প্রাকৃতিক দুর্যোগে ৬ বছরে আর্থিক ক্ষতি ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

মার্চ ৩০ ২০২২, ১৫:১৮

১১ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে ২০১৫-২০২০ সময়কালে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১৭৯১৯৮.৮ কোটি টাকা।

গত ছয় বছরে দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ এর আগের ছয় বছরের প্রায় ১০ গুণে উন্নীত হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।

সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ১১ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে ২০১৫-২০২০ সময়কালে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১৭৯১৯৮.৮ কোটি টাকা। ২০০৯-২০১৪ সময়কালে এ খাতে ক্ষতি হয়েছিল ১৮৪২৪.৭ কোটি টাকা। এ হিসাবে সাম্প্রতিক সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতির পরিমাণ ৮৭২ শতাংশ বেড়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএসের ‘বাংলাদেশ ডিজাস্টার রিলেটেড স্ট্যাটিস্টিকস (বিডিআরএস): ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ন্যাচারাল ডিজাস্টার পারসপেকটিভ’ শীর্ষক জরিপের সারসংক্ষেপে এ সব তথ্য উঠে এসেছে।

মঙ্গলবার রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে ২০২০ সালের জরিপের চূড়ান্ত প্রতিবেদন ও হালনাগাদ জরিপের সারসংক্ষেপ প্রকাশ করা হয়।

প্রায় ৭৫ লাখ পরিবারের ৩.৪১ কোটি মানুষের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে তৈরি করা প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, দুর্যোগের শিকার পরিবারগুলোর লোকজন শিক্ষা, পুষ্টি, স্বাস্থ্য, স্যানিটেশানের মতো আর্থ-সামাজিক অনেক সূচকেই পিছিয়ে আছেন।

এ সব এলাকায় দুর্যোগের কারণে চিকিৎসা খাতেও বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে লোকজনকে। দুর্যোগের সরাসরি ক্ষতির পাশাপাশি চিকিৎসা বাবদ অর্থ ব্যয় ও অন্যান্য ক্ষতি যোগ করলে বছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১.৩২ শতাংশই ক্ষতি হচ্ছে দুর্যোগের কারণে।

অনুষ্ঠানে জরিপের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন বিবিএসের পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ পরিসংখ্যান শক্তিশালীকরণ (ইসিডিএস) প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে শস্য খাতে। এই সময়ে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ৭২ শতাংশ। প্রাকৃতিক দুর্যোগে আর্থিক ক্ষতির ৫৬ শতাংশই বন্যার কারণে হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ছয় বছরে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতির মধ্যে শস্য খাতে ২৮.৯০ শতাংশ, প্রাণিসম্পদে ৩.৯৮ শতাংশ, পোলট্রিতে ১.৫১ শতাংশ, মৎস্য খাতে ৩.৭১ শতাংশ, জমি (ভূমি) অবক্ষয়ে ক্ষতি মূল্য হ্রাসসহ ৫২.৫৬ শতাংশ ও বসতঘর, রান্নাঘর, গোয়ালঘর, অবকাঠামো প্রভৃতি ৭.৩৮ শতাংশ এবং সামাজিক বনসহ উঠানের গাছপালায় ১.৯৬ শতাংশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

২০১৫-২০২০ সময়কালে অর্থাৎ ছয় বছরে দুর্যোগপ্রবণ এলাকার সদস্যরা গড়ে ২১.০৩ দিন কর্ম থেকে বিরত ছিলেন। এর মধ্যে বন্যায় আক্রান্ত লোকজন গড়ে ৪২.৬৮ দিন ও ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্তরা ২১.২৩ দিন করে কাজ থেকে বিরত ছিলেন।

অন্যদিকে ২০০৯-২০১৪ সময়কালে দুর্যোগপ্রবণ এলাকার সদস্যরা গড়ে ১২.১৩ দিন কর্ম থেকে বিরত ছিল। এ সময় বন্যায় ১৭.৬৩ দিন ও ঘূর্ণিঝড়ে ৯.৩৩ দিন করে কর্মহীন রয়েছেন লোকজন।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ২০১৫-২০২০ সময়কালে দুর্যোগপ্রবণ এলাকার আক্রান্ত সর্বমোট ৭৫ লক্ষ ১৫ হাজার ৯৭৭টি পরিবারের মধ্যে ৫৪ শতাংশ পরিবার একবার, ৩১ শতাংশ পরিবার দুই বার, ১৫ শতাংশ পরিবার তিন বা ততোধিকবার দুর্যোগে আক্রান্ত হয়েছে।

অন্যদিকে ২০০৯-২০১৪ সময়কালে অর্থাৎ ছয় বছরে দুর্যোগপ্রবণ এলাকার ৫৬ শতাংশ পরিবার একবার, ২৭ শতাংশ পরিবার দুই বার, ১৭ শতাংশ পরিবার তিন বা ততোধিকবার দুর্যোগে আক্রান্ত হয়েছিল।

রফিকুল ইসলাম বলেন, জরিপটি পরিচালনার জন্য ২০১৫ সালকে ভিত্তি বছর ধরে ২০২০ সালে দ্বিতীয়বার জরিপ কার্য পরিচালনা করা হয়েছে। এ জরিপটি পরিচালনার ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত দুর্যোগভিত্তিক ১১টি কোডের বিপরীতে ২৯ হাজার ১৯৯ মৌজা চিহ্নিত করা হয়। বিবিএস কর্তৃক বিডিআরএস ২০২১ জরিপে ৬৪ জেলার দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় ৭৫ লক্ষ ১৫ হাজার ৯৭৭টি পরিবার এবং জনসংখ্যা ৩ কোটি ৪১ লক্ষ ১২ হাজার ৯১০ আওতাভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে জরিপকালীন সময়ে ৬৪ জেলার ৪ হাজার ২৪০ টি মৌজার সর্বমোট ১ লাখ ২৭ হাজার ২০০ পরিবার হতে দীর্ঘ প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে সাক্ষাত্কারের ভিত্তিতে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়।

প্রতিবেদন প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত ও পিছিয়ে পড়া জাতি হিসেবে পরিচিত ছিল। তবে শক্ত রেজিলিয়েন্সের কারণে বাংলাদেশ এ পরিচিতি লাঘব করে অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, সারা দেশ বিদ্যুতের আওতায় আসলেও এখনও দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় কিছু পরিবার এ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। স্যানিটেশনেও হাওড়সহ দুর্যোগপ্রবণ এলাকা পিছিয়ে রয়েছে। এ সব সমস্যার সমাধানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, গণস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থায় সমন্বিত প্রকল্প প্রণয়নের পরামর্শ দেন তিনি।

অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, এসডিজি অর্জনে জলবায়ু ও পরিবেশ বিষয়ে অনেকগুলো সূচক থাকলেও এ সংক্রান্ত বেজলাইন তথ্য না থাকায় অর্জন মূল্যায়ন করা যাচ্ছে না। পরিসংখ্যান ব্যুরোর এ জরিপ এসডিজি সংক্রান্ত তথ্য প্রাপ্তি সহজ করবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান, বাংলাদেশ সেন্টার ফর এ্যাডভান্সড স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক ড. আতিক রহমান, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন উপস্থিত ছিলেন।