তুর্কিদের অসাধারণ সাফল্যের নেপথ্য কারণ

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

আগস্ট ২০ ২০২০, ১৯:৫৩

সৈয়দ শামছুল হুদা

সারা দুনিয়াব্যাপি রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে বর্তমান তুরস্ক সরকার। সর্বশেষ এই আলোচনায় ঘি ঢেলেছেন আমেরিকান হবু প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট। মি. ট্রাম্প তার প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে গিয়ে বলেন, বর্তমান বিশ্বে এরদোয়ান একজন অন্যতম খেলোয়াড়। তারসাথে খেলতে গেলে হাঁটু ভাঙ্গার সম্ভাবনা আছে, তাই যেন সতর্কতার সাথে তাকে নিয়ে মন্তব্য করা হয়। এটা সাধারণ কোন ঘটনা নয়। পরোক্ষভাবে এটা স্বীকার করে নেওয়া হযেছে যে, তুর্কি জাতির বর্তমান নেতৃত্বকে আগের মতো ইচ্ছে করলেই তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না।

তুরস্ক সফরে, সীমিত মানুষের সাথে মিশে কিছু উপলব্দি হয়েছে।তুর্কি জাতির পুনরুত্থানে তুর্কি গণমানুষের যে নীরব সাধনা চলছে তা দূর দেশ থেকেও আমাদেরকে আশান্বিত করে। তুর্কি জাতির ইতিহাস, তাদের অতীত, বিশেষ করে বর্তমান এরদোয়ান সরকার যেভাবে উসমানী খেলাফতের উত্থানের ইতিহাস নিয়ে ধারাবাহিক ড্রামা তৈরী করে সারা বিশ্বের মুসলমানদের সামনে নিজেদেরকে উপস্থাপন করে চলেছে তাতে তারা মনের অজান্তেই বিশ্ববাসির মন জয় করে নিচ্ছে।

এটা বলা হয়ে থাকে যে, তুর্কিরা কখনো নিজেদের সমস্যা অন্যদের কাছে তুলে ধরে না। তারা প্রচন্ড রকম ধৈর্যশীল। পরিশ্রমি। তাদের মেজাজ খুব ঠান্ডা। তাদের দেশের আবহাওয়ার মতোই তাদের মেজাজ খুব ঠান্ডা। ঠান্ডা মাথার লড়াইয়ে তাদের বিজয়ের ইতিহাস রয়েছে। ক্ষমতায় আসার পরও আয়া সুফিয়ায় নামায আদায়ে ১৫টি বছর অপেক্ষা করা প্রমাণ করে তারা কতটা ধৈর্যশীল। তারা নিজেদের ভেতরের সমস্যাগুলো সুন্দর করে গুছিয়ে এনেছে প্রায়। চোখ ধাঁধানো উ্ন্নয়নের পাশাপাশি তাদের মাঝে নেই কোন অহঙ্কার। নেই কোন আড়ম্বরি ভাব। তারা খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বময়।

এ নব বিজয়াভিযানে এরদোয়ান একাই কি লড়াই করছেন? না, এমনটি কখনো নয়। সমগ্র জাতি মিলেই তারা এগিয়ে যাচ্ছে। তারা সকল প্রকার দুর্র্নীতি, অনিয়ম, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বিশৃংখলা দূর করেছে। রাষ্ট্রের প্রতিটি মানুষ দেশের জন্য জীবনবাজি রেখে কাজ করে যাচ্ছে। সেদেশের আলেম-উলামাগণ রাষ্ট্রের উন্নয়নে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন। ধর্মীয় নির্দেশনা, নিজেদের মতো করে সারা বিশ্বের সাথে সম্পর্ক তৈরী করা, বিশেষ করে রেসালায়ে নূরের বার্তা নিয়ে তুরস্কের আলেম ও দ্বীনের দাঈগণ সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে।

তুর্কিরা অন্যদের কাজে হস্তক্ষেপ করে না। তবে জাতীয় স্বার্থে কোনরকম ছাড়ও দেয় না। আজ এরদোয়ান এর পা বিশ্বের অনেক দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। কাতার থেকে আফ্রিকা, সিরিয়া থেকে লিবিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, আজারবাইজান সর্বত্র তাদের আজ একচ্ছত্র প্রভাব। তুর্কি নাগরিকগণ সর্বত্র আজ নন্দিত। ধৈর্য, অমায়িক ব্যবহার, উদারতা, সহনশীলতা, বুদ্ধিমত্তা, সাহস, কৌশল, মিতব্যায়িতা সব মিলিয়ে তুর্কি জাতিকে যেন অনন্য করে তুলেছে।

তুর্কিদেরকে তাদের গৌরবজনক অতীত থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার বহুমুখি ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। কিন্তু সেই কানেকটিভিটি আবার তুন করে চালু করা হযেছে। যে জাতি তার অতীত ভুলে যায় সে সফল হবে কীভাবে? বাঙ্গালী মুসলমানদেরকে ৭১এ আটকে দেওয়া হয়েছে। কেউ ৪৭এ গেলেও ১৭৫৭তে কেউ যেতে চায় না। এর আগে আমরা কী ছিলাম, তাতো আমরা্ ভুলেই গেছি। অথচ তুর্কিরা ত্রয়োদশ শতাব্দীর অর্জনকে মোটেও ভুলে যায়নি। ১২৯৯সনে উসমান যেভাবে দীর্ঘ একটি মেয়াদে রাষ্ট্রের ভিত গড়ে তুলতে কাজ করে গিয়েছেন তার কোন কিছুই ভুলে যায়নি তুর্কি বীর জনতা।

তুরস্ক সফল। কারণ সেখানে ধর্মীয় শক্তির সাথে সাধারণ শক্তির অসাধারণ সমন্বয় সাধন সম্ভব হয়েছে। ‍তুর্কিরা নিজেদের কাজ নিজেরাই করতে ভালোবাসে। আরবদের মতো পেট্রোডলারে তারা বিলাসী নয়। তুর্কিরা আবেগের সামনে বুদ্ধিমত্তাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। সারাবিশ্বের অনেক বড় বড় নেতা এরদোয়ানের সামনে এখনই ভয়ে কাঁপতে থাকে। এরদোয়ান যেভাবে সর্বদিক দিয়ে তুরস্ককে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তাতে অচিরেই তারা এমন একটি উচ্চাসনে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবে, যার জন্য গোটা বিশ্বের মুসলিম শক্তি স্বপ্ন দেখে।

তুর্কিরা গাদ্দারীর সাথে আপোষ করে না। গাদ্দাররা তুরস্ককে গলা টিপে ধরতে চায়। কিন্তু তারা সাহস ও সক্ষমতার সাথে এসব গাদ্দারী মোকাবেলা করে যাচ্ছে।

তুরস্ক থেকে আমাদেরও শিক্ষা নেওয়ার আছে। বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে অসংখ্য ছাত্র যারা তুরস্কে অধ্যয়ন করছে। তারা মাতৃভাষার মতোই তুর্কিভাষাও আয়ত্ব করেছে। এরা সকলেই তুরস্কের সাথে আমাদের সেতৃবন্ধন গড়তে কাজ করতে পারে। বাংলাদেশের সকল শ্রেণি পেশার আলেম, সাধারণ মানুষ সবার সাথে বিশ্ব উম্মাহর আদর্শ দিয়ে তুর্কি-বাংলা ভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে অন্যতম একটি মাধ্যম হতে পারে তুরস্কে অধ্যয়নরত ছাত্র ভাইয়েরা।

বাংলাদেশের আলেমদের প্রতি অনুরোধ, এরদোয়ানকে বুঝতে হলে, তুর্কিদের অতীতটা একটু ভালো করে পড়ুন। নতুন করে পড়ুন। তাদের গৌরবময় অতীত, অতীত ভূমিকা, তুর্কিদের অতীত গৌরবগাঁথা সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিন। তুরস্কের সাথে বাংলাদেশের গণমানুষের সম্পর্ক তৈরীতে তুরস্কে অবস্থানরত ছাত্ররা বিশেষভাবে ভূমিকা রাখতে পারে। বাংলাদেশের বিশেষ কোন দলের সাথে যেন এ সম্পর্ক গড়ে না উঠে, সম্পর্কটা যেন হয় সামগ্রীক। এ বিষয়ে তুর্কি নাগরিকগণ অতীতেও সজাগ ছিল, আগামী দিনেওে সজাগ থাকবে ইনশাআল্লাহ।

বর্তমান তুরস্ক তাদের সাময়িক সমস্যা কাঠিয়ে উঠতে প্রায় সক্ষম হয়ে পড়েছে। আলহামদুলিল্লাহ। তুর্কি জনতার সাথে গভীরতর ঐক্য গড়ে তুলে বাংলার মুসলমানও তুর্কিদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। পাশাপাশি মুসলিম অধ্যুষিত ঘনবসতির এই দেশটির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায়ও কার্যকরি ভূমিকা পালন করার সুযোগ তুর্কিদের সামনে রয়েছে।আল্লাহ তায়ালা আমাদের বুঝার তৌফিক দান করুন।

লেখক: জেনারেল সেক্রেটারী
বাংলাদেশ ইন্টেলেকচুয়াল মুভমেন্ট বিআইএম