মহানবী সা.-কে কটুক্তির প্রতিবাদ করায় চট্টগ্রামে ৪ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জুন ১৬ ২০২২, ২০:১৭

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির মুখপাত্র নূপুর শর্মা ও দিল্লি শাখার গণমাধ্যম প্রধান নবীন কুমার জিন্দালের কটূক্তির প্রতিবাদে বিক্ষোভে অংশ নেয়ায় চার ছাত্রকে বহিষ্কার করেছে চট্টগ্রামের ভেটেরিনারি এন্ড এনিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) আবাসিক হল কর্তৃপক্ষ। তাদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট ও প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তির অভিযোগ আনা হয়েছে।

বহিষ্কৃত এই চার শিক্ষার্থী হলেন- ২৪তম ব্যাচের বোরহান উদ্দিন মোহাম্মদ সাজ্জাদ, মোমিন বিন রহিম, তসলিম উদ্দিন ও মোহাম্মদ তানভীরুল ইসলাম।

তাদের পরীক্ষা চলাকালীন হল থেকে বহিষ্কার করায় বিপাকে পড়েছেন এই শিক্ষার্থীরা।

বহিষ্কারের আগের দিন একজনকে হলের রুমে ডেকে নিয়ে বেধড়ক মারধর করেছে ছাত্রলীগের নেতা ও কর্মীরা।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে কট্টরপন্থী হিন্দুত্ববাদী বিজেপির নেতাদের কটূক্তির প্রতিবাদে বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ এখনও চলছে। বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলায় স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করছে মানুষ। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ করছেন সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা। এই ইস্যুতে অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ন্যায় চট্টগ্রামের ভেটেরিনারি এন্ড এনিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) শিক্ষার্থীরাও শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করেছিলেন। সিভাসু হল কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভের আয়োজকদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চালায় এবং চারজনকে বহিষ্কার করে।

মঙ্গলবার (১৪ জুন) এক অফিস নোটিশের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি মেডিকেল অনুষদের ডিভিএম-এর ২৪তম ব্যাচের চার শিক্ষার্থীকে আবাসিক হল থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কারের বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়।

তবে ঘটনাটি বৃহস্পতিবার (১৬ই জুন) গণমাধ্যমের কাছে প্রকাশ করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার মীর্জা ফারুক ইমাম স্বাক্ষরিত সেই অফিস নোটিশে বলা হয়, উল্লেখিত শিক্ষার্থীরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কটূক্তি, ধর্মীয় উস্কানিমূলক, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও গণতন্ত্র পরিপন্থী বিবৃতি প্রদান করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করায় তাদেরকে সিভাসুর আইন মোতাবেক এই বিশ্ববিদ্যালয়ের এম. এ. হান্নান হল থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হলো।

জানা যায়, হল থেকে বহিষ্কৃত হওয়া এই শিক্ষার্থীদের তৃতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। বিভাগের সেমিস্টার পরীক্ষা চলাকালীন সময়েই হল থেকে বের করে দেয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন এই শিক্ষার্থীরা। আর প্রায় দেড়শতাধিক শিক্ষার্থী মানববন্ধনে অংশ নিলেও শুধুমাত্র এই চারজনকে শাস্তি প্রদান করায় অন্যান্য সাধারণ শিক্ষার্থীরাও প্রকাশ করছেন ক্ষোভ।

বিক্ষুব্ধ এক শিক্ষার্থী জানান, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্যের প্রতিবাদে গত রবিবার দুপুরে আমরা ক্যাম্পাসের গেইটে মানববন্ধন করেছিলাম। এতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতিও ছিলো। এতে দেড় শতাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। আর একদিন পর আমরা যারা কয়েকজন এই কর্মসূচির আয়োজনে ছিলাম, তাদেরকে হয়রানি করছে। এখন আমাদের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। এরমধ্যে আমাদের ৪ জনকে হল থেকে বের করে দিচ্ছে। এই অবস্থায় আমরা খুব অসহায় অবস্থায় পড়েছি।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, কোন ধরনের কারণ দর্শানোর নোটিশ ছাড়াই তাদেরকে হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্নভাবে হুমকি ধমকি দিচ্ছে ছাত্রলীগের নেতারা।

এমনকি বহিষ্কার হওয়া ছাত্র ২৪তম ব্যাচের বোরহান উদ্দিন মোহাম্মদ সাজ্জাদকে শিবির ট্যাগ দিয়ে হলের একটি কক্ষে ডেকে নিয়ে সোমবার রাতে মারধর করেছে ছাত্রলীগের নেতারা।

শিক্ষার্থীরা জানান, ছাত্রলীগের ১৬তম ব্যাচের নেতা সাব্বিরের নির্দেশে অনিক চক্রবর্তী, শান্ত রাজসহ কয়েকজন এই নির্যাতনে জড়িত।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানান, বোরহান উদ্দিন মোহাম্মদ সাজ্জাদসহ তারা সবাই ছাত্রলীগ করতেন। কিন্তু, মানববন্ধন কর্মূসচিতে অংশ নেয়াতেই তাদেরকে “শিবির” ট্যাগ দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। সাব্বিরের গ্রুপে কাজ না করায় সুযোগ পেয়ে বোরহানকে বেধড়ক পিটিয়েছে।

শিক্ষার্থীরা জানান, ছাত্রলীগ নেতা সাব্বিরের গ্যাংয়ে কেউ না থাকলেই হয়রানি করা হয়। বিশেষ করে শিবির ট্যাগ লাগিয়ে মারধর করে তারা। এমন আচরণের কারণে সাব্বিরকে ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষার্থী বোরহানকে রুমে ডেকে নিয়ে বেধড়ক মারধর করা সাব্বির হোসাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের ২০১০-১১ সেশনের শিক্ষার্থী। সেই হিসেবে পাঁচ বছর আগেই তার বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু ছাত্রলীগ করার সুবাদে তিনি ক্যাম্পাসেই অবস্থান করেন।

এদিকে রাসূলের অবমাননার প্রতিবাদে মানববন্ধন করায় চার শিক্ষার্থীকে হল থেকে বহিষ্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে ভেটেরিনারি এন্ড ও এ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর তাসনিম ইমাম গণমাধ্যমকে বলেন, বিষয়টি ঠিক সে কারণেই করা হয়নি। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট করেছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি করেছে। তাই তাদেরকে আবাসিক হল থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।