টিএসসিতে নামাজের জায়গা দাবি ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে’

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

এপ্রিল ১৯ ২০২২, ০১:০৭

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) নামাজের জায়গা নিয়ে চলমান বিতর্কের মধ্যে টিএসসিভিত্তিক সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো ‘মৌলবাদীদের’ রুখে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

সংগঠনগুলোর নেতারা বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হলে মসজিদ রয়েছে। এ ছাড়া ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ রয়েছে। তারপরও টিএসসিতে নারী শিক্ষার্থীদের নামাজের জায়গা দাবি করা রাজনৈতিক কারণে ছাড়া আর কিছু নয়।

সোমবার (১৮ এপ্রিল) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক মানববন্ধনে টিএসসিভিত্তিক সংগঠনগুলোর নেতারা এসব কথা বলেন।

‘অসাম্প্রদায়িক চেতনায় টিএসসি অক্ষুণ্ন রাখার প্রত্যয়ে’ যৌথভাবে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে টিএসসিকেন্দ্রিক সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। মানববন্ধন শেষে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে স্মারকলিপি দেয়।

মানববন্ধনে অংশ নিয়ে ডাকসুর সাবেক সদস্য ও টিএসসি–সংলগ্ন উন্মুক্ত লাইব্রেরির প্রতিষ্ঠাতা তানভীর হাসান বলেন, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে বেশি দিন টিকতে পারেনি। বাঙালির সবচেয়ে বড় ঐক্যের জায়গা হচ্ছে সাংস্কৃতিক ঐক্য। সেই ঐক্য ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এদের চিহ্নিত করার সময় এসেছে।

টিএসসিকে সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জায়গা উল্লেখ করে ডাকসুর সাবেক সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নাট্য সংসদের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিটি জায়গার একটি মূল্যবোধ আছে। টিএসসি হচ্ছে সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জায়গা। এখানে কোনো ধর্মেরই উপাসনালয় থাকা ঠিক নয়।

টিএসসির কাছেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ থাকার পরও আলাদা নামাজের জায়গা দাবি করার মধ্যে ‘রাজনীতি’ দেখছেন ডাকসুর সাবেক সদস্য ও সাইক্লিং ক্লাবের সাবেক সভাপতি মাহমুদুল হাসান। তিনি বলেন, টিএসসির কাছেই কেন্দ্রীয় মসজিদ। সেখানে না গিয়ে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার জন্য টিএসসিতে নামাজের জায়গা নিয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা হচ্ছে। তাঁর মতে, একটি মৌলবাদী সম্প্রদায় ক্যাম্পাসসহ দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। তারাই এ কাজ করছে।

একই সুরে কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাইফুল্লাহ সাদেকও। তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে নই, সব মানুষের পক্ষে। নামাজের স্থানকে কেন্দ্র করে এখানে রাজনীতি করা হচ্ছে। সত্যিকারের ধর্মীয় চেতনা থাকলে দুই মিনিট ব্যয় করে তারা কেন্দ্রীয় মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ুক।’

নাট্য সংসদের সভাপতি দিগার মোহাম্মদ কৌশিক বলেন, টিএসসির সংগঠনগুলো থাকতে কোনো মৌলবাদী, কায়েমি স্বার্থের দালালের জায়গা টিএসসিতে হবে না।

তাঁদের অবস্থান ধর্মের বিপক্ষে নয় জানিয়ে ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি শেখ মোহাম্মদ আরমান বলেন, ‘ধর্মকে পুঁজি করে ক্ষমতায় যাওয়ার চিন্তার বিরুদ্ধে আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি।’

মানববন্ধনে সমাপনী বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যান্ড সোসাইটির সভাপতি এনায়েত এইচ মনন। তিনি বলেন, ‘টিএসসি অসাম্প্রদায়িক চেতনার আঁতুড়ঘর। এখানে আমরা মৌলবাদের উত্থান হতে দেব না। ঈদের পর আমরা টিএসসিতে কনসার্ট করব। এ ছাড়া চলচ্চিত্র, নাটক, ফটোগ্রাফি, নৃত্য ইত্যাদি আয়োজনও থাকবে। এসবের মধ্য দিয়ে আমরা মৌলবাদকে প্রতিহত করব।’

মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে ঢাকা ইউনিভার্সিটি ফটোগ্রাফিক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান, ড্যান্স ক্লাবের সভাপতি আবু জর গিফারী, সাহিত্য সংসদের সভাপতি ফয়সাল আহমেদ, স্লোগান ৭১-এর সভাপতি নাজিমুদ্দিন শুভ, আইটি সোসাইটির সভাপতি নাজমুস সাকিব, সাংস্কৃতিক সংসদের সাধারণ সম্পাদক জয় দাস প্রমুখ বক্তব্য দেন।

মানববন্ধন শেষে উপাচার্যের কার্যালয়ে গিয়ে তাঁর হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন টিএসসিভিত্তিক সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা। স্মারকলিপিতে বলা হয়, টিএসসির সব সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মনে করে যে যারা ইস্যু তৈরি করে টিএসসির পরিবেশ নষ্ট করতে চায়, তারা সাংস্কৃতিক চর্চা ও মুক্তচিন্তার বিরোধী। টিএসসির অবস্থান অক্ষুণ্ন রাখতে উপাচার্য দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন।

টিএসসির করিডরে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নামাজের জায়গা তৈরি করা নিয়ে দুই সপ্তাহ ধরেই বিতর্ক চলছে। এর সূত্রপাত ৫ এপ্রিল টিএসসিতে নামাজের স্থান বরাদ্দের দাবি জানিয়ে উপাচার্যকে একদল ছাত্রীর স্মারকলিপি দেওয়ার মধ্য দিয়ে। এরপর টিএসসিতে ছাত্রীদের একটি অংশের নামাজের জায়গা তৈরি ও পরে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের সেটি সরিয়ে ফেলার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উত্তাপ ছড়িয়েছে।

সৌজন্যে: প্রথম আলো অনলাইন