মানবিক কারণে ঈদ পর্যন্ত মুক্তি দেওয়া হলো করোনাকে

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জুলাই ১৪ ২০২১, ১২:৩০

ড. খোন্দকার মেহেদী আকরাম:: ঈদুল আযহাকে ঘিরে সর্বাত্মক লকডাউনের শিথিল প্রজ্ঞাপনকে ‘উপহাস’ হিসেবেই দেখছেন জনস্বাস্থ্যবিদ ড. খোন্দকার মেহেদী আকরাম।

তিনি বলেন, ‘মানবিক কারণে ঈদ পর্যন্ত করোনা’র ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টকে মুক্তি দেওয়া হলো। ঈদের পর আবার তাকে বন্দি করা হবে। সরকারের লকডাউন শিথিল সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন দেখে তা-ই মনে হচ্ছে।’

তাঁর মতে, বাংলাদেশের জন্য সামনে আরও ভয়াবহ সময় অপেক্ষা করছে। এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়বে।

মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) রাতে বেসরকারি এক টিভি চ্যানেল-এর সংগে আলাপকালে এই কথা বলেন তিনি।

ড. খোন্দকার মেহেদী আকরাম যুক্তরাজ্যের শেফিল্ড ইউনিভার্সিটির সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট। বাংলাদেশে করোনা’র বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।

চলমান লকডাউন আগামী ১৫ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত শিথিল ঘোষণা করে ইতিমধ্যেই প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির সময়ে এমন ঘোষণায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং সরকারের করোনা সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটিও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কমিটির তরফ থেকে বলা হয়েছে, করোনা’র এমন ভয়াবহতার সময়ে সরকারের এমন সিদ্ধান্ত একেবারেই ‘অবান্তর’।

জনস্বাস্থ্যবিদ ড. খোন্দকার মেহেদী আকরাম বলেন, বাংলাদেশে করোনা’র বর্তমান যে পরিস্থিতি, তাতে লকডাউন আরও দু’তিন সপ্তাহ বাড়ানোর কথা। তা না করে ১৪ দিন পরই শিথিল করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, এটি মানবিক কারণে করা হলো। এই মানবিক কারণ কার স্বার্থে? আগে তো জীবন। ১৫ তারিখ থেকে লকডাউন খুলে দেওয়া মানে হলো- করোনা’র ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টকে মানবিক কারণে ঈদ পর্যন্ত মুক্তি দেওয়া হলো। আবার ২৩ জুলাই তাকে বন্দি করা হবে।

তিনি বলেন, অনেকে বলছেন- ১৪ দিনের লকডাউনেও তো করোনা কমছে না। তাহলে লকডাউন দিয়ে কী হবে? আসলে ব্যাপারটা তা নয়। এই যে ১৪ দিন লকডাউন চলছে, এর ফলাফল পাওয়া যাবে ঈদের সময়টাতে। দুঃখজনক হলো, তখন অনেকে বলবেন, ঈদে তো করোনা ছড়ায়নি। যা আরও একটি ভুল ধারণার জন্ম দেবে। অনেকে তো জানেনই না, করোনা সংক্রমিত হওয়ার ধাপ সম্পর্কে। ভয়াবহ কথা হলো, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট দ্বিগুণ গতিতে বাড়ছে। ঈদের পর সংক্রমণের হার হবে ২০ হাজারের উপরে। অবশ্য কমপক্ষে ৫০ হাজার নমুনা পরীক্ষা না করলে তো ২০ হাজার শনাক্ত পাওয়া যাবে না। প্রকৃত চিত্র নির্ভর করছে সরকার কতোটা পরীক্ষা করবে, তার উপর।

করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের শিথিলতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ড. মেহেদী আকরাম বলেন, যাদের জন্য মানবিক কারণে লকডাউন শিথিল করা হলো, তারা তো করোনা বিষয়ে ততোটা বোঝেন না। বুঝলে তো লকডাউন প্রয়োজন হতো না। সাধারণ মানুষ বোঝেন না, করোনা’র সংক্রমণ বাড়লে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কতোটা নাজুক হবে। হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা পাওয়ার মতো ব্যবস্থাও থাকবে না।

‘বৃটেনে বড় দিন উপলক্ষে সরকার বলেছিলো লকডাউন শিথিল করা হবে। যখন দেখলো, করোনা বাড়ছে; সরকার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে লকডাউন বহাল রাখলো। বড়দিনের ঠিক চার-পাঁচ দিন আগের ঘটনা এটি। অথচ বাংলাদেশে উল্টো ঘটছে। এতে স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়া বলতে বুঝিয়েছি- হাসপাতালের সক্ষমতার তুলনায় যখন রোগী বেড়ে যাবে, সেই ব্যবস্থা’; বললেন ড. মেহেদী।

একই কথা বললেন সরকারের করোনা সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি ডা. মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ। তিনি বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, করোনা’র সংক্রমণ ঠেকাতে আমরা বলেছি আরও কঠোর হতে। কিন্তু ঘটছে উল্টো। লকডাউন শিথিল করার সিদ্ধান্তে আমরা (কারিগরি কমিটি) উদ্বিগ্ন। সরকারের এমন সিদ্ধান্তে সংক্রমণের হার আরও বেড়ে যাবে।

লকডাউন শিথিল করার সিদ্ধান্তে দ্বিমত পোষণ করছে স্বাস্থ্য অধিদফতরও। সংস্থার মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, আমরা তো এমনটি (শিথিল) চাইনি। বরং আমরা বলেছি, প্রয়োজনে সংক্রমণ ঠেকাতে কারফিউ জারি করা হোক। কিন্তু ঘটলো উল্টোটা। এখন শঙ্কার বিষয় হলো, সংক্রমণ আরও বাড়লে তা কীভাবে মোকাবিলা করা হবে?

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা তো সরকারকে সিদ্ধান্ত দিতে পারি না। আমরা সরকারকে আমাদের মতামত দিয়ে থাকি। সেই অনুযায়ী সরকার ব্যবস্থা নিতে পারে, আবার নাও নিতে পারে।