বালাগঞ্জের করোনা টিকা গ্রহনের পর পঙ্গু স্কুল ছাত্রী!

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

মে ১১ ২০২২, ২০:১৮

বালাগঞ্জ সিলেট প্রতিনিধি: করোনারোধী টিকা প্রয়োগের পর ভয়ানক প্বার্শ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় সিলেটের বালাগঞ্জের এক শিক্ষার্থীর শরীরে। করোনারোধী বিশেষ ক্ষমতাধর ফাইজার ভ্যাকসিন প্রথম ডোজ নেয়ার একদিন পর এক হাত পঙ্গু হয়ে যায় ও একমাস পর বাম চোখ অকর্মণ্য হয়। ওই শিক্ষার্থী বালাগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম গৌরীপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা আজিজপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া ছাত্রী। তাঁর নাম রুজি বেগম। চারমাস চিকিৎসা পরও উন্নতি হয়নি শারীরিক অবস্থার। আর্থিক সংকটে পড়ে চিকিৎসা জন্য মানুষের দ্বারেদ্বারে ঘুরছেন কিশোরী ও তার পরিবার। পরিবারের দাবি, টিকা নেয়ার পরের দিন হাত পঙ্গু হয়। সিলেট ওসমানী মেডিকেল চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাম চোখে দেখার ক্ষমতা হারায়। তাঁর পরিবার আরো জানায়, কিশোরীর বাম হাতে দু’বার পোষ করা হয়। টিকা শিরা বা রগের মুখে পড়ে যাওয়াতে এমন সমস্যা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কিশোরীর চিকিৎসক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) যেনো রুজি’র রোগ নিয়ে নিখুঁত পর্যবেক্ষণ করার দাবি জানায় রুজির পরিবার।

সূত্র জানায়, গত ১২ জানুয়ারি তারিখ আজিজপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিকা প্রদান করা হয় বালাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে। ওই দিন ২০৮৬৫ জন কে দেয়া হয় ফাইজার টিকা। রুজি বাম হাতে ভ্যাকসিন নিয়ে বাড়ি ফেরার পর দেখা যায় শারীরিক সমস্যা, তবে তেমন কিছু মনে করেনি। এর পরের দিন অল্প বয়সে নেমে আসে পঙ্গুত্বের জীবন। হঠাৎ বাম হাতে শিরায় টান দিয়ে হাতের পাঁচটি আঙ্গুল বাঁকা হয়ে যায়। এর কয়েকদিন পর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগাযোগ করলে উর্ধ্বমুখী চিকিৎসা ও পর্যবেক্ষণের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল যাওয়ার পরামর্শ দেয় বালাগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালের চিকিৎসকরা। পরে সিলেটে আর্থোপেডিক্স সার্জারী ডা. ফরিদ আহমদ ও নিউরোলজিষ্ট ও প্যারালাইজড বিশেষজ্ঞ ডা. রাহাত আমিন কে দেখান। ডাক্তারদ্বয় ভ্যাকসিনেশন কোভিড-১৯ পরবর্তী সমস্যা হয়েছে বলে জানিয়ে উন্নত পরীক্ষা, নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের স্বার্থে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন তারাও। ২ ফেব্রুয়ারি ওসমানীতে COVID-19 টিকা দেওয়ার পর হাতের নখর, বাম হাতে কাঁপুনি, লেট কুনই, কব্জির শক্ততা নিয়ে ভর্তি হোন। দীর্ঘ এক মাস পর্যবেক্ষণে থাকার পরও উন্নতি হয়নি। বরং ভর্তির ক’দিন পর বাম চোখের পাওয়ার নষ্ট হয়ে গেছে।

সিলেট ওসমানী মেডিকেলের রিপোর্ট যাচাই করে দেখা যায়, রুজির এমআরআই ও আলট্রাসোনোগ্রাফি রিপোর্ট স্বাভাবিক। বাম হাতের এক্সের রিপোর্ট পাওয়া যায়নি তবে ফ্লিম আছে।

অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া রোজি জানান, ভ্যাকসিন যেদিন গ্রহণ করেন তখন শিক্ষার্থীদের উপচে পড়া ভিড় ছিলো। তাঁকে দু’বার টিকা পোষ করা হয়। প্রথমে পোষ করলে সুঁই তুলে নিয়ে বাহুর পাশে আবার পোষ করা হয়। বর্তমান শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ জানান তিনি।

আজিজপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনতোষ সরকার জানান, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত রয়েছেন এবং ওসমানীতে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। প্রশ্নের জবাবে বলেন, টিকা গ্রহণের পূর্বে এরকম সমস্যা ছিলো না। এবং বিদ্যালয়ে সমস্যা থাকার কারণে বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান নি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. বজলুর রশিদ জানান, বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন তিনি। তবে খুঁজখবর নিবেন বলে আশ্বস্থ করেন।
উপজেলা জুনিয়র কনসালটেন্ট এ্যানেসথেসিয়া অফিসার ডাঃ মামুন জানান, চার মাস আগে বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন রুজিকে। ভ্যাকসিন নেয়ার পর সমস্যাদি দেখা যায় মর্মে উর্ধ্বমুখী চিকিৎসার জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেলে প্রেরণ করা হয়। শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় সকল তথ্যাদি সিলেট সিভিল সার্জন অফিসে প্রেরণ করেছি আবার। একপ্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভ্যাকসিন জাতীয় ইস্যু। হু (ডব্লিউএইচও)’র টিম তাকে পর্যবেক্ষণ করে ফাইনাল রিপোর্ট জানা যাবে টিকার কারণে নাকি স্বাভাবিক কারণে এঅবস্থা হয়েছে।
এবিষয়ে জানার জন্য সিলেট জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ এসএম শাহরিয়ার এর মুঠোফোনে একাধিক কল দিলে রিসিভ করেননি। ক্ষুদে বার্তাও পাঠানোর পরেও তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

প্রসঙ্গত, শিক্ষার্থীদের টিকা প্রদানে ব্যাপক অব্যবস্থাপনা নিয়ে গত ১২ জানুয়ারি কয়েকটি স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়।