নতুনরূপে হেফাজত

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

মার্চ ২৮ ২০২১, ২৩:৪৬

সৈয়দ শামছুল হুদা: ২৬মার্চ, শুক্রবার। ইতিহাসের তারিখ হিসেবে বাংলদেশের স্বাধীনতার ৫০তম সুবর্ণজন্তী দিবস। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, ঐদিন একটি স্বাধীন মুসলিম দেশে সরকার ও আওয়ামীলীগ ইতিহাসের কলঙ্কজনক অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছে। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররমে নজিরবিহীন হামলার মাধ্যমে দেশের মানুষকে এটা পরিস্কার বুঝিয়ে দিয়েছে যে, কুখ্যাত রাষ্ট্রনায়ক নরেন্দ্রমোদির আশির্বাদই এদের কাছে বড়। এদেশের মানুষের সমর্থন বা মতামতের কোন মূল্য এদের কাছে নাই।

এবারের ২৬মার্চে বাংলাদেশের ছাত্র জনতা নতুন নজির স্থাপন করেছে। আমি শুরুতেই এদেশের সাহসী ছাত্রজনতাকে অভিনন্দন জানাই, যারা জাতীয় মসজিদের অবমাননা সহ্য করতে না পেরে নেতৃবৃন্দের হুকুদের দিকে না তাকিয়ে রাজপথে নেমে এসে জাতীয় মসজিদে আটকে পড়া মুসুল্লিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে। আর এটা করতে গিয়ে তারা শাহাদাত বরণ করার মতো কঠোর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে বাধ্য হয়। আল্লাহ তায়ালা সেই সব সাহসী ভাইদের জীবন উৎসর্গকে কবুল করুন। তাদের মা-বাবা, পরিবারকে শোক সইবার তৌফিক দান করুন।

পরিস্থিতি বাধ্য করে হেফাজতকে রাজপথে নেমে আসতে। ২০১৩সালের পর হেফাজতের ওপরে যেভাবে সরকারী পরোক্ষ প্রভাব বিস্তার করে বসেছিল, সেই জাল ছিন্নকরে তারা নতুন রূপে নিজেদেরকে প্রকাশ করতে সক্ষম হয়। হেফাজতের দুদিনের কর্মসূচী ছিল যথার্থ। অনেকেই হরতাল ঘোষণা নিয়ে শঙ্কিত ছিলেন। দেশের এই দুর্দিনে হেফাজত আদৌ হরতাল করতে পারবে কী না. উলামায়ে কেরাম রাস্তায় নামবে কী না, এ নিয়ে যথেষ্ট ভয় ছিল। আল্লাহর রহমতে অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বাংলাদেশের জাতীয় সড়কের নিয়ন্ত্রন নিয়ে ছাত্র ও তৌহিদী জনতা প্রমাণ করে দিয়েছে যে, হেফাজত অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করবে না।

হেফাজত আন্দোলনের এই দুইদিনে জাতীয় মিডিয়াগুলোর ভূমিকা ছিল খুবই নিন্দনীয়। শুক্রবার থেকে নিয়ে আজ রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ২১জন মানুষ পুলিশের সরাসরি গুলিতে জীবন দিয়েছে। অথচ মিডিয়া এ নিয়ে সামান্য কথা বলে নাই। বায়তুল মুকাররম মসজিদে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও পুলিশলীগের সমন্বয়ে দুই ঘন্টাব্যাপি তান্ডব চালিয়েছে এ নিয়ে সামান্য কথা বলেনি।একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল মানবজীবন। শুক্রবার থেকে নিয়ে রবিবার পর্যন্ত সাহসিকতার সাথে সত্য সাংবাদিকতা করেছে বলেই আমার কাছে মনে হয়েছে।

এই সময়ে আলেম সাংবাদিকদের মধ্যে সবচেয়ে সাহসী সাংবাদিকতা করেছেন আমাদের প্রিয়মুখ জনাব শরীফ মুহাম্মদ সাহেব। তিনি তাঁর সাহসী লিখনীর মাধ্যমে আমাদেরকে প্রতিমুহুর্তে উজ্জীবিত রেখেছেন। অনেক ভাই যারা হেফাজত এর কর্মসূচী নিয়ে অতীতের ক্ষোভ থেকে নানা ক্ষুরধার মন্তব্য করেন তারাও এবারের আন্দোলনে সর্বক্ষণ ইতিবাচক স্টেটাস দিয়ে ছাত্র ভাইদের সাহস যুগিয়েছেন। তাদের মধ্যে নোমান বিন আরমান, আঃ হক ভাইসহ অনেকেই ভালো লিখেছেন।

হেফাজতের এবারের হরতালে সকল আলেম একহয়ে মাঠে নেমেছেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুহতারাম আমীর মুফতি ফয়জুল করীম ডাকের অপেক্ষা না করে রাজপথে নিজেই নেমে এসেছেন, জনাব এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী সাহেব মাঠে নেমে এসেছেন, গোলাম মওলা রনি, ড. আসিফ নজরুল, ড. জাফরুল্লাহ, নুরুল হক নূরসহ অনেক সাহসী রাজনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞগণ হেফাজতের কর্মসূচীর পক্ষে জোরালো সমর্থন যুগিয়েছেন। তাদের সকলের প্রতি অন্তর থেকে দুআ ও মোবারকবাদ।

এবারের হেফাজতের আন্দোলনে যাত্রাবাড়ি মাদ্রাসার ছাত্ররা যুক্ত হয়ে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। আর সবসময়ের মতো শহীদবাড়িয়া এবারও আন্দোলনের শীর্ষে অবস্থান করেছে। তারা বাতিলের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে যাওয়ার সাহস দেখিয়েছে। এছাড়া পটিয়া মাদ্রাসার ছাত্রভাইদের প্রতি আলাদাভাবে মোবারকবাদ জানাতে হয়। দীর্ঘদিন পর পটিয়া মাদ্রাসাকে আন্দোলনের মাঠে দেখতে পেলাম। হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্ররা যা করেছে তা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এদেশে অন্যায়ের প্রতিবাদ করার অধিকারও ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল। হরতালের মাধ্যমে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুঁখে দাঁড়াবার লোকযে দেশে এখনো আছে তা হেফাজত আবারও প্রমাণ করেছে।

কিছু ভাই মনে করেন, হেফাজত এমন আন্দোলন করুক যাতে সরকারের গদি উল্টে যায়। এমনটা না হলেই তারা হেফাজতকে গালিগালাজ শুরু করেন। তাদের প্রতি অনুরোধ করে বলবো, ভাই, হেফাজত একটি অরাজনৈতিক, অসংঘটিত দল। তাদের পক্ষে ধারাবাহিক কর্মসূচী চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আর আমাদের দেশের সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো কোনভাবেই তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারছে না। কোন আন্দোলন থেকেই তারা সুফল তুলতে পারছে না, এর দায়তো হেফাজতের না। এর দায় সম্পূর্ণরূপে রাজনৈতিক দলগুলোর।

হেফাজত খুব দক্ষতার সাথে একদিনের হরতাল শেষে কর্মসূচী স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। এটা বুদ্ধিমানের কাজ করেছে। হেফাজতের পক্ষে ধারাবাহিক কঠোর অবস্থানে যাওয়া সম্ভব নয়। এটা অনেকেই বুঝতে চায় না। তাদের আল্লাহ বুঝার তৌফিক দান করুন।

নতুন রুপে হেফাজতের জেগে উঠার মধ্যে এই বিষয়টি আবারো প্রমাণিত হলো যে, আওয়ামীলীগ কোনভাবেই ইসলাম ও মুসলমানদের বন্ধু নয়। দেশের স্বার্থও তাদের কাছে বড় নয়। শুধু দল এবং ক্ষমতাই তাদের কাছে সবকিছু। ‍নতুবা তারা একজন খুনির জন্য এভাবে দুদিনে প্রায় ২১জন ছাত্রকে হত্যা করতে পারতো না।

 

দুদিনের আন্দোলনের সবচেয়ে বড় সফলতা হলো, তরুন আলেম প্রজন্ম শত্রুকে চিনতে পেরেছে। আর নেতৃত্ব প্রয়োজনের সময়ে নিজেদের হাতে তুলে নেওয়ার যে সাহস করেছে এটা অনেক বড় অর্জন। আগামী দিনে এই ত্যাগ কাজে আসবে।

সবশেষে দুনিদের আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের জন্য দুআ করি, আল্লাহ যেন তাদের এই সর্বোচ্চ ত্যাগকে কবুল করেন। যারা আহত হয়েছেন, বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন, হেনস্থার শিকার হয়েছেন আল্লাহ তাদেরকে সবরে জামিল এখতিয়ার করার তৌফিক দান করুন। আমীন।