নিভৃতচারী এক দ্বীনের খাদেম “মাওলানা ওমর হাসান” (টিপু সুলতান)

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

ডিসেম্বর ৩০ ২০২০, ২০:১১

লিখেছেন মুহাম্মদ হাসান মুরাদ: 

জন্ম: মাওলানা ওমর হাসান টিপু সুলতান ১৯৫৬ সালে চুয়াডাঙ্গা জেলাতে জন্ম লাভ করেন।

পরিচয়: পিতা:মরহুম মুজাফ্ফর হোসেন। সরকারী উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন (সারকেল অফিসার, ডেভেলপমেন্ট) দাদা:সিরাজুল ইসলাম মুন্সি।দাদা পশ্চিম বঙ্গের নদীয়া জেলার বগুলা গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। প্রায় ১২ শত বিঘার বিশাল জমিদারি করতেন। কিন্তু রায়েট তথা হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার সময় মাত্র ৩০০বিঘায় বিনিময় করে বাংলাদেশে চলে আসেন।

শিক্ষা: লেখা-পড়ার হাতে খড়ি নিজ পরিবারেই হয়। বাবার চাকরির সুবাদে বিভিন্ন স্কুলে পড়তে হয়েছে। ১৯৭২ সালে যশোর হাই স্কুল থেকে এস,এস,সি পাস করেন। তারপর ভর্তি হন যশোর এম,এস কলেজে। ৭৪ সালে ইন্টার পরীক্ষার্থী ছিলেন। কিন্তু ছাত্র আন্দোলনের কারনে পরিক্ষা বাতিল হয়। পরে ৭৫ সালে কোটচাদপুর কে,এম,এইচ কলেজ থেকে ইন্টার পাস করেন। এরপর খুলনা বি.এল কলেজ থেকে বোটানিতে অনার্স করেন।

দ্বীনী শিক্ষা:পারীবারিক ধাঁচে আধুনিক শিক্ষাতে গড়ে উঠলেও অন্তরে দ্বীন-ইসলাম সম্পর্কে জানার তীব্র আগ্রহ লালন করতেন। আল্লাহকে পাওয়ার পথ খুজতেন। যে চেষ্টা করে সে পথ পেয়েই যায়। ওমর হাসান সাহেবেরও তাই হলো। ১৯৮১ সালের দিকে,খুলনাতে পড়া কালিন সময়ে, পরিচয় হয় মওলানা আব্দুল খালেক বর্ধমানি রহ. এর সাথে। যিনি হুসাইন আহমদ মাদানী রহ. এর খলিফা ছিলেন। হযরতের বিভিন্ন প্রোগ্রামে সাথে থাকতেন।এভাবেই এক সময় হযরতের সাথে গড়ে তোলেন ইছলাহী সম্পর্ক। হযরত আব্দুল খালেক রহ. ওমর হাসান সাহেবকে ইন্ডিয়াতে যাওয়ার জন্য বলেন। তিনি যাওয়ার প্রস্তুতিও নিলেন। কিন্তু পরিবার থেকে অনুমতি পেলেন না। তারপর ৮২ সালে একবার মাহফিলের কথা বলে ৩ দিনের জন্য ইন্ডিয়াতে গেলেন। ৩দিনের জন্য গিয়ে ৮মাস অনস্থান করেন। এ পুরো সময় শায়েখের নির্দেশে বিশেষ আমলে কাটান। এ সময়ে বাড়ি থেকে যত চিঠি গিয়েছে এর কোন চিঠিই খুলে পড়েননি।তারপর দেশে ফিরে আসেন।দেশে ফিরে ইলমে দ্বীন শিক্ষার জন্য হযরত মওলানা আবুল কাসেম রহ. এর কাছে যান। কিন্তু সুযোগ হল না। তাই আবার পশ্চিমবঙ্গে প্রিয় শায়েখের কাছে চলে যান। যাওয়ার কিছুদিন পর শায়েখ আব্দুল খালেক সাহেব খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। এবং কয়েক দিন পরে (৮৫সালে) ইন্তেকাল করেন। হযরতের ইন্তেকালে ওমর হাসান সাহেব খুবই ভেঙ্গে পড়েন। তারপর হযরতের ইন্তেকালের পর হযরতের খলিফাবৃন্দ এক স্মরণ সভার আয়োজন করেন। সেখানে হযরত আব্দুল খালেক রহ. এর খলিফা শামসুল আলম হুসাইনি সাহেবের সাথে পরিচিত হন। এবং তিনি ওমর হাসান সাহেবকে নিজ মাদরাসা শান্তিবাগে নিয়ে আসেন। এখানে এসে ৩ মাস বিশেষ রুহানি মেহনত করেন। তারপর মাদরাসাতে পড়া শুরু করেন। এখানে কাফিয়া পর্যন্ত পড়েন। তারপর দারুল উলুম দেওবন্দ চয়ে যান। কিন্তু সে বছর দেওবন্দে দাখেলা পেলেন না। তাই সাহারানপুরে দেরাদুন,রামপুরা মাদরাসাতে ভর্তি হন। সেখানে জালালাইন জামাত পর্যন্ত পড়েন। তারপর মেশকাতের বছর দেওবন্দে ভর্তি হন। অবশেষে ১৯৯১ সালে দাওরা ফারেগ হন। দাওরার বছর হযরত মাওলানা আনজার শাহ কাশ্মীরি রহ. রসিকতা করে মাঝেমধ্যে বলতেন “টিপু জান্নাত মে জায়েগা আওর গুরু সিং জাহান্নাম মে জায়েগা”।কাশ্মীরি রহ. ওমর হাসান সাহেব কে খুব ভালোবাসতেন।

কর্মজীবন: মাওলান ইদ্রিস সন্দীপি রহ. প্রতিষ্ঠিত ঢাকার অদূরে মাদানি নগর মাদরাসাতে ১৯৯২ সালে খেদমত শুরু করেন। এখন পর্যন্ত সে প্রতিষ্ঠানেই আছেন।

২০০৪ সালে নিজ জেলা চুয়াডাঙ্গার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম বুজরুকগড়গড়ী মাদরাসার ইহতেমামের দায়িত্ব নেন।বর্তমানে এটি দাওরা হাদীস মাদরাসা। মূলত হুজুর মাদরাসার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই বর্তমান অবস্থা পর্যন্ত এতো উন্নতি সাধিত হয়।

খেলাফত লাভ: ১৯৯৮ সালে নিজ শায়েখ শামসুল আলম হুসাইনী রহ. থেকে খেলাফত লাভ করেন। যিনি হযরত মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী রহ. এর খলিফা ছিলেন।

এরপর ২০১১ সালের ২৭ রমযান শাহ আহমদ শফী রহ. খেলাফত প্রদান করেন। এছড়াও হাফেজ্জি হুজুর রহ. এর জামাতা মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ সাহেবও খেলাফত প্রদান করেন।

লিখনী: শত ব্যস্ততার মাঝেও বেশকিছু মূল্যবান বই রচনা করেছেন-

১.গণিত ৩য় শ্রেণি ২. বাংলা ২য় শ্রেণি (বর্তমানে তালিমি বোর্ডের নেসাবে পড়ানো হয়)। ৩.রোযা আল্লাহকে পাওয়ার মাধ্যম ৪. পালনীয় সুন্নত ৫. মাদানী পদ্ধতীতে সহজ কোরআন শিক্ষা।

বর্তমান কর্ম ব্যস্ততা: শিক্ষকতা, নিজস্ব ৩টি খানকা পরিচালনা,ইছলাহী মাজলীস ও রচনা।

মূল মিশন: আল্লাহ ভোলা মানুষদের আল্লাহকে পাওয়ার পথ দেখানো।

পরিবার: ৪ ভাই এক বোন।আর সাংসারিক জীবনে ৪ মেয়ে ১ ছেলের জনক । এছাড়াও সারা বাংলাদেশে হযরতের হাজার হাজার ছাত্র,মুরীদ ও ভক্তবৃন্দ রয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা হযরতের হায়াতে বরকত দান করুন। দুনিয়া আখেরাতে আল্লাহ উত্তম বিনিময় দান করুন। আমিন।