পবিত্র কুরআন অবমাননার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করুন: আল্লামা মাহমূদুল হাসান

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

অক্টোবর ১৬ ২০২১, ১৯:২৪

পবিত্র কুরআন অবমাননার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ অথরিটি আল হাইয়াতুল উলিয়ার চেয়ারম্যান, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সভাপতি ও মজলিসে দাওয়াতুল হকের আমীর মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমূদুল হাসান।

আজ (১৬ অক্টোবর) শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, কুমিল্লায় পবিত্র কুরআন অবমাননার বিষয়টি বর্তমান পরিস্থিতিতে খুবই উদ্বেগজনক।

গত বৃহস্পতিবার এ বিষয়টি আমার দৃষ্টিগোচর হওয়ার পর আমি বিভিন্নভাবে আমার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছি। এ ব্যাপারে সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে আমার যা মনে হয়েছে, সেই আলোকে সকলের উদ্দেশে আমার বক্তব্য তুলে ধরছি।

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এদেশে একের পর এক ইসলামের ওপর যে আঘাত আসছে, এটি মুসলিম সরকার ও মুসলিম জনগণের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগ ও হতাশাজনক। তারই ধারাবাহিকতায় কুমিল্লার এই ঘটনা বাংলাদেশে যুগ যুগ ধরে চলে আসা ধর্মীয় সম্প্রীতি ও পারস্পরিক শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের বিরুদ্ধে এক মারাত্মক আঘাত। এ ঘটনা সকল সভ্য ও শান্তিকামী মানুষের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক। বিশেষ করে সারাবিশ্বের মুসলমানদের জন্য এটি একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা। এ বিষয়ে রাষ্ট্রের কর্ণধার হিসেবে সরকার প্রধানের সতর্কতামূলক বক্তব্য ও পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি।

এ ঘটনা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করার জন্য কিংবা জাতীয় শৃঙ্খলা বিনষ্ট করে জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার কোনো চক্রান্ত কিনা—খতিয়ে দেখা দরকার। মুসলিম জাতি এ ঘটনায় স্তদ্ধ ও মর্মাহত। আপাতদৃষ্টিতে এটি দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিম ও ইসলামের জন্য উস্কানিমূলক মনে হচ্ছে।

ইতোপূর্বে এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এবং ধর্মমন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছি। তারা অতিদ্রুত তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। কিন্তু অতীতের ইতিহাস বলে, তদন্ত কমিটি শেষ পর্যন্ত কোনো চূড়ান্ত ফলাফলে পৌঁছতে পারে না। এবারের ঘটনা যেহেতু মুসলিম হৃদয়কে চরমভাবে ক্ষতবিক্ষত করেছে, তাই অতিদ্রুত অপরাধীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমি জোর দাবি জানাচ্ছি।

অপরদিকে এহেন পরিস্থিতিতে যখন সারা দেশবাসী মর্মাহত, তখন অতীতের ন্যায় দেশবাসীর দৃষ্টিকে অন্য দিকে প্রবাহিত করার জন্য সরকারের উচ্চপর্যায়ের দায়িত্বশীলরা ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ নিয়ে কটুক্তিমূলক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এদেশে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে, এটি একটি মীমাংসিত বিষয়। তবুও এ নিয়ে অবাঞ্ছিত মন্তব্য ঘোলাটে পরিবেশ সৃষ্টি করার গভীর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত বহন করে। এটি জাতির জন্য অত্যন্ত কলঙ্কজনক। তাই এদিকে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, এ ধরনের সংবিধান লঙ্ঘনকারী বক্তব্য অবশ্যই খতিয়ে দেখা উচিত।

আমরা কোনো বিশৃঙ্খলা চাই না, আমরা এর সুষ্ঠু সমাধান চাই। আমরা শান্তিকামী। ইসলামে কোনো বিশৃঙ্খলা নেই। তাই মুসলিম জাতি ও উলামায়ে কেরাম বিশৃঙ্খলাকে অপছন্দ করে। আমি দেশবাসীকে বিশেষ করে উলামায়ে কেরাম ও ছাত্রসমাজসহ সকলকে অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করার অনুরোধ করি, যাতে কেউ এ ঘটনাকে অন্য খাতে প্রবাহিত করতে না পারে। এজন্য আমাদের সকলকে ঐকমত্য ও পরামর্শের ভিত্তিতে সুচিন্তিত সমাধানের পথেই আগানো দরকার বলে মনে করি। আমাদের জযবাতি ও আবেগী সিদ্ধান্ত কোনো ক্ষতির কারণ না হয় সেদিকে সব সময় সচেতন থাকতে হবে।