প্রখ্যাত আলোচক জুবায়ের আহমদ আনসারী জানাযায় লাখো মানুষের ঢল ও কিছু কথা

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

এপ্রিল ১৮ ২০২০, ১৯:৩৬

।। এহসানুল হক ।।

করোনার ভয়াল থাবা যখন সারা দেশ ছড়িয়ে গেছে অজানা আতংকে যখন সমস্ত মানুষ গৃহবন্দী। জনসমাগণ ঠেকাতে যখন মসজিদের জামাত পযর্ন্ত নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে এমন সময়ে প্রখ্যাত আলেম জুবায়ের আহমদ আনসারীর জানাযায় লাখো মানুষের ঢল সমালোচনার জন্ম দিবে- এতে কোন সন্দেহ নাই। অনেকের কোয়ারেন্টাইনের সময়টা বিষাক্ত হয়ে উঠবে। রাগে ক্ষোভে আইসলোশন ভেঙ্গে ঝাপিয়ে পরবে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সন্ধাবেলার টকশোপাড়া এটা নিয়েই গরম থাকবে ।

ব্যক্তিগতভাবে আমি এই ঘটনা সমর্থন করছি না। এটা ভালো উদাহরণ হয়নি। আমিও মনে করিও এ ধরনের ভীড় না হলেই ভালো হতো। ঐ এলাকার কোন আলেম বা অন্য কেউ করোনা সনাক্ত হলে এর দায় জানাযার উপর চাপানোর চেষ্টা হবে। এজন্য সর্তকতা অবলম্বন করাই উচিত ছিল। প্রশাসন কঠোর থাকলে এমন জমায়েত হওয়ার কথা না। লকডাউন না থাকলে আমি নিজেও যেতাম। যারা উপস্থিত হয়েছে তার চেয়ে দ্বিগুণ মানুষ সুযোগ না থাকায় যেতে পারেনি। সারা দেশ থেকে মানুষ যাওয়ার সুযোগ থাকলে কি পরিস্থিতি হতো একটু চিন্তা করেন।

এই যে মানুষগুলো উপস্থিত হয়েছে তাদেরকে কেউ আসার জন্য আহবান করেনি। তারা কোনো দলের লোক না। সমস্ত মাদরাসা বন্ধ। মাদরাসা থেকে গাড়ি ভরে ভরে সেখানে লোক যায়নি। তাদেরকে কেউ ভাড়া করে আনেনি। হুজুরের পরিবার ও মাদরাসা কর্তৃপক্ষ স্থানীয় পুলিশকে জানিয়েছিল ভীড় হবে না। তারাও কল্পনা করেনি এত লোক হবে। কিন্তু জানাযার আগ মূহুর্তে আশপাশের মানুষ যখন স্রোতের মতো আসতে শুরু করেছে তখন আর কিছু করার ছিল না।

এই মানুষগুলো জানতো দেশে লকডাউন চলছে। করোনার ভয়াল থাবা বিস্তার করেছে সব জায়গায়। জানাযায় উপস্থিত হলে এই ভয়ংকর ব্যধি তাকেও স্পর্শ করতে পারে- এটা তারা জানতো তবুও তারা প্রিয় মানুষকে শেষ বারের মতো দেখতে উপস্থিত হয়েছে। যুবায়ের আহমদ আনসারীর ভালোবাসার সামনে সব কিছু তাদের তুচ্ছ মনে হয়েছে।

আজকের এই ঘটনা সমালোচানার যোগ্য আমি স্বীকার করি। কিছু সমালোচনা হতেই পারে। কিন্তু কিছু বুদ্ধিজীবী শুধু করোনা অতংকের কারণেই সমালোচানা করবে না। এটা হবে শুধুমাত্র উপলক্ষ্য। তারা সমালোচনা করবে হুজুরের প্রতি মানুষের এই ভালোবাসা তাদের সহ্য হয় না বলে। হুজুরদেরকে সমাজের সামনে হেয় করার শত চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার ক্ষোভে। তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, অযথা নিজের চুল নিজে ছেড়া দরকার নাই। এই জানাযার মাধ্যমে করোনা কি পরিমাণ ছড়াবে সেই গবেষণারও দরকার নাই।

সমালোচনার পাশাপাশি এখানে চিন্তা করারও একটা বিষয় আছে। একটু ভেবে দেখেন তো, কেনো এই লোক গুলো করোনা ভয় উপেক্ষা করে জানাযায় হাজির হলো? কোন সে জাদুর আকর্ষন তাদেরকে পাগলের মতো টেনে নিয়ে গেলো? সেই রহস্যের সন্ধান যদি আপনি করতে পারেন। জীবিত সময়ে যদি ভালো কিছু কাজ করতে পারেন। আখেরাতের কিছু সম্পদ যদি গড়তে পারেন তাহলে আপনার জীবনও হবে স্বার্থক। আপনার জন্যও মানুষ এভাবেই কাঁদবে। আপনি চলে গেলেও বহমান থাকবে সদকায়ে জারিয়াহ।


লেখক: শিক্ষক, জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া, সাত মসজিদ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।