বিদেশে বাংলার রাজনীতি

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

ফেব্রুয়ারি ১৩ ২০২১, ১৬:৪৫

জাহেদ আহমদ: পৃথিবীর ১৪০টা দেশে এক কোটির অধিক বাংলাদেশি নাগরিক বসবাস করেন। এই এক কোটি মানুষের একজনও পাবেন না নিজের মা, মাটি, মাতৃভূমি, আত্মীয়-স্বজন ছেড়ে শখের বসে বিদেশে অবস্থান করছেন। দেশ ছেড়ে বিদেশে অবস্থানের কারণটা হচ্ছে নিজেকে সমৃদ্ধ করা, ফ্যামিলি তথা বউ-বাচ্চা নিয়ে সুখে দিনাতিপাত করা।

প্রবাসীদের রেমিটেন্সের জোরে দেশের অর্থনৈতিক চাকাও সচল রয়েছে। ফ্যামিলির একটা ছেলে যদি বিদেশে অবস্থান করে, তার উপর মা, বাবা, ভাই, বোন এবং অসংখ্য স্বজনের আশা ভরসা থাকে। আশা থাকে ‘আমাদের অমুক বিদেশে আছে, সে আমাদেরকে খেয়াল রাখবে’। প্রবাসীরা সেই আশা পূর্ণ করেও চলেছেন।

কথা এগুলো নয়, কথা হলো একজন মানুষ প্রচুর টাকা খরচ করে বিদেশে আসে। তার একটি মাত্র লক্ষ্য থাকা উচিত ছিল, নিজেকে সমৃদ্ধ করা এবং দেশের মান উঁচু রাখা। কিন্তু দেশের রাজনীতি বিদেশে করে অনেকে নিজে ধ্বংস হচ্ছেন, দেশের মান ক্ষুন্ন করছেন।

বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইন হলো, কোনো রাজনৈতিক দলের বিদেশে কোনো শাখা বা অফিস থাকতে পারবে না৷ অথচ আওয়ামী লীগ, বিনএনপি, জামায়াতসহ অনেক রাজনৈতিক দলের বিদেশ শাখা আছে৷ নির্বাচন কমিশনের আইন থোরাই ক্যায়ার করছেন।

বাংলাদেশি রাজনীতি মানেই হানাহানি, খুনাখুনী, লাঠিসোঁটা টানাটানি, অস্ত্রের ঝঁনঝনানি, হিংসা-বিদ্বেষ, হিংস্রতার অপসংস্কৃতি। বাংলাদেশি রাজনীতির ডিকশনারিতে এই মুহুর্তে সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য, ভ্রাতৃত্ব জনগণের সেবা বলতে কোন শব্দ নাই! বিপরিতে আছে মাস্তানি, গুন্ডামি, টেন্ডারবাঁজি, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, খুনসহ প্রায় সব অপকর্ম রাজনৈতিক প্রভাবে ঘটে থাকে।

রাজনীতি এখন মানুষ ঘৃণা করে। এই যুগে বাবা ছেলেকে কোন উপদেশ দিয়ে থাকলে প্রথম কথাই হয় ‘রাজনীতি থেকে দূরে থেকো’। রাজনৈতিক ক্যারিশমাতে এতসব অপকর্ম ঘটার পরও কিছু মানুষ নেশার মত রাজনীতি করে। দেশে রাজনীতি করলে আপত্তি ছিল না।নির্বাচন কমিশনের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও বিদেশে প্রতিটা দলের শাখা কমিটি রয়েছে। সাথে রয়েছে কামড়াকামড়ি। কিছু মানুষ লিডার হয়, নেতা হয়, কিছু বেকুব কর্মি হয়। কি দরকার ছিলে বিদেশে এসে দেশের রাজনীতির পেইন নেবার।

দেশে দেশে আওয়ামী বিএনপির শাখা সংগঠন। বৈশ্বিক মহামারি করোনাকাল চলছে। এসব সংগঠনের কাজ কি? কোন প্রবাসীর খোঁজ নিয়েছে এসব সংগঠন?

অথচ অনেক প্রবাসী কর্মহারা হয়ে রাস্তায়। বাড়ি থেকে টাকার চাপ, বিদেশে কাজ নাই, কর্ম নাই।খাবার-দাবারের পয়সা নাই। কঠিন ডিপ্রেশনে দিন পার করছে অনেকেই।ডিপ্রেশন থেকে দু্-একটা আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু বিদেশে রাজনৈতিক কোন শাখা সংগঠন প্রবাসীর পাশে দাঁড়িয়েছে?

পাশে দাঁড়াবে কি করে, নেতারা পাশে দাঁড়ায়না,সামনে দাঁড়ায়। তুমি পিছন থেকে মরে গেলে নেতার ক্ষতি নাই।

যারা বাংলাদেশি রাজনীতি বিদেশে করছেন মোটেও দেশের লাভ হচ্ছেনা, প্রবাসী রাজনৈতিক শ্রমিক কর্মিদের ফায়দা হচ্ছে না। তবে কিছু মানুষের লাভ হচ্ছে, যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রবাসে, তারা দেশে যেয়ে প্রবাসী রাজনৈতিক নেতা হিসাবে দলের লিডারদের সুনজরে পড়ে যাচ্ছেন। হাইব্রিট সিস্টেম বা গভীর রজনীর ‘বরকতী পন্থায়’ মেয়র, এমপি ও মন্ত্রী হয়ে যাচ্ছেন।

কোন যোগ্যতা ছিল না,তবুও দু-একজন প্রবাসী রাজনৈতিক নেতা দেশের সাংসদ হয়েছেন ফায়দা এটুকুনই। উনারা আবার এক্কেবারে অযোগ্যও নয়,তাদের যোগ্যতা ছিল বিদেশের মাটিতে কর্মিদের দিয়ে লাঠিসোঁটা অস্ত্র সাহস উৎসাহ আর উস্কানী দিয়ে খুনাখারাবি করে দেশের মান ক্ষুন্ন করা।

মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে বাংলাদেশি আওয়ামী-বিএনপির রাজনীতি নিয়ে হানাহানি হয়। বিশেষ করে সৌদি ও আমিরাতে বাংলাদেশি রাজনীতির মাঠ বেশ গরম। গ্রীসের এ্যাতেন্সে দেখেছি আওয়ামী-বিএনপির তাণ্ডবে সাধারণ পাব্লিক রাস্তায় বের হতে পারতো না অনেক সময়। ইতালি স্পেন বা ফ্রান্সেও কম হয়না আওয়ামী বিএনপি আর বাংলাদেশি রাজনীতির কুকীর্তি। গেল বছর পর্তুগালেতো একজন খুন হয়ে গেলো আওয়ামী বিএনপির রাজনৈতিক রেষারেষিতে।

আমরিকা বা বৃটেনের কথা আর কী-ইবা লিখবো! ওসব দেশে প্রধানমন্ত্রী বা বিরোধী দলীয় নেত্রী সফরে গেলেই হলো, খেলা শুরু হয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী হোন আর বিরোধীদলীয় নেত্রী হোন, প্রতিপক্ষ দল নেমে যায় একদম রাস্তায়।স্লোগান, মিছিল, ডিমবৃষ্টি নরমাল ব্যাপার। বাংলাদেশের যে কোন রাজনৈতিক ইস্যুতে পাল্টাপাল্টি মিছিল, মিটিং, হুমকি, পুলিশ ডাকাডাকি লন্ডনে সাধারণ ঘটনা।এসবে দেশের সম্মান বাড়ছে? মোটেই না।

আচ্ছা, এই যে রাজনৈতিক তাণ্ডবে খুনখারাবি হয়, কোথাও নেতা মরে? মরে সাধারন কর্মি। মা’র কোল খালি হলে তোমার হবে, নেতার কি আসে যায়! বাচ্চা এতিম হলে তোমার হবে, নেতা আয়েশে ঘুমাবে!

বিদেশে এসেছো নিজের সুখ সমৃদ্ধির জন্য। কিভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবেন সেটা নিয়ে থাকা উচিত।নেতার পিছু ছাড়েন। বিদেশে বাংলার নোংরা রাজনীতি করে দেশের মানসম্মান নষ্ট করবেন না। নিজেকে নেতার ব্যবহারের টিসু বানানো থেকে নিজের আত্মমর্যাদাকে রক্ষা করেন।

আর এত যদি সখ থাকে রাজনীতি করার,তাহলে যেদেশে থাকেন ঐ দেশের স্থানীয় রাজনীতিতে যুক্ত হোন। নিজের যোগ্যতা বাড়বে, সম্মান বাড়বে, শিখবেন, শেখাবেন।

বৃটেনের সংসদে বাংলাদেশি কয়েকজন সংসদসদস্য আছেন, মেয়র আছেন, কাউন্সিলর আছেন।আমরিকায় আছেন। মালয়েশিয়া সংসদে একজন সংসদসদস্য ছিলেন সিলেটি বাংলাদেশি। ফ্রান্সে বাংলাদেশি কাউন্সিলর আছেন।

এদের কেউই বাংলাদেশি আওয়ামী বিএনপির রাজনীতি করে এসব দেশে এমপি মন্ত্রী বা মেয়ের কাউন্সিলর হননি। তাঁরা এসব স্থানে পৌঁছেছেন নিজস্ব যোগ্যতায় স্থানীয় রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে। আরেকটি কথা মনে রাখা দরকার, উন্নত বিশ্বের এসব দেশের একজন কাউন্সিলর হওয়া বাংলাদেশের মন্ত্রীর থেকে বেশি মর্যাদার। আর মেয়র বা এমপি হলে তো কথাই নাই।

লেখক: প্যারিস, ফ্রান্স