মাথায় ঝুড়ি নিয়ে ফেরিওয়ালা সেজে পাহাড়ে দাওয়াতের কাজ করতেন মুফতী মাহমুদ হাসান গুনবী

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জুলাই ১৩ ২০২১, ২১:১৪

এইচ.এম. জুনাইদ: লেখাটির সঙ্গে সংযুক্ত ছবিতে দেখা যাচ্ছে দূর্গম পাহাড়ি এলাকায় একজন বৌদ্ধ কিশোরকে ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছেন মুফতী মাহমুদ হাসান গুনভী হাফিযাহুল্লাহ। এভাবেই নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ি এলাকায় দাওয়াতের কাজ করতেন তিনি। তাঁর হাত ধরে বহু পাহাড়ি অমুসলিম ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় পেয়েছে।

শহীদ ওমর ফারুক ত্রিপুরা রহিমাহুল্লাহুও গুনবী সাহেবের কাছেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। ওমর ফারুক ত্রিপুরা (রহ.) যেই মসজিদে ইমামতি করতেন সেই মসজিদটিও নির্মিত হয়েছিল গুনবী সাহেবের মাধ্যমেই!

কোন একজন মুফতী গুনবী সাহেবকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন – পাহাড়ের অবস্থা তো সুবিধাজনক নয়। এই বন জঙ্গলের দূর্গম পাহাড়ে আপনি কিভাবে দাওয়াতের কাজ করেন? উত্তরে তিনি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলেছিলেন- পাহাড়িদের মধ্যে দাওয়াতের কাজ করা খুবই কঠিন। পাহাড়ের পরিবেশ ভিন্ন। বহু সময় গায়ের এই ইস্ত্রি করা সাদা জুব্বা খুলে ছিঁড়া ফাড়া একটা গেঞ্জি পরি। মাথায় গামছা বেঁধে শাকসবজি বা ফলমূলের একটি ঝুড়ি মাথায় নিয়ে ফেরিওয়ালা সেজে পাহাড়ে প্রবেশ করি। ফেরিওয়ালা সেজে বিক্রির জন্য বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে কৌশলে দ্বীনের দাওয়াত দেই। ইসলাম সম্পর্কে বুঝাই। এরা সাধারণত বাংলা বুঝে না। ত্রিপুরাসহ বহু ভাষা আমি শিখেছি এই পাহাড়িদেরকে দ্বীনের দাওয়াত দেওয়ার জন্য। এনজিও ছাড়া যে কেহ চাইলেই পাহাড়ে গিয়ে দাওয়াত দিতে পারে না। তাই আমি ফেরিওয়ালা সাজি। মাইলের পর মাইল পাহাড়ের এই আঁকাবাকা রাস্তা পায়ে হেঁটে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যাই। হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হয়ে যাই। বহু এলাকায় ফেরিওয়ালা সেজেও ঢুকতে পারি না। তাড়িয়ে দেয় আমাকে। টাকা পয়সা দিয়ে সেখানের কিছু মানুষকে হাত করি। এভাবেই বিভিন্ন কৌশলে পাহাড়ে দ্বীনের দাওয়াতের কাজ করি আমি…

একজন আলেম, দ্বীনের দাওয়াতের জন্য মাথায় শাকসবজির খাঁচা নিয়ে ফেরিওয়ালা সাজেন! মাইলের পর মাইল দূর্গম পাহাড়ের রাস্তায় হেঁটে চলেন! এক এলাকায় তাড়িয়ে দিলে অন্য এলাকায় গিয়ে দ্বীনের দাওয়াত দেন। এমন কষ্ট আমরা ক’জন আলেম করেছি? প্রত্যন্ত অঞ্চলের এই পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার জিম্মাদারি কি শুধু গুনবী সাহেবদের ?

আরো পড়ুন: ডিবি পরিচয়ে তুলে নেয়ার চারদিনেও খোঁজ মেলেনি মাওলানা গুনবীর, থানায় জিডি না নেয়ার অভিযোগ

গুনবী সাহেবের হাতে শতাধিক বিধর্মী মুসলমান হয়েছেন। একমাত্র শান্তির ধর্ম ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় পেয়েছেন।

আজ তিনি নিখোঁজ। সপ্তাহ পার হয়ে গেলো। এখনো তাঁর কোন সন্ধান মিলেনি। পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে তাঁর স্ত্রী কেঁদে কেঁদে আকুতি মিনতি করে মুফতী গুনবীর সন্ধান চেয়েছেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত তাঁর সন্ধান মিলেনি। এর দায় কার? কারা তাঁকে এভাবে গুম করেছে? তাঁর কী অপরাধ ছিলো? তাঁর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে রাষ্ট্র তাঁকে বিচারের আওতায় আনেনি কেন? আজকের দুনিয়ায় এই প্রশ্নগুলোর জবাব কেউ না দিলেও হাশরের মাঠে মহান রাব্বুল আলামীনের নিকট সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে অবশ্যই এসব প্রশ্নের জবাব কড়ায়গণ্ডায় দিতে হবে।

গুনবী সাহেবের সন্ধান পেতে আমাদের কি করণীয় বলতে কিছুই নেই? তাঁর এই দূরাবস্থায় আমরা কতটুকু এগিয়ে এসেছি? আমরা ক’জন তাঁর অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছি? একজন আলেম, মুফতী ও দাঈর এই নাজুক অবস্থায় তাঁর সহযোগিতায় এগিয়ে আসা আমাদের দ্বীনি ও নৈতিক দায়িত্ব নয় কি?

এই নাজুক পরিস্থিতিতে গুনবী সাহেবের কর্ম চিন্তার সাথে দ্বিমত পোষণ করা চরম মূর্খতা ও নীচু মন-মানসিকতার পরিচয়। একজনের বিপদে আপনি সহযোগী না হয়ে উল্টো দ্বিমত পোষণের নামে পরোক্ষভাবে তাঁর কর্ম চিন্তার উপর প্রশ্ন তুলে তাঁকে অপরাধী সাব্যস্ত করার চেষ্টা করছেন! আহ, আফসোস!

আরো পড়ুন: সাংবাদিক সম্মেলনে যা বললেন নিখোঁজ মাওলানা গুনবী’র স্ত্রী

নূন্যতম জ্ঞান সম্পন্ন একজন মানুষ নিখোঁজ একজন আলেমের কর্ম চিন্তার সাথে কখনো দ্বিমত পোষণ করতে পারে না। গুনবী সাহেবের কর্ম চিন্তার সাথে দ্বিমত পোষণ করবেন তো এতোদিন কোন গর্তে ছিলেন? তিনি নিখোঁজ হওয়ার পর কেন দ্বিমত পোষণের খেলা খেলছেন? এজন্যই বলে- হাতি গর্তে পড়লে কুনোব্যাঙও নাকি লাথি দেয়…।

রঙ-বেরঙের টাইট ফিট জামা আর মেকাপে সেজেগুজে সুর ও অঙ্গভঙ্গিমায় মঞ্চ মাতিয়ে হাজারো শ্রোতার বাহবা পাওয়া অতি সহজ কিন্তু বিজ্ঞ আলেম হয়ে আরাম-আয়েশ আর সম্মানের পোশাক ছেড়ে ছিঁড়াফাড়া কাপড় পরে মাথায় ঝুড়ি নিয়ে ফেরিওয়ালা সেজে দূর্গম পাহাড়ি এলাকায় দ্বীন প্রচারের কাজ বড়ই কঠিন।

এই নাজুক পরিস্থিতিতে কর্ম চিন্তায় দ্বিমতের ঘৃণ্য খেলা বাদ দিয়ে চলুন, অনলাইনে-অফলাইনে ঐক্যবদ্ধভাবে মুফতী মাহমুদ হাসান গুনবী সাহেবের সন্ধান চেয়ে আওয়াজ তুলি। তাঁর খোঁজ পেতে তাঁর পরিবারকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করি৷

আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে মাহমুদ হাসান গুনবী সাহেবের সন্ধান চাই। সুস্থাবস্থায় তাঁকে পরিবারের নিকট ফিরিয়ে দিতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দাবী জানাচ্ছি।

হে আল্লাহ! আপনার দয়ায় গুনবী সাহেবকে সকল প্রকারের অনিষ্টতা থেকে হেফাজত করুন, আমিন।

লেখক: শিক্ষার্থী, দারুল উলুম হাটহাজারী , চট্টগ্রাম।