তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না: মির্জা ফখরুল

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

ডিসেম্বর ০৩ ২০২২, ১৮:৪৬

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা আবার বলছি- তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করতে হবে। অন্যথায় এ দেশে কেনো নির্বাচন হবে না।

শনিবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজশাহীর মাদরাসা মাঠে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, অবিলম্বে সরকারকে পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। এরপর নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। যেই সরকার নতুন স্বপ্ন দেখাবে। এখন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা এবং নিহত সহযোদ্ধাদের রক্তের বদলা নিতে হলে আমাদেরকে জেগে উঠতে হবে। দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।

সরকারি দলের পক্ষ থেকে সংবিধানের কথা বলার বিষয় উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের বলেন- সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। কোন সংবিধান? যেখানে বার বার কাটাছেঁড়া করা হয়েছে নিজের প্রয়োজনে। সেই সংবিধান অনুযায়ী দেশ চলতে পারে না। তারা এই সংবিধানের অনেক পরিবর্তন করেছে। নতুন নতুন আইন করেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করেছে। যেখানে ফেসবুকে পোস্ট দিলেও উস্কানি হিসেবে আখ্যা দিয়ে গ্রেফতার করা হয় এবং জামিন নেই। আমরা তো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সবার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করেছিলাম। কিন্তু আওয়ামী লীগ সেটা চায় না। তাদের লক্ষ্য যেমন করে পার বন্দুক-পিস্তল দিয়ে ক্ষমতায় থাক। আমরা তো তাদের চাকর নই। এই দেশের মালিক জনগণ।’

চাল, ডাল, জ্বালানি তেল, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য বৃদ্ধি, চলমান আন্দোলনে ভোলায় নূরে আলম ও আব্দুর রহিম, নারায়ণগঞ্জে শাওন, মুন্সিগঞ্জে শহিদুল ইসলাম শাওন ও যশোরে আব্দুল আলিম মোট ৫ জন হত্যার প্রতিবাদে, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের প্রতিবাদে সারাদেশে বিভাগীয় গণসমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা দেয় বিএনপি।

সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানের বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশ শুরু হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের চলমান লড়াই সংগ্রামে ৬ শতাধিক নেতাকর্মী গুম হয়েছে। পাবনার ঈশ্বরদীতে জাকারিয়া পিন্টুসহ ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। এতোদিন পরে সাজা দিয়ে বিরোধী দলকে নির্মূল করতে চায় সরকার। কিন্তু বিরোধী দল আরও নতুনভাবে উদ্যমী হয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ এখন লুটেরা দলে পরিণত হয়েছে। নিজেরা লুট করে পাহাড় বানাচ্ছে আর সাধারণ মানুষকে গরিব করছে। কদিন আগেই পাবনার কয়েকজন কৃষককে জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অথচ ক্ষমতাসীনরা ব্যাংক লুট করে দিচ্ছে। খাজাঞ্চিখানা শুন্য করে দিচ্ছে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। ইসলামী ব্যাংকের টাকা নামে-বেনামে ঋণের নামে লুট করছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের রাজনৈতিক কাঠামো ধ্বংস করেছে। তারা কেয়ারটেকারের দাবিতে ১৭৩ দিন হরতাল করেছিল। গান পাউডার দিয়ে আগুন ধরিয়ে মানুষ মেরেছে। পাঁচবার কেয়ারটেকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছে সমস্যা হয়নি। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সেই ব্যবস্থা বাতিল করেছে।

তিনি আরও বলেন, আজকে মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। ক্ষমতাসীনরা দেশের সবকিছু লুটে নিয়ে যাচ্ছে বিদেশে। ডলারের দাম এখন আকাশচুম্বী। কারণ সবই তো কানাডা আর মালয়েশিয়ায় পাচার করেছে। ১১ বছরে ১৯ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে। আর বলে মেগা উন্নয়ন করেছে। অথচ কৃষক সার পায় না। ফসলের দাম পায় না। ঘরে ঘরে চাকরি নেই। দশ টাকায় চাল নেই। কারণ সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে ধানের শীষে রক্ত মিশেছে। এই রক্ত দূর করে ধানের শীষ পরিষ্কার করতে হবে। আমাদের আন্দোলন বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়। আমাদের আন্দোলন জনগণের ভোটাধিকার ও জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনার আন্দোলন। একটা সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আন্দোলন। আমরা আর কষ্ট করব না। এই ভয়াবহ দানব সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। তা না হলে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ঠিক থাকবে না। ১৪ বছর ধরে আমরা নির্যাতিত। ছোটো ছোটো বাচ্চাগুলো তাদের বাবা ও স্বজনদের জন্য অপেক্ষায় থাকে।

মির্জা ফখরুল বলেন, রাজশাহীর ইতিহাস আন্দোলনের ইতিহাস। এই রাজশাহীতে অনেক বরেণ্য মানুষের জন্ম হয়েছে। তেভাগা আন্দোলনের সূতিকাগার বৃহত্তর রাজশাহী। এই অঞ্চলে জন্মেছেন দুই মহানায়ক। একজন মওলানা ভাসানী আরেকজন জিয়াউর রহমান। বিভাগীয় গণসমাবেশে যোগ দিতে যারা তিনদিন ধরে কনকনে শীত উপেক্ষা করে খোলা আকাশের নিচে রাত যাপন করেছেন। খেয়ে না খেয়ে সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। তাদেরকে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানান মির্জা ফখরুল।

সমাবেশে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, এই সরকার তো আগের রাতেই ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় আছে। বিদেশিরাও বলছে তারা ভোট চোর। আসলে তাদের কোনো লজ্জা নেই।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করেছিলাম আজকের বাংলাদেশের জন্য নয়। আজকে একটি সমাবেশ করতে হলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয় এবং জনগণ তিনদিন আগেই এসে তাঁবুতে আশ্রয় নেয়। এটা কি সেই মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ? আজকে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে আন্দোলন করতে হচ্ছে। তবে মানুষের ভোটাধিকার ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আরেকটা মুক্তিযুদ্ধ করব। রাজশাহী রেঞ্জের পুলিশের যদি আওয়ামী লীগ করার ইচ্ছা হয় তাহলে পোশাক ছেড়ে রাস্তায় এসে বিএনপির সঙ্গে লড়েন। দেখা যাবে কে জেতে? জনগণের ট্যাক্সের টাকায় আপনাদের পরিবার চলে। সুতরাং আমাদের রক্তচক্ষু দেখালে ভয় পাইনা।

সমাবেশের সমন্বয়ক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, সমাবেশ ঠেকাতে সরকার গায়েবি মামলা দিয়েছে, পরিবহন ধর্মঘট করেছে। ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। তবুও আমাদের সমাবেশ মহাসমাবেশে রুপ ধারণ করেছে।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন- আপনারা সরকারকে হলুদ কার্ড দেখান। পরে নেতাকর্মীরা হলুদ ক্যাপ উুঁচু করে ধরেন। যারা পরিশ্রম ও কষ্ট করেছেন সবাইকে ধন্যবাদ জানান দুলু।

বিএনপির রাজশাহী মহানগরীর আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা এরশাদ আলী ঈশার সভাপতিত্বে ও মামুনুর রশিদ ও শ্রী বিশ্বনাথ সরকারের পরিচালনায় গণসমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মিজানুর রহমান মিনু, মো. শাহজাহান মিয়া, আব্দুল মান্নান তালুকদার, হাবিবুর রহমান হাবিব, কর্নেল এম এ লতিফ খান, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, শাহিন শওকত, ওবায়দুর রহমান চন্দন, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, নাদিম মোস্তফা, অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন প্রমুখ।