আছে। পরে ভাবলাম একটি হাত ঘড়ি দেই, তাও পছন্দ হলো না। পরে ভাবলাম ডায়মন্ডের একটি রিং দিয়ে দিবো। ডায়মন্ডের দোকানে গিয়ে রিংয়ের মূল্য যাচাই করা শুরু করি, তখন দেখি সবচেয়ে কমমূল্যের রিংয়ের দাম হচ্ছে আঠার হাজার টাকা। আমার কাছে তখন ছিলো মাত্র বার হাজার টাকা। বিয়ের সব খরচ পারিবারিকভাবে আব্বা বহন করতেছেন তাই এটা নিয়ে চিন্তা নেই, আমার চিন্তা শুধু এই উপহার নিয়ে। তখন বাকী ছয় হাজার টাকা ব্যবসায়ী বন্ধু মাওলানা রেজাউল হক চৌধুরীর কাছ থেকে ঋণ করি। এভাবে বিয়ের রাতের উপহারের ব্যবস্থা করি।

নুসরাতকে যখন এই উপহার দেই তখন সে অনেক আবেগাপ্লুত হয়, অতি আনন্দে সে নির্বাক হয়ে যায়। আমার ক্ষুদ্র উপহারটি তার কাছে অনেক মূল্যবান ছিলো। সে বিশেষ অনুষ্ঠানে এটা পরে যেতো। কিন্তু যেদিন আমরা অপহরণের শিকার হই ওইদিন তারা নুসরাতের ভ্যানিটি ব্যাগ নিয়ে নেয়। আর এই ব্যাগের ভেতরেই ছিলো এই আংটি। এরা যে ভ্যানিটি ব্যাগ নিয়েছে এটা আমাকে বলে নি, আমি দেখি নি, এমনকি অনুমান করতে পারি নি। না গুম থাকাকালের চার মাস দশ দিন, আর না কারাগারের সতের মাস। গুম-জেল-রিমান্ডের এই পূর্ণ একুশ মাস আমি এ ব্যাপারে ঘূর্ণাক্ষরেও টের পাই নি। আমি তো মনে করি এটি তার সংরক্ষণে আছে। মুক্তি পাওয়ার তিন-চার মাস পর একদিন নুসরাতকে বলি, সে যেনো এই আংটিটি আমাকে দেখায়!

তখন সে বিষ্ফোরিত নয়নে বলে, আপনি জানেন না? আংটিটা তারা ওই রাতে ভ্যানিটি ব্যাগের সাথে নিয়ে নেয়!

আমার কানে যখন এক কথা ঢুকলো, তখন মনে হলো, এটি কোনো কথা নয়। বরং আগুনের উল্কাপিণ্ড আমার কানে ঢুকেছে। সাথে সাথে আমি জিজ্ঞেস করি, কী বললে? এভাবেই আমাদের ভালবাসার স্মৃতিটি ছিনতাই হয়ে যায়!

এই হলো বড়লোকের ভাব নেওয়া ফকিন্নির পোলাদের কলিজা। যারা একটি অবলা মেয়ের ভ্যানিটি ব্যাগ চুরি করে কোটিপতির ভাব দেখায়। এরাই আবার মেরাজের রোজা রাখার জন্যে ফোন দিয়ে পাক্কা মুমিন মুসল্লী সাজে!

যাইহোক ২০১৯ সালের ২ এপ্রিল আমার জন্যে একটি বেদনার দিনে রূপান্তর হয়। পুরো দিন চরম কষ্ট আর অস্থিরতায় কাটে। শুধু শুধু এক বছর পূর্বের স্মৃতিগুলো উদয় হয়ে অন্তরে পীড়া দেয়। মনে হল, এক বছর আগের আমার এই সুখের দিন, আজ আমার জন্যে শোকের দিবসে পরিণত হয়েছে।

.

এরপরে আসলো ৪ এপ্রিল, ওই দিন ছিলো আমার ওয়ালীমা। সেই দিনও পুরনো স্মৃতিগুলো কষ্ট দিতে থাকে।

.

বন্দিকালীন ওই সময় নামায, তেলাওয়াত, নির্ধারিত দুআ-যিকর ছাড়াও বিশেষ কিছু দুআ বেশি পড়তাম। আমার আব্বা আমাকে একটি দোয়া লিখে দেন, ওই দোয়া প্রতি ফরজ নামাযের পর, সকাল-সন্ধ্যা এবং গুরুত্বপূর্ণ সময়ে পড়তাম। দোয়াটি হচ্ছে-

اللهم يسر لنا أمورنا، مع الراحة لقلوبنا و أبداننا، والسلامة و العافية في ديننا و دنيانا، و كن صاحبا في أهلنا و خليفة في سفرنا، و اطمس على وجوه أعدائنا لا يستطيع المجيء و المضيء إلينا.

অর্থ: ‘হে আল্লাহ তুমি আমাদের বিষয়গুলো সহজ করে দাও, আমাদের শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তির সাথে, আমাদের দ্বীন ও দুনিয়ার সুরক্ষা ও নিরাপত্তার সাথে, তুমি আমাদের পরিবারের স্বত্ত্বাধিকারী এবং সফরে স্থলাভিষিক্ত হয়ে যাও। আমাদের শত্রুদের চোখ মুছে দাও যাতে তারা আমাদের দিকে আসা এবং অতিক্রম করতে না পারে।’

এছাড়া যে দু’টি দোয়া বেশি পড়তাম তা হচ্ছে-

اللهم إني أعوذ بك من جهد البلاء، ودرك الشقاء، وسوء القضاء، وشماتة الأعداء”

এবং

اللهم إني أعوذ بك من زوال نعمتك، وتحول عافيتك، وفجاءة نقمتك، وجميع سخطك ”

এই দোয়াগুলো খুব বেশি বেশি পড়তাম। আমার ইচ্ছা ছিলো আল্লাহর সিফাতী নামগুলো বেশি বেশি পড়বো, কারণ শায়খ আইমান আজ-জাওয়াহিরী উনার লিখিত ‘ফুরসানুন তাহতা রায়াতিন্নাবিয়্যি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামে’ লিখেন মুহসিনে উম্মত শহীদ শায়খ উসামা বিন লাদেন রাহঃ বন্দিদেরকে আল্লাহর সিফাতি নাম বেশি বেশি পড়ার কথা বলতেন, কিন্তু ওইটা তখন আমার মুখস্ত ছিলো না, তা ছাড়া মুখস্ত করার কোনো মাধ্যমও ছিলো না তাই পড়া হয় নি। তবে আলহামদুলিল্লাহ কারাগারে যাওয়ার পর আল্লাহর সিফাতি নামসমূহের তালিকা পেয়ে যাই এবং ধীরে ধীরে এগুলো মুখস্ত করে নেই।

ইদানীং আব্দুর রহীমের সাথে আমার কথাবার্তা অনেক বেড়ে গেলো, সেও এখন বুঝতে শুরু করেছে ওদের মিথ্যা আশ্বাস ও প্রতিশ্রুতির অপেক্ষা করে লাভ নেই। খামাখা টেনশন করা আর সময়ে সময়ে আশা ভঙ্গ করা। তখন সে আমাকে বলে, আমি যদি কুরআন শরীফ পড়া শিখতে চাই তাহলে কতদিনে শিখতে পারবো? আমি কথাটা লুফে নেই, এবং বলি, মাত্র দু’সপ্তাহে! আমার তখনো তার মেধা সম্পর্কে ধারণা ছিলো না, তাই এই জবাব দেই। আর কম সময়ে বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে তাকে পড়ার প্রতি উৎসাহিত করা।

এভাবে এক সময় যখন সে শেখার জন্যে প্রস্তুত হয়ে যায় তখন এক পাতি নেতাকে বলি, সে যেনো আব্দুর রহীমের জন্যে কায়দার ব্যবস্থা করে দেয়। তারা তার জন্যে কায়দা কিনে দেয়। যেহেতু দুনোজনের খাট রুমের দু’মাথায়। তাই তাকে পড়ানোর জন্যে তারা আমার খাট রুমের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে এবং তার খাট পূর্ব-দক্ষিণে নিয়ে আসে। ব্যস, দুনোজনের খাট পাশাপাশি হওয়ায় তাকে পড়াতে শুরু করি। আস্তে আস্তে আব্দুর রহীমের সময়ও ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে পাড় হওয়া শুরু হলো।

চলবে ইনশাআল্লাহ…