বালাগঞ্জে বালু উত্তোলন, শতবর্ষী মসজিদের অজুখানায় ধস! পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে অজুর পানিতে ভাঙছে নদীর পাড়

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

নভেম্বর ২৪ ২০২২, ২১:২১

আবুল কাশেম অফিক, বালাগঞ্জ: সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার বাজারের শতবছরের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের দেওয়াল ঘেষা বালাগঞ্জ পুরাতন থানার পরিত্যক্ত খালি স্থানে  মসজিদ কর্তৃপক্ষের বাঁধা উপেক্ষা করে বালু উত্তোলন করায় নদীর পাড় ও মসজিদের অজুখানার হাউজ প্রস্রাবখানা ও পুরাতন থানা ধসে পরেছে।

মেসার্স বেলাল কনস্ট্রাকশন নামীয় একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বালু উত্তোলন করে আসছে। মসজিদ কর্তৃপক্ষ বালু উত্তোলনে আপত্তি দিলে নিশিরাতে বালু উত্তোলন কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যস্থ থাকেন বালু শ্রমিকেরা।

জানা যায়, বালাগঞ্জে ২ কোটি টাকা ব্যয়ে নদী ভাঙন রোধ প্রকল্পের আওয়াতায় ৪ টি স্থানে ৫৫ মিটার জায়গা নিয়ে আড়াইশ কেজির জিও ব্যাগ দেয়ার কথা রয়েছে। একটি বালাগঞ্জ হাসপাতালের সামনে, আর তিনটি বালাগঞ্জ বাজারে।

বালাগঞ্জের প্রাণকেন্দ্র বালাগঞ্জ বাজার। বাজারের অন্যতম ঐতিহ্য হলো কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ।  ১৯৭০ সনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর সফর সঙ্গিদের নিয়ে এ মসজিদে এশার নামাজ আদায় করেছেন বলে জানা গেছে। এ বাজারে এক সময়ে বর্তমান পার্শ্ববর্তী উপজেলা ওসমানী নগর, ফেঞ্চুগঞ্জ, রাজনগর সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকে লোকারণ্য থাকতো। সেই বাজার নদী ভাঙ্গন ও বিভিন্ন কারণে ক্রমান্বয়ে অধঃপতনের দিকে হারাচ্ছে এ জনপদের ঐতিহ্য। তবে নতুন করে হতে পারে নান্দনিক!

বিষয়টি উপজেলা কর্মকর্তা ও বালাগঞ্জ থানাকেও অবহিত করেছেন বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। সেই বাঁধা উপেক্ষা করে তাদের ইচ্ছে মতো বালু উত্তোলনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মসজিদের অজুখানার হাউজ ও প্রস্রাব খান, কাজী অফিস সহ আশপাশের বাড়িঘর। হুমকির মুখে বালাগঞ্জ বাজারও। এখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি প্রকল্প ছিলো ভাঙন রোধে নদীর পাড় ঘেসা বেড়া। সেটিও ভেঙে ১০ ফিট নিচে চলে যায়।

এ ব্যাপারে সিলেট জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর) শাখার কর্মকর্তা মো. গোলাম বারী জানান, তিনি নদী ভাঙনের জায়গাটি পরিদর্শন করেছেন। এবং মসজিদের একাংশ ভাঙনের বিষয়টি অজুর পানির কারণে হয়েছে। উত্তোলিত বালুর পানি নিষ্কাশন অন্য স্থান দিয়ে করছেন বলে জানান তিনি। ভাঙন এড়াতে, বড় লম্বা পাইপ দিয়ে অজুর পানি নদীতে ফেলার জন্য মসজিদ কর্তৃপক্ষকে বলেছেন তিনি।
তবে মসজিদের ইমাম- মুয়াজ্জিন, কর্তৃপক্ষ ও মসজিদের নিয়মিত মুসল্লীরা জানান গত দুই/তিন বছর আগে মসজিদের ঠিক পশ্চিম উত্তর পাশে কয়েকটি দোকান ভিটায় বালু উত্তোলনের কারণে প্রথম দফায় মসজিদের অজুখানা ও প্রস্রাবখানা ভেঙ্গে পড়েছিল।
দ্বিতীয় দফায় বশিষ্ট প্রস্রাবখানা ও অজুখানা নতুন করে এই বালু উত্তোলন কারণে ভেঙ্গে পড়ে।

সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে মসজিদের অজুখানার হাউজ একাং ধসে পড়েছে। ইতিমধ্যে অবশিষ্ট প্রস্রাবখানা ভেঙ্গে পড়েছে।
হাউজের দ্বিতীয় তলায় অফিস করেন বালাগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ফিকাহ ও রেজিস্ট্রার কাজী সিরাজুল হক।
তিনি আতঙ্কিত হয়ে অফিসের মালামাল সরিয়ে নিচ্ছেন। এর পাশের রুমে ভাড়া থাকেন বালাগঞ্জ আদর্শ মহিলা মাদরাসা শিক্ষা সচিব মাওলানা আব্দুল বাতিন।
মাদরাসা ছুটি থাকায় তিনি বাড়িতে আছেন।
ফোনে আলাপ হলে তিনি খবর শুনে আতঙ্গের মধ্যে আছেন।
পরিত্যক্ত বালাগঞ্জ ফিরুজাবাগ মাদরাসা মসজিদের অজুখানার হাউজ পুরাতন থানায় যেখানে বালুর স্তুপ রাখা  সহ আশপাশের এলাকায় কয়েকশত ফুট লম্বা বিশাল ফাটল দেখা দিয়েছে।  যেকোনো সময় ভেঙ্গে কুশিয়ারার পেটে চলে।যেথে পারে।
স্থানীয়দের জোরদাবী নামকাওয়াস্তে কাজ না করে স্থায়ীভাবে কাজ না করলে অচিরেই কুশিয়ারার গর্বে চলে যাবে ঐতিহ্যবাহী জামে মসজিদ ও বাজার।