বিদেশে পাচার করা টাকা ফেরত আনা সম্ভব নয়

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

নভেম্বর ০১ ২০২২, ১১:১২

বিদেশে পাচার করা টাকা ফেরত আনা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থার প্রধান মাসুদ বিশ্বাস। বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে সন্দেহজনক লেনদেন বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরার একপর্যায়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান।

মাসুদ বিশ্বাস বলেন, ‘দেশ থেকে পাচার করা অর্থ ফেরানো সম্ভব নয়। অর্থ পাচারের সিংহভাগ হয়ে থাকে বাণিজ্যভিত্তিক লেনদেনের আড়ালে। কোনো কোনো পণ্যের ক্ষেত্রে ২০ থেকে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত ওভার ইনভয়েসিং করে অর্থ পাচার করা হয়। পাচার হওয়া অর্থের সঠিক পরিমাণ জানা না থাকলেও আমরা আন্ডার ইনভয়েসিং কীভাবে হচ্ছে, তা খুঁজে বের করার কাজ করছি। আমরা দেখেছি, গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে এটা বেশি হচ্ছে। গাড়ির ক্ষেত্রে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক-কর রয়েছে। এ খাতে আন্ডার ইনভয়েসিং করতে পারলে করের পরিমাণ কমে যায়। তাই এটাকেই আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের জন্য বেছে নেয় টাকা পাচারকারীরা। এ ছাড়া আরও যেসব খাতে আন্ডার ইনভয়েসিং হয়, সেগুলোও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

বিএফআইইউর প্রধান এমন সময় এসব কথা বললেন, যখন দেশ একটা আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া দেশ থেকে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার জন্য সরকার একাধিক ব্যবস্থা নিয়েছে। এ বছরের (২০২২-২৩ অর্থবছর) বাজেটে ৭ শতাংশ জরিমানা দিয়ে পাচার করা টাকা দেশে ফেরত আনার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি (জিএফআই) গত জানুয়ারি মাসে অর্থ পাচারের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধু আমদানি-রপ্তানির প্রকৃত তথ্য গোপন করে ১০ বছরে (২০০৬ থেকে ২০১৫) বাংলাদেশ থেকে ৬ হাজার ৩০৯ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় সাত লাখ কোটি টাকা। এটা অর্থ পাচারের একটি দিক। এ ছাড়া নানাভাবে দেশ থেকে অর্থ পাচার হচ্ছে।

এ ছাড়া সরকারি উদ্যোগে সাড়া দিয়ে পাচার করা অর্থ দেশে ফেরত এনেছেন, এমন কোনো নজির পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ ৭ শতাংশ কর দিয়ে কেউ পাচার করা টাকা এনেছেন, এমন কথা জানাতে পারেনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। মাসুদ বিশ্বাস পাচার হওয়া টাকা ফেরত না আসার কথা বললেও তাঁরই সংস্থা এ মাসে পাচার করা অর্থ উদ্ধারে প্রয়োজনীয় তথ্য, সাক্ষ্যপ্রমাণ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তার জন্য আরও ১০টি দেশের সঙ্গে পারস্পরিক আইনগত সহায়তা চুক্তি (এমএলএ) স্বাক্ষরের যৌক্তিকতার কথা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে জানিয়েছে।

করোনকালে আর্থিক খাতে নগদ লেনদেন বৃদ্ধির কারণে বিদায়ী আর্থিক বছরে সন্দেহজনক লেনদেনও বেড়েছে জানিয়ে মাসুদ বিশ্বাস বলেন, ‘সব সন্দেহজনক লেনদেন (এসটিআর) অপরাধ নয়। লেনদেন সন্দেহজনক হলে তদন্ত করি। এরপর যদি কোনো অপরাধের তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।’ তিনি বলেন, ‘বিদেশে পাচার করা অর্থ উদ্ধারের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য, সাক্ষ্যপ্রমাণ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তা গ্রহণের জন্য ইতিমধ্যে কিছু চুক্তি হয়েছে। সামনে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সুইজারল্যান্ড, থাইল্যান্ড, হংকং ও চীনের সঙ্গে চুক্তি হবে।’ এ সময় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সন্দেহজনক লেনদেন বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে। ৫২টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ওপর তদন্ত করে ৩৩টির সারাংশ আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে।’

হুন্ডি বেড়ে যাওয়ায় প্রবাসী আয় কমেছে, এমন প্রশ্নের জবাবে মাসুদ বিশ্বাস বলেন, ‘দেশে হুন্ডি হচ্ছে। আর হুন্ডির টাকা খরচ হচ্ছে আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের পেমেন্টে। বাংলাদেশ ব্যাংক যেহেতু নজরদারি জোরদার করেছে, আশা করি ভবিষ্যতে ট্রেড বেসড মানি লন্ডারিং কমে আসবে।’ সুইস ব্যাংক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকার পরিমাণ বেড়েছে, এমন তথ্য আমরা প্রায় সময় দেখি। এটা নিয়ে আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। সুইস ব্যাংকে ব্যক্তিপর্যায় টাকা হলো ৩ শতাংশ, বাকিটা ব্যাংক টু ব্যাংক পর্যায়ে রয়েছে। সুইজারল্যান্ড থেকে আমরা কিছু তথ্য চেয়েছি, তারা আমাদের দিয়েছে। তবে এখন তারা আইন পরিবর্তন করেছে। আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে ব্যক্তিপর্যায়ের তথ্য শেয়ার করবে। এখন তথ্য চাইলে সুইস এফআইইউর ভেতরে যে তথ্য আছে, সেটাই দিতে পারে।’

মাসুদ বিশ্বাস দেশে সন্দেহজনক লেনদেন বেড়ে যাওয়ার তথ্য তুলে ধরে জানান, গত এক বছরে ৮ হাজার ৫৭১টি সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। এর আগের বছরে এ ধরনের লেনদেন হয়েছিল ৫ হাজার ২৮০টি। সেই হিসাবে এক বছরে সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে ৩ হাজার ২৯১টি, যা শতকরা হিসাবে ৬২ দশমিক ৩২ শতাংশ।