ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন রোধে ইসলামি আইন বাস্তবায়নের বিকল্প নেই

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

অক্টোবর ১২ ২০২০, ২৩:৩৫

মুফতি ইমদাদুল হক ফয়েজী: কিছুদিন পূর্বে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে একজন নারীকে সম্পূর্ণ বিবস্ত্র করে নরপিশাচ হায়েনারা যেভাবে নির্যাতন ও মানহানি করেছে তা জাহেলি বা বর্বরতার যুগকেও হার মানিয়েছে। নারী নিজের সম্ভ্রম রক্ষার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও কুকুরদের কাছে পরাজিত হয়েছেন। নির্যাতনকারীদের পায়ে হাত দিয়ে দিয়ে বাবা, বাবা- চিৎকার আর ওড়না, তোশক দিয়ে নিজের সম্ভ্রম রক্ষার প্রাণান্তকর চেষ্টাও কুলাঙ্গারদের হৃদয়ে একটু দয়া, লজ্জা সৃষ্টি করতে পারেনি। এতো নির্লজ্জতা- সম্ভবত পৃথিবী এবং পৃথিবীবাসী আর কোথাও, কখনও দেখেনি! ওরা পৃথিবীর নিকৃষ্ট জানোয়ার। আমার মনে হয়- পশুর জবান থাকলে পশুরা সমাবেশ করে করে প্রতিবাদী হয়ে ওঠতো। ঘৃণা আর ধিক্কার জানিয়ে চিৎকার করে করে বলতো, দদোহাই তোমাদের- ওদের পশু বলে আমাদের লজ্জিত করো না। আমাদের হাতে ওদের তুলে দাও; আমরা পিশাচদের বিচার করে পৃথিবীকে কলঙ্কমুক্ত করি।’

গণমাধ্যম বলছে, ঘটনাটি ঘটেছে মাসখানেক আগে, নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের বড়খাল একালায়। স্থানীয় প্রভাবশালী সন্ত্রাসী দেলোয়ার এবং তার দোসররা একাধিকবার ওই নির্যাতিতা মহিলাকে তাদের সাথে অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দিয়ে ব্যর্থ হয়ে এ বর্বর পাষণ্ডতায় অবতীর্ণ হয়। নির্যাতিতার ভাষ্যমতে, পাষণ্ড কালপ্রিটরা লাথি মেরে গৃহের দরজা ভেঙ্গে তার কক্ষে ঢুকে। অতঃপর তার স্বামীকে ধাক্কা দিয়ে বের করে এবং অন্য কক্ষে বেঁধে রেখে তার ওপর হামলে পড়ে। দেলোয়ার, বাদল, আব্দুর রহিম, কালাম এবং তাদের অন্যান্য সহযোগী কুলাঙ্গাররা মহিলাকে সম্পূর্ণ বিবস্ত্র করে করে মুখে, বুকে লাথি এবং শরীরের স্পর্শকাতর অঙ্গসমূহে বিভিন্নভাবে আঘাত ও নির্যাতন করে উল্লাস, মশকারা করার ঘৃণ্য মানসিকতার চিত্র দেখে বিবেকবান মানুষ মাত্রই নিজেকে এক নিকৃষ্ট জনপদের অধিবাসী সাব্যস্ত করত: ধিক্কার দেয়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারছেন না। নির্লজ্জ দানবরা শুধু নির্যাতন করে থেমে থাকেনি; বরং অবর্ণনীয় ভাষার নির্যাতন, হেনস্থা আর অসম্মান করার অমানবিক দৃশ্যগুলো ভিডিও করে ফেসবুকেও ছড়িয়ে দেয়ার মতো নির্লিপ্ততা আর ঘৃণ্য উল্লাসেও মেতে ওঠেছিল; যা তাদের জন্য চরমভাবে হিতে বিপরীত হিসেবেই কাজ করেছে। নির্যাতনের পর মহিলা ও তার পরিবারকে হিংস্র হায়েনারা যেভাবে ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করে দিয়েছিল, তাদের এ কর্মচিহ্ন যদি না থাকত, তবে হয়তো হৃদয়ে রক্তক্ষরণকারী- তাদের এ কুকর্ম ঢাকা পড়ে যেত আর তারা পবিত্র, নির্দোষ হিসেবেই থেকে যেত। সন্দেহ নেই, কোন সুস্থ বিবেকবান মানুষ ভিডিও ক্লিপটি একবার দেখার পর দ্বিতীয়বার দেখার সাহস করতে পারবে না। একজন বাঙালী, বাংলাদেশী পুরুষ হিসেবে আজ নিজেকে নিজের কাছে অপদার্থ, স্বার্থপর, কাপুরুষ ছাড়া কিছুই মনে হচ্ছে না। সোস্যাল মিডিয়ায় ভিডিও ক্লিপটি ভাইরাল হওয়ার পর সকল স্তরের মানুষ নিকৃষ্ট ইতর-জানোয়ারদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবীতে প্রতিবাদী হয়ে জ্বলে ওঠেছেন।

ভিডিও ক্লিপটি ভাইরাল হওয়ার পর সর্বপ্রথম গত ৪ অক্টোবর রাতে তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল হয়। পরের দিন দেশের অসংখ্য স্থানে হায়েনাদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদানের দাবীতে মানববন্ধন, প্রতিবাদ মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। দাবী ওঠেছে- ধর্ষক এবং নির্যাতনকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃতুদন্ড কার্যকর করতে হবে। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল স্থাপন, দ্রুত রায় প্রদান এবং তা কার্যকর করারও জোর দাবী জানানো হচ্ছে। অনেকে বলছেন- প্রকাশ্যে, দিবালোকে, জনসম্মুখে খোলা ময়দানে ওদের সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর করা হলেও তা তাদের প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে কমই হবে। আশার কথা হচ্ছে, র‍্যাব, পুলিশ এপর্যন্ত কিছু অভিযুক্ত, অপরাধীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে। আমরা চাই, এদের মতো অন্যান্য সকল অভিযুক্তকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করা হোক। যাতে করে আর কোন নরপশু এমন লোমহর্ষক ঘটনার পুনরাবৃত্তি করতে সাহস না পায়, আর কোন বোন বস্ত্রহীন, সম্ভ্রমহারা হতে না হয়।

সর্বোপরি, দেশে যেভাবে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়ে চলছে তা অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক ও কঠিন পীড়াদায়ক। আমাদের চোখের সামনে আজ মানবতা বিপন্ন, বিপর্যস্ত, রক্তাক্ত! অসহায় মানবতা ঢুকরে কাঁদছে আর চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে, ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনসহ অন্যান্য অপরাধ দমন ও প্রতিরোধকল্পে ইসলামি জীবনবিধান ও আইন বাস্তবায়নের কোনও বিকল্প নেই। এটি আমাদের বিবস্ত্র জন্মভূমি ও এদেশের আপামর জনতার প্রাণের দাবীও বটে।

লেখক: সহকারী শিক্ষক, শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা, সিলেট।