ছাত্র মজলিসের উদ্যোগে “জাতীয় শিক্ষা সংকট ও বিতর্কিত শিক্ষাক্রম ২০২৩: উত্তরণের উপায়” শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

একুশে জার্নাল

একুশে জার্নাল

ফেব্রুয়ারি ১১ ২০২৩, ১৮:৩২

লক্ষ্যহীন শিক্ষানীতির পরিবর্তে কর্মমুখী শিক্ষানীতি ও ধর্মীয় মূল্যবোধের আলোকে পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করতে হবে
-আমীরে মজলিস

ইসলামী ছাত্র মজলিসের উদ্যোগে “জাতীয় শিক্ষা সংকট ও বিতর্কিত শিক্ষাক্রম ২০২৩: উত্তরণের উপায়” শীর্ষক সেমিনার আজ শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি’২৩) সকাল ১০টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।

সংগঠনের মুহতারাম কেন্দ্রীয় সভাপতি বিলাল আহমদ চৌধুরী’র সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খেলাফত মজলিসের আমীর শায়খুল হাদীস মাওলানা যোবায়ের আহমদ চৌধুরী।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুহতারাম আমীরে মজলিস বলেন, জাতীয় শিক্ষানীতিতে সুস্পষ্টভাবে একথা উল্লেখ ছিল যে, ‘শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হচ্ছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে উন্নত চরিত্র গঠনে সহায়তা করা’। কিন্তু ২০২৩ সালের শিক্ষাক্রমে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে যে, শিক্ষানীতিতে উল্লেখিত শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য অমান্য এবং অগ্রাহ্য করা হয়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রমে সম্পূর্ণভাবে ‘ইসলামী শিক্ষা’ বিষয়টিকে বাদ দেয়া হয়েছে। জাতির জন্য বিষয়টি খুবই উদ্বেগের। জাতীয় শিক্ষানীতি থেকে ইসলামী শিক্ষাকে বাদ দেয়া একটি অযৌক্তিক ব্যাপার। এটা একদিকে জাতীয় শিক্ষানীতির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, অন্যদিকে মুসলিম জীবনের কদর্য এক হীনমন্যতার বহিঃপ্রকাশ। পাশাপাশি এটা একটি নির্দিষ্ট ধর্মের সাথে বিমাতাসুলভ আচরণের বহিঃপ্রকাশ। বাংলাদেশ একটি মুসলিম প্রধান দেশ। এদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। দেশের সংবিধানের শুরুতে আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাসের কথা লেখা আছে কিন্তু শিক্ষাক্রমে ইসলামি শিক্ষার কোন বালাই নেই। সিংহভাগ মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি এভাবে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন সরকারের জন্য ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনতে পারে।

সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ রায়হান আলী’র সঞ্চালনায় সম্মানিত আলোচক হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের, এডভোকেট এ কে এম বদরুদ্দোজা, অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, অধ্যাপক কাজী মিনহাজুল আলম। প্যানেল আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক এম মুজাহিদুল ইসলাম, শায়খ মূসা আল হাফিজ।

ড. আহমদ আব্দুল কাদের উনার বক্তব্যে বলেন, সিলেবাস থেকে ‘ইসলাম শিক্ষা’ তুলে দেওয়াটা দেশবাসীকে ভাবিয়ে তুলেছে। এটা ‘কারা করছে, কার স্বার্থে করছে এবং কেন করছে’ সেটা যথাযথ কর্তৃপক্ষের খতিয়ে দেখা দরকার। কারণ ধর্ম শিক্ষা এদেশের মাটি ও মানুষের শিকড়ের সাথে জড়িত। এ শিক্ষাটি জাতির জাতীয় শিক্ষা হিসেবে পরিচিত। সুতরাং সিলেবাস থেকে ‘ইসলাম শিক্ষা’ তুলে দেয়ার ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভাবা দরকার, ইসলামী শিক্ষা ও সংষ্কৃতির প্রভাব পৃথিবীতে মোটেই কম নয়; বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে অনেকগুণ বেশি। সুদূর আমেরিকা থেকে বাংলাদেশ, আর উত্তরের নরওয়ে থেকে দক্ষিণের চিলি-এ বিশাল পৃথিবীর দিকে একটু চোখ মেলে তাকিয়ে দেখলে বুঝা যাবে, যুগ যুগ ধরে মানুষ একটু শান্তি, একটু স্বস্তি আর নির্মল জীবন যাপনের জন্য ইসলাম ধর্মকেই বেছে নিয়েছে। সত্য উদঘটনের জন্য নিরপেক্ষভাবে তারা ইসলামী শিক্ষাকে গবেষণা করে চলেছে। নিবিড়ভাবে তারা ইসলামী সংষ্কৃতির সম্মোহনী শক্তির অনুসন্ধান করে চলেছে। আর বর্তমান বিজ্ঞানের চরম উন্নতির যুগেও এই শিক্ষার অনুসন্ধান ক্রমে বেড়েই চলেছে। যুগসন্ধিক্ষণের প্রতিটি স্তরেই কোনো না কোনো জগত বিখ্যাত ব্যক্তি এ শিক্ষার কাছে আত্নসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছেন। ইসলামী শিক্ষার ছায়াতলে নিজেদেরকে বিলিয়ে দিয়ে ধন্য হয়েছেন। বাংলাদেশে ১৭ কোটি মানুষের প্রাণের শিক্ষা হলো সেই ‘ইসলামী শিক্ষা’। সুতরাং ইসলামী শিক্ষার প্রতি অন্ধবিদ্বেষ পোষণ করা কারো জন্যই কাম্য নয়।

শিক্ষা, শিক্ষাক্রম ২০২৩, জাতীয় শিক্ষা সংকট, উত্তরণের উপায় কী রকম হওয়া দরকার তা নিয়ে সেমিনারের মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সংগঠনের প্রাক্তন কেন্দ্রীয় সভাপতি ও খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব ড. মুস্তাফিজুর রহমান ফয়সাল।

সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে মুহতারাম কেন্দ্রীয় সভাপতি বিলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিভিন্ন শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম পর্যায়ক্রমে চালু হবে। এর মধ্যে ২০২৩ সালে প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণি; ২০২৪ সালে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণি; ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে চালু হবে নতুন শিক্ষাক্রম। এরপর উচ্চমাধ্যমিকের একাদশ শ্রেণিতে ২০২৬ সালে এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ২০২৭ সালে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। প্রথম বছরেই যে পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে তা আগামীতে কোথায় গিয়ে ঠেকে তা বলাবাহুল্য। বর্তমান তরুণ প্রজন্ম বেকারত্ব, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, আয়-বৈষম্য ও পর্নোগ্রাফির বিষাক্ত ছোবলে দিশেহারা। এমতাবস্থায় তাদেরকে ন্যূনতম একটু ধর্মের শিক্ষা প্রদান সময়ের অনিবার্য দাবি। তাই কোমলমতি শিশুদের কাছ থেকে কোনোক্রমেই ধর্মকে যে সরানো উচিত হবে না সেটা কর্তৃপক্ষের মনে রাখা প্রয়োজন। আমরা চাই ধর্মীয় শিক্ষা মাদরাসা, স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ুক। শিক্ষাব্যবস্থার সর্বনিম্ন থেকে সর্বোচ্চ শ্রেণি পর্যন্ত ‘ইসলামী শিক্ষা’ বাধ্যতামূলক থাকুক।

এছাড়া সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আব্দুল জলিল, এডভোকেট মিজানুর রহমান, অধ্যাপক মাওলানা আজিজুল হক, অধ্যাপক মাওলানা সাইফুদ্দিন আহমদ খন্দকার, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সভাপতি নুরুল বশর আজীজি, নাগরিক ছাত্র ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম, ইনসাফ সম্পাদক সাইয়্যেদ মাহফুজ খন্দকার, গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স এর সত্ত্বাধিকারী নূর মোহাম্মদ আবু তাহের, সাংবাদিক বাশিরুল আমীন, কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ ও ক্যাম্পাস বিষয়ক সম্পাদক কে এম ইমরান হুসাইন, প্রকাশনা সম্পাদক আলমগীর হুসাইন, অফিস ও প্রচার সম্পাদক হাসান আহমাদ খান, বায়তুলমাল সম্পাদক মুহাম্মদ ইসমাঈল খন্দকার, ছাত্রকল্যাণ ও পাঠাগার সম্পাদক মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।ছাত্র মজলিসের উদ্যোগে “জাতীয় শিক্ষা সংকট ও বিতর্কিত শিক্ষাক্রম ২০২৩: উত্তরণের উপায়” শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত