চিকিৎসা সেবায় চিকিৎসকদের সহনশীল ও সচেতনতা কাম্য

একুশে জার্নাল ডটকম

একুশে জার্নাল ডটকম

আগস্ট ০৬ ২০২১, ২১:২৮

মুফতি সৈয়দ নাছির উদ্দীন আহমদ: মানব সেবার অন্যতম একটি মাধ্যম হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। সুস্থতা ও অসুস্থতা মহান রাব্বে কারীমের পক্ষ থেকে তার বান্দাদের জন্য দুটি ভিন্ন ভিন্ন নিয়ামত।

সুস্থতা কামনা ও অসুস্থতা থেকে বেচে থাকার প্রার্থনা আমরা মহান আল্লাহর নিকট সর্বদাই করি। কখনো আমাদের কৃতকর্ম বা খোদার ইচ্ছার ফলে আমরা সুস্থতা নিয়ামত হারিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ি।

আল্লাহ পাক বান্দাকে অসুস্থতা দিলেও সুস্থতার জন্য এর সার্বিক ব্যবস্থাপনা পূর্ব থেকেই করে রেখেছেন।

অসুস্থতার কারণে সুস্থতার জন্য চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করা শুধু ইসলাম সমর্থিত একটি ব্যবস্থাপনা নয়, বরং চিকিৎসা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি বিষয়।

অসুস্থতা বৃদ্ধি হোক সেটা আল্লাহর ইচ্ছা নয়। তাই তো অসুস্থতার জন্য কখনো কখনো শরয়ী বিধানকে পলন করার ক্ষেত্রেও অসুস্থ ব্যক্তির জন্য ছাড় দেয়া হয়েছে।

তাছাড়া মুমিন-মুসলমানদের জন্য পবিত্রকুরআন হচ্ছে সর্বরোগের চিকিৎসা। তাই খোদার প্রতি বিশ্বাসী বান্দা গণ বিশ্বাস করে যে,ডাক্তারের চিকিৎসা অসুস্থতা থেকে সুস্থ করে তোলার ক্ষমতা রাখে না। বরং সুস্থতা হল এটি মহান আল্লাহর দান। ডাক্তার/ওষুধ হল সুস্থ হয়েওটার মাধ্যম মাত্র।

আলহামদুলিল্লাহ আমাদের এই দেশে চিকিৎসা সেবার কমতি নেই। বিজ্ঞ-দক্ষ ডাক্তার রয়েছেন অনেক । তারা তাদের যোগ্যতার আলোকেই জাতিকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।

তবে যেমন চিকিৎসকদের মাধ্যমে জাতি উপকৃত হচ্ছে, তেমনি অনেক চিকিৎসকদের দ্বারা চিকিৎসা সেবার নামে রোগীরা নানাবিধ সমস্যা ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

দেখা যায়, অধিকাংশ চিকিৎসক: সেবার নামে চালিয়ে যাচ্ছেন ভিজিট ব্যবসা।পাশাপাশি রোগীদেরকে বিভিন্ন টেষ্ট দিয়ে ডায়গনস্টিক সেন্টারের সাথে হাত মিলিয়ে তারা করে যাচ্ছেন টেষ্ট বিজনেস।

কারণ ডাক্তাররা ডায়গনষ্ঠিক সেন্টারে টেস্ট পরীক্ষার ইনকাম থেকে নির্ধারিত হারে পার্সেন্ট মূল্য নিচ্ছেন ।

তাই টাকার জন্য অনেক চিকিৎসকরা করছেন সেবার বদলে চিকিৎসা ব্যবসা।

কখনো চিকিৎসকদের ভুলের কারণেই রোগীকে মৃত্যুর সম্মুখীন হতে হয়। এমনকি অনেক সময় সুস্থ হয়ে ওটার বদলে রোগীকে অসুস্থতার অনিরাপদ জীবন ঝুঁকিতেও পড়তে হয় । কখনো রোগীদেরকে ডাক্তার সহ নার্সদের অমানবিক আচরণের শিকার হতে হয়। এটা নতুন কিছু নয় বরং বর্তমান সমাজে এর ভয়াবহতা আরো বিস্তৃত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

উনাদের চিকিৎসা সেবার নামে যে সমস্ত অপকর্মগুলি রয়েছে, এগুলোর অনুসন্ধান রিপোর্ট বিভিন্ন অনলাইন-অফলাইন গণমাধ্যমগুলোর সাহায্যে আমরা জানতে পাই।

এরকম ঘটনাও আমরা জানতে পেরেছি যে, একটি মৃত লাশকে জেনেশুনে সপ্তাহের অধিক সময় আইসিইউতে রেখে চিকিৎসক ও হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ রোগীর অভিভাবকদের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা বিল গ্রহণ করেছেন। এভাবে অনেকের অজান্তে কতো ঘটনা ঘটে যাচ্ছে, যা আমরা অনুমানও হয়তো করতে পারছি না।

 

বর্তমান সমাজে যেমন খারাপ চিকিৎসকদেরর অভাব নেই, তেমনি অভাব নেই ভালো ও সৎ চিকিৎসকদের।

তবে সমাজে যেকোনো সেক্টরে ভালোর যতটা মূল্যায়ন করা হয় এর চেয়ে বেশি করা হয় তাদের অবমূল্যায়ন।

কারণ ভালো কর্মের ফলে যখন সমাজ থেকে খারাপের প্রভাব চলে যেতে দেখা যায়, তখন এক শ্রেণীর শিক্ষিত তাদের শিক্ষার অপব্যবহার করতে শুরু করেন। তারা তখন সেই ভালো মানুষকে মেনে নিতে পারে না । তাই তারা তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপনসহ দমন পীড়ন করতে লেগে যান।

এরি এক সেক্টর হচ্ছে প্রচলিত চিকিৎসা বিভাগ। যার মধ্যে রয়েছে চিকিৎসকদের পারস্পরিক হিংসাত্মক ব্যবহার ও চিন্তা চেতনা।নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে একে অন্যের চিকিৎসা ব্যবস্থা ও পদ্ধতির বিরুদ্ধে নানারকম ষড়যন্ত্রে ঝাপিয়ে পড়েন তারা ।

অনেক চিকিৎসক আছেন যারা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেন, দেখা যায় প্রাইভেট হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিকে কর্তব্যরত চিকিৎসকের টেষ্ট রিপোর্ট আমলে নিতে চান না। এমনি এর বিপরীত প্রাইভেট ক্লিনিক বা হাসপাতালের ডাক্তারদের ক্ষেত্রেও দেখা যায়।

এমনকি সরকারি কিংবা প্রাইভেট ক্লিনিকে কর্তব্যরত অনেক ডাক্তার এমন রয়েছেন, তারা তাদের চুক্তিকৃত ক্লিনিক বা হাসপাতাল ব্যতীত অন্য কোন ক্লিনিক বা হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা সেবা দেন না। যার ফলে অনেক সময় রোগীরা তাদের কাঙ্খিত সেই ডাক্তারের চিকিৎসা ও পরামর্শ থেকে বঞ্চিত থাকতে হয়।

এই যদি হয় মানব সেবার অন্যতম বিভাগের ব্যবহার ও চিন্তা চেতনা, তাহলে জাতি কীভাবে তাদের সেবার মাধ্যমে উপকৃত ও সুস্থ নিরাপদ জীবন লাভ করবে?

বর্তমান সময়ের অধিকাংশ চিকিৎসকদের চিন্তা সেবা নয়, বরং মানুষের কাছ থেকে টাকা উপার্জন করা হচ্ছ তাদের উদ্দেশ্য। তাইতো উনারা চেম্বার খুলে গভীর রাত পর্যন্ত রোগী দেখার সুযোগ দিয়ে সুচিকিৎসার ফলে মানুষকে ভোগান্তি দিচ্ছেন বেশি। যার বাস্তবতা সম্পর্কে কমবেশ সকলের জানা।

তবুও রোগীরা মনে করেন যে, চিকিৎসকরা আমাদের জন্য অমূল্য সম্পদ। তাও বাস্তব । কিন্তু চিকিৎসকদের অনেকে তাদের অপচিকিৎসা ও খারাপ আচরণ দিয়ে রোগীদের এই ধারণাকে পাল্টে দেন।

রোগীরা চাইবে চিকিৎসকদের সুপরামর্শ ও সুচিকিৎসা র মাধ্যমে উপকৃত হতে।তাই বিজ্ঞ ডাক্তারদের পরামর্শ ও সুচিকিৎসার দ্বারা উপকৃত হওয়ার সকল সম্ভাবনাই রোগীরা নিতে চায়। সে ক্ষেত্রে বিজ্ঞ ডাক্তার অনেকেই রোগীদের মন মানসিকতা ও সার্বিক পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে সুচিকিৎসা দিতে চেষ্টা করেন।

তারা চান রোগী সুস্থ হয়ে উঠুক। এতে যদি ওষুধ দিতে প্রয়োজন হয় না দিবো না। অকারণে ওষুধ আর টেস্ট না দিয়ে যদি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপত্র ও পরামর্শ দিয়েই রোগীকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব হয় তাহলে সেটাই তো হবে উত্তম চিকিৎসা।

এরকম মনমানসিকতা সম্পন্ন বিজ্ঞ ডাক্তার আমাদের দেশে অনেক রয়েছেন।যারা রোগীদেরকে সঠিক সেবা প্রদানের লক্ষ্যেই নিজেদের অর্জিত যোগ্যতা ও মেধা ব্যবহার করছেন।নিজেদেরকে মানুষের কাছে একজন সুচিকিৎসক হিশেবে পরিচিত করতে পারতেছেন।

কিন্তু আফসোস হলেও সত্য যে, এরকম চাওয়াই যেন বর্তমান সময়ের একটি অপরাধ।এর বাস্তবতার একটি উদাহরণ আজ দুদিন থেকে আমাদের সামনে ফুটে উঠেছে।

ডাক্তার জাহাঙ্গীর কবির। তিনি বর্তমান সময়ে একজন সুপরিচিত ও দক্ষ সুচিকিৎসক। তার চিকিৎসা পদ্ধতি রোগীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কাছেও অনেক গ্রহনযোগ্য ও প্রশংসিত হয়ে ওঠেছে ।

উনার সেই গ্রহণ যোগ্যতা ও চিকিৎসা পদ্ধতি অনেক বিজ্ঞ ডাক্তারদের কাছে অপছন্দনীয় হয়ে উঠায় তার বিরুদ্ধে উনারা অপচিকিৎসার অভিযোগ তুলেছেন।

এমনকি এর উপর ভিত্তি করে ডাক্তার জাহাঙ্গীর কবির এর বিরুদ্ধে মামলা করার পরিকল্পনা চলছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চলছে পক্ষ ও বিপক্ষের আলোচনা-সমালোচনা।

কিন্তু কেন? তা কী এমন অপরাধ ?

তার চিকিৎসা পদ্ধতি যদি প্রচলিত চিকিৎসার বিরুদ্ধে হয়েও থাকে, তবুও তো তাকে অভিযুক্ত করা যাবে না, যতক্ষণ না তার চিকিৎসা পদ্ধতি ও পরামর্শ রোগীদের জন্য ক্ষতিকারক হয়।

অথচ উনার চিকিৎসা পদ্ধতি তো প্রচলিত চিকিৎসার বিপরীত তেমন একটা আছে বলে মনে হয় না। কারণ উনার পরামর্শগুলো হচ্ছে রোগীর সুচিকিৎসা দেয়া। যা রোগীর জন্য ফলদায়ক। আর এর বাস্তবতা যে রয়েছে তা তো কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না।

তবে হ্যা,কিছু ক্ষেত্রে উনার চিকিৎসা পদ্ধতি ও পরামর্শ যদি প্রচলিত চিকিৎসার বিপরীত হয়ে থাকে, তাহলে এটি রোগীর জন্য ক্ষতির কারণ কী না এ বিষয়ে বিজ্ঞ ডাক্তারদের সমন্বয়মূলক পরামর্শ ও উদ্যোগ গ্রহণের প্রয়োজন অবশ্যই আছে। তবে তা হতে হবে জাতির স্বার্থ ও কল্যাণার্থে, ব্যক্তি অ্যাটাক থেকে নয়।

কিন্তু ডাক্তার জাহাঙ্গীর কবির স্যারের চিকিৎসা পদ্ধতি যেগুলো বিভিন্ন মিডিয়া ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে এগুলো থেকে অনুমান হয় যে, উনার উপর যে অ্যাটাক বা অভিযোগ এসেছে তা ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষার জন্য।

তবুও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের প্রতি অনুরোধ থাকবে, একজন ভালো দক্ষ চিকিৎসক এর বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত অ্যাটাক না এনে জাতীরস্বার্থে উনার ভুলত্রুটি সংশোধন করনের লক্ষ্যে কথা বলুন।

এ জাতি আপনাদের থেকে যেমন উপকৃত হবে, তেমনি উনিও তার দক্ষতা ও সততাকে আরও বিশুদ্ধতা এবং নিষ্ঠার সাথে কাজে লাগাতে বা উৎসাহিত হতে পারবেন।

এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না যে, একজন ভালো ও দক্ষ মানুষ তৈরি খুবই কঠিন। তাই ভালো লোকগুলোকে ভালো কাজে বাধা না দিয়ে তাদেরকে সহযোগিতা করা কাম্য। মানুষের ত্রুটি বিচ্যুতি হওয়া স্বাভাবিক, এটা আমাদের সৃষ্টিগত স্বভাব। মানুষের ভুল প্রকৃত মানুষকে সঠিক পথে আসতে শিখায়। তাই আসুন আমরা ভালো মানুষের ত্রুটি বিচ্যুতিকে সুযোগ মনে না করে তাদেরকে সংশোধন হতে সহায়তা করি।

তাই আমরা চাই চিকিৎসকগণ নিজেদের মানব সেবায় নিয়োজিত রাখুন,জাতি এমনিতেই আপনাদেরকে যথাযথ মুল্যায়ন করবে ।

আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে সঠিক বোঝদানকরত সঠিক পথে পরিচালিত করুন। আমীন।