‘বিদ্যানন্দে জাকাত কেন, কোন অনুদান দেওয়াই জায়েজ নয়’

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

এপ্রিল ০৮ ২০২৩, ১৭:৪৪

বিদ্যানন্দসহ অনেক অনৈসলামিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রমজান মাসে জাকাতের অর্থ পেতে মরিয়া হয়ে উঠে। বিভিন্ন চটকদার বিজ্ঞাপন ও প্রচারণার মাধ্যমে সহজ সরল ধর্মপ্রাণ মানুষকে তাদের সংগঠনে জাকাত দিতে উৎসাহ দেয়। জাকাত একটি ফরজ ইবাদত এবং পাঁচ স্তম্ভের একটি। কোরআনে জাকাতের অর্থ ব্যয়ের খাতগুলো বিস্তারিত উল্লেখ আছে। তাই যেখানে সেখানে জাকাতের অর্থ প্রদান করে নিজের ইবাদতকে বরবাদ না করার অনুরোধ জানান আলেম সমাজ। বিদ্যানন্দের মত এসব সংগঠনের কার্যক্রম মিশন ও ভিশন নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। তাদের জাকাত দিলে তা তো আদায় হবেই না, বরং এ ধরণের সংগঠনে কোনো সহযোগিতা না করতে আহ্বান জানান উলামায়ে কেরাম।

বিশিষ্ট দায়ি ও প্রখ্যাত আলেম, আসসুন্নাহ ফাউন্ডেশনের কর্ণধার শায়খ আহমদুল্লাহ এক ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনসহ এ ধরনের যত ফাউন্ডেশন আছে যাদের ব্যয়ের খাত নিশ্চিত বা স্পষ্ট নয়। তাই তাদের জাকাতের টাকা দেয়া বৈধ হবে না।

বিশিষ্ট লেখক ও অনুবাদ মাওলানা আবদুল্লাহ ফারুক লিখেন, “আমার বুঝে আসে না, কীভাবে আমরা যাকাতের মতো ইসলামের মূল্যবান বিধানকে আমাদের আবেগের ছুরি দিয়ে মেরে ফেলছি। নামায যেমন ইসলামের ইবাদত এবং ইবাদত পালনের জন্যে শরীর পাক, কাপড় পাক, নামাযের জায়গা পাক; এ ধরনের অনেক শর্ত আছে। তেমনি যাকাতও ইসলামের একটি ইবাদত। ইসলামের স্তম্ভ। এই যাকাত আদায়ের জন্যে শরিয়তের সুনির্দিষ্ট বিধান রয়েছে। আপনার মন চাইলো, আর আপনি যাকাতের টাকা দিয়ে মসজিদ করবেন? না, পারবেন না।

আপনি যাকাতের টাকা দিয়ে মাদরাসার ভবন নির্মাণ করবেন? না, পারবেন না। আপনি যাকাতের টাকা দিয়ে বঙ্গবাজারের সকল ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীকে ইফতার করাবেন? না, পারবেন না। যাকাত কারা পাবে, তার খাত কুরআন কারিম পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছে। সেই খাতগুলোকে ‘মাসরাফ’ বলে। এজন্যে যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের হাতে আপনার যাকাতের অর্থ তুলে দেওয়ার আগে আপনাকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।

আপনার-আমার চারপাশে অসংখ্য গরিব-অভাবী মুসলিম আছে। ঋণগ্রস্থ মুসলিম আছে। তাদেরকে না দিয়ে আপনি কীভাবে অমুসলিম চ্যারিটি সংস্থার হাতে আপনার যাকাতের অর্থ তুলে দিচ্ছেন? মনভোলানো বিজ্ঞাপন দেখে যদি আপনার মন গলে যায় তাহলে বুঝে নিন, ইসলাম সম্পর্কে আপনার পড়াশুনা অনেক কম। এজন্যে যাকাত প্রদানের আগে অবশ্যই আপনি ব্যক্তিকে খতিয়ে দেখে নিন। প্রয়োজনে আশপাশের কোনো আলিমের কাছ থেকে পরামর্শ নিন।”

ইসলামিক ইউনিভার্সিটি মালেশিয়ার মেধাবী শিক্ষার্থী, ফাতেহ টুয়েন্টিফোর এর সম্পাদক তরুণ আলেম মাওলানা ইফতিখার জামিল লিখেন,

“বিদ্যানন্দে জাকাত কেন, কোন অনুদান দেওয়াই জায়েজ মনে করি না। কেউ যদি তাদের সাহায্য করেন, তবে আখেরাতে জিজ্ঞাসিত হবেন। দেখুন, একটা প্রতিষ্ঠান কয়েক বছরের মধ্যেই একুশে পদক পেয়ে যাবে : একুশে পদক পায় কারা জানেন তো? বিদ্যানন্দে এমপি-মন্ত্রী-নেতারা এসে কাজ করেন। জনগণ তো গুরুত্বপূর্ণ নয়, তবে তারা কাদের কাছে নিজেদের ‘ভালো’ প্রমাণ করতে চান? সিনেমার নট-নটিরাও কিন্তু বাতাস কোনদিকে বইছে, সেটি আপনাদের চেয়ে ভালো বুঝেন।

বিএনপি আমল থেকেই কার্যক্রমটা শুরু হয়, আওয়ামীলীগ শেষ পেরেকটা মেরে দেয়। বাংলাদেশে কাজ করা ইসলামি এনজিওগুলোকে বন্ধ করে দেয়, গুটিয়ে যেতে বাধ্য করে। বাংলাদেশে আরবের বড় কোন এনজিও বাঁধাহীনভাবে কাজ করতে পারে না, দেশের ভেতরেও কোন মুসলিম এনজিওকে বড় হতে দেওয়া হয় না। এটা কোন ষড়যন্ত্রতত্ত্ব না, এটাই বাস্তবতা। বিদ্যানন্দ কেন এত আশ্রয় পায়, জাকাত নিয়ে এত অভিযোগ সত্ত্বেও কোন তদন্ত নেই কেন?”

এসব অনৈসলামিক প্রতিষ্ঠান কখনও মানুষকে নামাজ পড়তে বলে না, বোরকার বিরুদ্ধে নানা কৌশলে কাজ করে, অন্যান্য ইবাদতে উৎসাহ দেয় না। কিন্তু মুসলমানদের জাকাতের টাকা পেতে উৎ পেতে থাকে নানাভাবে। তাদের মতলব কখনও ভাল হতে পারে না।