বুঝলাম তিনি হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা, আমরা কেন ইঁদুর হবো?

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

মে ০২ ২০২০, ২০:০৭

•রশীদ জামীল•

মাঝেমধ্যেই তিনি উলটা-পালটা কথা বলেন। তারপরেই খেলা শুরু। গুরুর মুরিদান আদাজল খেয়ে নেমে পড়েন গুরুকে ডিফেন্স করতে। বাকিদের কাজ প্রতিবাদে ঝাপিয়ে পড়া। একজন লোক একটি কথা বললে হাজার হাজার মানুষ যদি সেটার প্রতিবাদ করতে থাকেন, তাহলে তাঁকে কোথায় নিয়ে তোলা হয়?

সাম্প্রতিক সময়ে তার দুটি কথা নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। এই অর্থে তাকে সফল বলতে হবে। কিছু বললেই হটকেক। কেউ সমর্থনের নামে, কেউ বিরোধিতার নামে; যেভাবেই হোক- তাকে নিয়েই মজে থাকতে হয়!

কেন থাকতে হয়?

বিরোধিতা করতে হয় কেন?

সমান উচ্চতায় নিজের কথা বলা যায় না?

বিভ্রান্তির নিরসনে নিজের কথা তুলে ধরা যায় না?

তারাবির নামাজে কোরআন শরিফ দেখে পড়া যাবে’- এটি অর্ধেক সত্য। অর্ধেক সত্য মিথ্যা থেকেও ভয়ংকর। তিনি সেই ভয়ংকর কাজটি করেছেন। অর্ধেক সত্য কারণ, আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাতের অন্তর্ভুক্ত কোনো কোনো ইমামের মতেও তারাবিতে কোরআন শরিফ দেখে পড়া যাবে। ভয়ংকর কারণ, তিনি যে অডিয়েন্সে কথাটি বলেছেন তার ৯০% মুসলমান হানাফি মাজহাবের অনুসারী। আর কোরআন-হাদিসের আলোকে ইমামে আজমের সিদ্ধান্ত হল, তারাবিতেও কোরআনে কারিম দেখে পড়া যাবে না। তার উচিত ছিল কথাটি ব্যাখ্যা করে বলা। এককথায় বলে দিয়ে তিনি নিশ্চিত করেই মানুষকে বিভ্রান্ত করেছেন।

এখন কথা হলো, বড়দের হাঁটুর বয়েসী তরুণ একজন আলেম কিছু একটা বললেই সেটা নিয়ে সবাইকে এতো ব্যতিব্যস্ত হয়ে যেতে হবে কেন?

মানুষকে গোমরাহী থেকে বাঁচাতে?

মানুষকে ভুল ব্যাখ্যা থেকে রক্ষা করতে?

কাজটি তো অন্যভাবেও করা যেতো। উলামায়ে কেরামের পক্ষ থেকে এসব বিভ্রান্তির নিরসনমূলক বক্তব্য বা মাসআলা তো আগেই ক্লিয়ার করে বলে দেওয়া আছে। সেগুলোকে ব্যাপকভাবে প্রচার করা যেতো। তার নাম না নিয়েই মানুষকে সঠিক মাসআলাটি বুঝিয়ে বলা যেতো। এতে লাভ হতো দুটি।

১. মানুষকে বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা করা হতো।

২. তাকেও প্রমোট করা হতো না।

আফসোস! লাভ-ক্ষতির হিসাবটাও আমরা ঠিকমতো করতে পারি না।

‼️ চৈত্রমাসের রিক্সাওয়ালা…। তার বক্তব্যের পুরো ক্লিপটি শুনলাম। কথাটি তিনি যেভাবে বলেছেন, জবাব দিতে হলে সেভাবেই দেওয়া দরকার ছিল। কাউকে খণ্ডিতভাবে উদ্ধৃত করাও তো বেইনসাফি।

তিনি বলেছেন, ‘আসহাবুল আ’মাল আল শাক্কাহ, যারা খুব হার্ড ওয়ার্কিং করে, এবং ঐ কাজ ছাড়া তাদের উপার্জনের আর কোনো মাধ্যম নেই, এবং তাদের পক্ষে রোজা রাখাও সম্ভব হচ্ছে না, এই ধরণের লোকের জন্য শরিয়াহ ছাড় দিয়েছে। যেমন চৈত্র মাসের রিক্সাওয়ালা…। তারা পরবর্তীতে কাজা করে নেবে।’

অর্থাৎ, চৈত্রের রোদে রোজা রেখে একজন রিক্সাচালকের পক্ষে যদি রিক্সা চালানো সম্ভব না হয়, আর জীবিকার জন্য যদি অলটারনেটিভ না থাকে, এবং কোনোভাবেই রোজা রাখার মতো শারীরিক সামর্থ না থাকে, তাহলে সে রোজা ছেড়ে দিতে পারবে। পরে কাজা করে নেবে। এ প্রসঙ্গে তিনি সফরের কষ্টজনীত কারণে রোজা ছেড়ে দেওয়ার বিধানকে সামনে এনে বলেছেন, আল্লাহপাক চান না তার বান্দা কষ্ট করে মরে যাক।

এখন প্রশ্ন হলো, বেঁচে থাকার জন্য যে কাজ করতেই হবে, সেই কাজটি যদি রোজা রেখে করা কোনোভাবেই সম্ভব না-হয়, তাহলে তার জন্য (পরে কাজা করার শর্তে) রোজা ছেড়ে দেওয়ার সুযোগ আছে কি না- এই ফতওয়া অত্যন্ত সুস্পষ্ট। তবুও যদি কথা থাকে, তাহলে যথাযোগ্য মুফতিগণ কথা বলবেন। আমরা তাদের কাছ থেকে ব্যাখ্যা শোনা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারি।

ফতওয়া দেওয়ার অথরিটি নাই- এমন কারো ফতওয়া দেওয়া অন্যায়। আবার আমি সেই ফতওয়ার জবাবে সমান তালে ফতওয়া দিতে থাকলাম। তাহলে আমার কথা ও কাজে মিল থাকল কই?

‼️ কথা হতে পারে সময় এবং সাময়িকতা নিয়ে। কোন বক্তব্য কোথায় দেওয়া উচিত আর কোথায় উচিত না- কথা হতে পারে সেই পয়েন্টে।। তিনি যেভাবে ঢালাওভাবে যেকোনো কথা পাবলিকলি বলে বেড়াচ্ছেন, সেটির কারণে মানুষের কাছে ভুল ম্যাসেজ যাচ্ছে কি না- প্রশ্ন তুলা যেতে পারে সেখানে। কিন্তু কাজটি করতে হবে টু দ্য পয়েন্ট। আবেগতাড়িত হয়ে নয়। একইসাথে তার ছবি ভিডিওসহ নাম ধরে তাকে প্রমোট করে নয়।

তিনি তার কথা বলুন। আমি আমার কথা বলি। আপনি আপনার কথা বলুন। অথরাইজড মুফতিগণ শরয়ী মাসাইল ব্যাখ্যা করুন-আমরা সেটা ফলো করি, ব্যস। এই আল্লাহর বান্দা কী বললেন, অথবা যাই বলুন- অভারলোক করা যায় না?