নাইক্ষ্যংছড়ি উপবন পর্যটন শৈল্পিক ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

সেপ্টেম্বর ২৮ ২০২০, ১২:৩২

কায়সার হামিদ মানিক, স্টাফ রিপোর্টার কক্সবাজার: বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সদরে পাহাড়ের চূড়ায় ছোট ছোট বেশ কয়েকটি ঘর। সড়ক থেকে লেকে যাওয়ার সময় হাতের বাম দিকে তাকালে নজরে আসবে বিশাল জলপ্রপাত। নজরে পড়বে স্থানীয় বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি। যেটি উপবন পর্যটন লেক হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে। প্রশাসন ও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদরে প্রায় ২৫ একর পাহাড়ি এলাকাজুড়ে ১৯৯০ সালে উপবন পর্যটন লেক নামে পর্যটন কেন্দ্রটি গড়ে তোলে উপজেলা প্রশাসন।

সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকলেও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি পর্যটন শিল্প পিছিয়ে নেই। সরকারের আন্তরিকতায় উপবন পর্যটন কেন্দ্র লেক সুন্দরভাবে সাজিয়ে তুলছেন বর্তমান ইউএনও সাদিয়া আফরিন কচি। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. ইকবাল বলেন, তখন ইউএনও ছিলেন মতিউর রহমান। একসময় এই লেকের পশ্চিম পাশে বেশ কয়েকটি পাহাড়ি ঝরনা ছিল। এসব ঝরনার পানির উৎস নিয়ে ১৯৮৭ সালে দুই পাহাড়ের মধ্যখানে কৃত্রিম হ্রদ খনন করা হয়। যা ছিল প্রথম সূচনা। উদ্দেশ্য ছিল উপজেলা সদরে পানির সমস্যা দূরীকরণ। সার্বিকভাবে সহায়তা করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক নাজমুল আলম সিদ্দিকী, তৎকালীন বান্দরবান রিজিয়নের সেনা কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাখাওয়াত হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহজাহান, ইঞ্জিনিয়ার নুরুল হাকিম (প্রয়াত)।

এরপর ১৯৯০ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে নাইক্ষ্যংছড়ি সদরের প্রায় ২৫ একর জায়গাজুড়ে লেকের পাহাড়ে কৃত্রিম বাঁধ দিয়ে গড়ে তোলেন উপবন পর্যটন স্পট। তাতে আমি উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে ইউএনওকে সার্বিক সহযোগিতা করে কাজে হাত দিই। তখন থেকে উপজেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে উঠে। শুরুতে এটি ইউএনওর গোধা বা লেক নামে পরিচিত ছিল। পরবর্তী ঝুলন্ত সেতু নির্মাণ করার পর ‘শৈলশোভা’ লেক নামে পরিচিতি পায়।

দৃষ্টিনন্দন ও পাহাড়ি স্থানগুলো দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা এখানে আসেন। তবে উপজেলায় পর্যাপ্ত হোটেল-মোটেল, সড়ক যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় পর্যটকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কক্সবাজার থেকে মাত্র ৩৫ কিলোমিটারের দূরে এই লেকটি অবস্থিত। নাইক্ষ্যংছড়ির উপজেলার প্রাণ কেন্দ্রে জেলা পরিষদ ডাক বাংলো ঘেঁষে উপবন লেকের অবস্থান। এটি একটি কৃত্রিম হ্রদ। এ স্থানটি ইকো ট্যুর ও পিকনিক স্পট হিসেবে বেশ পরিচিত। সবুজ আর নীলের মাঝে লেকের বুক চিরে দাঁড়িয়েছে আছে ঝুলন্ত সেতু।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবানের অন্যতম দর্শনীয় স্থান নাইক্ষ্যংছড়ি উপবন পর্যটন লেকটি নানা অব্যবস্থাপনার কথাও উঠে এসেছে প্রতিবেদকের কাছে। জানা যায়, প্রায় সময় বখাটের উৎপাতে পর্যটকরা নিরাপদ মনে করছে না ও সবুজে ঘেরা মনোরম পর্যটন স্পটটি থেকে বিমুখ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ভ্রমণপিপাসুরা জানান। অন্যান্য সৌন্দর্য্য বর্ধনের জন্য করা হলেও প্রাকৃতিক লেকের উপরে তৈরি আকর্ষণীয় ঝুলন্ত সেতুটি বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ আর বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে দীর্ঘদিনের সংস্কারের অভাবে এমনটা হয়েছে দাবি দর্শনার্থীদের।

পর্যটন মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পর্যটকদের ভিড় জমে এখানে। করোনাকালীন পর্যটন স্পট বন্ধ থাকার সুযোগ কাজে লাগিয়েছে পর্যটনের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রশাসন। বেশকিছু উন্নয়নের মাধ্যমে বদলে যাচ্ছে উপবনের আগের পরিবেশ। চলমান কাজ শেষ হলে দর্শনার্থীদের ভিড় আরও বাড়বে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় বাসিন্দা বাদশা মিয়া বলেন, বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার খুব সুন্দর করে সাজিয়েছেন উপবন পর্যটনকে। এই দৃশ্যগুলো দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা আসছে, এটি আসলেই আমাদের গর্বের ব্যাপার। তার মতে, আগামীতে নীরব শান্ত পরিবেশের দৃষ্টিনন্দন উপবন কেন্দ্র বান্দরবানের অন্যতম পর্যটক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত পাবে।

উপবন পর্যটন স্পটের পাশের হোটেল ব্যবসায়ী নুরুল হক টিপু বলেন, ‘লকডাউনের কারণে অন্য ব্যবসায়ীদের মতো আমিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।’ কিন্তু লকডাউন ও উপবনের আধুনিকায়নের পর ব্যবসা-বাণিজ্য বেড়েছে। ক্ষুদ্র এই হোটেল ব্যবসায়ীর মতে, আগামীতে উপজেলা প্রশাসন উন্নয়ন কাজ চালিয়ে গেলে পর্যটক আরও বাড়বে।

পরবর্তীতে উপজেলা প্রশাসনে বিভিন্ন সময়ে পর্যটন বান্ধব কর্মকর্তার যোগদানের সূত্র ধরে এবং বান্দরবানের বর্তমান সংসদ সদস্য বীর বাহাদুরের প্রচেষ্টায় শৈলশোভা লেকটি ‘উপবন পর্যটন’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এখন এই পর্যটন শুধু বান্দরবানে সীমাবদ্ধ নেই। একাধিক টিভি নাটক, চলচ্চিত্র ও বিজ্ঞাপন চিত্রায়িত হয়েছে এই উপবনে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া আফরিন কচি বলেন, যোগদানের পর থেকে উপবন পর্যটনে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। শীতকালে এখানে অনেক ট্যুরিস্ট আসেন। বিশেষ করে কক্সবাজারের পর্যটকরা। এসব পর্যটক যাতে সুন্দরভাবে উপবনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন সেজন্য সম্প্রতি কিছু বেঞ্চ, টেবিল, শিশুদের জন্য দোলনার উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। পানির ফোয়ারার কাজ চলমান।

ভবিষ্যতে পিকনিকের জন্য রান্না ঘর এবং ভিউ পয়েন্ট করার পরিকল্পনা আছে। বরাদ্দ পেলে এই কাজগুলো শুরু করা হবে। এ ব্যাপারে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা অাওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যাপক মো: শফিউল্লাহ বলেন, পর্যটন শিল্পের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে নাইক্ষ্যংছড়িতেও। পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে উপবন পর্যটন স্পটের সংস্কার, সৌন্দর্যবর্ধন, অবকাঠামোগত নানা উন্নয়ন কাজ চলমান। পর্যটকদের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

যাওয়ার উপায়
রামু বাইপাস নেমে সিএনজি বা ট্যাক্সি নিয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায়। তারপর ওখান থেকে রিকশায় বা হেঁটে উপবন পর্যটন লেকে পৌঁছানো যায়। কক্সবাজার থেকে সিএনজি রিজার্ভ করেও এখানে আসা যায়।