ফেসবুকে আবেগঘন স্ট্যাটাস শ্রীমঙ্গল ইউএনও নজরুল ইসলামের

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

এপ্রিল ১০ ২০২০, ০৭:০২

এহসান বিন মুজাহির: মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার নির্বাহী অফিসার নজরুল ইসলাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দিলেন। ‘অবাক হবো নাকি হতাশ ; নিয়ম না মানাই যেখানে নিয়ম’ এই স্ট্যাটাসটি ফেসবুকে ভাইরাল। সারাদেশের মতো মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে সর্বস্তরের জনসাধারণকে হোম কোয়ারেন্টাইন থাকার নির্দেশ দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার নজরুল ইসলাম। এছাড়া ঢাকা, নারায়গঞ্জসহ করোনা উপদ্রুব এলাকা থেকে কেউ শ্রীমঙ্গল উপজেলায় আসলে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা দিয়ে গতকাল শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় থেকে এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। কিন্তু তাদেরকে কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দিলেও অনেকেই তা মানছে না। নিয়ম ভেঙ্গে করোনা উপদ্রুব এলাকা থেকে অনেকেই শ্রীমঙ্গল আসছেন এবং তারা নির্দেশনা না মেনে হাট-বাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। এতে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে সাধারণ মানুষের মাঝে। তাদের এমন অসচেতনমূলক এবং বেআইনি কার্যক্রম দেখে বৃহস্পতিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আবেগঘন একটি স্ট্যাটাস দেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার নজরুল ইসলাম।

উপজেলা প্রশাসন শ্রীমঙ্গল এর ফেসবুক আইডিতে ‘অবাক হবো নাকি হতাশ ; নিয়ম না মানাই যেখানে নিয়ম’ শিরোনামের স্ট্যটাসটি এখন ফেসবুকে ভাইরাল। ইতোমধ্যে প্রচুর শেয়ার ও কমেন্ট পড়েছে। সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক, সুশিলসহ শ্রীমঙ্গলের সচেতন নাগরিকরা দাবি তুলেছেন শ্রীমঙ্গলকে এখনই লকডাউন করার। মানুষ বাঁচাতে লকডাউনের বিকল্প নেই বলে যার যার ফেসবুকেও পোস্ট করেছেন অনেকেই।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা ইউএনও নজরুল ইসলামের স্ট্যাটাসটি নিম্নে হুবহু উপস্থাপন করা হলো।

‘অবাক হবো নাকি হতাশ ; নিয়ম না মানাই যেখানে নিয়ম’! এই সময়ে এসে এখনো সর্বত্র-প্রতিনিয়ত মানুষকে অনুরোধ করতে হচ্ছে, বুঝাতে হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করার জন্য, ঘরে থাকার জন্য, অযথা বের না হওয়ার জন্য, নিজেকে নিরাপদ রাখার জন্য। কিন্তু কেন? এটা কি শুধুই অসচেতনতা নাকি অন্যকিছু?

এই আধুনিক/ ডিজিটাল যোগাযোগ ব্যবস্থার যুগে এটা কি করে কাম্য হতে পারে? অন্তত নিজের ভালোটা বুঝবে না? তা না বুঝুক, অন্যের ক্ষতি করার কী অধিকার আছে তাদের?

অনেক দূর যেতে হতে পারে আমাদের; অনেক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে আমাদের। এজন্য পরিকল্পনামাফিক আমাদের এগুতে হবে, প্রায়োরিটি ঠিক করে সামনে এগুতে হবে।আর প্রায়োরিটিমতে এখন আমাদের যেসব কাজে মনযোগ দেওয়া উচিৎ, কিছু মানুষের অবিমৃশ্যতায় আমরা তা করতে পারছি না। সন্ধ্যাবেলায় মর্নিংওয়াক করতে হচ্ছে আমাদের।

জনাব, এখন আপনাকে বুঝিয়ে বা শাসন করে ঘরে পাঠানোর সময় নয়; এটি এখন কোন কাজই নয়। বরং এখন আপনার বলা উচিত যে- যারা বাইরে, রাস্তা-ঘাটে, অফিসে দায়িত্ব পালন করছে তারা ঘরে বসে কাজ করুক; কারণ তাদের থেকেও ভাইরাস সংক্রামিত হতে পারে। কিন্তু হায়! তারা নিজের ছাড়া পৃথিবীর সাতশো কোটি মানুষের ভুল ধরবে, কথায় কথায় রাজা উজির মারবে; কিন্তু নিজের করণীয় ব্যাপারে নির্বিকার।

আমাদের কতদূর যেতে হবে আমরা জানি না। এই পরিস্থিতিতে আমরা কেউ পড়িনি কখনো। আর তাই সম্ভাব্য কঠিন পরিস্থিতি হতে পারে বিবেচনায় নিয়েই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হয়, পরিকল্পনা করতে হয়। কিন্তু কিছু মানুষ সে কাজ করার সুযোগ আমাদের দিচ্ছে না৷ ২৪ ঘন্টায় যে হাজারখানেক ফোনকল রিসিভ করতে হয়, আর তা যেসব কাজের জন্য, সেগুলোর ৯১% ই নিজ দায়িত্বেই সবার প্রতিপালন করার কথা।

এখন আবার করোনা উপদ্রুত এলাকা থেকে কিছু মানুষ শ্রীমঙ্গলে প্রবেশ করছে। তাদের কি উচিৎ নয় নিজ দায়িত্বে কোয়ারেন্টাইনে থাকা? কিন্তু, না। ঢাকা/ নারায়ণগঞ্জ থেকে পালিয়ে এসে হিরোইজম দেখাচ্ছেন। সরকার কর্তৃক ঘোষিত অবশ্য পালনীয় লকডাউনের নিয়ম ভেংগে তারা চলে এসেছেন, অপরাধ করেছেন; অথচ কারো কিছু বলার নেই, করার নেই – কর্তৃপক্ষ তাদের বাড়িতে গিয়ে যথাযথ সম্মান প্রদশর্নপূর্বক সুপারিশ পেশ করতে হবে। সকলের সুমতি হোক। কিছু মানুষ ভাইরাসের চেয়েও অপ্রতিরোধ্য।