দেওবন্দিয়াত কী? দেওবন্দী কারা?

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

জানুয়ারি ২৭ ২০২১, ২৩:০৮

মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া

দেওবন্দ হিন্দুস্তানের উত্তর প্রদেশের সাহারানপুর জেলার একটি থানার নাম৷ এখানে অবস্থিত বিশ্ববিখ্যাত দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম দেওবন্দ৷ প্রতিষ্ঠালগ্নে এর নাম দারুল উলুম ছিল৷ পরবর্তীতে জামিয়া ইসলামিয়া সংযোগ হয়েছে৷

দেওবন্দিয়াত বলতে কি বুঝায়? দেওবন্দী কাদের বলে? নির্দিষ্ট ঘরনার প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করার ফলেই কি দেওবন্দী বলা হবে?
এ প্রসঙ্গে মুরশিদুনা ও শায়খুনা ফিদায়ে মিল্লাত হযরত সাইয়্যেদ আসআদ মাদানী রহঃ-এর একটি আলোচনা উল্লেখ করতে চাই৷

হযরত বাংলাদেশ সফরকালে হাটহাজারী মাদরাসার পুরাতন দারুল হাদীসে সমবেত উলামায়ে কেরাম ও ছাত্রদের উদ্দেশে বলেন, শুধু দেওবন্দী, দেওবন্দিয়াত বলা ঠিক নয়৷ দেওবন্দী ও দেওবন্দিয়াত বলার দ্বারা নিজেদেরকে নির্দিষ্ট গন্ডীবদ্ধ করা হয়৷ মূলত দেওবন্দিয়াত একটি নজরিয়া একটি বিপ্লবী চেতনার নাম৷ দেওবন্দিয়াতের মূলেই হল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকীদা-বিশ্বাসের চেতনা ধারন করা, লালন করা এবং প্রচার করা৷ দেওবন্দিয়াতের তুলনায় আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত ব্যাপক অর্থবহ৷

হযরত আরো বলেন, এ হিসেবে কেবল দেওবন্দ কিংবা দেওবন্দি ঘরনার প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখার দ্বারা দেওবন্দি হওয়া যায় না৷ আবার এ ঘরনার কোন প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন না করেও দেওবন্দি চেতনা ধারন, লালন করায় দেওবন্দি হওয়া যায়৷

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের মানদন্ড হল মা আনা আলাইহি ওয়া আসহাবিহী৷ এর বাইরের চেতনা যারা লালন করবে তারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত ভূক্ত নয়৷ এর বিপরিত চেতনাধারী কেউ আহলে সুন্নাতভূক্ত হওয়ার দাবী করলে তা হবে সম্পূর্ণরুপে মিথ্যা৷ এর উপর ভিত্তি করে দেওবন্দি ঘরনার প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া না করেও আহলে সুন্নাহর চেতনাধারী দারুল উলুম দেওবন্দের মজলিসে শুরার সদস্য মনোনীত হতে পারেন৷ দারুল উলুম দেওবন্দের মজলিসে শুরার সদস্য মনোনীত হওয়ার বৈশিষ্ট্যাবলীর অন্যতম হল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের চিন্তা-চেতনার অধিকারী এবং মাযহাবগতভাবে ইমাম আযম ইমাম আবু হানিফার অনুসারী হওয়া৷

হযরতের আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয়, দেওবন্দি চিন্তা-চেতনার জন্য দেওবন্দি ঘরনার প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন শর্ত নয়৷ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকীদা-বিশ্বাসের প্রতিজনই দেওবন্দি৷ দেওবন্দি ঘরনার প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করে কেউ যদি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের চিন্তা-চেতনা বিরোধী হন তিনি কোনভাবেই দেওবন্দি হওয়ার দাবী করার হক রাখেন না৷ সন্দ্বীপের মাওলানা অজিউল্লাহ হযরত আনোয়ার শাহ কাশ্মীরি রহঃ-এর সমসাময়িক ছিলেন৷ দেওবন্দ থেকে দেশে প্রত্যাবর্তনের পর কট্টোর বিদআতী হয়ে যান৷ এমন কিছু কর্মকান্ডের সাথে জড়িয়ে যান যা আহলে সুন্নাহর বিপরিত৷ বিদআতী কখনো দেওবন্দি হতে পারে না৷

যেভাবে কোন বিদআতী দেওবন্দি হতে পারে না তদ্রুপ নবী-রাসূল, সাহাবায়ে কেরাম, উম্মাহাতুল মোনিনীন, কুরআন, হাদীসের সমালোচনাকারী, কটুক্তিকারী ও নাস্তিক, মুরতাদের সমর্থনকারীও দেওবন্দি হতে পারে না৷ এ ধরনের লোকদের কর্মসূচীর প্রতি সংহতি প্রকাশকারীও দেওবন্দি তথা আহলে সুন্নাহর দলভূক্ত হতে পারে না৷ যেভাবে আম্বিয়ায়ে কেরাম, সাহাবায়ে কেরামের সমালোচকদের মুখোশ উন্মোচন জরুরী তদ্রুপ নবী-রাসূলের কটুক্তিকারী, ব্যঙ্গকারী, চরিত্র হননকারীর বিরোধীতাও আহলে সুন্নাহর দাবীদারের জন্য অপরিহার্য৷ একটির বিরোধিতায় অপরটির প্রতি সংহতি প্রকাশ দেওবন্দি চেতনার ধারকের পরিচয় নয়৷ বিদআতী, মাঝারি যেভাবে অগ্রহণযোগ্য, তদ্রুপ নবী-রাসূলদের কটুক্তিকারী, চরিত্র হননকারীদের প্রতি সংহতি প্রকাশকও গ্রহণযোগ্যতার মাপকাঠিতে বিবেচ্য নয়৷