প্রিয় নবী স.কে অবমাননা: কা’ব ইবনু আশরাফের পরিনতি

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

নভেম্বর ০১ ২০২০, ১৬:১৪

মাওঃ হাসান মুরাদ: কা’ব ইবনু আশরাফ একজন ইয়াহুদী নেতা। পিতা আশরাফ আরবের বাসিন্দা। মদিনাতে বনি নাজীর গোত্রে বিবাহ করেন। সেই থেকে মদিনাতেই বসবাস।কা’ব সেখানেই জন্ম লাভ করে। কা’ব দেখতে ছিল অনেক সুন্দর, লম্বা গড়ন ও মোটা দেহের অধিকারী। কিন্তু মন-অন্তর ছিল অস্বাভাবিক নোংরাটে। মুসলমানদের জাত শত্রু । শত্রু আরো অনেকে ছিল, কিন্তু কা’ব ইবনু আশরাফের মত নিকৃষ্ট শত্রু কমই ছিল। আমাদের প্রিয় নবী(স.) কে গালি দিত। বাজে কথা বলত, মুসলিমদের অসভ্য ভাষায় কথা বলত, এমন কি নারীদেরও বাদ দিত না। সে ছিল কবি। কবিতা ছিল তার প্রধান হাতিয়ার। কবিতার মাধ্যমে সে প্রিয় নবীকে কষ্ট দিত, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করত। যেমন করেছে ফ্রান্স-এর এমানুয়েল ম্যাক্রঁ। কা’ব শুধু বিদ্রুপই করতনা, মুসলিমদের ধ্বংস করার জন্য মক্কার কুরাইশ নেতাদের সাথে গিয়ে আতাত করত। তাদের যুদ্ধের জন্য উৎসাহ দিত। দিন দিন তার ধৃষ্টতা বাড়তে লাগল। রাসুল সা. তার আচরনে খুব কষ্ট পেতে লাগলেন। ধৈর্য আর কত দিন? একদিন প্রিয় নবী সাহাবীদের নিয়ে বসা। ভারাক্রান্ত মনে বললেন,কে আছে কা’ব ইবনে আশরাফকে থামাবে? তার ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ বন্ধ করবে? সাহাবাগণ নবীজী কে তো জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসতেন। বাসবেন না কেন! জীবন-যৌবন,ধন-জন থেকে নবীকে বেশি ভালো না বাসলে সে তো উম্মত হতে পারে না। নবীজীর প্রিয় জবানে কষ্টের শুর অনুভব করে দাড়িয়ে গেলেন মুহাম্মদ ইবনু মাসলামা রা.। বললেন আপনি কি চান ইয়া রাসুলাল্লাহ আমি তাকে হত্যা করি? নবীজী বললেন হ্যাঁ। মুহাম্মদ ইবনু মাসলামা বললেন তাই হবে। তবে আমাকে নিজের মত করে কছিু কথা বলার অনুমতি দিন। নবীজী সা. তাকে অনুমতি দিলেন। মুহাম্মদ গেল কা’ব এর কাছে। পূর্ব পরিচয়ের শুরে বলল কা’ব মুহাম্মদ স. তো আমাদের অতিষ্ঠ করে তুলেছে। সে আমাদের কাছে ছদকা দাবি করে। শুরে শুর মিলিয়ে কা’ব বলল,বাছা সবেতো শুরু,দেখ সামনে তোমরা তার প্রতি আরো বিরক্ত হবে। মুহাম্মদ বললেন,আমরা মাত্র তার অনুসারি হয়েছি। এখনি তাকে পরিত্যাগ করা উচিত মনে করিনা। দেখতে চাই শেষ অবদি কি হয়। তবে আমি তোমার কাছে এসেছি, তুমি আমাকে কিছু ধার দাও। কা’ব বলল,ধার নিতে হলে কিছু বন্ধক রাখতে হবে। মুহাম্মদ বললেন ঠিক আছে, তুমি কি বন্ধক চাও?বজ্জাত কা’ব বলল তোমাদের নারীদের আমার কাছে বন্ধক রাখ। মুহাম্মদ বললেন এটা কেমন কথা। তুমি আরবের সুন্দর পুরুষ, তোমার কাছে কীভাবে নারীদের বন্ধক রাখব? কা’ব বলল তাহলে তোমাদের সন্তানদের বন্ধক রাখ। মুহাম্মদ বলল, তাহলে তো সন্তানরা গালি দেবে যে, মাত্র দু ওসাক(প্রায় ১০মন) খেজুরএর জন্য আমাদের বন্ধক রেখেছো? তবে আমরা তোমার কাছে যুদ্ধাস্ত্র বন্ধক রাখবো। কা’ব বললো তাহলে এ কথাই রইল। তখান তারা ওয়াদাবদ্ধ হল যে, হারিস,আবু আবস ইবনু জাবর ও আব্বাস ইবনু বিশরসহ তার কাছে আসবেন। তারপর রাতের বেলা তারা তার কাছে আসলেন এবং কা’ব কে ডাকলেন। কা’ব বের হতে লাগল। কিন্তু স্ত্রী বলল, আমি খুনের গন্ধ পাচ্ছি! বাইরে যেও না। কা’ব স্ত্রীকে থামিয়ে বলল, এ হচ্ছে মুহাম্মদ,আর তার দুধ ভাই আবু নাইলা। সম্ভ্রান্ত লোককে যদি রাতের আধারে অস্ত্রাঘাতের মুখে ডাকা হয় তবু তারা ডাকে সাড়া দেয়। মুহাম্মদ তার সঙ্গিদের বলল আমি যখন তার মাথা ভালো করে ধরব তখন তোমরা তোমাদের কাজ সেরে নিবে। এরপর কা’ব ইবনে আশরাফ চাদর গায়ে নিচে নেমে এলো। মুহাম্মদ বললেন আমরা তোমার থেকে অতি উত্তম আতরের সুঘ্রাণ পাচ্ছি। কা’ব বলল হ্যাঁ। আমার স্ত্রীতো আরবের সর্বাধিক সুঘ্রাণের মহিলা। তখন মুহাম্মদ বললেন, তাহলে আরেকটু ঘ্রাণ নিতে দাও। কা’ব বলল আরে হ্যা নাও নাও! এবার মুহাম্মদ আবার ঘ্রাণ নিলেন। তারপর কা’বের মাথা শক্ত করে ধরলেন। আর সাথিদের বললেন, তোমরা তোমাদের কাজ সেরে ফেল। তখন তারা তাকে হত্যা করে ফেলল। সহিহ মুসলিম-৪৫১৩, বুখারি-৩৭৪২

আজ কা’ব ইবনে আশরাফ নেই। কিন্তু যুগে যুগে কা’বের অনুসারি ছিল, আজও আছে। তবে এটাও সত্য!আজ প্রিয় নবী মুহাম্মদ স. নেই। তবে আছে তার কোটি কোটি উম্মত। যারা বলে ফিদাকা নাফসি ইয়া রাসুলাল্লাহ। ফিদাক আবি ও উম্মি ইয়া হাবিবাল্লাহ।

তাছাড়া হাল-যামানার অবস্থা ভেদে,শান্তি-শৃঙ্খলার স্বার্থে হয়ত এমন হত্যার আদেশ কেউ দিবে না। তাই বলে নবীকে নিয়ে যারা ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করবে,কোটি কোটি মুসলিম অন্তরে রক্ত ঝরাবে,স্বাধীন ধর্মের উপর আঘাত হানবে তাদের কিছুই বলা যাবে না? প্রতিবাদ করা যাবে না? হ্যাঁ। সাধ্যমত প্রতিটা মুমিনকেই প্রতিবাদি হতে হবে, নবীজীর ইজ্জত রক্ষার্থে কোরবান হতে হবে। আসুন আওয়াজ তুলি নবীজীর পক্ষে।বর্তমানে নবীর দুশমন ফ্রান্সের ‘ম্যাক্রোর বিরুদ্ধে। বর্জন করি তাদের পন্য। স্লোগানে মুখরিত করে জালিমের ভিত কাপিয়ে তুলি। বিশ্বকে জানান দেই, দেখ এখনো মুসলিমরা প্রিয় নবীর ইজ্জত রক্ষার্থে জান দিতে প্রস্তুত।