ব্যক্তি জীবনে ধৈর্য্য ধারণের উপকারিতা

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

জুন ০৯ ২০২০, ১৯:৩৯

¤মুফতি আহমদ যাকারিয়া¤

সবরের আভিধানিক অর্থ: বাধা দেয়া বা বিরত রাখা।

শরীয়তের পরিভাষায় সবর বলা হয়, অন্তরকে অস্থির হওয়া থেকে, জিহ্বাকে অভিযোগ করা থেকে এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে গাল চাপড়ানো ও বুকের কাপড় ছেড়া থেকে বিরত রাখা।

কারো কারো মতে, এটি হলো মানুষের ভেতরগত একটি উত্তম স্বভাব, যার মাধ্যমে সে অসুন্দর ও অনুত্তম কাজ থেকে বিরত থাকে। এটি মানুষের এক আত্মিক শক্তি, যা দিয়ে সে নিজেকে সুস্থ্য ও সুরক্ষিত রাখতে পারে।

জুনায়েদ বাগদাদী রহ. কে সবর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি উত্তরে বলেন, ‘হাসি মুখে তিক্ততার ঢোক গেলা।’

জুন্নুন মিসরী রহ. বলেন, সবর বলা হয়; ‘আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ থেকে দূরে থাকা, বিপদের সময় শান্ত থাকা এবং জীবনের কুরুক্ষেত্রে দারিদ্রের কষাঘাত সত্ত্বেও অমুখাপেক্ষিতা প্রকাশ করা।’

কারও মতে, ‘সবর হলো সুন্দরভাবে আল্লাহর উপর ভরসা করে বিপদ মোকাবিলা করা।’

আবার কারও মতে, ‘বিপদকালে অভিযোগ-অনুযোগ না করে সৃষ্টির প্রতি অমুখাপেক্ষিতা প্রকাশ করাই হলো সবর।’

এ সম্পর্কে আরও বলা হয়, ‘তুমি যখন মানুষের কাছে অভিযোগ করো, তখন মূলত সদয়ের বিরুদ্ধে নির্দয়ের কাছেই অভিযোগ করো।’ অভিযোগ করাটা আসলে দুই ধরনের। একটি হলো, আল্লাহর কাছে অনুযোগ করা। এটি সবর পরিপন্থী নয়। অপরটি হলো, নিজের মুখের দ্বারা বা শরীরের ভাষায় মানুষের কাছে অভিযোগ করা। এটি সবরের সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। এটি সবর পরিপন্থী।

বিচিত্র এই পৃথিবীতে কত রকম মানুষের বাস। এই বৈচিত্র্যের মাঝেও ঐক্যেরবন্ধন খোঁজার চেষ্টা করতে হবে। সুখ-দুঃখ মিলিয়েই মানুষের জীবন। ঘরবাড়ি নেই বলে রাস্তার পাশে ফুটপাথে যাকে মাথা গুজার ঠাঁই খুঁজতে হয় তার জীবনেও যেমন সুখের পরশ থাকে, তেমনি উঁচু উঁচু অট্টালিকায় যাদের বসবাস, কাড়ি কাড়ি সম্পদের অধিকারী যারা তারাও কখনো নীল হয়ে পড়ে দুঃখ-বেদনায়। দুঃখ-বেদনা, বিপদ আর কষ্টের ধরনও অনেক। কেউ হয়তো শারীরিকভাবে অসুস্থ, কাউকে দেখা যাবে পারিবারিক কারণে গভীর দুশ্চিন্তার শিকার, কারও দীর্ঘদিনের অর্জন সামাজিক সম্মানটুকু কখনো মুহূর্তে ধুলোয় মিশে যায়। এ সবই মানুষের বিপদ। মানুষের জীবনে বিপদ আসবেই।

পবিত্র কুরআনের দ্ব্যর্থহীন ঘোষণায় তো কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। পরীক্ষার মুখোমুখি হতেই হবে বান্দাহকে জীবনের নানা ক্ষেত্রে। সেই পরীক্ষায় সফল হওয়ার মূলমন্ত্রও ঘোষিত হয়েছে পবিত্র কুরআনেই। সফলতার সেই মূলমন্ত্রের নামই সবর। আরবী ভাষার শব্দ ‘সবর’। এর শাব্দিক অর্থ হলো আটকে রাখা। বিপদে পড়লে আমরা যে সবরের কথা বলি, এর অর্থ হলো, শরীয়ত-নিষিদ্ধ সব রকম কাজে জড়ানো থেকে নিজেকে আটকে রাখা। বিপদের মুখেও এমন কোনো কাজ করা যাবে না, শরীয়ত আমাদের যার অনুমতি দেয়নি। যেমন, কারও মৃত্যুতে বিলাপ করা, দুঃখে-কষ্টে জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলা, আল্লাহ পাকের শানে অসঙ্গত কথা বলা কিংবা মনে মনে অসঙ্গত কোনো বিশ্বাস পোষণ করা ইত্যাদি। এসবে না জড়িয়ে আল্লাহর ফয়সালাকে মেনে নিয়ে তাঁর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করা- এর নামই তো সবর। এই সবর মুমিনের হাতিয়ার।

সবরের প্রকার; সবর তিন প্রকার।

প্রথম: আল্লাহর আদেশ-নির্দেশ পালন ও ইবাদত-বন্দেগী সম্পাদন করতে গিয়ে ধৈর্য ধারণ করা।

দ্বিতীয়: আল্লাহর নিষেধ এবং তার বিরুদ্ধাচরণ থেকে বিরত থাকার ক্ষেত্রে অটুট ধৈর্য রাখা।

তৃতীয়: তাকদীর ও ভাগ্যের ভালো-মন্দে অসন্তুষ্ট না হয়ে ধৈর্য ধারণ করা।

এই তিন প্রকার সম্পর্কেই পবিত্র কুরআনে বর্ণিত লুকমান আলাইহিস সালামের বিখ্যাত উপদেশেও বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আমার প্রিয় বৎস! সালাত কায়েম কর, সৎকাজের আদেশ দাও, অসৎকাজে নিষেধ কর এবং তোমার উপর যে বিপদ আসে, তাতে ধৈর্য ধর। নিশ্চয় এগুলো অন্যতম দৃঢ় সংকল্পের কাজ।’ (লুকমান: ১৭)

সবর সম্পর্কে কুরআনের বয়ান:

يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱسۡتَعِينُواْ بِٱلصَّبۡرِ وَٱلصَّلَوٰةِۚ إِنَّ ٱللَّهَ مَعَ ٱلصَّٰبِرِينَ

“যারা বিশ্বাস করেছ, শোনো! ধৈর্য ও নিষ্ঠার সাথে চেষ্টা করো এবং সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও। যারা ধৈর্য-নিষ্ঠার সাথে চেষ্টা করে, আল্লাহ অবশ্যই তাদের সাথে আছেন।” (বাক্বারাহ: ১৫৩)

আমাদের জীবনে যখন কোনো বড় বিপদ আসে, কষ্টে চারিদিকে অন্ধকার দেখতে থাকি, তখন বলতে শোনা যায়, “সবর করো, সব ঠিক হয়ে যাবে।” ব্যাপারটা এমন যে, আমরা ধৈর্য নিয়ে চুপচাপ বসে থেকে শুধু নামাজ পড়লেই আল্লাহ আমাদের হয়ে আমাদের সব সমস্যার সমাধান করে দিবেন। এই ভুল ধারণাগুলোর মূল কারণ হচ্ছে ‘সবর’ শব্দের অর্থ ঠিক মতো না জানা এবং কুরআনের এই আয়াতে ব্যবহৃত বিশেষ কিছু শব্দের অর্থগুলো ঠিক মতো না বোঝা।

এই আয়াতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ রয়েছে:

১) সবর صبر

২) আস্তাই’-নু أستعين ।

সবর শব্দটির সাধারণত অর্থ করা হয়; ধৈর্য ধারণ করা। কিন্তু সবর অর্থ মোটেও শুধুই ‘ধৈর্য ধারণ করা’ নয় যে, হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকব, অত্যাচার মুখ বুঝে সহ্য করে যাব, অবস্থার পরিবর্তনে কিছুই করব না, এই ভেবে যে, একদিন আল্লাহ সব ঠিক করে দিবেন।

প্রাচীন আরবের অভিধান আর প্রচলনে সবর-এর ব্যবহার দেখলেই বোঝা যায়, সবর মানে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকা নয়। সবর এর অর্থ হচ্ছে; প্রতিকূলতার মধ্যে ধৈর্য নিয়ে, লক্ষ্য ঠিক রেখে, অবস্থার পরিবর্তনের জন্য সুযোগের অপেক্ষা করা।

সবরের তিনটি অংশ রয়েছে: 

১) ধৈর্যের সাথে কষ্ট, দুর্ভোগ সহ্য করা,

২) অবস্থার পরিবর্তন করতে গিয়ে কোনো পাপ করে না ফেলা,

৩) আল্লাহর আনুগত্য থেকে সরে না যাওয়া।

মানুষ সাধারণত সবর বলতে প্রথমটিকেই বুঝে থাকে। কিন্তু একজন মুসলিমের জন্য এই তিনটিই বাধ্যতামূলক। এই তিনটির একটি যদি বাদ যায়, তাহলে তা কু’রআন এবং হাদিসের ভাষায় সবর নয়।

আস্তা’ই-ন এর অর্থ করা হয়: সাহায্য চাওয়া। কিন্তু এর প্রকৃত অর্থ হচ্ছে: আপনি একা চেষ্টা করেছেন, কিন্তু পারছেন না, আপনি এখন সহযোগিতা চান। যেমন: রাস্তায় আপনার গাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে। আপনি একা ঠেলে পারছেন না। তখন আপনি রাস্তায় কাউকে অনুরোধ করলেন আপনার সাথে ধাক্কা দেবার জন্য। এটা হচ্ছে আস্তা’ই-ন। কিন্তু আপনি যদি আরামে গাড়িতে এসি ছেড়ে বসে থেকে রাস্তায় কাউকে বলতেন ধাক্কা দিতে, তাহলে সেটা আস্তাই’ন হতো না। এ কারণেই আমরা সূরা ফাতিহার মধ্যে বলি; “ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাস্তাই’ন”। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টার সাথে সাথে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাই।

এই দু’টি শব্দ যখন এক সাথে হয়; “আস্তাইনু বিস-সাবরি أ سْتَعِينُوا۟ بِٱلصَّبْرِ

তখন এর অর্থ দাঁড়ায়: যতই কষ্ট, দুর্ভোগ হোক, অবস্থার পরিবর্তন করতে গিয়ে কোনো পাপ কাজ না করে হালাল উপায়ে চেষ্টা করতে থাকা, নিজের ঈমানকে ঠিক রাখা এবং একই সাথে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া।

আয়াতের শুরুটা কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ;

يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟

“যারা ঈমান এনেছ, শোনো।”

আল্লাহ এখানে বিশেষভাবে ঈমানের সাথে সবর এবং নামাযকে জুড়ে দিয়েছেন। কারণ; যারা ঈমান আনেন, তাদেরকে প্রতিনিয়ত সবরের পরিচয় দিতে হয়।

সূরা বাক্বারাহ’র এই আয়াতে আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভারসাম্য শিখতে পারি। বিপদে পড়লে আল্লাহর কাছে ধৈর্যের সাথে চেষ্টা এবং নামাজ এই দু’টোর মাধ্যমেই সাহায্য চাইতে হবে। এর একটিও বাদ দিলে হবে না। আর যারা ধৈর্য ও নিষ্ঠার সাথে চেষ্টা করে, আল্লাহ তাদের সাথে থাকবেন বলে তিনি কথা দিয়েছেন।

আমরা অনেক সময় জীবনে দুঃখ-কষ্টে পড়লে একাকী অনুভব করি, নিজেকে অসহায় ভাবি। মনে মনে হাহাকার করি, “কেউ কি নেই যার কাছে গিয়ে একটু মনের কষ্টের কথা বলতে পারি, একটু বুকটা হালকা করতে পারি?”

এর উত্তর আল্লাহ দিয়েছেন; “যারা ধৈর্য-নিষ্ঠার সাথে চেষ্টা (সবর) করে, আল্লাহ অবশ্যই তাদের সাথে আছেন।” আমরা যখন সবর করছি, তিনি আমাদের পাশে আছেন। আমাদের কখনো একাকী অনুভব করার, নিজেকে নিরুপায়, অসহায় মনে করার কোনো কারণ নেই, কারণ আল্লাহ অবশ্যই আছেন আমাদের পাশে। আমরা যে কোনো সময় নামাজে দাঁড়িয়ে, তাঁর সামনে মাথা নত করে বুকের ভেতর জমে থাকা সব দুঃখ, কষ্ট, অপমান, হতাশা উজাড় করে বলে দিতে পারি। তিনি অবশ্যই তা শুনবেন। তিনি সবকিছু শোনেন। আমরাই বরং তাঁর সাথে কথা বলি না।

وَلَنَبۡلُوَنَّكُم بِشَيۡءٖ مِّنَ ٱلۡخَوۡفِ وَٱلۡجُوعِ وَنَقۡصٖ مِّنَ ٱلۡأَمۡوَٰلِ وَٱلۡأَنفُسِ وَٱلثَّمَرَٰتِۗ وَبَشِّرِ ٱلصَّٰبِرِينَ

“আমি অবশ্যই তোমাদেরকে কিছু না কিছু দিয়ে পরীক্ষায় ফেলবোই; মাঝে মধ্যে তোমাদেরকে বিপদের আতঙ্ক, ক্ষুধার কষ্ট দিয়ে, সম্পদ, জীবন, পণ্য, ফল-ফসল হারানোর মধ্য দিয়ে। আর যারা কষ্টের মধ্যেও ধৈর্য-নিষ্ঠার সাথে চেষ্টা করে, তাদেরকে সুখবর দাও।” (বাক্বারাহ: ১৫৫)

আমি অবশ্যই তোমাদেরকে কিছু না কিছু দিয়ে পরীক্ষায় ফেলবোই।

আল্লাহ শুরু করছেন: وَلَنَبْلُوَنَّكُم بِشَىْءٍ

আল্লাহ আমাদেরকে এই দুনিয়াতে কিছু না কিছু দিয়ে পরীক্ষা নেবেনই, নেবেন। এই ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি আরবিতে দুই বার জোর দিয়ে এই কথা বলেছেন। কারো বেলায় সেই পরীক্ষা হয়তো চাকরি হারিয়ে ফেলে অভাবে, কষ্টে জীবন যাপন করার। কারো বেলায় হয়তো বাবা-মা, স্বামী, স্ত্রী, সন্তানদের জটিল অসুখের চিকিৎসায় দিনরাত সংগ্রাম করা। কারো বেলায় হয়তো নিজেরই নানা ধরনের জটিল অসুখ। কারো বেলায় আবার জমি-জমা, সম্পত্তি নিয়ে আত্মীয়স্বজনদের সাথে শত্রুতা, শ্বশুর-শাশুড়ির অত্যাচার, কোনো না কোনো সমস্যায় আমরা পড়বোই। এই সমস্যাগুলো হচ্ছে আমাদের জন্য পরীক্ষা।

লেখা লম্বা হয়ে যাবে নতুবা ব্যাখ্যাসহ সবর সম্পর্কিত সব আয়াত উল্লেখ করতাম। সংক্ষেপে শুধুমাত্র সবর সম্পর্কিত কিছু আয়াতের অর্থ বলেই বিরত থাকার চেষ্টা করব।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱصۡبِرُواْ وَصَابِرُواْ

অর্থাৎ “হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা ধৈর্য ধারণ কর এবং ধৈর্য ধারণে প্রতিযোগিতা কর।” (আল ইমরান: ২০০)

তিনি আরও বলেন,

إِنَّمَا يُوَفَّى ٱلصَّٰبِرُونَ أَجۡرَهُم بِغَيۡرِ حِسَابٖ

অর্থাৎ “ধৈর্যশীলদেরকে তো অপরিমিত পুরস্কার দেওয়া হবে।” (যুমার: ১০)

তিনি অন্যত্র বলেন,

وَلَمَن صَبَرَ وَغَفَرَ إِنَّ ذَٰلِكَ لَمِنۡ عَزۡمِ ٱلۡأُمُورِ

অর্থাৎ “অবশ্যই যে ধৈর্য ধারণ করে এবং ক্ষমা করে, নিশ্চয় তা দৃঢ়-সংকল্পের কাজ।” (শুরা:৪৩)

তিনি আরো বলেন,﴿ وَلَنَبۡلُوَنَّكُمۡ حَتَّىٰ نَعۡلَمَ ٱلۡمُجَٰهِدِينَ مِنكُمۡ وَٱلصَّٰبِرِينَ وَنَبۡلُوَاْ أَخۡبَارَكُمۡ

অর্থাৎ “আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব যতক্ষণ না আমি তোমাদের মধ্যে মুজাহিদ ও ধৈর্যশীলদেরকে জেনে নেই এবং আমি তোমাদের অবস্থা পরীক্ষা করি। (মুহাম্মাদ: ৩১)

সবর সম্পর্কে হাদীসে দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে স্পষ্ট করে:

আবূ মালিক হারিস ইবনু ‘আসেম আশ‘আরী রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘পবিত্রতা অর্ধেক ঈমান। আর ‘আলহামদু লিল্লাহ’ (কিয়ামতে নেকীর) দাঁড়ি পাল্লাকে ভরে দেবে এবং ‘সুবহানাল্লাহ’ ও ‘আলহামদুলিল্লাহ’ আসমান ও যমীনের মধ্যস্থিত শূন্যতা পূর্ণ করে দেয়। নামায হচ্ছে জ্যোতি। সাদকাহ হচ্ছে প্রমাণ। ধৈর্য্য হল আলো। আর কুরআন তোমার স্বপক্ষে অথবা বিপক্ষে দলীল। প্রত্যেক ব্যক্তি সকাল সকাল সব কর্মে বের হয় এবং তার আত্মার ব্যবসা করে। অতঃপর সে তাকে (শাস্তি থেকে) মুক্ত করে অথবা তাকে (আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত করে) বিনাশ করে।’’ (বুখারী ২২৩, মুসলিম ৩৫১৭,)

আবূ সায়ীদ সা‘দ ইবনু মালিক ইবনু সিনান খুদরী রাঃ থেকে বর্ণিত যে, কিছু আনসারী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে কিছু চাইলেন। তিনি তাদেরকে দিলেন। পুনরায় তারা দাবী করলেন। ফলে তিনি (আবার) তাদেরকে দিলেন। এমনকি যা কিছু তাঁর কাছে ছিল তা সব নিঃশেষ হয়ে গেল। অতঃপর যখন তিনি সমস্ত জিনিস নিজ হাতে দান করে দিলেন, তখন তিনি বললেন, ‘‘আমার কাছে যা কিছু (মাল) আসে তা আমি তোমাদেরকে না দিয়ে কখনোই জমা করে রাখব না। (কিন্তু তোমরা একটি কথা মনে রাখবে) যে ব্যক্তি চাওয়া থেকে পবিত্র থাকার চেষ্টা করবে, আল্লাহ তাকে পবিত্র রাখবেন। আর যে ব্যক্তি (চাওয়া থেকে) অমুখাপেক্ষিতা অবলম্বন করবে, আল্লাহ তাকে অমুখাপেক্ষী করবেন। যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করার চেষ্টা করবে আল্লাহ তাকে ধৈর্য ধারণের ক্ষমতা প্রদান করবেন। আর কোন ব্যক্তিকে এমন কোন দান দেওয়া হয়নি, যা ধৈর্য অপেক্ষা উত্তম ও বিস্তর হতে পারে।

(বুখারী ১৪৬৯, ৬৪৭০, মুসলিম ১০৫৩, তিরমিযী ২০২৪, নাসায়ী ২৫৮৮,)

আবূ ইয়াহয়া সুহাইব ইবনু সিনান রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘মুমিনের ব্যাপারটাই আশ্চর্যজনক। তার প্রতিটি কাজে তার জন্য মঙ্গল রয়েছে। এটা মুমিন ব্যতীত অন্য কারো জন্য নয়। সুতরাং তার সুখ এলে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। ফলে এটা তার জন্য মঙ্গলময় হয়। আর দুঃখ পৌঁছলে সে ধৈর্য ধারণ করে। ফলে এটাও তার জন্য মঙ্গলময় হয়।’’ (মুসলিম ২৯৯৯,)

আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি মহিলার পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন। সে একটি কবরের পাশে বসে কাঁদছিল। তিনি বললেন, ‘‘তুমি আল্লাহকে ভয় কর এবং ধৈর্য ধারণ কর।’’ সে বললো, ‘আপনি আমার নিকট হতে দূরে সরে যান। কারণ, আমি যে বিপদে পড়েছি, আপনি তাতে পড়েননি।’ সে তাঁকে চিনতে পারেনি (তাই সে চরম শোকে তাঁকে অসঙ্গত কথা বলে ফেলল)। অতঃপর তাকে বলা হলো যে, ‘তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন।’ সুতরাং (এ কথা শুনে) সে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দুয়ারের কাছে এল। সেখানে সে দারোয়ানদেরকে পেল না। অতঃপর সে (সরাসরি প্রবেশ করে) বললো, ‘আমি আপনাকে চিনতে পারিনি।’ তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘আঘাতের শুরুতে সবর করাটাই হল প্রকৃত সবর।’’

মুসলিমের একটি বর্ণনায় আছে, সে (মহিলাটি) তার মৃত শিশুর জন্য কাঁদছিল।

(বুখারী ১২৫২, ১২৮৩, ১৩০২, ৭১৫৪, মুসলিম ৯২৬, তিরমিযী ৯৮৮, নাসায়ী ১৮৬৯, আবূ দাউদ ৩১২৪,)

আবূ হুরাইরাহ রাঃ কর্তৃক বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আমার মু’মিন বান্দার জন্য আমার নিকট জান্নাত ব্যতীত অন্য কোন পুরস্কার নেই, যখন আমি তার দুনিয়ার প্রিয়তম কাউকে কেড়ে নই এবং সে সওয়াবের নিয়তে সবর করে।’’

(বুখারী ১২৮৩, ১২৫২, ১৩০২, ৭১৫৪, মুসলিম ৯২৬, তিরমিযী ৯৮৮, নাসায়ী ১৮৬৯, আবূ দাউদ৩১২৪,)

রাসূলুল্লাহ সাঃ নিজে সাহাবীদের সবর শিক্ষা দিয়েছেন:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং তাঁর সাহাবীদেরকে সবর শিক্ষা দিয়েছেন। এর চর্চা বেশি করা হয়েছে নবী সাঃ এর মক্কী জীবনে। যেমন খুবাইব বিন আরাত রাঃ এর হাদীসে আমরা এর চিত্র দেখতে পাই। তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন কা’বার ছায়ায় বালিশে হেলান দিয়েছিলেন। আমরা তাঁর কাছে অভিযোগ করলাম, কেন আপনি আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য সাহায্য চাইছেন না, আমাদের জন্যে তাঁর কাছে দু’আ করছেন না। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে (এমন বিপদও এসেছে যে) কাউকে ধরা হতো। তারপর গর্ত খনন করে তাকে সেই গর্তে ফেলা হতো। এরপর করাত এনে তার মাথার উপর রাখা হতো। অতপর তাকে দুই টুকরো করে লোহার চিরুনী দিয়ে তার শিরা-অস্থিসহ আঁচড়ানো হতো। তদুপরি তারা তাকে দ্বীন থেকে ফেরাতে পারতো না। আল্লাহর শপথ! (এখন আমাদের পরীক্ষা চলতেছে) আল্লাহ এ দ্বীনকে পূর্ণতা দেবেন। একদিন এমনও আসবে যে, যখন আরোহীরা ‘সানআ’ থেকে ‘হাযারামাউত’ পর্যন্ত যাবে। চিতা আর ছাগল নিরাপদে থাকবে। এক আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করতে হবে না। কিন্তু তোমরা তাড়াহুড়া করছো।’ (বুখারী : ৩৬১২)

অর্থাৎ মক্কার মুশরিকদের আযাব অচিরেই দূর হয়ে যাবে। সুতরাং অতীতের উম্মতের মতো তোমরাও দীনের বিপদে একটু ধৈর্য ধরো।

সবরের ফযীলত:

ধৈর্যশীলতার ফজিলত অনেক। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করতে চেষ্টা করে, আল্লাহ তাকে সবরের শক্তি দান করেন। সবর অপেক্ষা সুপ্রশস্ত কল্যাণ কাউকে দেওয়া হয় না।’ (বুখারি)

অন্য হাদিসে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘মুসলমান বান্দার ছোট-বড় যেকোনো পর্যায়ের কষ্ট বা বিপদাপদ আসুক না কেন, এসব বিপদ দ্বারা আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করে দেন। এমনকি সেই কাঁটা, যা তার পায়ে বিঁধে তার কারণেও।’ (বুখারি)

অন্য হাদিসে এসেছে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘সর্বাপেক্ষা বেশি বিপদাপদের সম্মুখীন হন নবীরা, তারপর নবীদের সঙ্গে যার আমলের সাদৃশ্য যত বেশি সে তত বেশি বিপদাপদের সম্মুখীন হয়। ব্যক্তিকে তার দীনদারির পরিমাণ অনুসারে বিপদগ্রস্ত করা হয়। অতএব; যার দীনদারি যত শক্ত তার উপর আপতিত বিপদাপদও ততো শক্ত, আর যার দীনদারি দুর্বল হয়, তার সে অনুসারেই বিপদাপদও দুর্বল হয়ে আসে। কাজেই বিপদ দেখলে ঘাবড়াতে নেই; কারণ নেক বান্দার সঙ্গে বিপদাপদ লেগেই থাকে। এক পর্যায়ে এমন হয় যে, সে ভূপৃষ্ঠের উপর হেঁটে চলে অথচ তার আমলনামায় কোনো গুনাহ নেই।’ (ইবনে মাজাহ)

সুতরাং আমরা নিয়ামত পেয়ে যেমন আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করব, সঙ্গে বিপদ এলেও ধৈর্য ধারণ করব।

আসলে সবরের কোনো বিকল্প নেই। আল্লাহর বান্দা মাত্রই সবর করতে হবে। কেননা কখনো আল্লাহর আদেশ মানতে হবে, তাঁর নির্দেশিত কাজ করতে হবে। আবার কখনো তাঁর নিষেধ মেনে চলতে হবে, বিরত থাকতে হবে নিষিদ্ধ কাজ করা থেকে। আবার কখনো অকস্মাৎ তাকদীরের কোনো ফয়সালা এসে পড়বে। বান্দাহকে নেয়ামত দেয়া হবে, তখন শুকরিয়া আদায় করতে হবে। এভাবে নানা অবস্থার মধ্য দিয়ে মুমিনের জীবন অতিবাহিত হয়। সুতরাং মৃত্যু পর্যন্ত এই সবরকে সাথে নিয়েই চলতে হবে। এ জন্যই সবরের অনেক ফযীলত বর্ণিত হয়েছে কুরআন ও হাদীসে।

ক- উম্মে সালামাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো বিপদে পড়ে আল্লাহ যা নির্দেশ দিয়েছেন অর্থাৎ إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ পড়বে এবং বলবে, হে আল্লাহ! আমাকে আমার বিপদের প্রতিদান দিন এবং আমাকে এর চেয়ে উত্তম কিছু দান করুন। আল্লাহ তাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু দান করবেন।’ উম্মে সালামা বলেন, আবূ সালামা মারা গেল। আমি ভাবলাম, আবূ সালামার চেয়ে উত্তম মুসলমান আর কে হতে পারে? তাঁর ঘরেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম হিজরত করেছেন। আমি মনে মনে এ কথা ভাবলাম আর আল্লাহ আমাকে স্বয়ং রাসূলুল্লাহকেই স্বামী হিসেবে দান করলেন।’ (মুসলিম: ২১৬৫)

খ- আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহ যার ভালো চান, তাকে বিপদ দেন।’ (বুখারী: ৫৬৪৫)

গ- আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘মুমিনকে যেকোনো বিপদই স্পর্শ করুক না কেন, আল্লাহ এর বিনিময়ে তার গুনাহ মাফ করে দেন। এমনকি (চলতি পথে) পায়ে যে কাঁটা বিঁধে (তার বিনিময়েও গুনাহ মাফ করা হয়।)’. (বুখারী: ৫৬৪০; মুসলিম: ৬৭৩০)

ঘ- আবূ মুসা আশআরী রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যখন কোনো ব্যক্তি অসুস্থ হয় অথবা সফর করে, তার জন্য সে সুস্থ্য ও ঘরে থাকতে যেরূপ নেকি কামাই করতো, অনুরূপ নেকি লেখা হয়।’ (বুখারী : ২৯৯৬)

ঙ- এক বুযুর্গ বলেন; ‘যদি দুনিয়ার বিপদাপদ না থাকতো তাহলে আখিরাতে আমরা রিক্ত অবস্থায় উপনীত হতাম।’  (শায়খ মুনাজ্জিদ, ইলাজুল হুমূম)

চ- ‘আর আমি তাদের মধ্য থেকে বহু নেতা করেছিলাম, তারা আমার আদেশানুযায়ী সৎপথ প্রদর্শন করত, যখন তারা ধৈর্যধারণ করেছিল। আর তারা আমার আয়াতসমূহের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখত।’ (সাজদাহ: ২৪) সুফিয়ান বিন উয়াইনা রহঃ এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, যেহেতু তারা সকল কৌশলের মূল তথা ধৈর্য অবলম্বন করেছে তাই আমি তাদেরকে নেতা বানিয়ে দিলাম। (ইবন কাছীর:৬/৩৭২)

ছ- উরওয়া ইবন যুবায়ের রাঃ যুদ্ধে আহত হবার পর যখন সাহাবীরা তার পা কাটতে উদ্যত হলেন, তারা বললেন, আমরা কি আপনাকে কিছু খাইয়ে দেবো? যাতে আপনি কষ্ট অনুভব না করেন? তিনি বললেন, আল্লাহ আমাকে আমার ধৈর্য দেখার জন্যেই এ বিপদে ফেলেছেন। আমি কি তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে যেতে পারি!(আল-মারযু ওয়াল-কাফফারাত, ১/১৩৯)

“সবর”-এর কিছু ক্ষেত্র আছে; উদাহরণের মাধ্যমে ব্যাপারগুলো বুঝতে চেষ্টা করি:

১- আল্লাহর আনুগত্যে “সবর” করা সবচেয়ে প্রথম এবং প্রধান কাজ। যেমন আপনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে আদায় করতে ইচ্ছা রাখেন কিন্তু ফজর এর জামাত আপনার প্রায় সময় ছুটে যায় বিভিন্ন কারণে। আপনি কি হতাশ হয়ে যাবেন? না। আপনাকে আপনার অন্তরের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে হবে এবং সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে ঘুম থেকে উঠার জন্য, যে কোন উপায়ে। তাও যদি না হয় তাহলে কী করবেন? “সবর”। আল্লাহ আপনাকে একদিন এই সুযোগ করে দেবেন যে, যখন আপনি প্রতিদিন ফজর এর জামাত মসজিদে পড়তে পারবেন। আর এটাই হচ্ছে “সবর” করার পরিণাম।

২- অন্যকে ভালো কাজের উৎসাহ এবং অন্যায় কাজে বিরত থাকার উপদেশ দিতে গিয়ে “সবর” করা। আপনি যদি একজন ইসলামের প্রচারক হয়ে থাকেন, তবে যখন আপনি অন্যদেরকে ইসলামের পথে আসার জন্য আহ্বান করবেন আপনাকে হয়তো অনেক কটু কথা শুনতে হতে পারে। আর এসব ক্ষেত্রে দেখা যায় আপন লোকজন আপনাকে অনেক বেশি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবে। আপনাকে তখন “সবর” করতে হবে।

৩- হারাম জিনিস দূরে থাকার ক্ষেত্রে “সবর” করা। এটা খুবই স্বাভাবিক, আপনার সামনে যেকোন সময় আসতে পারে হারাম কাজের সুযোগ। যেমন আপনি ইন্টারনেটে বসে ব্রাউজ করছেন আর হঠাৎ আপনার স্ক্রীনে পপআপ করল অশ্লীল কিছু দৃশ্য আর আপনার আশেপাশে কেউ নেই! আপনি খুব সহজেই সেসব ওয়েবসাইটে গিয়ে হারাম আনন্দ নিয়ে আসতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনি কী করবেন? সবর করুন! আর এসব অযাচিত পপআপ স্ক্রীন বন্ধ করে দিন এবং আপনার পূর্বের কাজে মনোনিবেশ করুন।

৪- অন্যায় করার সুযোগ সামনে এলে “সবর” করা। আপনি অফিসের একজন কর্মকর্তা, আপনার কাছে এক সুযোগ এসেছে, যখন আপনি চাইলে লাখ লাখ টাকার ঘাপলা করতে পারেন। আপনার কাছে এই ধরনের সুযোগ যদি আসে প্রথমত নিজেকে তা থেকে বিরত রাখতে হবে। কিন্তু শয়তান আপনাকে কুমন্ত্রণা দিতে পারে, তখন আপনার অন্তরকে বুঝাতে হবে যে, জীবনে কোনো শর্টকার্ট পথ নেই, সফলতার জন্য চাই কষ্ট আর “সবর”।

৫- বিপদে-আপদে “সবর” করা। আপনি রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন আর আপনার ব্যাগ ছিনতাই হয়ে গেল বা মূল্যবান জিনিস হারিয়ে গেল তখন খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক। তাই বলে এটা নিয়ে আহজারি বা অন্যকে দোষারোপ করলে চলবেনা; তখন করতে হবে সবর নামক সুন্দর এই গুণের ব্যবহার।

শেষকথা; আমরা বলতে পারি “সবর” একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল আর এর বহিঃপ্রকাশ ঘটবে প্রথমত দু’আর মাধ্যমে, অর্থাৎ আপনি যখন “সবর” করছেন আপনি অবশ্যই দু’আ করবেন। পরবর্তীতে আপনি যখন কষ্ট হলেও ভালো কাজ চালু রাখবেন, অন্যায় ও হারাম থেকে নিজেকে দূরে রাখবেন এবং আল্লাহর আনুগত্য চালিয়ে যাবেন নিষ্ঠার সাথে, আপনি বুঝবেন আল্লাহ আপনাকে এই সুন্দর গুনটা উপহার দিয়েছেন।

আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে ব্যক্তি জীবনে সবর নামক গুণাবলি দ্বারা গুণান্বিত করুন। আমীন।