জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট : কিছু শঙ্কার কথা

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

অক্টোবর ১৩ ২০১৮, ২২:৫৬

সৈয়দ শামছুল হুদা: দেশে খুব তাড়াতাড়িই রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটবে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এর কিছুটা সূচনা হয়ে গেছে বলেও আমার কাছে মনে হয়। প্রশ্ন হচ্ছে : এই যে আগামী দিনের রাজনীতির নতুন মেরুকরণ, এর সাথে এদেশের ইসলামী দলগুলোর ভুমিকা কী হবে? বর্তমান সরকার ইসলামী শক্তির মধ্যে সুস্পষ্ট বিভাজন রেখা তৈরীতে সক্ষম হয়েছে। একটি শক্তিকে কাছে টানার জন্য হেফাজতের শাপলায় কিছুটা রক্তক্ষয় করতে হয়েছে। অপর শক্তিটাকে নির্মূলের জন্য যা যা করা দরকার তার সবকিছুই করা হয়েছে। চারদলীয় জোট সরকারের সবগুলো দলকে দুর্বল করে দেওয়া হয়েছে। তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর সকল পথকে স্তব্দ করে দেওয়া হয়েছে।

চারদলীয় জোট আন্দোলনের শেষ দিকে এরশাদ জোট থেকে বের হয়ে যায়। জোট গঠন করে সরকার গঠনের পর ইসলামী ঐক্যজোট ভেঙ্গে খান খান হয়ে যায়। আর বিগত ১০টি বছরে বিএনপি ও জামায়াতকে রাজনীতির মাঠ থেকে দূরে সরিয়ে রাখার সকল কৌশল অবলম্বন করা হয়। অপরদিকে ইসলামী ঐক্যজোট এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ২০দলীয় জোট থেকে বের হয়ে কেউ লীগের সাথে, কেউ জাতীয় পার্টির সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। এহেন অবস্থায় বিএনপির সামনে শক্তির বিকল্প ভাবার পথকে গ্রহন করতে বাধ্য করে বিদেশি শক্তিগুলো এবং মাঠের বাস্তবতা। এসব কারণেই বিএনপি থেকে ইসলামী দলগুলো কিছুটা মুখ ফিরিয়ে নেয়। বিএনপিও এক্ষেত্রে নিরব ভুমিকা পালন করে। আগ্রহভরে কাউকে ধরে রাখার ব্যাপারে জোরালো ভুমিকা নিতে গড়িমসি করে।

এমনি একটি পরিস্থিতিতে যে ঐক্যফ্রন্ট এ বিএনপি যোগ দিয়েছে, যেখানে ২০দলের কাউকেই রাখা হচ্ছে না, বরং সেই সকল দলকে সামনে রাখা হচ্ছে, যারা ভোটের রাজনীতিতে দুর্বল। একদিকে ঐক্যফ্রন্ট গঠনে বিএনপির বিশাল ছাড় দেওয়ার ঘটনায় অবাক হওয়ার মতো কিছু ঘটলেও ২০দলে ভাঙ্গন ধরেনি। অপরদিকে ২০দলেও দেখা যায়নি কোন প্রকার বিরুপ মন্তব্য বা প্রকাশ্য কোন বিরোধ। এসব কারণে মনে করছি, রাজনীতিতে পরিবর্তন আসন্ন। বিদেশি শক্তিগুলোকে আশ্বস্ত করতে এই জোট গঠনের প্রক্রিয়া বিশেষ তাৎপর্যবহ।

কিন্তু যে জিনিসটি আমার কাছে শঙ্কার মনে হচ্ছে, সেটা হল : এই ফ্রন্ট গঠন হয়তো ক্ষমতা পরিবর্তনের সিড়ি তৈরী করবে। কিন্তু ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য আগামী সরকার হবে আরো বেশি নিষ্ঠুর। তারা বাংলাদেশে ইসলামী আদর্শ ও শিক্ষার বিরোধী ভুমিকা রাখবে কঠিনভাবে। শাপলা চত্বরে আলেমদের রক্তদানের পর সরকারের মধ্যে যে এক ধরণের ভীতি সৃষ্টি করে, এটাই এই শক্তিটাকে কাছে টানতে বাধ্য করে। কওমী সনদের স্বীকৃতি হয়ে ওঠে একটি বিশাল মাধ্যম। সরকার সেই সুযোগটা গ্রহন করে। এর বিনিময়ে হয়তো কওমী ঘরানার বিশাল একটি অংশ কিছুটা নিরাপত্তা ও স্বস্তি লাভ করে। কিন্তু বর্তমান সরকার যে, রাষ্ট্রীয় অবকাটামোর যে মৌলিক ক্ষতি করেই চলেছে তা চরমভাবে ভাবনার। এর দায়ভার ইসলামী ঘরানার লোকজন কতটুকু নিবে তা বোধগম্য নয়। দেশের সাধারণ মানুষ বর্তমান সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ডে চরমভাবে ক্ষুদ্ধ এর মধ্যে কোন সন্দেহ নেই। এই ক্ষুদ্ধ অবস্থার সুযোগটা নিতেই এই ঐক্যফ্রন্ট।
আমার কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে যে, খুব শীঘ্রই একটি পরিবর্তন আমরা লক্ষ্য করবো। এই পরিবর্তনে ইসলামী শক্তিগুলোর ভুমিকা কী হবে? তাদের অবস্থান কোনদিকে? সেটার প্রতি আমাদের খেয়াল রাখা জরুরী। ২০দলীয় জোটে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খেলাফত মজলিস ও জামায়াতে ইসলামী রয়েছে। এই তিনটি দলই সংগঠিত। তাদের জনভিত্তিও দুর্বল নয়। কিন্তু এই দলগুলো ঐক্যফ্রন্টে কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারবে, বিএনপি বা অন্যান্য দলগুলো এদেরকে কতটুকু গ্রহন করবে সেটা নিয়ে এখনই পর্যালোচনা হওয়া প্রয়োজন।

উপরোক্ত ৩টি দল জোটে থাকায় আশা করা যায় বাম ও চরম ইসলাম বিরোধী মনোভাবের লোকগুলোও হয়তো এতটা ইসলামবিদ্বেষী হয়ে উঠতে পারবে না। এটা একটি পজিটিভ দিক।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এর দাবীগুলো খুবই স্পষ্ট। এগুলোর যে কোন একটি পুরণ হলেও নির্বাচনে পরিবর্তন আসতে বাধ্য। তবে এর সফলতা নির্ভর করবে বিদেশি সমর্থনের ওপর। জনগণ সরকারের আচরণে চরম ক্ষুদ্ধ হয়ে আছে। এখন যদি নেপথ্যের শক্তিগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে, এবং মনে হয় এমন কিছু র্আছে, তাহলে পরিবর্তন আসন্ন ধরে নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।