জিলহজ্ব মাসের প্রথম দশ দিনের ফজিলত

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

আগস্ট ১২ ২০১৮, ১৪:৫৫

জিলহজ্ব মাস ফজিলতপূর্ণ মাসসমূহের মধ্যে অন্যতম একটি মাস। এ মাসে যেমন ‘আশহুরে হুরুম’র অন্তর্ভূক্ত, তেমন হজ্ব ও কুরবানীর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিধানও এই মাসে সম্পাদন করা হয়। তাই আল্লাহ তাআলার নিকট এই মাস অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।

কুরআনে জিলহজের প্রথম দশদিনের বর্ণনা :
এই মাসের প্রথম দশদিনকে লক্ষ্য করে সূরা ফাজরে আল্লাহ তাআলার ইরশাদ করেছেন, ” শপথ ফজরের। শপথ দশ রাত্রির, শপথ তার”। (আয়াত ১-২)

হযরত ইবনে আব্বাস রা., কাতাদা ও মুজাহিদ রহ. সহ প্রমুখ তাফসিরবিদদের মতে জিলহজের প্রথম দশদিন সর্বোত্তম দিন। (তাফসিরে মাযহারী)
হয়রত জাবের রা. বলেন, হুজুর ছা. স্বয়ং এই আয়াত সম্পর্কে তাফসির করেছেন, জিলহজের প্রথম দশদিন। হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন, হযরত মুসা আ. এর কাহিনীতে “ও আতমামনাহা বি-আশার” বলে এই দশ রাত্রিকেই বোঝানো হয়েছে। (মাআরিফুল কুরআন)

হাদীসে জিলহজের দশদিনের ফজিলত:

ইবনু আব্বাস (রা.)তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, এমন কোন দিন নেই যে দিনসমূহের সৎকাজ আল্লাহ্ তা’আলার নিকট যিলহজ্জ মাসের এই দশ দিনের সৎকাজ অপেক্ষা বেশি প্রিয়। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ্ তা’আলার পথে জিহাদ করাও কি (এত প্রিয়) নয়? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আল্লাহ তা’আলার পথে জিহাদও তার চেয়ে বেশি প্রিয় নয়। তবে জান-মাল নিয়ে যদি কোন লোক আল্লাহ তা’আলার পথে জিহাদে বের হয় এবং এ দু’টির কোনটিই নিয়ে যদি সে আর ফিরে না আসতে পারে তার কথা (অর্থাৎ সেই শহীদের মর্যাদা) আলাদা।
(তিরমিজি শরীফ, হাদিস নং ৭৫৭)
‏.‏
আবূ হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, এমন কোন দিন নেই যে দিনগুলোর (নফল) ইবাদাত আল্লাহ্‌ তা‘আলার নিকট যিলহজ্জ মাসের দশ দিনের ইবাদত থেকে বেশি প্রিয়। এই দশ দিনের প্রতিটি রোযা এক বছরের রোযার সমকক্ষ এবং এর প্রতিটি রাতের ইবাদত কদরের রাতের ইবাদতের সমকক্ষ।

(তিরমিজি শরীফ, হাদিস নং ৭৫৮)

নয় জিলহজ্ব রোজা রাখার ফজিলত:

আবূ কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমি আল্লাহ্‌ তা’আলার নিকট আরাফাতের দিনের রোযা সম্পর্কে আশা করি , তিনি এর মাধ্যমে পূর্ববর্তী এক বছর এবং পরবর্তী এক বছরের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দিবেন। (তিরমিজি শরীফ, হাদিস নং ৭৪৯)

এই হাদীসের ভিত্তিতে ওলামায়ে কেরাম জিলহজ্বের নয় তারিখ রোজা রাখাকে মুস্তাহাব বলেছেন। এছাড়াও আরো অনেক হাদীস বর্ণিত আছে।

তাকবিরে তাশরিক ও তার ফজিলত :

“আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহ আকবার আল্লাহ আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ”।

উপরোক্ত কালেমাকে তাকবিরে তাশরিক বলা হয়। আর জিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখের ফজর থেকে ১৩ তারিখের আসর পর্যন্ত সময়কে তাশরিকের দিন বলা হয়।
তাশরীকের দিনগুলোতে প্রত্যেহ ফরজ নামাজের পর পুরুষগণ উচ্চস্বরে আর মহিলারা অনুচ্চস্বরে একবার তাকবির বলা ওয়াজিব। বেশি বলা সুন্নাত পরিপন্থি। (ফতওয়ে শামী)
বালেগ, পুরুষ, মহিলা, মুকিম-মুসাফির প্রত্যেকের উপর তাকবির বলা ওয়াজিব। (দুররে মুখতার)

ইমাম বুখারী রহ. বুখারী শরীফে ‘ফযলুল আমাল ফি আইয়্যামিত তাশরীক’ অধ্যয়ে বলেন, হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত হুজুর ছা. বলেন,এ দিনগুলোতে (তাকবিরে তাশরিক ছাড়া) অন্য কোনো উত্তম আমল নেই।

আল্লাহ আমাদের উপরোক্ত কথাগুলোর উপর আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন!

-হাবীব আনওয়ার।
শিক্ষার্থী,মেখল মাদরাসা,হাটহাজারী,চট্টগ্রাম।