জুড়ীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন ছাড়ে ঘুষ দাবি: অভিযোগের তীর হিসাবরক্ষণ অডিটরের দিকে

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

মার্চ ১৬ ২০২৩, ১৮:২৫

জহিরুল ইসলাম সরকার, জুড়ী প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার:

মৌলভীবাজার জেলার জুড়ীতে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত ৩২ জন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের কাছে ঘুষ দাবি করেছেন উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের অডিটর মোঃ আমির হোসেন। এ বিষয়ে জানতে বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) সকালে উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসে গিয়ে দেখা যায়, বিনা ছুটিতে অফিসে অনুপস্থিত রয়েছেন অভিযুক্ত অডিট অফিসার মোঃ আমির হোসেন ও এসএএস অধীক্ষক মোঃ ছালিক আহমদ চৌধুরী।

জানা যায়, সর্বশেষ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগের লিখিত ও ভাইবায় উত্তীর্ণ হয়ে উপজেলা থেকে ৩২ জন সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পান। নিয়োগ পাওয়ার পর তাঁরা জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে যোগদান করেন। যোগদানের পর তাঁদের বেতন নির্ধারণের জন্য বেতন ফরম ও সার্ভিস বুক উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসে প্রেরণ করা হয়‌। ফাইল প্রেরণের ১৮ দিন অতিবাহিত হলেও দাবিকৃত ঘুষের টাকা প্রদান না করায় হিসাবরক্ষণ অফিসেই আটকে আছে নতুন নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষকদের বেতন-ভাতার ফাইল। এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করলেও হয়রানির ভয়ে মুখ খুলতে নারাজ অনেকেই। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক জানান, আমরা কোন অবস্থায় ঘুষের টাকা দেব না। আমরা আমাদের মেধা ও যোগ্যতায় সরকারি চাকুরি পেয়েছি। শিক্ষকতার মত এ মহান পেশায় ঘুষের টাকা দিয়ে আমরা এগোতে চাই না। সরকারের দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে আমরা বদ্ধপরিকর।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নবাগত নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের টিম লিডার বলেন, উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে আমাদের সবার ফাইলগুলো উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে অনেক আগেই পাঠানো হয়েছে। হিসাব রক্ষণ অফিস থেকে ফাইলগুলো শিক্ষা অফিসে আসতে দেরি হওয়ায় আমরা উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে যোগাযোগ করি। তখন উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের অডিটর মোঃ আমির হোসেন আমাদেরকে জানান আমাদের অনেকের ফাইলেই নাকি সমস্যা রয়েছে। সব সমস্যার সমাধানের জন্য তিনি আমাদের সবার কাছে জনপ্রতি ৫০০ টাকা করে মোট ১৬ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। তবে আমরা শিক্ষকরা ঘুষ দিয়ে ফাইল ছাড়াতে রাজি নই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, আমাদের কাছ থেকে ৫’শ টাকার অধিক পরিমাণে টাকা চাওয়া হয়েছে। ফাইল ছাড়াতে হলে তো টাকা দিতেই হবে।
অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের অডিটর আমির হোসেন বলেন, ঘুষ চাওয়ার বিষয়টি মিথ্যা। তবে অনেকের ফাইলে সমস্যা থাকায় ফাইল ছাড়তে বিলম্ব হচ্ছে। এসময় বিনা ছুটিতে অফিসে অনুপস্থিতির বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) বিলকু তরফদার আমাকে অফিসের কাজে মৌলভীবাজার পাঠিয়েছেন।

উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের এসএএস অধীক্ষক মোঃ ছালিক আহমদ চৌধুরী বলেন, গতকাল অসুস্থতার জন্য আমি ছুটি নিয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) বিলকু তরফদার মুঠোফোনে বলেন, আমি রাজনগর উপজেলায় কর্মরত আছি। কয়েকদিন আগে নতুন করে জুড়ী উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্ব পেয়েছি। ঘুষ দাবির বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে বিষয়টি আমি দেখব। এসময় বিনা ছুটিতে অফিসে অডিট অফিসার মোঃ আমির হোসেনের অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, কেউই লিখিত ভাবে ছুটি নেয়নি। তবে আজ সকালে আমাকে অসুস্থতার কথা জানিয়ে আমির হোসেন ফোন দিয়েছেন। অপরদিকে অসুস্থতার কথা বলে এসএএস অধীক্ষক মোঃ ছালিক আহমদ চৌধুরী গতকাল ছুটি নিয়েছেন।

উল্লেখ্য, এছাড়াও নানা অজুহাতে পেনশন ভোগী কর্মকর্তা কর্মচারী, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা কর্মচারী, উপজেলার বিভিন্ন সরকারি অফিস, উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সহ বিভিন্ন বিল পাসে ঘুষের পার্সেন্টিজ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে অভিযুক্ত অডিটর আমির হোসেনের বিরুদ্ধে।